মাঝখানে আর কয়েকটা দিন মাত্র বাকি। মকর সংক্রান্তির পুণ্য দিনে তিথি ক্ষণ মেনে উত্তরপ্রদেশের প্রয়াগরাজে শুরু হতে চলেছে পূর্ণ কুম্ভের মেলা যা ইতোমধ্যেই ইউনেস্কোর তরফে বিশ্বের বৃহত্তম ধর্মীয় জমায়েতের স্বীকৃতি পেয়েছে।এই মুহূর্তে চারিদিকে রীতিমতো সাজো সাজো রব , অকল্পনীয় কর্মব্যস্ততা । প্রায় তিনমাস ধরে চলবে পুণ্যস্নানের পর্ব । সরকারের আশা কমবেশি ৪০ কোটি মানুষের জমায়েত হবে। ভারতের নানা প্রান্তের শ্রদ্ধালু হিন্দুধর্মাবলম্বী মানুষজনের সমাবেশ যে এক নতুন মাত্রা যোগ করবে তথাকথিত হিন্দুত্ববাদী রাজনীতিতে তা বলা বাহুল্য। আমার আজকের আলোচনা অবশ্য মেলা নিয়ে নয়, রাজনীতি নিয়ে তো নয়ই । তাহলে আলোচনা কোন পথ ধরবে ? আসলে উত্তরপ্রদেশ সরকার এই মেলার গায়ে এক নতুন তকমা জুড়ে দিয়েছেন – সবুজ কুম্ভমেলা হিসেবে। তা নিয়ে জোরকদমে চলছে ঢাক ঢোল পেটানো, যদিও কাজটা সত্যিই প্রশংসনীয়। তবে কেন এমন প্রচার?
উত্তরপ্রদেশের বন দফতর এবং প্রয়াগরাজ মিউনিসিপ্যাল কর্পোরেশনের যৌথ উদ্যোগে প্রয়াগরাজের ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা দশটি স্থানের প্রায় ৫৬ হাজার বর্গমিটার এলাকা জুড়ে মাত্র দু বছরের সময়সীমার মধ্যে গড়ে তোলা হয়েছে গভীর অরণ্য। বলা যায় পকেট অরণ্য । বহু মানুষের জমায়েতের কারণে যাতে পরিবেশের ওপর কোনো বাড়তি চাপ না পড়ে, ভিড়ে ভিড়াক্কার মেলা প্রাঙ্গণের বাতাসে যাতে প্রয়োজনীয় অক্সিজেনের জোগানে টান না পড়ে সেজন্য আগে থেকেই “অক্সিজেন ব্যাঙ্ক’’ গড়ে তোলার পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছিল উদ্যোক্তাদের পক্ষ থেকে। সাধু ভাবনা সন্দেহ নেই। সেই প্রচেষ্টাই এখন সবুজ বনাঞ্চলের রূপ পেয়ে এবারের কুম্ভমেলাকে অনেকখানি সবুজ করে তুলেছে। প্রয়াগরাজ মিউনিসিপ্যাল কর্পোরেশনের কমিশনার চন্দ্রমোহন গর্গের কথায় – “জাপানি মিয়াওয়াকি টেকনিক প্রয়োগ করে শহরের বাছাই করা দশটি আলাদা আলাদা জায়গায় মাত্র দু বছরের প্রচেষ্টায় এমন অসম্ভবকে সম্ভব করা হয়েছে। শহরের প্রায় ৫৬০০০ বর্গমিটার আয়তনের খোলা এলাকা এখন এই চটজলদি বেড়ে ওঠা অরণ্যে ঢাকা পড়েছে।” এমন প্রচেষ্টা পরিবেশ তথা বায়ু দূষণের মাত্রা কমিয়ে আনার সাথে সাথে শহরের সৌন্দর্যায়ন ও বাস্তুতন্ত্রের সংরক্ষণের ক্ষেত্রেও কার্যকর ভূমিকা পালন করবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট আধিকারিকরা।
