লিখে কিছু পাল্টে দেওয়া সম্ভব নয়। সে আমিও জানি। সেই কারণেই আজকাল কিছু লিখতে ইচ্ছা করে না। কিন্তু কখনো কখনো, না লিখেও পারি না। কারণ আমার রাগ, ক্রোধ, বিদ্বেষ, ক্ষোভ, দুঃখ সব কিছুই একমাত্র লিখেই প্রকাশ করতে পারি। এর বাইরে আর কিছু, পারি না। পারি না অনাচার করতে। পারি না চুরি করতে। পারি না দুই-নম্বরি করতে। পারি দু কলম আজে বাজে লিখতে।
মেডিক্যাল কাউন্সিলের এবার ভোটে, আমাদের মানে JPD (Joint Platform of Doctors)-এর স্লোগান ছিল “পালটে যাচ্ছে কাউন্সিল”। সত্যিই হয়তো পালটে যেত। সত্যিই। কিন্তু…
নাহ্ দোষ কারো নয়। না আমার না আপনার। তবু…
ঠিক একটা মাস আগে, গত সেপ্টেম্বর মাসে আমি একটা ভোটে অংশগ্রহন করেছিলাম। সেখানেও একটা প্যানেলকে ভোট দিতে হতো, ভোটারদের। ছয় জনের প্যানেল। ভোট দিয়েছিল ভোটাররা। সবাই সাধারণ মানুষ। লাইন দিয়ে, রোদের মধ্যে দাঁড়িয়ে, বৃষ্টিতে ভিজে সকলে ভোট দিয়েছিল। সেই ভোটের গণনার সময় উপস্থিত ছিলাম। সেখানে এমন একটাও ভোট বাতিল হয়নি, যেখানে ভোটার ছটার বেশি ভোট দিয়েছেন। সকলেই ঠিক ছটা করেই ভোট দিয়েছিলেন। কেউ বেশি দেয়নি। কেউ না। আমরা হেরেছিলাম। তবু…
গত কয়েক দিন মেডিক্যাল কাউন্সিলের সামনেই ছিলাম। ভোটের গণনা হচ্ছিল। একেরপর এক নতুন নতুন ধরণের ভুয়ো ব্যালটকে ধরা হচ্ছিল। তাতে কোনটায় এক প্রার্থীর নাম নেই। কারো নাম দুইবার। কখনো পাতার রং আলাদা আলাদা। কখনো ছাপার রং আলাদা। অবাক হচ্ছেন? এতে অবাক হবার কিছু নেই। কারণ এর বাইরেও আরো নিশ্চয়ই আরো কিছু আরে যা আমরা ধরতেই পারিনি। এ ব্যাপারে সকলেই নিশ্চিত। হবার কথা নয়। কোন ভ্রান্তিই হবার কথা নয়। আমি না চাইলে হতে পারে না। তবু হচ্ছিল। হচ্ছিল কারণ, কেউ কেউ চেয়েছিলেন। কারণ দখল। জবরদখল। মানুষের (ডাক্তারদের) থেকে আমি দূরে। বহু দূরে। সাধারণ জনসংযোগ টুকু আমার নেই। আমি জানি। আমি জানি আমি জনপ্রিয় নই। আমি বিখ্যাত কখনোই নই। হ্যাঁ, থাকলে কুখ্যাতি আছে! তাই কেউ যে আমাকে ভোট দেবে না, তা আমি জানি। সুতরাং, আমার কর্তব্য কি? দখল যখন আমার লক্ষ্য, তখন দুর্নীতি ছাড়া আমার কি আর কোন পথ খোলা আছে? নাহ্ নেই। আমি আমার পথে অবিচলিত। আমার পথ, দুর্নীতির।
