উদ্বিগ্নতার সমস্যা অর্থাৎ আংজাইটি ডিসঅর্ডার
জাতীয় রোগে রোগী অকারণে অত্যধিক চিন্তা করেন ও বিভিন্ন বিষয়ে অহেতুক ভয় পান।
কেউ ভিড় জায়গায় যেতে ভয় পান। অনেকে আবার বদ্ধ জায়গায় থাকতে ভয় পান। কেউবা অনেক লোকজনের সামনে কথা বলতে বা কিছু কাজ করতে ভয় পান। কেউ আবার বিশেষ কোন জায়গায় (উঁচু জায়গা, জল, অন্ধকার ইত্যাদি), জীব জন্তুর থেকে বা রক্ত দেখে ইত্যাদি বিশেষ কোন ব্যাপারে ভয় পান। আবার কেউ কেউ জীবনে প্রায় সমস্ত পরিস্থিতিতেই অকারণে ভয় পান। ভয় পেলে তাদের হাত-পা কাঁপতে থাকে, বুক ধড়ফড় করে, বেশী করে ঘাম হতে থাকে, গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে যায়, বার বার প্রস্রাব যেতে হয়, ইত্যাদি।
কেউ কেউ আবার অকারণে এতটাই ভয় পেয়ে যান যে তাঁদের বুক ধড়ফড় করতে থাকে, শ্বাস কষ্ট হতে থাকে, মাথা ঘুরতে থাকে, মনে হতে থাকে নিজের ওপর নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলেছেন ও এখনই বুঝি মারা যাবেন। বিশ্বের প্রায় ২০-৩০ শতাংশ মানুষ জীবনের কোন না কোন সময়ে এই সমস্যার শিকার হন।
আমাদের মস্তিষ্কের মধ্যে কিছু রাসায়নিকের পরিমানের তারতম্য ঘটলে এই সমস্যা দেখা যায়।এক্ষেত্রে সেরোটোনিন ও গাবা নামক দুটি রাসায়নিক গুরুত্বপূর্ন ভূমিকা নেয়। এছাড়া মস্তিষ্কের একটি বিশেষ জায়গা- “লিম্বিক সিস্টেম” এই রোগে গুরুত্বপূর্ন ভূমিকা পালন করে।
উদ্বিগ্নতার সমস্যা (আংজাইটি ডিসঅর্ডার) অনেক রকমের হতে পারে। যেমন -জেনারেলাইজড
আংজাইটি ডিসঅর্ডার, প্যানিক ডিসঅর্ডার, ফোবিক ডিসঅর্ডার (ফোবিয়া), অবসেসিভ কম্পালসিভ ডিসঅর্ডার ইত্যাদি।
“জেনারেলাইজড আংজাইটি ডিসঅর্ডার” রোগটিতে আক্রান্ত ব্যক্তি সমাজের প্রায় সব ক্ষেত্রেই ও জীবনের প্রায় সমস্ত বিষয়েই অযথা উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েন। এর সাথে সাথে মনোযোগের অভাব, খিটখিটে মেজাজ, মাথা ব্যাথা, অনিদ্রা,গলায় কিছু আটকে থাকার অনুভূতি, বমি ভাব দেখা যেতে পারে।
“প্যানিক ডিসঅর্ডার” জাতীয় উদ্বিগ্নতার সমস্যায় কোন কারণ ছাড়াই হঠাৎ করে রোগীর বুক ধড়ফড় করা, হাত পা কাঁপা, বেশি করে ঘাম হতে থাকা, শ্বাসকষ্ট, বুকে ব্যথা, বমি ভাব, মাথা ঘোরা ইত্যাদি সমস্যা সৃষ্টি হয়। সেই মুহূর্তে রোগীর মনে হয় যেন এখনই মারা যাবেন। এই ঘটনাকে বলা হয় প্যানিক এটাক। যেহেতু কোন পরিস্থিতিতে বা কোন সময়ে এই ঘটনা ঘটবে তা রোগী বুঝে উঠতে পারেন না, তাই সর্বদাই রোগীর মনে “এই বুঝি আবার ঐরকম হল” -এই জাতীয় ভয়ের সঞ্চার হয়।
