স্বাস্থ্য ভবনের পাশে বসা আন্দোলনরত ছাত্র-ছাত্রীদের ভিডিও তুলছেন অনেকেই। সমবেত কন্ঠে তালে তালে এই প্রতিবাদ ভাষণ শুনতে ভালই লাগছে। অনেকে ভিডিও করছেন। আমিও করেছি, আমার কাজের প্রয়োজনে, ডক্টরস ডায়লগ এর প্রয়োজনে। ফেসবুকে অনেকেই দেখলাম এই উচ্ছ্বাসকে প্রশ্ন করেছেন? বলছেন শুধুই কি গানবাজনা? আরে এমন আবেগ উচ্ছ্বাসে ভেসে গেলে তো আন্দোলন গাধার গা**।
তাদের জন্য বলি, না। শুধুই প্রতিবাদের উচ্ছ্বাস নয় আরো কিছু দেখেছি।
দেখলাম সকালবেলা হাতপাখা হাতে এক বৃদ্ধ ঘোরাফেরা করছেন শিবিরে।এসে আন্দোলনকারীদের হওয়া করতে লাগলেন। আরে কি মুশকিল! তাকে বোঝানো হলো আপনার হাতের হাতপাখাটা দিন। আমরা নিজেরাই হওয়া করতে পারবো, কিন্তু তিনি ছাড়তে চাইলেন না। বললেন তোমরা হলে ডাক্তার, দ্বিতীয় ভগবান, এ আমার পুণ্য সঞ্চয়।
এইরে! গোলমেলে ব্যাপার। আমি আবার পাপ পুণ্য বুঝিনা। সরে এলাম।
উইপ্রো মোড় থেকে বাক নিয়ে যে রাস্তাটা সোজা স্বাস্থ্য ভবনের দিকে এসেছে। রাস্তা জুড়ে ছাউনি পড়েছে প্রতিবাদীদের। অনেকটা আমার আপনার সিরিয়ালে দেখা যুদ্ধের শিবিরের মত। একদিকে সারি সারি বায়ো টয়লেট। পাশেই জেনারেটর। জলের ট্যাংকি। তার বিপরীত দিকে খাবারের জায়গা করা হয়েছে। জোমাটো ও সুইগি থেকে অসংখ্য ডেলিভারি বয় এসে নাকি খাবার দিয়ে যাচ্ছে বলে শুনেছিলাম। ওমা! এ তো দেখি এক্কেরে পেটির কারবার।
ম্যাটাডোর থেকে নামছে কয়েক পেটি জলের বোতল। কে পাঠিয়েছে? উত্তর নেই কোন ,বলল আপনাদের জন্য পাঠানো হয়েছে। এরকম ভাবেই অসংখ্য ওআরএস গ্লুকোনডি লস্যির প্যাকেট পাঠিয়েছে কারা যেন! আবার শুকনো কেক, চিড়ে ভাজার প্যাকেটে দেখলাম বেশ কিছু লোকজন হাতে করে এসে দিয়ে যাচ্ছে।
এক দামি দম্পতিকে দেখলাম, প্লেন থেকে নেমে সোজা নাকি এখানে! ট্রাভেল ব্যাগ সমেত। মোরক করা কি সব খাবারের প্যাকেট দিচ্ছে। ইংরেজিতে পিটিশ পিটিশ করছে। পালিয়ে এলাম।
আমি বাবা অতো ইংরেজি বুঝি না।
ফিরলাম সার বেধে দেওয়া ত্রিপল ঢাকা এলাকার মধ্যে, ওমা এ দেখছি ঠাকুমা, দিদিমা, জেঠিমা, কাকিমা সবাই উপস্থিত। এরা সবাই বসে আছেন প্রতিবাদীদের সঙ্গে। গলা মেলাচ্ছেন, হাততালি দিচ্ছেন, কেউবা খালি প্লাস্টিকের বোতল বাজিয়ে তাল দিচ্ছেন। কিন্তু এরা তো এ আন্দোলনের কেউ নয়। ও আচ্ছা অনেকেই শুনলাম জুনিয়র ডাক্তারের পরিবারের। আবার কেউ কেউ নিছক অনাত্মীয়। জাস্টিস চেয়ে এখানে এসেছেন।জিজ্ঞেস করায় বলল, “আন্দোলনতুতো আত্মীয়”। উফ, কত কি যে দেখতে হবে!
কয়েক পায়ে এগিয়ে স্বাস্থ্য ভবনের দিকটাই গেলাম। পথ ভরে গেছে প্রতিবাদী লেখায়। সারি সারি প্রতিবাদী লেখা আর গ্রাফিটিতে ভরেছে দেওয়াল। আগের দিন সন্ধ্যায় দেখেছি অসংখ্য ছেলেমেয়েরা এসে নিজের মতন করেই প্রতিবাদ জানাচ্ছে নানান রঙে। জায়গাটাই অন্য হয়ে গেছে। চেনা স্বাস্থ্য ভবন এর রাস্তাটা আর অতটা চেনা লাগছে না। আসলে সঙ্গ মহিমা। সৎ সঙ্গে স্বর্গবাস আর অসৎ সঙ্গে যেন কি? ধুর অত জ্ঞানের কথা মনে থাকেনা।
ব্যারিকেড পেরিয়ে রাস্তার উল্টোদিকে আসলাম। আদুল গায়ে বেশ কিছু শিশু আর কচিকাঁচা । কাগজের প্লেটে পাউরুটি ডিম কলা। কিরে?; ওই দাদা দিদিরা দিয়েছে । ওরাও খাচ্ছে ,আমাদেরকেও দিয়েছে। মন দিয়ে খা, বলে অন্যদিকে হাটা লাগালাম।
হঠাৎ জটলা! আরে এক পুলিশ কর্মী নাকি অসুস্থ হয়ে গেছেন। জুনিয়র ডাক্তাররা সিপিআর লাগাচ্ছে। সঙ্গে সঙ্গে জায়গাটা ফাঁকা করে দিতে বলল যাতে বাইরের হাওয়া আসে। অ্যাম্বুলেন্স ডাকা হল। দুই জুনিয়র ডাক্তার সহ তার এক সহকর্মী ওই অসুস্থ পুলিশ কর্মীকে নিয়ে হাসপাতালে ছুটলেন। বাবা এ তো দেখছি ঢেঁকি স্বর্গে গেলেও ধান ভাঙ্গে!
বিশ্বাস করুন, এই গোটা ভিডিওটা একসঙ্গে দিতে গেলে আমাকে সিনেমা বানাতে হতো। তাই লিখে দিলাম।
যেমনি সুন্দর ভাষা, তেমনি মনোগ্রাহী পরিবেশ।
এই লড়াই আমরাই জিতবোই।
এই মাৎস্যন্যায়ের পতন অবশ্যম্ভাবী।
আবেগে গলদাশ্রু হতে হল। নমস্কার আপনার লেখনীর অনবদ্য সৃষ্টিকে ও উপস্থাপনায়।