আজ ১১.১.২০২৫ বারাসাত সিটিজেন ফোরাম কক্ষে আহূত সম্মেলনে গঠিত হলো “বৃহত্তর বারাসাত অঞ্চলে অভয়া মঞ্চ” (বৃহত্তর বারাসাত) গণ কনভেনশনে ২৯ টি গণ সংগঠন অংশগ্রহণ করে ও স্থায়ী স্টিয়ারিং কমিটি গঠিত হয়। আগামী দিনে “উত্তর ২৪ পরগনা অভয়া মঞ্চ” গঠন করার প্রস্তাবও আলোচিত হয়।
প্রস্তুতি কমিটির পক্ষ থেকে নিম্ন লিখিত খসড়া প্রস্তাবনা: পেশ করা হয় ও সর্বসম্মতিক্রমে গৃহীত হয়।
সাথী,
গত ৯ আগস্ট ২০২৪-এর মধ্যরাতে কলকাতার আর জি কর মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে কর্মরতা একজন ডাক্তার-ছাত্রীর ওপর যে পরিকল্পিত প্রাতিষ্ঠানিক নারকীয় অত্যাচার ও হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়েছে তা এই রাজ্য সহ গোটা দেশের সমস্ত স্তরের মানুষদের গভীরভাবে শঙ্কিত ও আলোড়িত করেছে। এর প্রতিবাদে কলকাতা সহ রাজ্যের সমস্ত মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল ও অন্যান্য চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানের সমস্ত চিকিৎসক এবং চিকিৎসাকর্মী সমুদায় এবং সাধারণ নাগরিক সমাজের মানুষেরা বিগত চার মাস যাবৎ ‘জাস্টিস ফর আর জি কর’ আহবানকে কেন্দ্র করে এক অভূতপূর্ব গণ প্রতিবাদ ও প্রতিরোধ আন্দোলনের জোয়ার সৃষ্টি করে চলেছেন। এই আন্দোলনের মধ্যে দিয়ে ‘অভয়া’/ ‘তিলোত্তমার’ নৃশংস ধর্ষণ ও হত্যাকাণ্ডের ন্যায়বিচার, আর জি কর মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালসহ বিভিন্ন মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে বিরাজমান প্রশাসনিক ও শাসকদলের রাজনৈতিক ক্ষমতাতন্ত্রের দ্বারা সৃষ্ট হুমকি ও সন্ত্রাসের পরিবেশের বিষয়গুলো বিশেষভাবে প্রকটিত হয়েছে। এই চলমান আন্দোলনের মাধ্যমে সর্ব সাধারণের স্বার্থে রাজ্যের চিকিৎসা ব্যবস্থার আমূল সংস্কারের দাবিতে, চিকিৎসা ব্যবস্থাসহ অন্যান্য ক্ষেত্রের সর্বস্তরের জনবিরোধী সরকারি ও রাজনৈতিক ক্ষমতাতন্ত্রের দ্বারা পরিচালিত পাহাড় প্রমাণ দুর্নীতি, সিন্ডিকেট রাজত্ব, সমাজের বিভিন্ন কর্মক্ষেত্রসহ অন্যান্য ক্ষেত্রে নারী ও প্রান্তিক লিঙ্গ সমুদায়ের উপর যৌন অত্যাচার ও নিগ্রহ এবং পুরুষতান্ত্রিকতার আধিপত্য ইত্যাদির নির্মূলের দাবিতে গণরোষ যেভাবে প্রকট হয়ে ওঠে তা বাংলার গণসংগ্রামের ইতিহাসে আরেকটি গৌরবময় ইতিহাস সৃষ্টি করে চলেছে যেখানে মহিলা সমাজের এক ব্যাপক অংশের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ এক দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে।
একটি সামাজিক আন্দোলনের মাধ্যমে কিভাবে ন্যায় বিচারের দাবী প্রতিস্পর্ধার হাতিয়ার হয়ে ওঠতে পারে তা এই আন্দোলন দেখিয়ে দিয়েছে। সাহস কিভাবে মানুষের মধ্যে ব্যাপ্তি লাভ করে ক্ষমতার ভরকেন্দ্রকে নড়িয়ে দিতে পারে, তাও এই আন্দোলন দেখিয়ে দিয়েছে। এই আন্দোলন এক বহুস্বরের আওয়াজ হয়ে উঠেছে।
এই ধারাবাহিকতায়, আমরা এই বৃহত্তর বারাসাত এবং এর পার্শ্ববর্তী অঞ্চলের নাগরিক সমাজের বিভিন্ন অদলীয় সংস্থা ও সংগঠনগুলি আমাদের সাধ্যমত প্রতিবাদী গণ উদ্যোগগুলো এগিয়ে নিয়ে চলেছি।
