ওষুধপত্র
এই পর্বে হাইপারটেনশনের ওষুধ পত্র নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হচ্ছে। কিন্তু সবসময়ই মনে রাখতে হবে চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া নিজে বা ওষুধের দোকানে জিজ্ঞেস করে ওষুধ খাওয়া শুধু বিপদজনক নয়, মৃত্যুর কারণও হতে পারে।
গ্রেড ১ হাইপারটেনশনঃ
সিস্টোলিক প্রেশার ১৪০- ১৫৯ মিলি মিটার পারদ এবং ডায়াস্টোলিক প্রেশার ৯০- ৯৯ মিলি মিটার পারদ।
সাথে সাথে ওষুধ শুরু না করে এক্ষেত্রে তিনমাস জীবন যাত্রা ও খাদ্যের পরিবর্তন করে দেখা যেতে পারে।
ওষুধ কখন শুরু করতে হবে?
যদি তিনমাস জীবন যাত্রায় পরিবর্তন করেও রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে না থাকে অথবা তিনটির বেশি হৃদ রোগের ঝুঁকি বা রিস্ক ফ্যাক্টর থাকে।
রিস্ক ফ্যাক্টরগুলি হলোঃ
- বয়স (পুরুষদের >৫৫ বছর, নারীদের > ৬৫ বছর)।
- ডায়াবেটিস।
- ধূমপান।
- দৈহিক স্থূলতা।
- রক্তের কোলেস্টেরলের গণ্ডগোল। খারাপ কোলেস্টেরল(LDL ও ট্রাইগ্লিসারাইড) বেশি এবং ভালো কোলেস্টেরল (HDL) কম।
- পরিবারে হৃদরোগের ইতিহাস।
- কিডনির সমস্যা।
ওষুধপত্রঃ
ACE ইনহিবিটর (এঞ্জিওটেনসিন কনভার্টিং এনজাইম), যেমন- এনালাপ্রিল
বা
ক্যালসিয়াম চ্যানেল ব্লকার, যেমন- এম্লোডিপিন
বা
থায়াজাইড ডাই ইউরেটিক, যেমন হাইড্রোক্লোরথায়াজাইড
দ্বিতীয় ওষুধ যোগ করা উচিৎ যদি ২- ৪ সপ্তাহের মধ্যে রক্তচাপ স্বাভাবিক না হয়।
ACE ইনহিবিটর + ক্যালসিয়াম চ্যানেল ব্লকার
বা
ক্যালসিয়াম চ্যানেল ব্লকার + থায়াজাইড ডাই ইউরেটিক
বা
ACE ইনহিবিটর + থায়াজাইড ডাই ইউরেটিক
তৃতীয় ওষুধ যোগ করা উচিৎ যদি আরো ২- ৪ সপ্তাহের মধ্যে রক্তচাপ স্বাভাবিক না হয়।
ACE ইনহিবিটর + ক্যালসিয়াম চ্যানেল ব্লকার + থায়াজাইড ডাই ইউরেটিক
গ্রেড ২ হাইপারটেনশনঃ
সিস্টোলিক প্রেশার ১৬০- ১৭৯ মিলি মিটার পারদ এবং ডায়াস্টোলিক প্রেশার ১০০- ১০৯ মিলি মিটার পারদ।
এক্ষেত্রে প্রথম থেকেই ওষুধ শুরু করতে হয়। ওষুধপত্র দেওয়া হয় গ্রেড ১ হাইপারটেনশনের মতোই।
ACE ইনহিবিটর (এঞ্জিওটেনসিন কনভার্টিং এনজাইম), যেমন- এনালাপ্রিল
বা
ক্যালসিয়াম চ্যানেল ব্লকার, যেমন- এম্লোডিপিন
বা
থায়াজাইড ডাই ইউরেটিক, যেমন হাইড্রোক্লোরথায়াজাইড
দ্বিতীয় ওষুধ যোগ করা উচিৎ যদি ২- ৪ সপ্তাহের মধ্যে রক্তচাপ স্বাভাবিক না হয়।
ACE ইনহিবিটর + ক্যালসিয়াম চ্যানেল ব্লকার
বা
ক্যালসিয়াম চ্যানেল ব্লকার + থায়াজাইড ডাই ইউরেটিক
বা
ACE ইনহিবিটর + থায়াজাইড ডাই ইউরেটিক
তৃতীয় ওষুধ যোগ করা উচিৎ যদি আরো ২- ৪ সপ্তাহের মধ্যে রক্তচাপ স্বাভাবিক না হয়।
ACE ইনহিবিটর + ক্যালসিয়াম চ্যানেল ব্লকার + থায়াজাইড ডাই ইউরেটিক।
গ্রেড ৩ হাইপারটেনশনঃ
সিস্টোলিক প্রেশার ১৮০ মিলি মিটার পারদের বেশি এবং ডায়াস্টোলিক প্রেশার ১১০ মিলি মিটার পারদের বেশি।
এক্ষেত্রে প্রথম থেকেই দুটি ওষুধ শুরু করা হয়ঃ
ACE ইনহিবিটর + ক্যালসিয়াম চ্যানেল ব্লকার
বা
