সব চরিত্র কাল্পনিক ।
স্থান : আদালত কক্ষ।
জনগণ উৎকন্ঠিত হইয়া প্রবেশদ্বারের নিকট ভীড় জমাইয়াছে। জজসাহেবা, আদালত কক্ষ সংলগ্ন বিশ্রাম কামরায় কিছু মূহূর্ত পূর্বেই প্রবেশ করিয়াছেন। আর্দালিও সেই কক্ষেই প্রবিষ্ট হইল দেখিয়া উভয়পক্ষের উকিল নিজ নিজ মক্কেল পরিবৃত্ত হইয়া দরজা সন্নিকটে আসিয়া পৌঁছাইল।
আর্দালি ভিতর হইতে ঠিক আসিল। “তিলোত্তমা রায় ভার্সেস ডাক্তার তনুময় ঢালি কেস প্রথমে উঠবে। দুপক্ষ হাজির আছেন? ভেতরে আসুন।”
অনতিবিলম্বে, দরজা খুলিয়া যাইলে পর, সকলেই চঞ্চলমতি হইয়া ভেতরে প্রবেশের জন্য ব্যস্ত হইয়া পড়িল।
এজলাস পরিপূর্ণ। দুই পক্ষের লোকজন সহ কিছু হুজুগে ব্যক্তি মায় সাংবাদিক সহ অধমও ভেতরে উপবিষ্ট হইল।
জজসাহেবা ভিতরের দরজায় দৃশ্যমান হইবামাত্র সকলেই করজোড়ে দণ্ডায়মান হইল। তিনি দৃকপাত না করিয়া আসন গ্রহণ করিলেন। হঠাৎ তাঁহার দৃষ্টিগোচর হইল যে আজ জনসমাগম কিঞ্চিৎ অধিক। তিনি নিম্নসুরে কিছু বলিলেন।
খাকি পোষাক পরিহিত শান্তিরক্ষক একজন, যিনি ডাক্তারবাবুকে লইয়া প্রবে্শ করিয়াছিলেন, তিনি বলিলেন, –শ্লীলতাহানির কেসতো, মিডিয়ার লোকজনও ঢুকেছে মহামান্যা।
–প্রশ্নটা আপনাকে করিনি। বাদীপক্ষের উকিল কে?
মানব মিত্র, বাদীপক্ষের উকিল করজোড়ে উঠিয়া দাঁড়াইলেন –মি লর্ড, আমি।
–আসামীকে কাঠগড়ায় ডাকুন। মিঃ মিত্র, আজ হিয়ারিং হবে। আপনি তৈরি?
বিবাদীর উকিল উঠিয়া বলিতে চেষ্টা করিলেন, –মি লর্ড, উনি একজন স্বনামধন্য ডাক্তার, আসাম.. কথা শেষ হইবার পূর্বেই বিচারক তাঁহাকে ঈশারায় থামিতে বলিলেন।
ডাক্তার বাবু কাঠগড়ায় উঠিলেন। দৃশ্যতই বিধ্বস্ত।কিন্তু ঋজু। ‘যাহা বলিব, সত্য বলিব…’
–আপনার নাম?
–তনুময় ঢালি।
–সুন্দর নাম। চরিত্রের সঙ্গে নামের মিল রয়েছে। তা, আপনি কিসে বিশেষজ্ঞ?
–চেস্ট স্পেশালিস্ট।
–আমার মক্কেলের কি অসুখ হয়েছিল?
–নিউমোনাইটিস। লাংস ইনফেকশন।
–আপনি জানেন? আপনার বিরুদ্ধে অভিযোগ কি?
–হ্যাঁ, জানি।
–তা, এমন অপকম্ম করে এখন কি পস্তাচ্ছেন?
–আমি কোন অপকর্ম করিনি। পস্তানোর প্রশ্নই নেই।
–তা, চেস্ট স্পেশালিস্টবাবু, বলছেন যে ওনার ফুসফুসে সংক্রমণ হয়েছিল। তাহলে আমার মক্কেলের পেটে হাত বুলিয়েছেন কেন?
–একজামিন করাকে হাত বোলানো বলেনা।
–আমার মক্কেল অভিযোগ করেছেন, আপনি তার নিম্নাঙ্গের বস্ত্র আলগা করিয়ে তলপেটে হাত দিয়েছেন।
— রোগির রোগের সঠিক ডায়াগনোসিস করার জন্য, একজন ডাক্তার রোগির শারিরীক চেক আপ করতেই পারে। এই কাজ ডাক্তার করবেনাতো কি উকিল করবে?
–তলপেটের নীচে হাত দিয়েছেন তো?
–তলপেটে। ওনার একটা প্রাইমারি ইউরিনারি ইনফেকশনের হিস্ট্রি ছিল।
–যুবতী মহিলা রোগিনী দেখেই কি আপনার ঐ শারিরীক একজামিন করবার ইচ্ছেটা একটু বেশিমাত্রায় প্রয়োজন মনে হল? ইয়েস অর নো !
