আমাদের তথা বিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষিকাদের দায়িত্ব শিশুর শিক্ষার এবং সাথে শিশুদের স্বাস্থ্যেরও ।
গত ২০ ও ২১ জুন ২০১৯, দু দিন, আমাদের বিদ্যালয়ে অনুষ্ঠিত হয়ে গেল বার্ষিক স্বাস্থ্য পরীক্ষা শিবির। উক্ত শিবিরে দুদিনে বিদ্যালয়ে প্রায় দুই শতাধিক শিশুর স্বাস্থ্য পরীক্ষা করে গেলেন চিকিৎসক ডাক্তার সূর্য ঘোষাল।
কিছু ক্ষেত্রে আমরা ডেকে পাঠিয়েছিলাম শিশুর অভিভাবক ও অভিভাবিকাদেরও।
সমস্ত শিশুর স্বাস্থ্য পরীক্ষা করে (ওজন, উচ্চতা, হৃদস্পন্দন ,দাঁতের গঠন, চোখের সমস্যা ইত্যাদি খুঁটিনাটি জেনে ) তিন স্তরে রেফার করলেন শিশুদের।
ওদের বোঝালেন শাকসবজি খাওয়ার কথা, ফাস্টফুড না খাওয়ার কথা এবং স্বাস্থ্য রক্ষায় কিছু গুরুত্বপূর্ণ স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার কথা।
একদল ছাত্রছাত্রীকে রেফার করলেন রাধানগর ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে, এক দলকে রেফার করলেন বিষ্ণুপুর জেলা হাসপাতালে এবং বাকিদের বাঁকুড়া মেডিকেল কলেজে।
জন্মগত হার্টের অসুখ সহ মোট ৩৮ ধরনের রোগের চিকিৎসার কথা আছে এই স্কুল হেলথ প্রজেক্ট-এ।
এক্ষেত্রে চিকিৎসক দুটি রেফার কাগজ আমাদের হাতে দেন। আমরা তা ছাত্র ছাত্রীদের অভিভাবকদের হাতে তুলে দিই এবং কোন বারে কোন হাসপাতালে যাবেন তা সুনির্দিষ্টভাবে উল্লেখ করা থাকে। এই কাগজ নিয়ে অভিভাবক যান হাসপাতালে। বিগত কয়েক বছর ধরেই আমাদের শিক্ষক-শিক্ষিকারাও যাওয়ার চেষ্টা করেন অভিভাবকদের সাথে। এক্ষেত্রে হাসপাতালে আলাদা করে কোনো টিকিট করে আর লাইন দিতে হবে না! হাসপাতালে রোগী সহায়তা কেন্দ্রে রেফার কাগজ দেখালে ওনারা বিনামূল্যে (বিষ্ণুপুর জেলা হাসপাতাল ও বাঁকুড়া মেডিকেল কলেজের ক্ষেত্রে) টিকিট করে দেবেন এবং যতই ভিড় থাক ,উক্ত শিশুদের চিকিৎসক আগে দেখে ছেড়ে দেবেন।
এক্ষেত্রে সমস্ত ওষুধ হাসপাতাল থেকেই পাবে কিন্তু চিকিৎসক চিকিৎসা করতে গিয়ে যদি দেখেন কোন ওষুধ হাসপাতলে সেই মুহূর্তে সাপ্লাই নেই সে ক্ষেত্রে চিকিৎসক একটি নির্দিষ্ট ফরম্যাট-এ লিখে দেবেন। তা নিয়ে একটি নির্দিষ্ট ওষুধের দোকানে গেলে সেই দোকান থেকে বিনামূল্যে ওষুধটি পাওয়া যাবে। এক্ষেত্রে ওষুধের বিল হাসপাতাল মেটাবে।
যেমন এবার আমাদের বিদ্যালয়ের শিশু শ্রেণী, দ্বিতীয় ও চতুর্থ শ্রেণীর চার জন ছাত্রছাত্রীর চোখে বিটট্স স্পট লক্ষ্য করেন চিকিৎসক। এ ক্ষেত্রে ভিটামিন এ ক্যাপসুল দিয়ে চিকিৎসা করা দরকার। আমরা রাধানগর ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে জানালে হাসপাতাল থেকে শিশুদের জন্য বাইরে থেকে ওষুধ কিনে দেওয়া হয় । গত সোমবার ওই চারজন শিশুদের নিয়ে গিয়ে বিদ্যালয়ের শিক্ষক অপথ্যালমোলজিস্টকে দেখিয়ে ওষুধ গুলি নিয়ে আসেন।