ক্যালসিয়াম চ্যানেল ব্লকার + থায়াজাইড ডাই ইউরেটিক
বা
ACE ইনহিবিটর + থায়াজাইড ডাই ইউরেটিক
তৃতীয় ওষুধ যোগ করা উচিৎ যদি ২- ৪ সপ্তাহের মধ্যে রক্তচাপ স্বাভাবিক না হয়।
ACE ইনহিবিটর + ক্যালসিয়াম চ্যানেল ব্লকার + থায়াজাইড ডাই ইউরেটিক।
হাইপারটেনশনের সাথে অন্যান্য শারীরিক সমস্যা থাকলেঃ
করোনারী আর্টারী ডিজিজঃ
বিটা ব্লকার ( যেমন- এটেনলোল, মেটোপ্রোলোল)+ ACE ইনহিবিটর বা ক্যালসিয়াম চ্যানেল ব্লকার।
হার্ট ফেলিওরঃ
ডাই ইউরেটিক+ ACE ইনহিবিটর+ বিটা ব্লকার, মিনারেলো কর্টিকয়েড রিসেপ্টর এন্টাগোনিস্ট (যেমন- স্পাইরোনোল্যাক্টোন)।
দীর্ঘ মেয়াদি কিডনির সমস্যাঃ
ACE ইনহিবিটর বা ক্যালসিয়াম চ্যানেল ব্লকার বা থায়াজাইড ডাই ইউরেটিক।
ডায়াবেটিস মেলিটাসঃ
ACE ইনহিবিটর + ক্যালসিয়াম চ্যানেল ব্লকার বা থায়াজাইড ডাই ইউরেটিক।
ওষুধ শুরু করা হয় যে মাত্রায়ঃ
এনালাপ্রিল ৫ মিগ্রা।
এটেনলোল ৫০ মিগ্রা।
এম্লোডিপিন ৫ মিগ্রা। (বয়স্কদের ২.৫ মিগ্রা)
হাইড্রোক্লোরথায়াজাইড/ক্লোরথ্যালিডোন ১২.৫ মিগ্রা।
ওষুধের সর্বোচ্চ মাত্রাঃ
এনালাপ্রিল ২০- ৪০ মিগ্রা।
এটেনলোল ১০০ মিগ্রা।
এম্লোডিপিন ১০ মিগ্রা।
হাইড্রোক্লোরথায়াজাইড/ক্লোরথ্যালিডোন ২৫ মিগ্রা।
মনে রাখা উচিৎঃ
- ৬০ বছরের বেশি বয়স্কদের ক্যালসিয়াম চ্যানেল ব্লকার (যেমন- এম্লোডিপিন) দিয়ে চিকিৎসা শুরু করা উচিৎ।
- বিটা ব্লকার কখনোই রক্তচাপ কমানোর জন্য প্রথমেই ব্যবহার করা উচিৎ নয়। বিটা ব্লকার দেওয়ার আগে অন্তত একটা ই সি জি করে নেওয়া উচিৎ এবং নাড়ির গতি দেখা উচিৎ। নাড়ির গতি ৬০/মিনিট এর কম হলে বিটা ব্লকার ব্যবহার করা উচিৎ নয়। কারণ বিটা ব্লকার হৃদগতি আরো কমিয়ে দেয়।
- করোনারী আর্টারি ডিজিজ থাকলে বিটা ব্লকার ও ACE ইনহিবিটর দুটোই ব্যবহার করা উচিৎ।
- দীর্ঘমেয়াদি কিডনির সমস্যাতে প্রস্রাব কম হলে ও ইডিমা হলে লুপ ডাই ইউরেটিক ( যেমন- ফ্রুসেমাইড, টরসেমাইড) ব্যবহার করা হয়। ACE ইনহিবিটর ব্যবহার করলে রক্তের ক্রিয়েটিনিন এবং পটাশিয়াম নিয়মিত মাপা উচিৎ।
- ACE ইনহিবিটর কোনো কারণে দেওয়া না গেলে (যেমন ACE ইনহিবিটরের থেকে দীর্ঘ মেয়াদি কাশি), তবেই কেবলমাত্র এঞ্জিওটেনসিন ২ রিসেপ্টর ব্লকার (যেমন- লোসারটন, টেলমিসারটন) ব্যবহার করা উচিৎ।
এটি ভারত সরকারের স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ দপ্তরের হাইপারটেনশনের স্ট্যান্ডার্ড ট্রিটমেন্ট গাইডলাইন। তবে চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া কখনোই নিজে নিজে ওষুধ খাওয়া উচিৎ নয় অথবা অন্যের উচ্চ রক্তচাপের ওষুধ খাওয়াও উচিৎ নয়। চিকিৎসক আপনার অবস্থা বিবেচনা করে ওষুধ নির্বাচন করবেন। প্রতিদিন সময়মতো ওষুধ খেলে উচ্চ রক্তচাপ নিয়েও দীর্ঘ সুস্থ জীবন কাটানো সম্ভব।
চিকিৎসার লক্ষ্যঃ
- ৮০ বছরের কম বয়স্কদের ক্ষেত্রে রক্তচাপ <১৪০/৯০ মিলি মিটার পারদের কম রাখা।
- ৮০ বছরের বেশি বয়স্কদের ক্ষেত্রে রক্তচাপ <১৫০/৯০ মিলি মিটার পারদের কম রাখা।