যে রোগটাকে গাইনেকোলজিস্ট হিসেবে ভয় পাই সেটা হলো এন্ডমেট্রিয়োসিস আর অ্যাডিনোমায়োসিস। পিরিয়ডের সময় অল্প ব্যথা থেকে আরম্ভ করে কেউ কেউ এত ব্যথায ভোগে ,যে বলে ওষুধ নয় বিষ দিন। ইনফার্টিলিটি থেকে চকলেট সিস্ট। সেই বিষয় নিয়ে আলোচনা।
অ্যাডিনোমায়োসিস
আপনি কি অনেকদিন ধরে পিরিয়ড চলা, পিরিয়ড ছাড়াও রক্তপাত, পিরিয়ডের সময় খুব বেশি পরিমাণে রক্তপাত কিংবা প্রেগন্যান্ট না হওয়ার সমস্যায় ভুগছেন? তাহলে হতে পারে আপনি অ্যাডিনোমায়োসিসে আক্রান্ত। এই অসুখের নাম কারও কারও জানা থাকলেও অনেকের কাছেই অজানা।
অ্যাডিনোমায়োসিস কী?
অ্যাডিনোমায়োসিসকে ইন্টারনাল এন্ডোমেট্রিওসিসও বলা হয়। জরায়ুর ভিতরে যে পেশীর স্তর বা মাসলের (মায়োমেট্রিয়াম),তার মধ্যে যদি এন্ডমেট্রিয়াম দেখা যা তাহলে তাকে অ্যাডিনোমায়োসিস বলে। এন্ডোমেট্রিয়াম হল জরায়ুর একেবারে ভিতরের দিকের স্তর, যা ইউটেরাইন ক্যাভিটি, যেখানে ডিম্বাণু ও শুক্রাণুর মিলনের পর তৈরি হওয়া ভ্রূণ র ওপর আস্তরণ দিয়ে রাখে। সেখানেই ভ্রূণ বেড়ে উঠতে থাকে। এই স্তরে প্রচুর রক্তবাহী নালী থাকে যা প্রতিবার পিরিয়ডের পর পরবর্তীকালে ভ্রূণ প্রতিস্থাপিত হওয়ার জন্য প্রস্তুত হয়। আর প্রেগন্যান্সি যদি না আসে তাহলে ফের পিরিয়ডের রক্তের মাধ্যমে তা বেরিয়ে যায়। যদি এই স্তরে কোনও সমস্যা হয় তাহলে প্রেগন্যান্সি আসেই না কিংবা এলেও তা থাকে না।
দু ধরনের অ্যাডিনোমায়োসিস আছে। প্রথমত, ফোকাল অ্যাডিনোমায়োসিস আর দ্বিতীয়ত, ডিফিউজ অ্যাডিনোমায়োসিস।
কাদের এই সমস্যা হতে পারে?
ঠিক কী কারণে এই সমস্যা হয় তা পরিষ্কার নয়। তবে একথা ঠিক এই সমস্যা বেশি হয় প্রজননক্ষম অবস্থায় বিশেষত, ৪০-৫০ বছর বয়সে। আর যাদের পূর্ববর্তী সন্তান সিজারিয়ান সেকশনে হয় কিংবা হিস্টেরেস্কোপ করা হয় তাঁদের। যদিও এখন অনেক কম বয়সী মেয়েদের অ্যাডিনোমায়োসিস দেখা যাচ্ছে।
কাদের বেশি ঝুঁকি থাকে?
· ইস্ট্রোজেন হরমোনের অস্বাভাবিক মাত্রা থাকলে ঝুঁকি বেশি থাকে।
· একাধিক সন্তান থাকা
· আগে জরায়ুর কোনও অপারেশন হওয়া
· যাদের বয়স ৪০-৫০ বছর
কীভাবে জানা যাবে কারও অ্যাডিনোমায়োসিস আছে? ডাক্তারের কাছেই বা কখন যাবে?