একটি শিশুকে বাঁকুড়া মেডিকেল কলেজে রেফার করা হয়। তার স্নায়বিক সমস্যার জন্য। গত সপ্তাহে ওখান থেকে তার এমআরআই হয়েছে। এবং তা অবশ্যই বিনামূল্যে।
হাসপাতালে দেখানোর পর ডাক্তারের সই করা একটি কাগজ আমাদের বিদ্যালইয়ে জমা থাকবে। পরবর্তী প্রয়োজনে ওই কাগজ দিয়েই দেখানো চলবে।
আরো উল্লেখ থাকে অতীতে আমার বিদ্যালয় এর সুকুমার বাউরি এবং পার্শ্ববর্তী এলাকার দু-একটি বিদ্যালয় থেকে মোট চারজন শিশুর এই প্রকল্পে (শিশু সাথী) হার্ট অপারেশন বিনামূল্যে হয়েছে।
এবার জেনে রাখুন স্কুল হেলথ-এর মাধ্যমে যে যে সমস্যাগুলির চিকিৎসা শিশুর তথা ০ থেকে ১৮ বছর বয়সে সমস্ত শিশুর বিনামূল্যে পায় বা পাওয়ার কথা তা হল
জন্মগত সমস্যা
১) নিউরাল টিউব ডিফেক্ট, ২) ডাউনস সিনড্রো্ ৩) ক্লেফট লিপ ও প্যালেট (গন্না কাটা ), ৪) ট্যালিপেস ( ক্লাব ফুট ্ ৫) ডেভলপমেন্টাল ডিস্প্লাসিয়া অফ হিপ, ৬) জন্মগত ছানি, ৭) জন্মগত বধিরতা, ৮) জন্মগত হৃদপিণ্ডজনিত সমস্যা, ৯) রেটিনোপ্যাথি অফ প্রি ম্যাচুরিটি।
ঘাটতিজনিত সমস্যা
১০) রক্তাল্পতা, ১১) ভিটামিন এ-এর অভাব বিটট্স স্প্ ১২) ভিটামিন ডি এর অভাব রিকেট, ১৩) এস এ এম খর্বত্ ১৪) গলগন্ড।
শৈশবকালীন অসুস্থতা
১৫) ত্বকের সমস্যা, ১৬) ওটাইটিস মিডিইয়া, ১৭) রিউমেটিক হার্ট ডিজিস, ১৮) শ্বাসনালীর প্রদাহজনিত সমস্যা, ১৯) দাঁতের ক্ষয়, ২০) খিঁচুনি।
বিলম্বিত বিকাশ এবং অক্ষমতা )/প্রতিবন্ধকতা
২১) দেখার সমস্যা (সেক্ষেত্রে চশমা সহ), ২২) শোনার সমস্যা, ২৩) স্নায়ু শক্তি দুর্বলতা, ২৪) বিলম্বিত চলন শিখন, ২৫) বিলম্বিত বোধশক্তি, ২৬) কথা বলায় বিলম্ব, ২৭) আচরণগত সমস্যা (অটিজম), ২৮) শিখনগত সমস্যা, ২৯) মনোযোগের অভাব ও অতিরিক্ত চঞ্চলতা (এ ডি এইচ ডি )
অন্যান্য
৩০) থ্যালাসেমিয়া, ৩১) কনজেনিটাল গয়টা্ ৩২) শিকল সেল অ্যানিমিয়া।
বয়:সন্ধি জনিত সমস্যা
৩৩) বৃদ্ধিজনিত সমস্যা, ৩৪) অবসা্ ৩৫) মাসিক চক্র শুরুতে দেরি হওয়া, ৩৬) অনিয়মিত মাসিক চক্্ ৩৭) মাসিক চলাকালীন ব্যথা, ৩৮) পেচ্ছাবের সমস্যা, ৩৯) দুর্গন্ধযুক্ত নিঃসরণ ।
এইসব সমস্যার ক্ষেত্রে যোগাযোগ করুন
১)আপনার স্থানীয় সরকারি বিদ্যালয় এবং আই সি ডি এস-এ
২)এস আই অফিসে
৩) ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে স্কুল হেলথ-এর দায়িত্বে থাকা চিকিৎসকের সাথে।
একটি জেলায় এই পুরো বিষয়টির নোডাল অফিসার ডেপুটি সিএমওএইচ ৩ ।