প্রসঙ্গত, এই গণ আন্দোলনের পরিস্থিতিতে এই আন্দোলনকে আরও প্রসারিত ও বেগবান করতে সম্প্রতি গত ২৮ অক্টোবর ২০২৪, কলকাতার অ্যাকাডেমি অফ ফাইন আর্টস’-এর সভাগৃহে জয়েন্ট প্ল্যাটফর্ম অফ ডক্টরস্ (JPD) ও নাগরিক সমাজের প্রায় ৮০ টি অদলীয় সংগঠন মিলে ‘অভয়া মঞ্চ’ নামে কেন্দ্রীয় স্তরের একটি যৌথ মঞ্চ গঠিত হয়।
উক্ত পরিস্থিতির সাপেক্ষে এবং উক্ত আন্দোলনের স্বপক্ষে আমাদের এই বৃহত্তর বারাসাত অঞ্চলে আগামীদিনে আমাদের উদ্যোগকে আরও জোটবদ্ধ ও বিস্তৃত করতে আমরা উক্ত ‘অভয়া মঞ্চের’ অনুসারে এবং ধারাবাহিকতায় এই অঞ্চলেও একটি অভয়া মঞ্চ গঠনের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করছি এবং সেই কারণে আজ আমরা সবাই এই সভাঘরে মিলিত হয়েছি।
আজ এই কনভেনশনে উপস্থিত যে সমস্ত সংস্থা, সংগঠন ও ব্যক্তিত্বরা দলমত নির্বিশেষে এই আন্দোলনকে শক্তিশালী করতে মিলিত হয়েছি তাঁরা সবাই সর্বসম্মতভাবে কেন্দ্রীয় স্তরের ‘অভয়া মঞ্চ’ এবং ‘ওয়েস্ট বেঙ্গল জুনিয়র ডক্টরস্ ফ্রন্ট’ (WBJDF)-এর দ্বারা উত্থাপিত দাবি, ঘোষণা ও কর্মসূচীগুলোকে এই অঞ্চলে আরও জোটবদ্ধভাবে সফল করতে এবং এখানের জনমতকে আরও সংহত করতে আমরা নিম্নলিখিত লক্ষ্যে এগিয়ে যাওয়ার সংকল্প ঘোষণা করছি:-
১) অবিলম্বে ‘অভয়া’ কান্ডের সাথে জড়িত সমস্ত দোষীদের নাম CBI-কে ঘোষণা করতে হবে, ‘অভয়া’ কান্ডের চার্জশিটে তাদের নাম যুক্ত করতে হবে এবং দ্রুত ন্যায় বিচার সম্পন্ন করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে।
২) অবিলম্বে আর জি কর কান্ডের ‘অভয়া’সহ এই অঞ্চল এবং বাংলার বিভিন্ন প্রান্তে এযাবৎ ঘটে যাওয়া সমস্ত ‘অভয়াদের অমিমাংসিত বিচারের পূর্ণাঙ্গ ন্যায় বিচার প্রদান করতে হবে।
৩) টালবাহানা না করে অবিলম্বে সমস্ত হাসপাতাল, চিকিৎসাকেন্দ্র ও চিকিৎসা ব্যবস্থায় চলমান সমস্ত ধরণের রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক মদতপুষ্ট দুর্নীতি, হুমকি ও সন্ত্রাসী ব্যবস্থার নির্মূলের জন্য সরকারকে সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ নিতে হবে।
৪) জনস্বার্থে অবিলম্বে রাজ্যের সমস্ত মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালগুলোতে কেন্দ্রীয় রেফারেল ব্যবস্থা চালু করতে হবে।
৫) অবিলম্বে প্রতিটি মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে ডিজিটাল বেড ভ্যাকেন্সীর মনিটর চালু করতে হবে।
৬) সমাজের সর্বক্ষেত্রে নারী ও প্রান্তিক লিঙ্গ সমুদায়ের সামাজিক নিরাপত্তা ও শৌচালয় ব্যবস্থা সুনিশ্চিত করতে উপযুক্ত প্রশাসনিক ও আধুনিক প্রযুক্তিসহ পরিকাঠামোগত ব্যবস্থা চালু করতে হবে।
৭) অবিলম্বে বারাসাত মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালসহ এই অঞ্চলের সমস্ত চিকিৎসা পরিষেবা কেন্দ্রগুলোতে (ব্লকলেভল প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্র/BPHC, প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্রে/PHC, রুরাল হাসপাতাল/RH, জেলা হাসপাতাল ইত্যাদি) বিরাজমান শূন্যপদ পূরণ এবং জনসংখ্যার অনুপাতে ডাক্তার, নার্স ও অন্যান্য স্বাস্থ্যকর্মীদের শূন্যপদ সৃষ্টি করতে হবে, চুক্তি ভিত্তিক কর্মী নিয়োগ বন্ধ করতে হবে এবং অন্যান্য যাবতীয় পরিকাঠামোগত ঘাটতি ও অনিয়ম দূর করতে সংশ্লিষ্ট প্রশাসনকে ব্যবস্থা নিতে হবে।