— রোগি ছুঁড়িই হোক কি বাহাত্তুরে বুড়িই হোক, মেডিক্যাল একজামিন প্রোটোকল সবার ক্ষেত্রেই এক। বয়স ডাজন্ট ম্যাটার উকিল সাহেব।
কক্ষে অনুচ্চ কলরোল উঠিল।
–শাট আপ। ডাক্তারি পরীক্ষার নামে আপনি আমার মক্কেলের শ্লীলতাহানি করেছেন। আপনি কি এরকম প্রায়ই করেন? বলুন হ্যাঁ কি না?
–উনি ভুল বুঝেছেন অথবা অন্য কারো দ্বারা প্রভাবিত হয়ে একথা বলেছেন।
–আপনি একথা প্রমাণ করতে পারবেন?
–আপনি শ্লীলতাহানি প্রমাণ করতে পারবেন?
–আমার মক্কেল একজন সম্ভ্রান্ত মহিলা। তাঁর অভিযোগের নিশ্চয় গুরুত্ব আছে।
–আমি যখন কোন মহিলা রোগি দেখি, তখন সঙ্গে আরেকজন যিনি থাকেন, তিনিও মহিলা। তিনিও সম্ভ্রান্ত।
–আপনার ফিমেল অ্যাটেণ্ডেন্টতো আপনারই লোক। তিনিতো আপনারই হয়ে বলবেন।
–আপনার মুহুরি কি আমার লোক? নাকি আমি মাইনে দিই?
জজসাহেবার হস্তক্ষেপে তর্কাতর্কি সাময়িকভাবে স্থগিত হইল। ডাক্তারবাবুকে কাঠগড়া হইতে নামিবার হুকুম করিলেন।
বাদিনীর ডাক পড়িল। ‘যাহা বলিব, সত্য বলিব….’
ডাক্তারবাবুর উকিল গোলাম বক্তিয়ার জেরা শুরু করিলেন –আপনি মিসেস…
–হ্যাঁ। আমার নাম তিলোত্তমা..
–আচ্ছা, আপনার তলপেটে কোন কষ্ট নিয়ে রিসেন্ট সাফার করেছেন?
–হ্যাঁ, আমার ইউরিনারী ইনফেকশন হয়েছিল।
–ডাক্তার দেখিয়েছিলেন?
–হ্যাঁ।
–উনি?
–না। আমার হাউস ফিজিসিয়ান।
–তিনি আপনার পেটে, মানে, তলপেটে হাত দিয়েছিলেন?
বাদিনীর স্পষ্ট অস্বস্তি পরিলক্ষিত হইল।
–বলুন, তিনি তলপেটে হাত দিয়ে আপনাকে পরীক্ষা করেছিলেন?
–হ্যাঁ, করেছিলেন।
এমন সময় বাদিনীর উকিল উঠিয়া বাধা দিলেন। কহিলেন, –আমার ফ্রেণ্ড কি শালীনতার সীমা অতিক্রম করবেন মি লর্ড?
বিচারক কহিলেন, তার আগে আমিই থামিয়ে দেবো। বক্তিয়ার সাহেব, মহিলার সম্মান বজায় রেখে আপনার প্রশ্ন থাকলে করুন।
–আচ্ছা, তখন আপনার শ্লীলতাহানি মনে হয়নি?
— না মানে.. (বাদিনী তোতলাইতে লাগিলেন).
–বুঝলাম, তখন ওটা আপনার সেরকম মনে হয়নি। কিন্তু, আমার মক্কেলের বেলায় সেরকম মনে হয়ে গেল। তাইতো?
–আমার সেরকমই মনে হচ্ছিল।
–তারপর কি করলেন?
–আমার স্বামীকে জানালাম। উনি খুব রাগী মানুষ।
–আর, আপনারা রেগেমেগে মামলা করে দিলেন?
বাদিনী চুপ রহিলেন।
–আচ্ছা ঠিক আছে, একটা কথা বলুনতো। আপনি কি জানেন, মেয়েদের ইউরিনারী ইনফেকশন বারবার হয়?
–বলতে পারবো না।
–হয়, হয়। আচ্ছা, এই কথাটা কি জানেন, শরীরের একটা জায়গার ইনফেকশন অন্য জায়গায় ছড়িয়ে যেতে পারে?
বাদিনী নীরব রহিলেন। স্পষ্টতঃ নার্ভাস।
–মৌন থাকছেন বলে ধরে নিলাম, আমি ভুল কিছু বলিনি।
–আপাততঃ দ্যাটস অল ইওর অনার।
*****
কিছুদিন পর সংবাদমাধ্যমে জানিতে পারিলাম, প্রমাণাভাবে ডাক্তারবাবু বেকসুর মুক্তি পাইয়াছেন। রায়, তিলোত্তমা রায়ের পক্ষে হয় নাই।
.
(কল্পনার আশ্রয়ে ত্রুটিপূর্ণ একটি কষ্টকল্পিত আলেখ্য। ত্রুটি মার্জনা করিয়া দেবেন, আশা রাখি। )