একজন ডাক্তার তাঁর ব্যালট হাতে পাবার পর, হাতে বেশ কিছু সময় ছিল। যখন ধীরে সুস্থে ভোটটা দিতে পারবে। এই নয় যে তার পিছনে লম্বা লাইন আছে। সকলে তাড়া দিচ্ছে। সময় নিয়ে ধীরে সুস্থে ভোটটা দিতে পারবে। পেরেছে। সকলে সেই ভাবেই ভোটটা দিয়েছেন। অথচ…
ভোট গণনার সময় দেখা গেলো, অজস্র ডাক্তার সাতটার বদলে আটটা, নটা বা দশটা ভোট দিয়েছেন। কখনো সাতটা ভোট JPD-র প্রার্থীদের একটি কালি দিয়ে দেবার পর অন্য কালিতে একটি, দুটি বা তিনটি ভোট দিয়েছেন। কখনো সাতটা ভোট একরকম ভাবে দিয়ে, কয়েকটি ভোট যেভাবে দেবার কথা নয় সেইভাবে দিয়েছেন! কখনো পেন্সিল দিয়ে সাতটা ভোট দেবার পর ডাক্তারদের মনে হয়েছে দুই একটা বেশি ভোট পেন দিয়ে দেবেন! আসলে ডাক্তাররা নিশ্চয়ই জীবনে কখনোই ভোট দিতে পারেন না, তাই ব্যালট হাতে পেয়ে তাদের খুশির সীমা ছিল না। তাই সাতে খুশি না হয়ে আটটা করে, নটা-দশটা করে ভোট দিয়েছিলেন। সত্যিই! একজন দুজন হলে বিশ্বাস হতো। এক ভুল রাজ্যের হাজার দুয়েক ডাক্তার করবেন! এক ভুল। উফফফফফফফফ্
খারাপ লাগছে সেইসব ডাক্তারদের জন্য। যারা নিজের শিড়দাঁড়া সোজা রেখে, নিজেদের ভোটটা নিজেরা দিয়েছিলেন। যাদের ভোটগুলো এইভাবে নষ্ট করে দেওয়া হলো। যে ডাক্তাররা তাঁর সহ-ডাক্তারের ভোটকে মান্যতা দেয় না। যে তাঁর ভোটাধিকারকে অস্বীকার করে। বিপদের দিনে তাঁর পাশে দাঁড়াবে? সম্ভব?
যে ব্যালটের গণনা হয়ে গেছে। যে ব্যালট বাতিল হয়ে গেছে। ব্যালটের গায়ে বাতিল লেখা আছে, পরে গণনার সময়, আবার সেই ব্যালট পাওয়া গেল। অর্থাৎ ভুল করে চলে এলো। আসার কথা নয়। কিন্তু কেন? কারণ ব্যাখ্যা করা হলো, ডাক্তার নিজের ভুল বুঝতে পেরে নিজেই ব্যালটে প্রথমে বাতিল লিখলেন। তারপর পোস্ট অফিসে গিয়ে গাঁটের কড়ি খরচা করে, সেই ব্যালট কাউন্সিলে পাঠালেন! ভাবা যায়! কল্পনার দৌড় কতো!
আমি পারতপক্ষে গালাগালি দেই না। কিন্তু মনে হচ্ছে এরা কি মনে করেন ডাক্তারদের। আমরা সবাই গান্ডু!
মন মেজাজ খারাপ। ভোট কেন্দ্রের বাইরে বেরিয়ে আসছি। হঠাৎই শুনতে পেলাম, এক পুলিশকর্মী তার সহকর্মীকে বলছে, “এতো রকমও জালি হয়! কল্পনা করতে পারিনি।” মুখে হাসি চলে এলো। যাক! ডাক্তারদের জয়জয়কার সর্বত্র।
আমি চিরকালই বিশ্বাস করে এসেছি, তৃণমূল মানেই দুর্নীতি। তৃণমূল মানেই নোংরা। অসৎ। ধোকাবাজি। আজ আমার বিশ্বাস আরো দৃঢ় হলো।