মেধাকে গ্রেফতার করা হয়েছে শুনে যতটা না বিস্মিত হয়েছি তার থেকে ঢের বেশি লজ্জিত এবং ক্রুদ্ধ হয়েছি চলতি ব্যবস্থাপনার নির্লজ্জ মিথ্যাচার ও চাটুকারিতা দেখে। ছোটবেলায় পড়া সেই নিরীহ মেষ শাবক ও ধূর্ত নেকড়ের গল্পের কথা মনে পড়লো। “তুই নোস্, তোর্ বাবা জল ঘুলিয়ে দিয়ে ছিল”। আজ থেকে ২৪ বছর আগের এক মানহানির মামলায় মেধাকে দিল্লিতে গ্রেফতার করা হয়। পরে আদালতের কাছ থেকে অবশ্য তিনি ২৫০০০ টাকার ব্যক্তিগত জামিনে ছাড়া পান। তাঁর বিরুদ্ধে লেফটেন্যান্ট জেনারেল ভি.কে. সাক্সেনা মানহানির মামলা করেছিলেন আজ থেকে ঠিক ২৪ বছর আগে ২০০১ সালে। সেই পুরনো মামলার সূত্রেই তাঁকে দিল্লি পুলিশ আটক করে।
মেধা পাটেকর দেশের পরিবেশ আন্দোলনের এক অগ্রণী ব্যক্তিত্ব– চিপকো আন্দোলনের সার্থক উত্তরসূরি। ১৯৮৫ সালে নর্মদা নদীর ওপর সর্দার সরোবর নদী বাঁধ প্রকল্প রূপায়ণের বিরুদ্ধে তিনি গড়ে তোলেন নর্মদা বাঁচাও আন্দোলন। নর্মদা তীরবর্তী অঞ্চলের সাধারণ খেটে খাওয়া আদিবাসী,কৃষক, মৎস্যজীবী,দিন মজুর মানুষদের সংগঠিত করে গড়ে তোলেন এক দুর্বার আন্দোলন। এই আন্দোলন ছিল সম্পূর্ণভাবে এক অহিংস আন্দোলন। একেবারে মাটি থেকে উঠে আসা, মাটির গন্ধ মাখা মানুষের এই আন্দোলন ছিল নর্মদা তীরবর্তী অঞ্চলের সাধারণ মানুষের রুটি রুজির ন্যায্য অধিকার আদায়ের লড়াই।
পৃথিবীর সর্বত্রই বড়ো নদী বাঁধ নির্মাণ নিয়ে একধরনের প্রশাসনিক আগ্রাসন চলে। অথচ একটা নদীর সঙ্গে যুক্ত থাকে তার অববাহিকায় বসবাসকারী সর্বস্তরের মানুষের ভালোবাসা, হাসি -কান্না, প্রেম- বিরহের অগণিত আখ্যান। বাঁধ নির্মাণের সময় এগুলোর কোনো স্বীকৃতি মেলেনা। নদীতে বাঁধ দিয়ে তার চলার নিজস্ব ছন্দকে ব্যাহত করে হিসেব নিকেশ করা হয় স্থূল বৈষয়িক লাভালাভের – জল দিয়ে কতটা এলাকায় সেচের ব্যবস্থা করা সম্ভব হবে, কতটা বাড়বে ফসলের উৎপাদন,কি দামে তা বিক্রি হবে, কতটা বাড়বে মুনাফা। এই উল্লাসে ঢাকা পড়ে যায় কত শত মানুষের ঘর, ভিটেমাটি, চাষের খেত, জীবিকা চ্যুত অসংখ্য মানুষের অসহায় ক্রোধ আর কান্না।
মেধা পাটেকর সাধারণ শ্রমজীবী মানুষের এই কান্নার শব্দ শুনেছিলেন গভীর মমতায় । আর তাই গড়ে তুলেছিলেন এক অহিংস প্রতিবাদী আন্দোলন। রাষ্ট্রযন্ত্র যাঁরা চালান তাঁরা কখনোই এমন বিরূপ মনোভাব পছন্দ করেন না। আর তাই নর্মদা তীরের ৪০০০০ এরও বেশি পরিবারের মানুষকে সামান্যতম ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা না করে, বিকল্প বাসস্থান বা জীবিকার ব্যবস্থা না করেই নদীর জলে ডুবিয়ে দেওয়া হয় বিস্তির্ণ আবাদী জমি। পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করার কোনো দায় বা দায়িত্ব প্রশাসনের নেই। মেধা পাটেকর এই সব হারানো মানুষদের পাশে দাঁড়িয়ে, সর্বান্তকরণে তাঁদের আত্মার আত্মীয় হয়ে নর্মদা বাঁচাও আন্দোলন লড়েছিলেন। সেইসব নাম না জানা, অখ্যাত মেঠো মানুষের শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা পেলেও প্রশাসনের বিভিন্ন মানুষ তাঁকে বিদ্ধ করেছেন তীক্ষ্ণ বাক্যবাণে। তাঁকে উন্নয়ন বিরোধী বলে দেগে দেওয়ার চেষ্টা চলেছে। মেধা কখনোই এসবে দমে যাননি।