প্রশ্ন হলো কী এই আশ্চর্য টেকনিক যা মাত্র দু বছরের মধ্যে এমন ম্যাজিকের মতো বদলে দিলো প্রয়াগরাজের রুখুশুখু বিবর্ণ হয়ে আসা দৃশ্যপটকে? শ্রী গর্গের কথায় কর্পোরেশনের পক্ষ থেকে মিয়াওয়াকি পদ্ধতিকে অনুসরণ করেই রুক্ষ শহুরে পরিবেশের এমন সবুজায়ন সম্ভব হয়েছে। আসুন এই পদ্ধতি বিষয়ে একটু বিস্তারিত ভাবে জেনে নেওয়া যাক্ । জাপানের খ্যাতনামা উদ্ভিদ বিজ্ঞানী ডঃ আকিরা মিয়াওয়াকি হলেন এই অরণ্য সৃজনের বিশিষ্ট রীতির জনক। মূলত শহরাঞ্চলের হারিয়ে যাওয়া সবুজকে ফিরিয়ে আনার জন্য আজকাল এই মিয়াওয়াকি পদ্ধতিকে অনুসরণ করা হচ্ছে সারা দুনিয়া জুড়েই। একদিকে বিশ্ব উষ্ণায়নের ফলে জলবায়ুর পরিবর্তন,
জনসংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে তাল মিলিয়ে নগরীর পত্তন, শহরের বনভূমির পরিসর দ্রুত হ্রাস পাওয়া, জীববৈচিত্র্যের বিলুপ্তি , অসহনীয় হারে নগর উষ্ণতার বৃদ্ধি – এসবই আমাদের অস্তিত্বের সামনে এক বড়ো প্রশ্নচিহ্ন হয়ে উঠেছে ইদানিং কালে । এমনই এক উদ্বেগজনক প্রেক্ষাপটে ডঃ আকিরা মিয়াওয়াকির টেকনিক খুব কার্যকর একটি পদ্ধতি হিসেবে মান্যতা পেয়েছে সব মহলেই।
জাপানের স্বাভাবিক বনভূমির চরিত্র নিয়ে দীর্ঘ সময়ের গবেষণার সূত্র ধরেই গত শতকের সত্তরের দশকের শুরুতে এই জনপ্রিয় পদ্ধতির উদ্ভাবন করেন ডঃ আকিরা মিয়াওয়াকি। জাপানের শহরগুলোর বনভূমি নিয়ে গবেষণা করতে গিয়ে তিনি লক্ষ করেন যে শহরের বনভূমির অধিকাংশ গাছই হলো স্থানীয় আবাসিকদের দ্বারা রোপিত এবং বিদেশি প্রজাতির; অর্থাৎ একান্তভাবে জাপানি গাছ নয়। ডঃ মিয়াওয়াকি এই বিষয়টির ওপর নজর দিলেন বিশেষভাবে, কেননা তিনি বুঝতে পারেন যে নগরায়ন বা শিল্পায়নের ফলে যেসব অঞ্চলের সবুজের শতাংশ লক্ষণীয়ভাবে কমে এসেছে সেখানে স্থানীয় জাপানি প্রজাতির গাছ লাগানো হলে তা দ্রুত বেড়ে উঠবে অন্যান্য বিজাতীয় প্রজাতির গাছের তুলনায়। এটাই স্বাভাবিক। বিদেশি হঠাও, দেশী লাও – এই হলো মিয়াওয়াকি টেকনিকের সারকথা। এই পদ্ধতিতে শহরের পতিত জমিতে বনাঞ্চল গড়ে তোলা হয়েছে পৃথিবীর নানা দেশে। ভারতের ভুজ শহরেই গড়ে তোলা হয়েছে পৃথিবীর সবচেয়ে বড়ো মিয়াওয়াকি পদ্ধতির বনভূমি। সবুজায়নের পাশাপাশি স্থানীয়, দেশীয় প্রজাতির উদ্ভিদের সংরক্ষণ ও সংবর্ধনের ক্ষেত্রেও মিয়াওয়াকি পদ্ধতি অত্যন্ত ফলপ্রসূ বলে বিশেষজ্ঞরা একবাক্যে স্বীকার করে নিয়েছেন।প্রয়াগরাজেও এমনটাই করা হয়েছে।
