কবে থেকে সবুজ একটা ফুল খুঁজে চলেছি| পাতায় যদি লাগে লাল বেগুনির বাহার তবে ধরাতলের এত এত সবুজের একটি টুকরো কেন জোটে না ফুলের! বহুদিনের খোঁজের জবাব এল|
ক্লাসে এল সপ্তাহের সাতদিনের পাঁচদিন নিখোঁজ থাকা বালক| এমনিতে বাঁদরের চূড়ান্ত| বছরে চল্লিশ দিন রেগুলার আসে ক্লাসে| বাকি সময়টা কখনো পান সিগারেট বিক্রি| কখনো পড়শীর লেটারবক্সের চিঠিপাটিগুলো বেমালুম অদলবদল করে দেয়া| টিফিনবক্সে একগাদা লিটটি বানিয়ে সেদিন আমার কাছে হাজির হল সে| কামাই করলেই এইসব আনে আমার জন্য| টিফিনের আরো নানারকম ভ্যারাইটি আছে| সোডা ওয়াটার, বেগুন সেদ্ধ ধনেপাতা দিয়ে, কাঁচা ডিমের রুটি! আর পরীক্ষায়? শুধু প্রথম প্রশ্নের নির্ভুল উত্তর| বল — শিকারি কোথায় থাকে? উত্তর —শিকারি বনে থাকে|
আমার এই ছাত্র কথা বলতে পারে না শুনতে পারে না| শোনা বলা দুইয়েরই অভাবে জগতের কত সত্য কত মিথ্যে ধরতেও পারে না সে| অথচ কী আশ্চর্য জানেন! এত সব না পারা ও না পাওয়ার মাঝে সে মুখিয়ে থাকে বন বাগানে সবুজ খুঁজতে| বন সংক্রান্ত প্রশ্নের সবসময় সঠিক উত্তর| —“বনে কী থাকে রে?” — গাছ গাছ|
গাছ তো গাছ| প্রতিবার গাছই হয় তার উত্তর| যেন এ বিশাল প্রাণিজগতের আর কিছুই থাকে না বনে| যেদিন সে আসে , ঢুকেই ক্লাসরুমের জানলাটা দেয় খুলে| দড়াম আওয়াজে চমকে উঠি| ঘাটের মড়া ময়ূর মেরে মেরে পাট করে ফেলে সবুজখেকো ছেলেটাকে| মার খেয়েও ভ্রূক্ষেপ নেই – জানলার শিকে মুন্ডু ঢুকিয়ে এপাশে ওপাশে চারিপাশে খুঁজে চলেছে সবুজ খোঁজে – শুধু খোঁজে— | যেন খুঁজলেই রোজ রোজ গজাবে নতুন সবুজ|
ক্লাসরুমের বাইরে একচিলতে উঠোন| অযত্নে জমেছে কিছু তৃণরাশি| ছেলেটা সেই অযতনকে বাঁচাতে চায় পরম মমতায়| বেলা একটার মধ্যে ছুটির জন্য আনচান করে তার শরীর| দুটো চড় সমেত ছুটি দেয়ার পর দেখি — সে গিয়েছে উঠোনে| ঢিল ইঁট ইত্যাদি সব অসবুজকে ছুঁড়ে ছুঁড়ে ফেলছে| কী আক্রোশ! এত জোর শব্দ করে ফেলে,আমি শিওর,যে জঞ্জাল ফেলেছে সে যদি ধারেপাশে থাকে তো শিউরে উঠবে| ড্রইং খাতা ভর্তি হয় সবুজ পাতায়|
আজো ঐরকম আওয়াজে ঢিল ছুঁড়ছিল সে| তার নাকের ডগায় জমা ঘাম,তার সিঙ্গারা চুল, সব দেখে মনে হচ্ছিল এবার যেন সে মাটি খুঁড়ে বার করবে সবুজ| ধরাভূমির সবুজে আর তুষ্ট নয় আমার সবজে খোকন| ঠিক তারই মত করে ক্লাসঘরের জানলা দিয়ে মুন্ডু ঢোকায় ময়ূররা। ঠিক তারই মত করে|—-” ও ছেলে, দে, দে, দে তো দেখি আমায় একটা সবুজ ফুল| ভেবেছিলাম, কথা বুঝবে না হাবা ছেলেটা| ওমা ,দেখি ঘাসগুলোকে গার্ডার বেঁধে একটি ফুল বানাচ্ছে সে| সবুজ ছেলে গুঁজবে সবুজ ফুল| মায়ের মাথাগরম মাথায়| কথা বুঝল| ব্যথাও যে–| মার সাধ পুরিল|
আজ খুব কষ্ট হচ্ছে ছেলেটার জন্য– অনেকদিন দেখিনি তাকে| তাই তার সবুজ খাওয়ার গল্পটা তোমাদের দিলাম।
এই শিকারির সাথে হাত মেলানোর সৌভাগ্য হয়েছিল আমার। পিকনিকে বিশেষ লক্ষ ছিল আমার দিকে। স্কুলে বিভিন্ন উপলক্ষে পরেও গিয়েছি। দেখা হয়নি। খেয়ালী বোধহয়।
স্বাভাবিক । সবুজের পূজারী ইঁট – কাঠে বন্দী হয় না।
আমাকে তোর সাথী করিস শিকারি ।
লেখিকা খুব ভালো ভাবে শিশু মনের একটা দিক তুলে ধরেছেন । সবুজ- চিরনবীন , প্রাণবন্ত। শিশুর ভাবনা ,তার ভালো লাগা সুন্দর ভাবে ফুটে উঠেছে।আর আছে ময়ূরী মিত্রের শব্দ চয়ন — সিঙ্গারা চুল।
সবুজ পৃথিবীর কত প্রয়োজন সেটা ওই ছেলে ঠিক বুঝেছে।
এমন লেখা …..
মায়া ময় সবুজ ।
আহ্…অসীম ভালো লাগা। এ সবুজ ছেলে হয় না কেন আরো। পায় না কেন এমন আরো সবুজ মা…
একটা অদ্ভুত কষ্ট মেশা ভালোলাগা…আপনার থেকে পাই। খুব দেখতে ইচ্ছে করে…আপনার মতো করে।
ভালো থাকুন আপনি। ভালো থাকুক আপনার সবুজেরা।