বিশ্বাসযোগ্যতার নিরিখে আমরা একেবারে তলানিতে বাস করি। এতে কোন সন্দেহ নেই। যেমন, ধরুন, পরিযায়ী শ্রমিকদের নিয়ে ট্রেন দাঁড়িয়ে আছে স্টেশনে, হঠাৎ দেখা গেল, কোন এক সংস্থা কিছু খাবার নিয়ে পৌঁছালো সেই প্ল্যাটফর্মে। মূহূর্তেই বুভুক্ষু জনগণ সেখানে মারপিট করে যে যেভাবে পারে, সেই খাবারের উপরে পড়ে মারপিট ছিনতাই শুরু করে দিল। সংবেদনশীলতার নিরিখে এটা স্বাভাবিক বলে আমরা ধরে নেবো।
দিনকয়েক আগে এক গরীব ফুটপাতিয়া ফল বিক্রেতার সমস্ত আম, প্রায় তিনহাজার টাকা ভ্যালু, লুঠ হয়েছে দিল্লির রাস্তায়, কেউ কেউ নাকি হেলমেটের ভেতরে ঢুকিয়ে নিয়ে পালিয়েছে। দুর্দিনের বাজারে এটাও সহ্য করলাম।
বাস দাঁড়িয়ে আছে। ভেতরে যাত্রী বসে আছে। পাশ দিয়ে যাচ্ছেন। বাসের জানালা দিয়ে থুতু উড়ে এল আপনার দিকে।
হাইরোডের ধারে দাঁড়িয়ে আছেন। চলন্ত কারের জানালা নামিয়ে আরোহী খালি জলের বোতলটা ছুঁড়লেন, সেটা গিয়ে লাগলো আপনার গায়ে। নয়তো পড়লো রাস্তায়, পরের গাড়ির চাকাটা তার ওপরেই চেপে একাকার।
টোল প্লাজায় লম্বা লাইন। আপনার ড্রাইভার ফাঁক গলে টপকে বেলাইনে ঢুকবার চেষ্টা করে ধাক্কা খেয়ে, তার উপর চোটপাট করলো প্রকৃত ধৈর্যধারী গাড়ির ড্রাইভারকে।
এরা গরীব নয়।
আমার অনেক পেসেন্ট দেখিয়ে যাওয়ার পরে আমাকে ফি দিতে ভুলে যায়। পরের রোগী দেখার তাড়ায়, অনেকসময় আমি বা অ্যাসিসট্যান্টও ভুলে যায়। যতক্ষণে মনে পড়ে, ততক্ষণে সে বা তারা নেই। অ্যাসিসট্যান্ট তখন বাইরে খুঁজতে যায়, কখনো ওষুধ দোকানে তাদের আবিষ্কার করে, আবার কখনো তাদের মোবাইল নম্বরটা লেখা থাকলে ফোন করে ডেকে নেয় । এটা কিন্তু নিরীহ উপমা।
এটা আমাদের চরিত্র বা বলা ভাল, অভ্যাস।
এত কথা কেন বলছি?
আমেরিকায় করোনার প্রকোপ, শুরু থেকেই সংক্রমণ ও মৃত্যুহার যখন তীব্র, তখনই পড়লাম, ট্রাম্প সাহেব লকডাউনের বিরুদ্ধে। এমনকি, তখনও নিউ ইয়র্কের শহরতলীতে ট্রেন চলছে, শপিং মল খোলা। কিন্তু ওখানকার লোকজন শৃঙ্খলাপরায়ণ, নিজেরাই বুঝে নেয় নিজেদের কর্তব্য। তবুও পরিস্থিতি বেসামাল। সবাই ট্রাম্পকে পাগল টাগল বলছে।
আমাদের দেশে লেটেস্ট পরিস্থিতি কী?
সংক্রমণ, লাখ ছাড়িয়েছে।
গতকাল চব্বিশ ঘণ্টায় আক্রান্ত সাত হাজারের বেশি।
পশ্চিমবঙ্গে দৈনিক সংক্রমণ দুশো ছাড়িয়েছে।
আমরা এবার ট্রেন চালাবো।
বাস চলাচল শুরু হয়ে গেছে।
উড়োজাহাজও এবার উড়তে শুরু করবে শীগগির।
অথচ আমরা আমাদের জাতীয় অভ্যাস বজায় রেখে করোনাকে রুখে দেবো!