এখানকার দুটি অঞ্চলের খালি অব্যবহার্য জমি – নৈনি শিল্পাঞ্চল ও বাসোয়ার এলাকা জুড়ে এখন সবুজের আশ্চর্য সমারোহ। শিল্পাঞ্চল গড়তে গিয়ে এক সময় নৈনির স্বাভাবিক উদ্ভিদ ব্যাপকভাবে অপসারণ করা হয়েছে। এরফলে নৈনির বাতাবরণ ক্রমশই দূষিত হয়ে যায়। বর্তমানে এই প্রকল্পের আওতায় ৬৩ প্রজাতির ১.২ লক্ষ গাছ লাগানো হয় এখানে। অন্যদিকে ২৭ ধরনের ২৭০০০ দেশীয় গাছে ভরে উঠেছে বাসোয়ারের একদা পরিচিত ভাগাড় অঞ্চল। এমন রূপান্তর সত্যিই নজর টেনেছে প্রয়াগরাজের স্থায়ীভাবে বসবাসকারী মানুষজনের। এলাকার লোকজন খুব খুশি কারণ এরফলে শিল্প বর্জ্যের পূতিগন্ধময় পরিবেশ থেকে তারা যেমন মুক্তি পেয়েছে এভাবে বনসৃজনের মাধ্যমে, পাশাপাশি বায়ুদূষণ নিয়ন্ত্রণ,জল ও মাটি দূষণ কমানোর ক্ষেত্রেও এই উদ্যোগ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। গাছের ভিড়ে দেখে বাড়ছে পাখপাখালির জমায়েত। এভাবেই পকেট অরণ্যকে ঘিরে ফিরে এসেছে নতুন প্রাণচাঞ্চল্য।
মিয়াওয়াকি পদ্ধতির এমন চমকপ্রদ সাফল্যে উচ্ছ্বসিত হয়েছেন এলাহাবাদ সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটির উদ্ভিদবিদ্যা বিভাগের প্রাক্তন অধ্যাপক ডঃ এন. বি. সিং। তাঁর মতে, শহরাঞ্চলের হারিয়ে যাওয়া সবুজকে ফিরিয়ে আনার ক্ষেত্রে মিয়াওয়াকি পদ্ধতির কোনো বিকল্প নেই। ইট কাঠ কংক্রিটের ভিড়ে দমবন্ধ হয়ে যাওয়া শহরবাসীদের কাছে এই পদ্ধতিতে বন সৃজন বাঞ্ছনীয় স্বস্তি, স্ফূর্তি, আনন্দ এনে দেয়। আজকের পৃথিবীতে শহরগুলো তাপের দাপটে জতুগৃহে পরিণত হয়েছে। শহরকে কেন্দ্র করে এভাবে বনসৃজন করা হলে তাপমাত্রা ৪-৭ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মতো কমে যাবে। ফলে শহর যাপন অনেক অনেক স্বস্তিদায়ক হয়ে উঠবে। গাছ নির্বাচনে স্থানীয় প্রজাতির গাছেদের প্রাধান্য দেওয়ার বিষয়টিও অনবদ্য বলে মন্তব্য করেছেন ডঃ সিং।
কী কী গাছ লাগানো হয়েছে এই চটজলদি গড়ে তোলা বাগানে? শ্রী গর্গের কথায় – এখানে সব দেশী , আমাদের অতি পরিচিত গাছেরা ঠাঁই পেয়েছে। বৈচিত্র্যময় সংস্থানের কথা মাথায় রেখে আমরা সব ধরনের গাছ লাগিয়েছি। ফলের গাছের সাথে মাথা তুলে দাঁড়িয়েছে বিভিন্ন ভেষজ উদ্ভিদ । সৌন্দর্যায়নের কথা মাথায় রেখে লাগানো হয়েছে নানান ধরনের ফুলের গাছ। সব মিলেমিশে এক প্রাণময় সহাবস্থান। পাখিদের আকর্ষণ করতে প্রয়াগরাজের পকেট অরণ্যে লাগানো হয়েছে আম, মহুয়া,নিম, তেঁতুল , আমলকি গাছ। ভবিষ্যতে কাঠের জোগান পেতে ঠাঁই পেয়েছে অর্জুন,সেগুন, শিরিষ, মেহগনি, বাবলা, সজিনা । বনের শোভাবর্ধনের জন্য আছে বোগেনভেলিয়া, টেকোমা,জবা, লেবু,কদমেরা। এখানেই আস্তানা গেড়েছে তুলসী ও ব্রাহ্মীর মতো ভেষজগুণ সম্পন্ন উদ্ভিদেরা। আছে নানান ধরনের বাঁশ গাছ। এক পরিপূর্ণ সমাবেশ। সবাই গায়ে গা লাগিয়ে বেড়ে উঠছে পরমানন্দে। বৃক্ষ শূন্যতা পূরণ করে নতুন গাছেরা এখন সবুজের জয়গান গাইছে। আর এর দৌলতে এবারের পূর্ণ কুম্ভমেলা সত্যি সত্যিই হয়ে উঠেছে সবুজ,হরিয়াল।
