উন্নাওয়ের নাবালিকাকে গণধর্ষণের ঘটনা মনে আছে? ২০১৭ সালের সেই ঘটনায় মূল অভিযুক্ত ছিলেন বিজেপি বিধায়ক কুলদীপ সেঙ্গার। পুলিশ কিছুতেই এফআইআর নিতে চায়নি মূল অভিযুক্তের বিরুদ্ধে। প্রায় দশ মাস পর প্রবল জনমতের চাপে বিধায়কের বিরুদ্ধে এফআইআর নিতে বাধ্য হয়। তারপর মেয়েটির বাবাকে পুলিশ তাদের কাস্টডিতে নিয়ে পিটিয়ে মেরে ফেলে। তার কাকাকে কোনো একটা মামলায় ফাঁসিয়ে দশ বছরের জেলে পাঠায়। নিরুপায় মেয়েটি বিচার না পেয়ে মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথের বাড়ির সামনে আত্মহত্যার চেষ্টা করেছিল সে সময়।
এরপর ২০১৯-এ মামলায় সাক্ষ্য দিতে আসার পথে ভয়ংকর ঘটনা ঘটে। নির্যাতিতাকে পরিবারসহ হত্যার চেষ্টা হয়েছিল ট্রাক চাপা দিয়ে। এবারও অভিযোগে বিদ্ধ হন সেই শাসক বিধায়ক কুলদীপ সেঙ্গার। মেয়েটির দুই মাসী এবং আইনজীবী মারা যান সেই সাজানো দুর্ঘটনায়। কোনরকমে রক্ষা পেয়েছিলেন নির্যাতিতা এবং তার মা।
সমগ্র ঘটনায় গোটা দেশে নিন্দার ঝড় ওঠে। জনমত গড়ে ওঠে প্রবল। তদন্তে পুলিশী নিষ্ক্রিয়তা ও পক্ষপাতিত্বের কারণে সিবিআই তদন্ত এবং বিচার প্রক্রিয়া উত্তর প্রদেশে সরিয়ে দিল্লিতে সরিয়ে আনার নির্দেশ দেয় সুপ্রিম কোর্ট এবং সরকারকে মেয়েটি ও তার পরিবারের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বলে। প্রধানমন্ত্রী ও মুখ্যমন্ত্রী বিবৃতি দিতে বাধ্য হয়েছিলেন এই ঘটনায়। দল বাধ্য হয় কুলদীপকে বহিষ্কৃত করতে।
অবশেষে ২০১৯-এর ডিসেম্ব্ররে দিল্লির একটি বিশেষ আদালত কুলদীপ সেঙ্গারের যাবজ্জীবন কারাবাস এবং পুলিশ কাস্টডিতে নির্যাতিতার বাবার মৃত্যুর জন্য আরো ১০ বছরের কারাদণ্ডের সাজা ঘোষণা করে।
সম্প্রতি দিল্লি হাইকোর্ট সেই যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের ওপর স্থগিতাদেশ দিয়েছে এবং কিছু শর্তসাপেক্ষে কুলদীপের জামিন মঞ্জুর করেছে।
সাজানো ট্রাক দুর্ঘটনায় নির্যাতিতার শরীরে ২৫০ টি সেলাই পড়েছিল, শরীরের বহু জায়গায় লোহার রড বসাতে হয়েছিল। সেই শরীর নিয়েই তিনি হাই কোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে ইন্ডিয়া গেটের সামনে মা ও সমাজকর্মী যোগিতা ভায়ানাকে নিয়ে মৌন প্রতিবাদে বসেছিলেন। তাঁর শরীরের কারণে এতটুকু রেয়াৎ না করেই পুলিশ তাকে টেনে হিঁচড়ে গাড়িতে তোলে। উত্তরপ্রদেশে যোগী সরকারের মন্ত্রী ওমপ্রকাশ রাজভড় তা নিয়ে মস্করা করে প্রশ্ন করেছেন, উনি কেন উন্নাও থেকে দিল্লিতে গিয়ে ধর্নায় বসেছেন। নির্যাতিতার আইনজীবী প্রাচ্য বলেছেন, সিবিআই অপরাধের লঘু ধারা দেওয়ায় এমনটা হয়েছে। নির্যাতিতার নিরাপত্তা ফের সংকটের মুখে অথচ কেন্দ্রীয় সরকার ও উত্তরপ্রদেশ সরকার বড় বড় আাইনজীবী নামিয়ে সমস্ত শক্তি দিয়ে নির্যাতিতার পরিবারের কোর্টের নির্দেশে পাওয়া নিরাপত্তা তুলে নেওয়ার ব্যাপারে অবিরাম সওয়াল করেছে। এদিকে হাইকোর্টের রায়কে স্বাগত জানিয়েছে উত্তরপ্রদেশে বিজেপির পরিবহনমন্ত্রী দয়াশংকর সিংহ।
কেন্দ্রিয় সরকার ও উত্তর প্রদেশের রাজ্য সরকার পুরোপুরি চুপ। মেয়েটির আইনজীবীর মতে সিবিআই ধারা লঘু করে দিয়েছে, কেন্দ্র ও রাজ্যের ভূমিকায় তাঁদের পরিবার এখন আবারও আতঙ্কিত। শেষ ভরসা হিসেবে তাঁরা সুপ্রিম কোর্টে আপীল করতে চলেছেন।
*প্রসঙ্গত ধর্ষণ নিয়ে আমার গানের লিঙ্কও এখানে দিয়ে রাখলাম।










