করোনা ভাইরাসকে আটকাতে সারা পৃথিবীর তাবড় বিজ্ঞানীরা নিরন্তর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। কিন্তু এখনও কোন দেশই তেমন কিছু আশার আলো দেখাতে পারেনি। এই অবস্থায় “প্রিভেনশান ইস বেটার দ্যান কিওর” কেই বেদবাক্য বলে মেনে নেওয়াই ভাল। আমরা করোনার মধ্যে বসে থেকেও যদি তাকে চোখ, নাক, মুখের মধ্যে দিয়ে ঢুকতে না দিই তাহলে কিন্তু ওই ভাইরাস আমাদের কাবু করতে পারবে না। আমরা জানি ২-৩ ভাবে করোনা ভাইরাস আমাদের শরীরে প্রবেশ করে। এক তো হলো হাঁচি,কাশি,কথা বলার সময় তৈরি হওয়া ড্রপলেট বাতাসে ভেসে এক মিটারের মধ্যে থাকা কোন ব্যক্তির শ্বাসের মধ্যে দিয়ে সরাসরি ঢুকে যায় অন্যের শরীরে। মাস্ক পরে তো সেটা আটকান গেলো। কিন্তু চোখ??
মাস্ক পরলেও খোলা থেকে যাচ্ছে চোখ। বাইরের যে কোন জিনিস স্পর্শ করার পর অসাবধানতাবশত চোখে হাত দিলেইস, চোখের জলের মধ্যে চলে আসে এই ভাইরাস। তার পর চোখের জলের সাথে প্রবেশ করে অশ্রুনালিতে। আশ্রুনালি চোখের জল বয়ে নিয়ে গিয়ে ফেলে নাকের ভেতরের অংশ নেসোফ্যারিংসে। আর এটাই করোনা ভাইরাসের আঁতুড় ঘর। এখানেই ভাইরাসের সংখ্যা বৃদ্ধি হয়। তারপর ধীরে ধীরে ছড়িয়ে পড়তে থাকে পুরো শ্বাসযন্ত্রে।
ইউনিভার্সিটি অফ নিউ সাউথ ওয়েলস-এ হওয়া এক গবেষণা আমাদের আরও সতর্ক করছে। এই গবেষণাটি ২৬ জন ডাক্তারী পড়ুয়ার উপরে করা হয়েছিল। ক্লাস চলার সময় তাদের না জানিয়ে একঘন্টার জন্যে ভিডিও রেকর্ডিং করা হয় সমস্ত ছাত্রের। সেখানে দেখা যায় এক ঘণ্টায় তারা প্রত্যেকে প্রায় ২৩ বার নিজেদের মুখের বিভিন্ন জায়গা স্পর্শ করছে। তার মধ্যে চোখে হাত দিয়েছে প্রায় ২৭ শতাংশ সময়। কল্পনা করুন ২৪ ঘণ্টায় সংখ্যাটা কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে? ডাক্তারী ছাত্র যারা নিজেদের হ্যান্ড হাইজিন সম্পর্কে সতর্ক তারাই যদি অসতর্ক ভাবে এতবার মুখমন্ডল আর চোখে হাত দিয়ে ফেলে,তাহলে সাধারণ মানুষ আর শিশুরা এর চেয়েও বেশি বার হাত দেবে এটা কোন সন্দেহের অবকাশ রাখে না। আর সেখানেই ঘটতে পারে বিপদ। চোখের মাধ্যমেই ভাইরাস ঢুকে পড়তে পারে আমাদের শরীরে।
মুখ ও চোখ স্পর্শ করা থেকে হাতকে দূরে রাখুন
- চোখে যাঁদের অল্প মাইনাস পাওয়ার আছে তাঁদের কেবল দূরের জিনিস দেখতে অসুবিধে হয় ,তাই ঘরে অনেকেই চশমা ব্যবহার করেন না। তাঁরা ঘরেও বেশিক্ষণ চশমা পরে থাকুন। যাঁরা বাইরের কাজে বেরোচ্ছেন, চোখে পাওয়ার না থাকলেও তাঁরা পাওয়ার ছাড়া চশমা অথবা গগলস পরে নিন। চোখে চশমা থাকলে চোখে অসতর্কতাবশত হাত দেওয়ার প্রবণতা অনেক কমে যায়।
- যদি মনে হয় চোখ খুব চুলকাচ্ছে হাত দিতেই হবে,তাহলে হাত দেওয়ার আগে ও পরে ভাল করে সাবান দিয়ে হাত ধুয়ে নিতে হবে।
- মনে মনে ভাবতে থাকুন, আমি অসতর্ক ভাবে চোখে হাত দিয়ে ফেলব না। এতে করেও চোখে হাত দেওয়া অনেকাংশেই কমে যেতে পারে।
- অফিসে ডেস্কের সামনে বা বাড়ির দেওয়ালে ছোট ছোট কাগজের টুকরোতে লিখে রাখুন আমি অসতর্ক ভাবে চোখে হাত দিয়ে ফেলব না। যতবার চোখে এগুলি পড়বে ততবার নিজে সতর্ক হযে যেতে পারবেন।
- হাতে গ্লাভস ব্যবহার করলে আড়ষ্ঠতার কারণে চোখে মুখে হাত দেওয়ার প্রবণতা অনেকটাই কমে যায়।
- যখন হাতের কোন কাজ করছেন না, বসে পড়ছেন,গল্প করছেন, টিভি দেখছেন তখন দুটি হাত এক করে মুষ্ঠিবদ্ধ করে বসুন।