২৫.১২.২০১৯
আজ ছুটির দিন। ভাবলাম অনেকক্ষণ ল্যাদ খাব। কিন্তু ল্যাদ খাবার জন্যও কপাল করে জন্মাতে হয়। তাই সাত সকালেই বেরতে হল ইমার্জেন্সি সিজারিয়ান সেকশনে।
ওটিতে মিনি ভারতবর্ষ। হিন্দু ডাক্তার, মুসলিম পেশেন্ট, খ্রিশ্চান নার্স। ঢুকে একে অপরকে গুড মর্নিং বলার পরই জানানো হল মেরি ক্রিসমাস। শুরু হল অপারেশন।
আমাদের অ্যানাস্থেসিস্ট আবার গান পাগল ছেলে। তাই সবাই মিলে গান শুনতে শুনতে অপারেশন করা আমাদের অভ্যাস। আর সেই সুযোগে আজকের যিশু বেরিয়েই শুনতে পেল
Imagine there’s no countries
It isn’t hard to do
Nothing to kill or die for
And no religion, too
You may say I’m a dreamer
But I’m not the only one
I hope someday you will join us
And the world will be as one
আমার দৃঢ় বিশ্বাস, এরাই আগামী দিনের বিশ্ব নাগরিক।
একটা ছোট্ট ঘটনা নিয়ে আজকে বড় দিনের লেখা শেষ করি।
আমরা যারা আইভিএফ করি, আমাদের অনেক সময়েই রোগীকে ডোনার এগ বা স্পার্ম ব্যবহার করার অপশন দিতে হয়। কারণ অনেকের শুক্রাণু থাকে না বা ডিম্বাণু শেষ হয়ে গেছে। তখন একটা প্রশ্ন প্রায়ই শুনতে হয়, আচ্ছা এগ ডোনার কি হিন্দু হবে? কিংবা মুসলিম কারোর শুক্রাণু পাবো তো!
কিন্তু ইমারজেন্সির সময় যখন রক্ত দিতে হয়, কেউ একবারও হাত চেপে বলে না, দাঁড়ান মশাই, কোন ধর্মের লোকের রক্ত দিচ্ছেন একবার দেখি। তারপর নেব। ইমার্জেন্সির সময় ধর্ম আর মাথায় আসে না, বাঁচাটাই মুখ্য, আর সব গৌণ।
২৫.১২.২০২০
প্রায় ১০টা বাজে, এখনও শুয়ে আছি। কাজ নেই। আগের বছর এই সময় অপারেশন করছিলাম। উল্টো দিকে দাঁড়িয়ে অ্যাসিস্ট করছিল ডাঃ পাঁজা। পাঁজাদা আজ আর নেই। কোভিডে হারিয়েছি। হারিয়েছি আরো অনেক সহকর্মী, বন্ধু, আপনজনকে। বুঝেছি মৃত্যুভয় কী! এক বছর আগেও জীবনের কাছে যা দাবী ছিল তা আর নেই। চাওয়া বদলেছে, দেখা বদলেছে, বদলেছি আমিও। একটা কান্নার আওয়াজ যেন সবসময় কানে বাজছে – কারোর স্বজন হারানোর কান্না, কোনো শ্রমিক বাড়ি ফিরতে গিয়ে পথে হারিয়ে যাবার কান্না, কারও কাজ হারিয়ে খালি পেটের কান্না, কেউবা আইসিইউর বিছানায় শুয়ে বিদায় জানাচ্ছে তার বাড়িতে থাকা বৃদ্ধ বাবা – মাকে। বালিশ ভিজে যাচ্ছে।
হে ঈশ্বর পুত্র আজ আবার তোমার কাছে ভিক্ষা চাইতে হচ্ছে –
সকাতরে ওই কাঁদিছে সকলে, শোনো শোনো পিতা।
কহো কানে কানে, শুনাও প্রাণে প্রাণে মঙ্গলবারতা।।
ক্ষুদ্র আশা নিয়ে রয়েছে বাঁচিয়ে, সদাই ভাবনা।
যা-কিছু পায় হারায়ে যায়, না মানে সান্ত্বনা।।
তবে এক বছর আগে যা ছিল এখনও একই আছে – যখন কোনো ইমার্জেন্সী আসে তখন আমরা ধর্মকে দূরে সরিয়ে রাখি । এখন দেশের ইমার্জেন্সী চলছে।
আমাদের পরিবারের তরফ থেকে সবাইকে জানাই বড়দিনের শুভেচ্ছা।