ভেবেছিলাম কিছু লিখবো না। বাধ্য হচ্ছি।
নিজেকে সরিয়ে রাখা সম্ভব হলনা।
ওয়াকফ্ বোর্ডের প্রচুর সম্পত্তি। কিন্তু এই সম্পত্তিগুলো অতীব শস্তায় ভোগ করে কারা?
একটা সুবিধাভোগী এবং পাওয়ারফুল ধনী শ্রেণী।
এই বোর্ডের উপার্জন থেকে কখনো একটা আধুনিক স্কুল, কলেজ, বা কোন মেডিক্যাল কলেজ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে? যেখানে সর্বঅর্থে পিছিয়ে পড়া সংখ্যালঘু শ্রেণী থেকে উঠে আসবে উজ্জ্বল নক্ষত্ররা? এই বোর্ড তার বিপুল সম্পত্তি নিয়ে মুসলিম সমাজের সামগ্রিক উন্নতির জন্য কী অবদান রেখেছে?
স্বার্থে ঘা লেগেছে বলে সমগ্র কমিউনিটিকে নাচিয়ে উত্তেজিত করে পরিস্থিতি আরো ভয়াবহ করে তোলা হচ্ছে। ওয়ান ইজটু ওয়ান সম্পর্কও বিষিয়ে যাওয়ার মুখে।
ওয়াকফ এখন রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে হঠাৎ আবিষ্কৃত এক সোনার খনি। এতদিন কেউ তেমন নজরদারি করেনি বলে চিরদিন সেরকম চলবে, সেটা ভাবা মূর্খামি।
আইনের প্রতিবাদ হচ্ছে, হোক। কিন্তু যারা আন্দোলন পরিচালনা করছে, তাদের হাতে যদি আন্দোলনের রাশ না থাকে, তাহলে পরিণতি ভালো হবে? সাধারণ মুসলিম জনতা ভয় পাচ্ছে, নতুন আইনের বলে, সরকার যেকোন মসজিদ, ইদগাহ বা কবরস্তানের দখল নিয়ে নিতে পারে। কিন্তু কোন দায়িত্বশীল অথরিটি থেকে এটা বুঝিয়ে দেওয়া হয়নি বা হচ্ছেনা যে, এরকম কিছু ঘটবেনা। শুধুমাত্র দুর্নীতি দমনের জন্য অথবা ওয়াকফ বোর্ড দেশের আইন মেনে স্বচ্ছভাবে পরিচালনা করবার মহৎ উদ্দেশ্যেই আইন আনা হয়েছে, এটা পরিষ্কারভাবে বোঝানো হোক। বিশ্বাসযোগ্যতা চাই। নইলে, ধরে নিতে হবে, ডালমে কুছ কালা হ্যায়। মুসলিম জনতা যেটা ভয় পাচ্ছে, মসজিদ, ইদগাহ বা কবরস্তান সরকার যে কোন সময় কেড়ে নিতে পারে, সেটা সত্যি হলে, এই আইন মেনে নেওয়া কঠিন। বাতিল অথবা আরো সংশোধিত হওয়া উচিত।
পশ্চিমবঙ্গ বাদে অন্য রাজ্যগুলোতে এইরকম বাড়াবাড়ি হচ্ছে? অন্যান্য রাজ্যগুলোতে এই আন্দোলনের তীব্রতা কতখানি? এই হুলিগ্যানিজম কোন সদর্থক ভবিষ্যৎ এনে দেবেনা। প্ররোচনায় পা না দিয়ে শান্তিপূর্ণ আন্দোলন হোক। মঞ্চে বসে চোখরাঙানো ডায়লগ চলেনা।
একটা ঘটনা বলে, এই লেখাটা শেষ করবো।
কোলকাতায় ডাক্তারি পড়তে পা রেখেছি, কিন্তু থাকার জায়গা জোটেনি। আমার পরিচিত একজন প্রভাবশালী মুসলিম ব্যক্তি, যিনি নিজেও একটি ওয়াকফ সম্পত্তিতে ব্যবসা করতেন, তিনি আমাকে পার্ক সার্কাস এলাকায় একটি বড় বিল্ডিংএ অত্যন্ত বিলাসবহুল ফ্ল্যাটে থাকবার ব্যবস্থা করে দিলেন। সেই ফ্ল্যাটে তাঁর নিজস্ব পরিচারক সহ এক অতি বৃদ্ধ ব্যক্তি একা বসবাস করতেন। তাঁর পুত্র কন্যারা সবাই বিদেশে। তিনি একসময় ছিলেন ঢাকায় নিযুক্ত প্রথম ভারতীয় হাইকমিশনার। আমি ওখানে একদিন কাটিয়ে পরদিন গিয়ে বললাম, ওখানে থাকা সম্ভব নয়। তিনি উত্তর দিয়েছিলেন, আরে, ঐ বুড়ো আর ক’দিন বাঁচবে? তার পরে তো তুমি একাই ওখানে থেকে যাবে। ওটা ওয়াকফ সম্পত্তি! কেউ আসবেনা তোমাকে ওখান থেকে উৎখাত করতে।
বলা বাহুল্য, ওখানে আর দ্বিতীয়বার যাইনি। তখন আমি ১৬+.
আমার পরিচিত প্রভাবশালী ব্যক্তিটির মৃত্যুর পরে, তাঁর পরিবার, অর্থাৎ স্ত্রী এবং কন্যারা তাঁর দখলীকৃত ওয়াকফ সম্পত্তিটি আগলে রাখতে পারেননি। সেই পাড়ার প্রভাবশালী বাহুবলী সেই প্রপার্টির দখল নিয়েছিল।
👍