ইউনিয়ন ফর ইন্টারন্যাশনাল ক্যান্সার কন্ট্রোল বা ইউ আই সি সি আগামী তিন বছরের জন্য “ক্লোস দা কেয়ার গ্যাপ” প্রচার শুরু করেছেন। ব্যাপার টা কি?
ক্যান্সার চিকিৎসার বিগত দুদশকে প্রভুত উন্নতি হ’য়েছে। যে ক্যান্সার অনিরাময়যোগ্য ছিল তা আজ উন্নত রেডিয়েশন, সার্জারী, কেমোথেরাপি, ইমুনোথেরাপি চিকিৎসার মাধ্যমে সম্পুর্ণ নিরাময়যোগ্য। এমনকি স্টেজ ফোর ক্যান্সার রোগীকেও সুস্থ ভাবে বাঁচিয়ে রাখা যাচ্ছে বছরের পর বছর। কিন্তু এই চিকিৎসার সুবিধা কি সবার কাছে সমানভাবে পৌঁছচ্ছে? না। একটা বিরাট বৈষম্য বা গ্যাপ রয়েছে ধনী দরিদ্রের মধ্যে, নারী পুরুষ বা তৃতীয় লিঙ্গের মানুষের মধ্যে, সাদা, কালো, বাদামী চামড়ার রং-এর মধ্যে, শিশু-যুবা-বৃদ্ধের মধ্যে, প্রাচ্য আর পাশ্চাত্যের মধ্যে, শহর আর গ্রাম বা মফস্বলের মধ্যে, তথ্যপ্রাপ্ত, তথ্যপ্রাপ্তির সুযোগহীন বা ভুল তথ্যপ্রাপ্তের মধ্যে। অথচ সকলের চিকিৎসা পাওয়ার অধিকার সমান। এই বৈষম্য দূর করার চেষ্টা করা আশু কর্তব্য। সমস্যা অনুধাবন করে সংঘবদ্ধ হয়ে বার্তা পৌছে দিতে হবে সিদ্ধান্তকারী দেশনেতাদের কাছে, জনগণের কাছে।আসুন কিছু বৈষম্য দূরীকরণের জন্য আমরাও সচেষ্ট হই।
আসুন দূর করি সামাজিক বৈষম্য। যে বৈষম্য একজন নারীকে বাধ্য করে নিজের শারীরিক সমস্যা গোপন করতে। স্তনে একটি গুটলি বা মেনোপজের পর রক্তপাত কেন সংকোচে লুকিয়ে রাখতে হয় আমাদের মা বোনেদের? কেন নারী আজও দ্বিধাগ্রস্ত হন নিজের শারীরিক সমস্যা নিয়ে অন্যকে বিব্রত করতে?
কোন সংকোচ থেকে কোন দ্বিধা থেকে একজন বয়স্ক পুরুষ নীরবে সহ্য করে যান প্রস্রাবের সমস্যা। কেন সামাজিক সুরক্ষা একজন বয়স্ক মানুষের অসুস্থতার দ্বায়িত্ব নেবে না?
তৃতীয় লিঙ্গের মানুষেরা কেন এড়িয়ে চলেন চিকিৎসালয়ের দরজা? কেন সমান সহমর্মিতা,সমান যত্ন সমাজ তাদের জন্য দেখাতে পারে না।
কি কারণে ক্যান্সার চিকিৎসা কেবল বড় বড় শহরেই সীমাবদ্ধ? মফস্বলের, গ্রামের মানুষকে সঠিক পরামর্শ কে দেবেন? কেন তাদের দূর দুরান্তে ছুটে যেতে হয় চিকিৎসার জন্য?
যেখানে সঠিক পরামর্শ, সঠিক তথ্য অপ্রতুল সেখানে কেনই বা ভুল তথ্য, বিকৃত তথ্য, বিভ্রান্তকারী বিজ্ঞাপনকে প্রচারের অনুমতি দেওয়া হবে? আসুন ভুল ও অবৈজ্ঞানিক চিকিৎসা পদ্ধতির প্রচার বন্ধ করতে সরকারকে সচেষ্ট করি। বিকল্প চিকিৎসার নামে ক্যান্সার চিকিৎসার অমুল্য সময় নষ্টকে আটকাই।
ক্যান্সার চিকিৎসার বিপুল উন্নতি পৌঁছে দিতে হবে প্রতিটি মানুষের কাছে। আসুন জোটবদ্ধ হই। সমস্যা অনুধাবন করে সংঘবদ্ধ হয়ে সমাধানের পথ খুঁজি। এটাই ইউ আই সি সি-র ক্যাম্পেইন।
২০২২ সমস্যা অনুধাবন করা, ২০২৩ সারা পৃথিবীর মানুষের সংঘবদ্ধ হওয়া আর সবার সমান ক্যান্সার চিকিৎসার দাবিতে আওয়াজ তোলা আর ২০২৪-এ আমাদের আওয়াজ পৃথিবীর সব দেশের নেতাদের কাছে পৌঁছে দেওয়া এবং তাদের চ্যালেঞ্জ করা সমান চিকিৎসার অধিকারের দাবীতে ।
“সকল ক্যান্সার রোগীর সমান যত্ন আর চিকিৎসা চাই।” আসুন এটাই হোক আমাদের স্লোগান।