আকিরা মিয়াওয়াকি (১৯২৮ – ২০২১) । এক স্বপ্নদ্রষ্টা উদ্ভিদবিজ্ঞানী । উন্নয়নের দাপটে হারিয়ে যাওয়া সবুজ তাঁকে ব্যথিত করেছিল। এই প্রসঙ্গে মনে পড়ে আরো এক স্বপ্নদ্রষ্টা জাপানি কৃষিবিদ মাসানবু ফুকুওকার কথা। তাঁর একটি খড়ের বিপ্লবের কথা। আকিরা মিয়াওয়াকি চেয়েছিলেন উন্নয়নের ঠেলায় হারিয়ে যাওয়া জাপানের শহুরে সবুজকে ফিরিয়ে আনতে। আর তাই তাঁর দীর্ঘ জীবনের সাধনা ছিল সেই হারানো বনাঞ্চলকে পুনরায় ফিরিয়ে এনে মানুষ আর অরণ্যের সম্পর্ককে আরও সুদৃঢ় করে যথাসম্ভব আগের অবস্থায় নিয়ে যেতে । আজ তিনি মর শরীরে আর আমাদের মাঝে নেই, কিন্তু তাঁর উদ্ভাবিত পদ্ধতি আজ সারা দুনিয়া জুড়েই পকেট অরণ্য সৃজনের কাজে সফল ভাবে প্রয়োগ করা হচ্ছে। এবারের পূর্ণ কুম্ভমেলায় হাজির হবেন লাখো লাখো , কোটি কোটি ধর্মপ্রাণ মানুষ। তাঁদের মাধ্যমে আকিরা মিয়াওয়াকির এই বার্তা দিকে দিকে ছড়িয়ে দিতে পারলে সত্যি সত্যিই তা মহাপুণ্যের কাজ হবে। আমরা আশাভরা চোখে সেদিকেই তাকিয়ে থাকবো ।
ঋণ স্বীকার
উত্তরপ্রদেশ সরকারের প্রেস নোট ও অন্যান্য সংবাদপত্রের প্রতিবেদন। ছবিগুলো বিভিন্ন সূত্র থেকে পাওয়া।
মধ্যমগ্রাম।
১১ জানুয়ারি,২০২৫
Opurbo! Miawaki poddhoti shomporkey agey jantam na. E bhabey to dhirey dhirey brihat bananchal godey tola jabey. Swapno dekhtey dosh kothay?
লেখাটি পড়ে একদম নতুন সৃজন ভাবনার সঙ্গে পরিচিত হলাম। যে সব বিষয় আমাদের নজর এড়িয়ে যায় অথবা আমরা আকৃষ্ট হইনা সেই সব বিষয় নিয়েই লেখকের কলম চালনা। এক সময় কলকাতার কাদাপাড়া অঞ্চলের আবর্জনার স্তূপের ওপর এই পদ্ধতিতে গাছ লাগানো হয়েছে। মাসানবু ফকুওকার কথা জানতে চাই।
জাপানে সবার আগে সূর্যোদয় হয়। তাই নতুন নতুন ভাবনার পীঠভূমি এই দেশ। উত্তরপ্রদেশ এই উদ্যোগ নিয়েছে দেখে সত্যিই ভালো লাগছে। নিজেদের দেশের প্রজাতির গাছেদের কথা ভাবতে হবে।
মাসানবুর কথা মাথায় রইলো। মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ।
Anek kichu Jana gelo
জানলেই কাজটা শেষ নয়, বরং শুরু। এই সময়ের বুকে দাঁড়িয়ে আকিরা মিয়াওয়াকির পথে চলার কথা ভাবতে হবে সবাইকে।
BAH DARUN
লেখকের প্রতিটি লেখা থেকেই অত্যন্ত আকর্ষনীয় বিষয় সম্বন্ধে অবগত হ ই।এই লেখাটি ও অত্যন্ত মনোগ্ৰাহী ও সময়োপযোগী। আশায় রইলাম আমার দেশে আরো ব্যাপক ভাবে যত্ম সহকারে এই পদ্ধতি র প্রসার ঘটুক। ভবিষ্যত প্রজন্ম একটু প্রাণভরে প্রাণ বায়ু নিতে পারুক।
