প্রশ্নঃ সন্তান নেওয়ার পরিকল্পনা করার সত্যিই কি প্রয়োজনীয়তা আছে?
উত্তরঃ নিশ্চয়ই আছে। কারণ আজকালকার কেরিয়ারমুখি ছেলেমেয়েদের ছোট থেকেই পরিকল্পনা থাকে নানা বিষয়ে। কিন্তু সন্তান নেওয়ার কোনো পরিকল্পনা থাকে না। অনেকেই ভাবেন, এটা কোনো পরিকল্পনার মতো বিষয়ই নয়। সন্তান তো যে কোনো সময়ে নেওয়া যাবে। আগে ব্যক্তিগত জীবনের সব চাহিদা পূরণ করি, মানসিক ও শারীরিক ভাবে তৈরি হই, স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে ঠিকমতো বোঝাপড়া গড়ে উঠুক তারপর একটু স্থিতু হয়ে সন্তানের কথা ভাবা যাবে। তাঁরা ৭ দিন ২৪ ঘণ্টা নানাকাজে নিজেদের ব্যস্ত রাখলেও সন্তানের ব্যাপারে একেবারেই উদাসীন। অনেক সময়ে আবার মিডিয়াতে ফলাও করে প্রচার করা হয় বিখ্যাত ব্যক্তিদের আই ভি এফ-আর মাধ্যমে অনেক বেশি বয়সে সন্তান হওয়ার কথা। এর ফলে সাধারণ মানুষ মনে করে আই ভি এফে সবই সম্ভব। কিন্তু মাথায় রাখা দরকার, আইভিএফ যেমন ব্যয়সাপেক্ষ তেমনই এতে শারীরিক ও মানসিক ধকল আছে। আর সফলতার হার ৪০% এর বেশি নয়। এছাড়াও অনেক ক্ষেত্রেই তাঁদের সন্তান হয় কোনো তৃতীয় ব্যক্তির ডিম্বাণুর সাহায্যে। এই কারণেই ঠিক সময়ে সন্তান নেওয়ার পরিকল্পনা থাকা দরকার।
প্রশ্নঃ ফার্টিলিটি প্ল্যানিং বলতে ঠিক কী বোঝায়?
উত্তরঃ সহজভাবে বলা যায়, পরিবারে সন্তান আনার যথাযথ পরিকল্পনা করা। সাম্প্রতিক এক গবেষণায় জানা গেছে, স্বাভাবিকভাবে ১টি বা ২ টি সন্তান চাইলে যে কোনো মহিলাকে যথাক্রমে ৩২ বা ২৭ বছর বয়স থেকেই সন্তানধারণের চেষ্টা করতে হবে। কারণ মহিলাদের বয়সের ওপর সন্তানধারণের সফলতা অনেকটাই নির্ভর করে।
প্রশ্নঃ বয়স বাড়লে কী কী সমস্যা মহিলাদের সন্তানধারণে বাধার সৃষ্টি করে?
উত্তরঃ বয়স বাড়লে নানা সমস্যা মহিলাদের স্বাভাবিকভাবে মা হওয়ার পথে বাধা সৃষ্টি করে। যেমন,
• ডিম্বাশয়ে ডিম্বাণুর গুণগতমান এবং পরিমাণ দুটোই কমতে থাকে। ৩০ বছর বয়সের পর থেকে কমতে শুরু করে আর ৩৫ এরপর এই কমার হার দ্রুত বাড়তে থাকে।
• বেশি বয়সে মিসক্যারেজ এবং জন্মগত ত্রুটির আশঙ্কা অনেক বেড়ে যায়।
• ফাইব্রয়েড, এন্ডোমেট্রিওসিস এবং ফ্যালোপিয়ান টিউবের সমস্যা বেশি বয়সে লক্ষণীয়ভাবে বাড়ে
• বয়স বাড়লে প্রেগন্যান্ট হলে জটিলতা অনেক বেড়ে যাওয়ার চান্স থাকে। যেমন, জেস্টেশনাল ডায়াবেটিস, প্রিএক্ল্যাম্পশিয়া ইত্যাদি।
প্রশ্নঃ পুরুষদের বয়সও কি প্রেগন্যান্সিতে কোনো বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে?