৮) এই অঞ্চলের উক্ত সমস্ত চিকিৎসা কেন্দ্রগুলোতে কর্মরত অস্থায়ী কর্মচারীদেরকে যোগ্যতা অনুযায়ী স্বচ্ছতার সঙ্গে স্থায়ীকরণ করতে হবে।
৯) সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ অনুযায়ী স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে কোনো সিভিক ভলান্টিয়ার নিয়োগ করা চলবে না।
১০) অবিলম্বে জনস্বার্থে অবৈধ ও দুর্নীতিগ্রস্ত WBMC (West Bengal Medical Council) এবং WBHRB (West Bengal Health Recruitment Board)-এর বিরুদ্ধে তদন্ত প্রক্রিয়া শুরু করতে হবে।
১১) আর জি কর কাণ্ডের নৈতিক দায় স্বীকার করে রাজ্যের স্বাস্থ্যমন্ত্রী ও পুলিশমন্ত্রীকে পদত্যাগ করতে হবে।
১২) দুর্নীতি ও অব্যবস্থার দোষে অভিযুক্ত বেসরকারি হাসপাতাল ও নার্সিং হোমগুলির বিরুদ্ধে (করোনাকালসহ) মূলতবি থাকা সমস্ত অভিযোগের সচ্ছ তদন্ত ও সুবিচার প্রদানের ব্যবস্থা সরকারকে করতে হবে।
১৩) বারাসাতে আর জি কর কাণ্ড কেন্দ্রিক প্রতিবাদী ও আন্দোলনকারীদের উপর থেকে পুলিশ দ্বারা আরোপিত মামলা অবিলম্বে তুলে নিতে হবে।
সংগ্রামী অভিনন্দনসহ-
*স্টিয়ারিং বডি / ‘অভয়া মঞ্চ’ (প্রস্তুতি), বৃহত্তর বারাসাত*
১) এ্যাসোসিয়েশন অফ হেলথ সার্ভিস ডক্টরস (AHSD)/বারাসাত, ২) জয়েন্ট প্লাটফর্ম অফ ডক্টরস (JPD)/বারাসাত, ৩) বৃহত্তর বারাসাত প্রতিবাদী সাহিত্য ও সংস্কৃতি মঞ্চ, ৪) গণ প্রতিবাদী মঞ্চ, ৫) বারাসাত নাগরিক মঞ্চ, ৬) বাদু উন্নয়নী, ৭) ফোরাম ফর পিউপিলস্ হেলথ্ (মধ্যমগ্রাম), ৮) তিতাস (বারাসাত), ৯) বারাসাত মহকুমা ক্রীড়া সংস্থা, ১০) জনচেতনা মঞ্চ (উত্তর ২৪ পরগনা), ১১) নন্দগড় উন্নয়ন সমিতি (কাজীপাড়া), ১২) বাংলাভাষা ও সংস্কৃতি মঞ্চ (কাজীপাড়া), ১৩) মুক্তাঙ্গন ওয়েলফেয়ার সোসাইটি (কাজীপাড়া), ১৪) রাত দখল-অধিকার দখল (বারাসাত), ১৫) তিলোত্তমা মঞ্চ (বারাসাত), ১৬) ভারতীয় গণসাংস্কৃতিক সংঘ (বারাসাত), ১৭) প্রগতি লেখক সংঘ (বারাসাত), ১৮) স্টুডেন্টস্ হেলথ্ হোম (বারাসাত), ১৯) নারী চেতনা (মধ্যমগ্রাম), ২০) চারণ সাহিত্য চক্র (মধ্যমগ্রাম), ২১) বারাসাত তরুণ সংঘ, ২২) বিশ্বচেতনায় বিজ্ঞান (বসিরহাট), ২৩) সারা ভারত বিজ্ঞান ও যুক্তিবাদী সংস্থা (অশোকনগর), ২৪) শ্রমজীবী স্বাস্থ্য উদ্যোগ (বারাসাত), ২৫) তিলোত্তমার পাশে প্রাক্তনীরা (বাদু), ২৬) ‘আওয়াজ’ (গেঞ্জিমিল, কাজীপাড়া) ২৭) স্বাস্থ্য শিক্ষা নির্মাণ ২৮) অ্যাসোসিয়েশন অফ মিড ডে মিল অ্যাসিস্ট্যান্টস ২৯) সিলিকোসিস আক্রান্ত সংগ্রামী শ্রমিক কমিটি৩০) পশ্চিমবঙ্গ বিজ্ঞান মঞ্চ।
যোগাযোগ: ৯৪৭৭০৬৭৫৫১/৯৮৬৪৭৬২৩৬০ / ৯৩৩০১২৩৯৪৪/৯০০৭০৩৮০৬৮/৮২৪০২৪৫১৪৪/৮৩৩৪৮৩৪৭৪৭/
৯৪৩৩১০৬৭০৫/৯৪৭৭৫৬০১২৯/৯৮৭৪২৫১৯৪৫/৮৪২০০০৪১৮১/
৯৮৩৬৮১৯০২৫/৭৪৪৯৮৩৭৮৫৩/৭০০৩৯৯৭১৭০