ইচ্ছে থাকলেই যে উপায় হয় এই বনসৃজন তার প্রমাণ। সবাই মিলে ময়দানে নাবার সময় এসেছে।
যথারীতি অনেক অজানাকে জানা হয়ে গেলো। উত্তরপ্রদেশের সরকারকে অনেক অনেক অভিনন্দন। দলমত নির্বিশেষে দেশের প্রতিটা সরকারকেই বনসৃজনের এই মত / পন্থাকে গ্রহণ করা উচিৎ।
একদম ঠিক কথা। অভিনন্দন যোগ্য প্রয়াস। আমাদের রাজ্যেও এমন কাজ হয়েছে।কাদাপাড়ার জঞ্জালের পাহাড়ের ওপর। তবে এতে উত্তরপ্রদেশের গর্ব খর্ব হয়না। এই বার্তা ছড়িয়ে পড়ুক সচেতনতার জন্য।
লেখাটি পড়ে নতুন তথ্য জানলাম। ভালো লাগলো আমাদের দেশের একটি রাজ্য এই নতুন টেকনিককে গ্রহণ করেছে জেনে। ছড়িয়ে পরুক এই জ্ঞান চারিদিকে।
দারুণ এক নতুন তথ্য জানলাম।
যদিও প্রয়াগরাজের প্রচেষ্টা এবং সবুজ স্থান তৈরির যত্ন প্রশংসনীয়, মিয়াওয়াকি পদ্ধতির উদযাপনের সাথে আমি একমত হতে পারি না। অভিজ্ঞতার সাথে বাস্তুবিদরা প্রায়শই মিয়াওয়াকি পদ্ধতিটিকে একটি শক্তি-নিবিড়, টপ-ডাউন পদ্ধতি বলে মনে করেন। যদিও এটি নির্দিষ্ট পরিস্থিতিতে উপযুক্ত হতে পারে, এটি সবচেয়ে পরিবেশগত, সবুজ বা টেকসই বিকল্প হওয়া থেকে অনেক দূরে। স্পষ্টভাবে অনেক সতর্কতা, যার মধ্যে কয়েকটি আমি এখানে উল্লেখ করেছি, সেগুলো
তালিকাভুক্ত না করেই এই পদ্ধতির অনুমোদন অযৌক্তিক।
আপনার মতামত আমাকে আরও গভীর সত্যের অনুসন্ধানের প্রেরণা জোগাবে। মিয়াওয়াকি নিজে তাঁর দেশের দ্রুত অপসৃয়মান অরণ্য নিয়ে ভীষণভাবে উদ্বিগ্ন ছিলেন। তাঁর মনে হয়েছিল এই প্রবণতাকে যথাযথভাবে রুখতে না পারলে সমূহ বিপদ ঘনিয়ে আসবে। এই ভাবনাকে সামনে রেখেই তিনি স্থানীয় দেশীয় প্রজাতির গাছেদের অরণ্য সৃজনের কাজে ব্যবহার করার ওপর বিশেষ গুরুত্ব দেবার কথা বলেছিলেন কেননা এই গাছগুলো পরিবর্তিত পরিস্থিতির সঙ্গে যত দ্রুত মানিয়ে নিতে পারবে, বিদেশি প্রজাতির গাছপালারা কখনোই তা পারবে না। এখানেই কিন্তু আকিরা মিয়াওয়াকির ভাবনার সাফল্য বা জনপ্রিয়তা।
পৃথিবী এখন এক বিবর্ণ উষর ভূমিতে পরিণত হয়েছে। একে আগের অবস্থায় ফিরিয়ে নিয়ে যেতে হলে এমন প্রয়াসের গুরুত্বকে খাটো চোখে দেখা যাবে না। বনসৃজনে সরকার কোন পন্থা অবলম্বন করবে সেটার অনুমোদন কখনোই এই সামান্য নিবন্ধ নয়। তাহলে আমি আবার নতুন করে নতুন নিবন্ধ রচনা করবো। আরও কিছু জানানোর থাকলে জানাবেন। আমি আমার সামান্য বুদ্ধিতে তা আলোচনা করবো। আমি বিনম্র শ্রদ্ধায় শিখতে আগ্রহী।
নমস্কার নেবেন। ভালো থাকবেন।