ধানাইপানাই না করে স্পষ্ট কথাটা বলেই দেওয়া যাক।
এবছর দুর্গাপুজো অনুচিত – অন্যায়। হ্যাঁ, অন্যায়। অন্যায় তাদের প্রতি যারা এই এতগুলো দিন ধরে লড়াইটা লড়ে চলেছে।
অর্থাৎ ডাক্তার, স্বাস্থ্যকর্মী, পুলিশ, ব্যাঙ্ককর্মী – অন্যায় তাঁদের সবার প্রতি।
সত্যি বলছি, এঁরা ক্লান্ত। বড্ডো ক্লান্ত। এই সাতমাস ধরে একই রুটিন আর পারা যাচ্ছে না। রোজ সাত-আট ঘণ্টা ধরে চাপা মাস্ক, মুখের সামনে হেডশিল্ড – ক্লান্ত লাগছে। এই দুই একসাথে পরে থাকলে পাশের মানুষটাও কথা ভালো শুনতে পান না, অতএব চীৎকার করে কথা বলা অভ্যেসে পরিণত হয়েছে। আর দিনের শেষে মাথা ধরা, ঘাড় আর মাথার পেছনে বিরক্তিকর ব্যথা – সত্যিই আর পারা যাচ্ছে না।
আর যাঁরা পিপিই পরে কাজ করছেন, তাঁদের দশা নিয়ে আলোচনা করার মানে হয় না। রেব্যান সানগ্লাস যখন প্রথম এদেশে এলো, তখন বিজ্ঞাপনের ট্যাগলাইন ছিল – গেট অন দ্য আদার সাইড অফ আ রেব্যান। পিপিই ব্যাপারটাও তা-ই – এই ভ্যাপসা গরমের দেশে ওই অনির্বচনীয় অভিজ্ঞতা যিনি পিপিই কখনও গায়ে না চড়িয়েছেন, তাঁর পক্ষে অনুভব করা-ই সম্ভব নয়।
অবশ্য, মাস্ক শিল্ড পরি বা না পরি, চীৎকার করি বা না করি, এমনিতেও আমাদের কথা আর কে-ই বা শুনছে!!!!
আমাদের মধ্যে প্রত্যেকে, হ্যাঁ প্রত্যেকে, কাউকে না কাউকে হারিয়েছি এই কয়েক মাসে। কেউ সরাসরি ঘনিষ্ঠ মানুষদের মধ্যে কাউকে। কেউ বন্ধুকে, সহকর্মীকে, ভ্রাতৃসম জুনিয়রকে, অগ্রজপ্রতিম সিনিয়র দিদি বা দাদাকে, স্যার বা ম্যাডামকে – সত্যি বলছি, হারিয়েছি।
আর যাঁরা নিজেদের প্রাণটিই হারিয়েছেন, তাঁদের কথা এখানে উল্লেখ নিষ্প্রয়োজন।
আর পারা যাচ্ছে না।
পুজোর মুখে বাজারে ভিড় দেখে বিরক্তও লাগছে না আর। এতটাই ক্লান্ত হয়ে গেছি।
অনেকেই বলছেন, ধূমধাম করে তো পুজো হবে না এবার – ভিড়ও নিয়ন্ত্রণে রাখা হবে – তাহলে ক্ষতি কী!! বিশেষত অর্থনীতির এই দুরবস্থায়… জানেনই তো পুজোকে উপলক্ষ করে কতো মানুষের উপার্জনের ব্যবস্থা… ইত্যাদি ইত্যাদি। ঠিকই কথা। কিন্তু, ধূমধাম জাঁকজমক ভিড়ভাট্টা না হলে সেই অর্থনীতির দিকটা রক্ষিত হবে কি??