লকডাউন লেশনের(Lesson) ক্যাঁতায় আগুন!
_____
আমার ছেলে মাধ্যমিক দিয়েছিল 2005এ। পনেরো বছর আগে। তার মানে তখন আমি সাতচল্লিশ। আমার এক ভায়রা ভাই, ছোট শালীর স্বামী, একটু ভারী চেহারা, এসি নাহলে কষ্ট হতো তার, টিভিও দেখতো এসিতে বসে। এই আমপানের দুদিন পরেও বিদ্যুৎ আসেনি তার বাড়িতে। হঠাৎ খবর অজ্ঞান হয়ে গেছে। তখন সকাল এগারোটা বা দুপুর হবে। স্ক্যান করে, ম্যাসিভ ব্রেন হেমারেজ। মিডলাইন শিফ্ট। ভেন্ট্রিকল ফুল উইথ ব্লাড। তড়িঘড়ি নিউরোসায়েন্সে। একটুখানি তখনও সারভাইভ্যাল চান্স ছিল, 10%, । ব্রেনডেথ তখনও হয়নি। ব্রেন খুলে রক্তপাত থামানো হল। যদিও সে বাঁচলনা। তার ছেলে এবারের মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী। যেদিন ভর্তি হয়, আমার মিসেস গিয়েছিল হাসপাতালে, রাস্তার বাধা টপকে টপকে। রাত আটটায় যখন ফিরছিল, সেটা বাইশ তারিখ, কোনা এক্সপ্রেস অবরোধে পড়ে রাত দুটোয় বাড়ি ঢুকেছিল। এক ঘন্টার রাস্তা ছ’ঘন্টা লাগিয়ে।
মৃতদেহ আনতে হবে। ইনশিওরেন্স আছে। নেট নেই। টিপিএ NA, মানে নট অ্যাভেলেবল। সিস্টেম কখন রেস্টোর হবে তার ঠিক নেই। ফেলো কড়ি মাখো তেল হল।
গতকাল গেছলাম মাটি দিতে। মানে ক্রিমেশনের আমাদের ভাষ্য।
সেখানে একটা মসজিদের গ্রীলে এই বিলবোর্ডটা টাঙানো ছিল।
#আতঙ্কিত।
#আশঙ্কিত।
#উৎকন্ঠিত।
কখন বুঝতে হবে একটা দেশ ও সমাজ প্রায় ধ্বংসের মুখে।
যখন,
1. দরিদ্ররা ধৈর্যহীন হয়ে গেছে।
2. ধনীরা কৃপণ হয়ে গেছে।
3. মূর্খরা মঞ্চে বসে আছে।
4. জ্ঞানীরা পালিয়ে যাচ্ছে।
5. শাসকরা মিথ্যা কথা বলছে।
নে সব্য, Sabyasachi Sengupta, জানতে চেয়েছিলি। আমার ঈদ কেমন কাটছে।
ছবির ঋণসূত্র ডাঃ দীপঙ্কর ঘোষ।
বিলবোর্ড এই কথাগুলি লেখা ছিল।
এটা না জানলে, এই পোস্টটা অসম্পূর্ণ মনে হবে।
তাই অ্যাডালাম।
কখন বুঝতে হবে একটা দেশ ও সমাজ প্রায় ধ্বংসের মুখে।
যখন,
1. দরিদ্ররা ধৈর্যহীন হয়ে গেছে।
2. ধনীরা কৃপণ হয়ে গেছে।
3. মূর্খরা মঞ্চে বসে আছে।
4. জ্ঞানীরা পালিয়ে যাচ্ছে।
5. শাসকরা মিথ্যা কথা বলছে।
(Dr Belal Hossain)
লেখা টা ভালো লাগলো। নিজের লেখা য় নিজেই কেন কমেন্ট করলেন বুঝলাম না।
আমার আঁকা ব্যবহার করায় আমি ঋণী রৈলাম ।
দাদা,আপনার কষ্ট টা অনুভব করছি।সত্যিই আমরা সবাই খুবই খারাপ আছি।নিরন্ন কর্মহীন মানুষ এখন ঝড়ের তান্ডবে গৃহহীন।কিছু বলার ভাষা নেই।
সন্তান টি যেন দুঃখ কষ্ট কাটিয়ে ভালভাবে নিজের জীবনের প্রথম পরীক্ষা দিতে পারে।