আবার প্রশ্নোত্তর
প্রশ্নঃ ডাক্তারব্বাবু, আপনি বলেছেন লবণ খাওয়া যাবে না। এমনি লবণের পরিবর্তে রকসল্ট কি খাওয়া যেতে পারে?
উত্তরঃ রক সল্ট বা সৈন্ধব লবণের সোডিয়াম কন্টেন্ট সাধারণ লবনের প্রায় সমান। তাই হাইপারটেনশনে দুটোই ক্ষতিকর।
সৈন্ধব লবণ তৈরি হয় পাহাড়ের কোনো জলাশয় বা পূর্বের কোনো সমুদ্র শুকিয়ে গিয়ে। ফলে সহজেই বোঝা যায় রক সল্ট আর সি সল্টের মধ্যে বিশেষ পার্থক্য নেই। এতে কয়েকটি ট্রেস মিনারেল থাকতে পারে, যেটা আমাদের দেহে ভালো প্রভাব ফেলতে পারে। কিন্তু তাও নিঃসন্দেহে প্রমাণিত নয়। অতএব রক সল্ট খেলেও রোজ ৬ মিগ্রার কম খেতে হবে।
প্রশ্নঃ রেজিস্ট্যান্স হাইপারটেনশন কাকে বলে?
উত্তরঃ তিন বা তার অধিক হাইপারটেনশনের ওষুধ সর্বোচ্চ মাত্রায় খাওয়া স্বত্বেও যখন রোগীর রক্তচাপ সবসময় ১৪০/৯০ মিলি মিটার পারদের বেশি থাকে। তবে খেয়াল রাখতে হবে এটি সিউডো-রেজিস্ট্যান্সও হতে পারে।
সিউডো-রেজিস্ট্যান্সের কারণগুলি হল-
- ওষুধ নিয়মিত না খাওয়া।
- হোয়াইট কোট হাইপারটেনশন (চিকিৎসকের সামনে রক্তচাপ বৃদ্ধি)।
- বয়স্ক মানুষদের রক্তনালীর দেওয়াল অ্যাথেরোস্ক্লেরোসিস হয়ে মোটা হয়ে যাওয়া।
- রক্তচাপ মাপায় ত্রুটি, ইত্যাদি।
সত্যিকারের রেজিস্ট্যান্স হাইপারটেনশন নির্ণয় করার জন্য রোগী ওষুধপত্র নিয়মিত খাচ্ছেন, সেটা নিশ্চিত করতে হবে। দরকার হলে ২৪ ঘণ্টা এম্বুলেটরি ব্লাড প্রেশার মনিটরিং করতে হবে। এ সম্পর্কে আগের একটি পর্বে আলোচনা করা হয়েছে।
রেজিস্ট্যান্স হাইপারটেনশন খুব দ্রুত হৃদরোগ ও অন্যান্য অঙ্গপ্রত্যঙ্গের ক্ষতি করতে পারে। রেজিস্ট্যান্স হাইপারটেনশনে অনেক সময়েই সেকেন্ডারি হাইপারটেনশনের কারণে হয়। তাই হাইপারটেনশেনের পেছনে কোনো কারণ আছে কিনা তা বিভিন্ন পরীক্ষা নিরীক্ষার মাধ্যমে খুঁজে দেখা উচিৎ।
প্রশ্নঃ ডাক্তারবাবু, আমার অনেকদিন ধরে প্রেশার আছে এবং তার জন্য আমায় একাধিক ওষুধ খেতে হয়। আমার রক্তচাপ মোটামুটি নিয়ন্ত্রণে থাকে। কিন্তু ইদানীং শোয়া বা বসা থেকে হঠাৎ করে উঠে দাঁড়ালে আমার মাথা ঘুরে যায়। এমন কেন হয়?
উত্তরঃ এটা হয় পস্টুরাল হাইপোটেনশনের (Postural or Orthostatic Hypotension) কারণে। বয়স্ক মানুষ, যাঁরা হাইপারটেনশনের জন্য একাধিক ওষুধ খাচ্ছেন তাঁদের শোয়া থেকে উঠে দাঁড়ালে হঠাৎ করে সিস্টোলিক প্রেশার ২০ মিলি মিটার পারদের বেশি এবং ডায়াস্টলিক প্রেশার ১০ মিলি মিটার পারদের বেশি কমে যেতে পারে। যার ফলে মস্তিষ্কে রক্ত চলাচল কমে রোগীর মাথা ঘুরে যেতে পারে, রোগী পড়ে যেতে পারেন, এমনকি রোগী অল্প সময়ের জন্য জ্ঞানও হারাতে পারেন।
তবে এর পেছেনে অন্য কোনো কারণ আছে কিনা সেটাও দেখা উচিৎ। দরকার মতো ইসিজি, মাথার সিটি স্ক্যান বা অন্য কোনো পরীক্ষা করতে হতে পারে।
পস্টুরাল হাইপোটেনশন এড়ানোর জন্য শোয়া বা বসা থেকে হঠাৎ করে দাঁড়ান উচিৎ নয়। ধীরে সুস্থে দাঁড়াতে হবে। তাছাড়া অনেক সময় হাইপারটেনশনের ওষুধ বা ওষুধের ডোজ পরিবর্তন করতে হতে পারে।
প্রশ্নঃ আমার বয়স ৭০ বছর। আমি প্রেশারের ওষুধ খাই। আমার রক্তচাপ ১৪০/৬০ থাকছে। নীচের প্রেশার অনেক কমে যাওয়ার জন্য আমার কি ওষুধ কমানো উচিৎ?
উত্তরঃ না, ওষুধ কমানো উচিৎ নয়। বয়স বাড়ার সাথে সাথে আমাদের রক্তনালী অ্যাথেরোস্ক্লেরোসিসের ফলে শক্ত হয়ে যায়। ফলে সিস্টোলিক প্রেশার বাড়ে, কিন্তু রক্তনালীর স্থিতিস্থাপকতা নষ্ট হওয়ায় ডায়াস্টোলিক রক্তচাপ কমে যায়। এক্ষেত্রে চিকিৎসার মূল লক্ষ্য সিস্টোলিক প্রেশারকে ১৪০ মিলি মিটার পারদের নীচে রাখা। ডায়াস্টোলিক প্রেশার যতই কম থাক সেটা নিয়ে মাথা ঘামানো উচিৎ নয়। মনে রখতে হবে ডায়াস্টোলিক রক্তচাপ বাড়লে ক্ষতি হয়, কিন্তু কমলে তেমন ক্ষতি নেই। ওষুধ কমানো হবে তখনই যদি সিস্টোলিক প্রেশার ১১০ মিলি মিটার পারদের নীচে নেমে যায়।
(শেষ)