তাহলে ব্যাপারটা কী দাঁড়াচ্ছে? কোভিডের সুরক্ষাবিধি মেনে চলে পুজো হলে অর্থনীতির যুক্তি দাঁড়াচ্ছে না। আরেকদিকে অর্থনীতির যুক্তি দেখতে গেলে করোনা নিয়ে চিন্তা শিকেয় তুলে দিতে হয়। আর সেটাই যদি করতে হয়, তাহলে লোকাল ট্রেন একদম আগের মতো করে চালু করতে বলুন – সেটা বন্ধ থাকার কারণে কিন্তু এক বিপুল সংখ্যার মানুষ ঘোর বিপদে পড়েছেন। ভিড় বা একজায়গায় লোক জড়ো হওয়া নিয়ে যদি না-ই ভাববেন, তাহলে ইশকুলগুলো খুলুন। একবছর ইশকুল, এমনকি পড়াশোনা বন্ধ থাকলেও আপনার আমার বাড়ির ছেলেমেয়েদের জীবন শেষ হয়ে যাবে না – কিন্তু, প্রত্যন্ত অঞ্চলে অনেক ছেলেমেয়েরই এজীবনের মতো ইশকুলে আসা শেষ হয়ে যাবে। লোক জড়ো হওয়ার ভয় না পেলে, কোভিড নিয়ে দুশ্চিন্তা না করতে চাইলে কোন কাজটা জরুরী বা প্রাথমিক কর্তব্য? দুর্গাপুজো??
পাশাপাশি, খেয়াল করেছেন কি, রাজ্য সরকারের এই খয়রাতি এবং বিধিনিষেধ-অনুমতিতে ছাড়ের কারণে এই বছর বেশ কিছু পুজো প্রথমবারের মতো চালু হবে? আমিই অন্তত এরকম দুখানা পুজোর খবর পেয়েছি। চোখকান খোলা রাখলে আপনিও পাবেন। সুরক্ষাবিধি রক্ষিত হবে??
অনেকে বলছেন, করোনা আর আগের মতো ডেঞ্জারাস নয়। এখন অনেক নিরীহ টাইপের হয়ে গিয়েছে। সত্যিমিথ্যে জানি না। হতেও পারে হয়তো বা। শুধু মনে করিয়ে দিই, গতকাল বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা একদিনে সাড়ে তিন লক্ষ নতুন আক্রান্তের কথা জানিয়েছেন – রেকর্ড। আগের রেকর্ডটি ছিল এই সপ্তাহের গোড়াতেই – রেকর্ড এক সপ্তাহও টিকল না। তর্কের খাতিরে যদি মেনেও নিই, যে, মৃত্যুর হার কমে আদ্ধেক হয়ে গিয়েছে (তথ্য নেই অবশ্য সেরকম), তাহলেও সংক্রমণ দ্বিগুণ হলে মৃত্যুর সংখ্যাটা কিন্তু একই থাকবে।
এই মুহূর্তে হাসপাতালগুলোতে বেড পাওয়া নিয়ে সমস্যা হচ্ছে। আক্রান্তের সংখ্যা বাড়তে থাকলে, তখন কী হবে? হাসপাতালে গিয়ে অক্সিজেনটুকু পাওয়ার সুযোগটাও যদি না পান, মৃত্যুহার ওই আদ্ধেকে থেমে থাকবে তো!!!
বিশ্বাস করুন, কোভিড আর ডেঞ্জারাস নেই, এমন নয়। আসলে আমরা অভ্যস্ত হয়ে গিয়েছি। হাঁটতে গিয়ে পায়ের সামনে কেউটে সাপ দেখলে শহরের মানুষ যতখানি ভয় পান, গ্রামের মানুষ ততোখানি পান না, কেননা এ তাঁর কাছে ততোটা অপরিচিত ব্যাপার নয় – ভয় পাওয়া বা না পাওয়ার সাথে কিন্তু কেউটে সাপের বিষের তেজ কমে বা বাড়ে না।
কী আর বলব!! বলতেও আর ভাল্লাগছে না।
আপনি একদম ঠিক বলেছেন sir….
Actually বিপদ আরও বাড়বে
ডাক্তারের কথা কবে যে বুঝবে মানুষ।