ভ্যাকসিন এল দেশে। বিস্তর উৎকণ্ঠা, আন্দাজ ও ঢাকঢাক-গুড়গুড়ের পর প্লেনে ভেসে, গাড়ীতে চেপে, সাইরেন বাজিয়ে সে ভিভিআইপি এক্কেবারে দেশের এ প্রান্তে- ও প্রান্তে পৌঁছেও গেল।
এদিকে বাবু-বিবিরা তাদের মোবাইলে সরকারী প্রেমপত্র পেতে শুরু করলেন। যারা এতদিন কবে পাবো, কবে পাবো করে বিনিদ্র রজনী যাপন কচ্ছিলেন- তারা অনেকে প্রেমে গদগদ হয়ে, প্রেমপত্রটি আগাম ফেসবুকে পোষ্টানো শুরু করলেন। আবার কেউ কেউ ভ্যাকসিনে শিং গজায়, না কি ল্যাজ গজায়- এই ভয়ে কম্বল মুড়ি দিয়ে ঘুমিয়ে পড়লেন।
তবে ভ্যাকসিনের ঘরে রঙীন বেলুন লাগানো, ফিতে কাটার পরে, যেই না শোনা গেল ইঞ্জেকশনের পরে তিনমাস মদ্যপান ও ধূম্রপান বারণ, অমনি দলে দলে ভ্যাকসিনে অ্যালার্জি বেরিয়ে গেল।
কেউ কেউ বলল, ‘আমার তো করোনা হয়েই গেছে। আবার কেন?’
কেউ বলল, ‘আমার কাল থেকে জ্বর জ্বর কচ্ছে।’
ফলাফল?
আধাআধি টার্ন আউট।
অর্ধেক ‘গব্যায়ঃ নমঃ’।
বাকী অর্ধেক, ‘দেহি পদপল্লব মুদারম’ ঢঙে, গদগদ ভ্যাকসিন প্রেমে শার্ট নামিয়ে, ডেল্টয়েড বাগিয়ে, ঠেলেঠুলে এগিয়ে।
যদিও চেহারায় প্যালারাম, কিন্তু বাইসেপ্স- ডেল্টয়েডে এক্কেবারে যেন মনোতোষ রায়, নয়তো সিলভেষ্টার স্ট্যালোন। সেই প্যালারাম সদৃশ চেহারায়, ফোলানো ডেল্টয়েডে ইঞ্জেকশনের সূঁচ। মাস্ক, কানাস্ক, থুতনাস্ক – সক্কলের পারফিউমের মত পনেরবার ফিচিক ফিচিক করে স্যানিটাইজার স্প্রে। দিদিমনি সিরিঞ্জ বাগিয়ে ধরতেই কেউ কেউ হয় টেবিলের তলায়, নয়ত আলমারির পিছনে। আসামী পলাতক।
শেষ অবধি সব ভালোয় ভালোয় মিটলে মোবাইলে এক ক্লিকে ‘খচাং’। সঙ্গে স্পেশাল কারো কারো আবার হাসি হাসি মুখে নিজ নিজ হাসপাতালের ‘ভি’ ফর ‘ভ্যাকসিন’, ‘ভি’ ফর ‘ভিকট্রি’ লেখা ফ্রেম। ফেসবুকের দেওয়ালে লটকে তবে শান্তি।
কিষাণ বিকাশপত্রে টাকা ডবলের মত ফেসবুকের কল্যাণে ইমিউনিটি চড়চড় করে ডবল। অবশ্য ভ্যাকসিনটি ডেল্টয়েডের বদলে গ্লুটিয়াসে দেওয়ার হলে ছবিটি কোন দেওয়ালে পোষ্ট হত বা ইমিউনিটি বাড়তো না কমতো- তা জল্পনাতেই থাকুক।
আপাততঃ, গো করোনা, গো।
ছবি: অন্তর্জাল