কারাগার মেধার জীবনে নতুন নয়। মেহনতী মানুষের লড়াইয়ের অগ্রপথিক হিসেবে তাঁকে অন্ধকার কারান্তরালে থাকতে হয়েছে একাধিকবার। প্রধানমন্ত্রী স্বয়ং তাঁকে ও তাঁর সহযোগীদের শহুরে নকশাল বলে কটাক্ষ করেছেন। তাঁর জন্যই সর্দার সরোবর প্রকল্পের রূপায়ণ বিলম্বিত হয়েছে। এখন সবই কেমন যেন গা সওয়া হয়ে গেছে মেধার।
গতবছরের জুলাই মাসে দিল্লির এক আদালত মেধাকে পাঁচ মাসের জেল ও ১০ লক্ষ টাকা জরিমানা ধার্য করে লেফটেন্যান্ট জেনারেল ভি. কে. সাক্সেনা মানহানি মামলায়। যদিও একমাস পরে তাঁকে মুক্তি দেওয়া হয়। গত শুক্রবার মেধা দিল্লিতে এসেছিলেন একটা কাজে । দিল্লি স্টেশনে ট্রেন থেকে নামার সঙ্গে সঙ্গে দিল্লির তৎপর পুলিশ তাঁকে গ্রেপ্তার করে। সকাল সাড়ে বারোটায় মেধাকে আদালতে হাজির করা হয়। সেই পুরনো অভিযোগ – লেফটেন্যান্ট জেনারেলের মানহানি। এই অভিযোগেই জামিন অযোগ্য ধারায় গ্রেফতার করা হয় মেধাকে। পরে ছাড়াও পান তিনি। আগামী মাসের ২০ তারিখে পরবর্তী শুনানির দিন ধার্য হয়েছে। এও এক লড়াই। মেধা এই লড়াইয়ে অভ্যস্ত বহু দিন ধরে। নাহলে দু দশক ধরে মানহানির মামলা টেনে নিয়ে যায় দেশের আদালত!
মেধাকে সারা দুনিয়া চেনে একজন হার না মানা অবিচল প্রকৃতি পরিবেশ আন্দোলনের কর্মী হিসেবে। উন্নয়নের নামে প্রকৃতি পরিবেশের ওপর চলা অত্যাচার, আগ্রাসন তাঁকে উদ্বিগ্ন করে, ব্যথিত করে। মেধাজী! আমরা আপনার সঙ্গে আছি। আপনার আপোষহীন লড়াই আজও আমাদের প্রেরণার উৎস। ভালো থাকবেন।
২৫ এপ্রিল,২০২৫.
অন্যায়! অন্যায় ! অন্যায় ! একরাশ ঘৃণা!
এমনই শাণিত লেখা চাই ।
অবসরপ্রাপ্ত মাস্টারমশাইদের কলম শাণিত হবে কী করে ভাই? ভাবতে অবাক লাগে একটা মানহানির মামলা দীর্ঘ চব্বিশ বছর ধরে চলছে ! প্রতিবাদ না হলে রাষ্ট্রযন্ত্রের স্বৈরাচারী হয়ে ওঠার আশঙ্কা রয়েছে। মেধার মতো মানুষরাও এমন ভোগান্তির শিকার হন। ছড়িয়ে পড়ুক মেধার কথা।
From heart I support those who work for a better environment and conserving critical environmental domains.
But, for me she is one of those because of whom Tata Nano project was shifted to Gujrat. There are a total of 26000 employment till now in and around that one factory (direct+indirect). Even if I keep that thing apart, personally I don’t believe in any activist who are politically or non politically scavenging anywhere in the world. May be she is good but for me these people are all masked ones and these fights are their internal conflict.
Personal view though and should be well accepted and debated with a democratic mind.