“ফোবিয়া” কথাটির অর্থ হল কোন কোন বিশেষ জায়গা বা বিষয় নিয়ে মাত্রাতিরিক্ত ভয়।
অর্থাৎ ভয়ের কারণটা রোগীর জানা। তাই এই রোগে আক্রান্ত ব্যক্তি ওই বিশেষ জায়গাগুলি এড়িয়ে চলার চেষ্টা করেন। কয়েকটি উল্লেখ যোগ্য ফোবিয়া হল – “এগোরা ফোবিয়া”,সোশ্যাল ফোবিয়া ইত্যাদি।
“এগোরা ফোবিয়া” রোগে আক্রান্ত ব্যক্তি একা একা কোন ভিড় জায়গায়,বাড়ি থেকে দূরে কোথাও গেলে বা একা কোথাও বেরোলে বিভিন্ন শারীরিক সমস্যার মুখোমুখি হন। যেমন তাঁর বুক ধড়ফড় করে, হাত পা কাঁপতে থাকে, ঘাম হতে থাকে, গলা শুকিয়ে যায়, শ্বাস কষ্ট হয়, বুকে ব্যাথা, বমি ভাব, পেট ব্যথা, মাথা ঘোরা, শরীরে ঠান্ডা বা গরম অনুভূতি, ঝিঁঝিঁ ধরার অনুভূতি, পরিবেশ থেকে নিজে আলাদা হয়ে যাবার অনুভূতি ইত্যাদি হতে পারে। এই সমস্যাগুলি রোগীর জীবনযাত্রাকে এমন ভাবে প্রভাবিত করে যে রোগী ওই স্থানগুলি এড়িয়ে চলতে থাকেন এবং ক্রমশ গৃহবন্দী হয়ে পড়তে থাকেন। ঠিকমত চিকিৎসা না করলে, প্রাণঘাতী রোগ না হয়েও কোন রোগ কিভাবে আমাদের জীবনকে বিপর্যস্ত করে তুলতে পারে তার অন্যতম উদাহরণ হল এই রোগ। অনেক সময় এর সাথে সাথে নানান উদ্বিগ্নতার সমস্যাও জড়িয়ে থাকে।কিন্তু উপযুক্ত চিকিৎসায় এই রোগ সহজেই কাটিয়ে ওঠা সম্ভব।
আবার “সোশ্যাল ফোবিয়া” তে বিভিন্ন সামাজিক পরিস্থিতিতে, নতুন জায়গায় গেলে, অচেনা লোকজনের সাথে কথা বলতে গেলে, স্টেজে উঠে কিছু বলতে গেলে, অনেকের সামনে কিছু বলতে বা উপস্থাপন করতে গেলে অহেতুক অতিরিক্ত উদ্বিগ্নতা সৃষ্টি হয়।
“অবসেসিভ-কমপালসিভ ডিসঅর্ডার” রোগে রোগীর মনে বারবার কিছু অযৌক্তিক চিন্তা, ইচছা আসে বা কিছু ছবি ভেসে ওঠে, যেগুলি রোগীকে কষ্ট দেয়। কিন্তু অনেক চেষ্টা সত্ত্বেও সেই চিন্তা গুলিকে আটকানো যায় না। অনেক সময় এই চিন্তার বশবর্তী হয়ে অনিচ্ছা সত্ত্বেও রোগীকে কিছু কাজ বারবার করতে হয়- যেমন বারবার হাত ধোয়া বা স্নান করা (একে আমরা অনেক সময় বাংলায় শুচিবাই রোগ বলি), দরজায় ঠিকমত তালা দেওয়া হয়েছে কিনা তা বারবার পরখ করে দেখা ইত্যাদি।
উদ্বিগ্নতা যদি এতটাই বেড়ে যায় যে তা স্বাভাবিক জীবনযাপন ও কাজকর্মকে বিপর্যস্ত করে তুলছে,তাহলে তার চিকিৎসা প্রয়োজন। সেক্ষেত্রে সাইকিয়াট্রিস্ট ডাক্তারবাবুর পরামর্শ নিন। এন্টিডিপ্রেসেন্ট, এন্টি আংজাইটি জাতীয় ওষুধ ব্যবহৃত হয়।এছাড়া উদ্বিগ্নতা কমানোর জন্য ডিপ ব্রিথিং টেকনিক , প্রোগ্রেসিভ মাসল রিলাক্সেশন, ইত্যাদি পদ্ধতি ব্যবহৃত হয়।