উত্তরঃ অবশ্যই পারে। যদিও মহিলাদের তুলনায় পুরুষদের কিছুটা দেরিতে অর্থাৎ ৪০ বছরের পর স্পার্ম অর্থাৎ শুক্রাণুর পরিবর্তন হয়। যার ফলে সন্তানহীনতার সমস্যা দেখা দিতে পারে অথবা সন্তান হলেও তার মধ্যে দেখা দিতে পারে ক্রোমোজোমাল বা ডেভেলপমেন্টাল সমস্যা।
প্রশ্নঃ কখন থেকে সতর্ক হওয়া দরকার?
উত্তরঃ স্ত্রীর বয়স যদি ৩৫ এর কম হয় এবং এক বছর কোনোরকম জন্মনিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা গ্রহণ না করে সহবাস করার পরেও প্রেগন্যান্সি না আসে তাহলেই সতর্কতা দরকার। তখন অযথা দেরি না করে চিকিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগ করে জানা দরকার সন্তান না আসার কারণ কী? কী করলে সন্তান আসবে? আর বয়স ৩৫ এর বেশি হলে ৬ মাসের পরেই সতর্ক হতে হবে।
প্রশ্নঃ কীভাবে জানা যায় কারো ডিম্বাশয়ে কী পরিমাণ ডিম্বাণু মজুত আছে?
উত্তরঃ ডিম্বাণুর সংখ্যা এবং তার গুণগত মান যাচাইয়ের জন্য ব্লাড টেস্টের মাধ্যমে ফলিকল স্টিমুলেটিং হরমোন বা এফ এস এইচ অথবা অ্যান্টিম্যুলেরিয়ান হরমোজাবা এ এম এইচ পরীক্ষা করা হয়। আবার আল্ট্রাসাউন্ড করেও ফলিকলের পরিমাণ জানা যায়। এই পদ্ধতিকে বলা হয় অ্যান্ট্রাল ফলিকল কাউন্ট বা এ এফ সি। এই পরীক্ষাগুলোর মাধ্যমে ডিম্বাণুর সংখ্যার একটা ধারণা পাওয়া যায়। যদিও প্রেগন্যান্সির সম্ভাবনা কতটা সে সম্পর্কে নিশ্চিতভাবে কিছু বলা যায় না।
প্রশ্নঃ কোনোভাবে কি বয়স বৃদ্ধিজনিত এই সব সমস্যা এড়ানো যায়?
উত্তরঃ একেবারেই না। যদিও সুষম খাবার খেলে, নিয়মিত শরীরচর্চা করলে, পর্যাপ্ত ঘুম হলে, ধূমপানের অভ্যাস ত্যাগ করলে মানসিক চাপমুক্ত থাকলে সার্বিক স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটে।
প্রশ্নঃ চিকিৎসায় কি এই ইনফার্টিলিটির সমস্যা দূর করা যায়?
উত্তরঃ উপযুক্ত চিকিৎসায় ফার্টিলিটি বাড়ানো সম্ভব। এরজন্য যেসব পদ্ধতি অবলম্বন করতে হয় তাহলে ইন্ট্রাইউটেরাইন ইনসেমিনেশন, ইন ভিট্রো ফার্টিলাইজেশন অথবা ফার্টিলিটির জন্য বিশেষ ধরণের ওষুধ খেতে হয়। এগুলো প্রেগন্যান্সিতে কিছুটা সাহায্য করলেও স্বাভাবিক বয়সের যে প্রভাব তা প্রতিরোধ করতে পারে না।
প্রশ্নঃ সন্তানধারণের জন্য আর কী কী করা যেতে পারে?
উত্তরঃ একটা উপায় হল, শুক্রাণু, ডিম্বাণু অথবা এমব্রায়ো ফ্রিজ করে রাখা। স্পার্ম ও এমব্রায়ো ফ্রিজিং কার্যকরী পদ্ধতি। যদিও ডিম্বাণু ফ্রিজিং করার পরামর্শ দেওয়া হয় না। কারণ এর সফলতার হা্র খুবই কম। আর স্বামী ও স্ত্রী দুজনই অক্ষম হলে অন্য ব্যক্তিদের থেকে প্রয়োজনমতো স্পার্ম, ওভাম বা এমব্রায়ো নিয়েও সন্তানের মুখ দেখতে পারেন।