অ্যাডিনোমায়োসিসের উপসর্গগুলো হল
· পিরিয়ডের সময় অসহ্য পেটে ব্যথা ও প্রচুর ব্লিডিং হওয়া
· অনিয়মিত পিরিয়ড
· সহবাসের সময় ব্যথা লাগা
· পিরিয়ডের সময় প্রচুর রক্তপাতের কারণে অ্যানিমিয়া দেখা দেওয়া
· কোমরে ব্যথা
· বন্ধ্যাত্ব
· বারবার মিসক্যারেজ হওয়া।
কীভাবে এই রোগ নির্ণয় করা হয়?
অনেক সময়েই এই রোগ নির্ণয় করা বেশ কষ্টকর। কারণ এর সঙ্গে আরও কিছু সমস্যা জড়িয়ে থাকতে পারে। তাই পুরনো কিছু অসুখ ছিল কিনা তার ইতিহাস জানতে হয়, কোমরের পরীক্ষা, ট্রান্সভ্যাজাইনাল আল্ট্রাসাউন্ড, ম্যাগনেটিক রিজোন্যান্স ইমেজিং বা এম আর আই ইত্যাদি যে কোনও উপায়ে পরীক্ষা করা হতে পারে। সাধারণত এর সঙ্গে থাকে ফাইব্রয়েড, এন্ডোমেট্রিওসিস ও এন্ডোমেট্রিয়াল পলিপস।
চিকিৎসা কী?
চিকিৎসার নানারকম পদ্ধতি আছে। রোগীর প্রজনন ক্ষমতার কথা বিবেচনা করে চিকিৎসা করা হয়। রোগীর কষ্ট কমাতে সাধারণত ব্যথা কমানোর ওষুধ, হরমোনাল কন্ট্রাসেপটিভ, GnRH analogue দেওয়া হয়। তবে অসুখের জটিলতা দেখে কখনও কখনও অপারেশনও করা হয়।
অ্যাডিনোমায়োসিসের চিকিৎসায় নতুন সংযোজন হল লেট্রোজল। কম মাত্রায় প্রয়োগ করলে অসুখের উপসর্গ কমতে দেখা যাচ্ছে। যদিও এখনও এ নিয়ে গবেষণা চলছে।
অ্যাডিনোমায়োসিস থাকলে কি কেউ প্রেগন্যান্ট হতে পারে? সেক্ষেত্রে সাফল্যের হার কেমন?
অ্যাডিনোমায়োসিস থাকলে প্রেগন্যান্ট না হওয়া এবং হলেও মিসক্যারেজ হয়ে যেতে পারে। সেক্ষেত্রে সন্তানধারণের জন্য আইভিএফ করার কথা ভাবেন অনেকে। কিন্তু আইভিএফ করলেও ইমপ্লান্টেশনে সমস্যা হয় কারণ জরায়ুর সন্তানধারণের ক্ষমতা এক্ষেত্রে অনেক কমে যায়।
অ্যাডিনোমায়োসিস থাকা সত্ত্বেও কেউ যদি প্রেগন্যান্ট হতে চায় তাহলে কী করণীয়?
প্রথমত, এসব ক্ষেত্রে আইভিএফ করাই ভাল। এতে ভ্রুণ প্রতিস্থাপন করার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া যায়।
দ্বিতীয়ত, GnRH agonists এখন অ্যাডিনোমায়োসিসের টিস্যু কমাতে সাহায্য করে। যদিও এর নানারকম অসুবিধার কথাও জানা যাচ্ছে।
তৃতীয়ত, মেট্রোজল নামে অ্যারোমাটিক ইনহিবিটর অ্যাডিনোমায়োসিসের চিকিৎসায় আশার সঞ্চার করছে। এর সাহায্যে এই অসুখের ব্যথা কমানো ও প্রেগন্যান্সিতেও সাহায্য করবে বলে মনে করা হচ্ছে।
ঋণ স্বীকার: Shyamali Chakraborty Banerjee