কিছুদিন আগেও সবাইকে বারবার বলেছি, করোনা আমার কিস্যুই করতে পারবে না। আমি হলাম গিয়ে ড্রেন থেকে বল তুলে খেলা পাব্লিক, আমি হলাম গিয়ে ভাগাড়ের মাংস খাওয়া পাব্লিক, আমি হলাম হ্যান, আমি হলাম ত্যান । মানে, এক কথায় আমি বাঁটুল দ্য গ্রেট, করোনাকে পরোয়া করি না।
বলে তো দিয়েছি, কিন্তু ক্রমবর্ধমান আক্রান্তের সংখ্যা দেখে বুকটা যে এখন দুরুদুরু করছে না, তাও নয়। আশে পাশে কেউ কাশলেই যেন করোনার পদধ্বনি শুনতে পারছি। অতএব…
আমারও চাই। আজ্ঞে, আমারও একটা চাই। অফিসের পথে যেতে যেতে সজাগ দৃষ্টি রাখছি দুপাশে। কিন্তু, তিনি নেই। ফাঁকা, ফাঁকা, ফাঁকা…
এত বোঝো ঈশ্বর, ঠাট্টা বোঝো না? অভিমানী মুখ তুলে আকাশের দিকে তাকালাম। আমি তো এমনি মশকরা করছিলাম। তা বলে একটাও কি আমি পাব না?
কাজ হলো। একটু অভিমান আবদারেই কাজ হলো। দেখি তিনি ঝুলছেন। রঙবেরঙের তিনি ঝুলছেন একটা দোকানের বাইরে। হামলে পড়লাম দোকানীর উপর। দিন, আমাকেও একটা দিন। আজ আমার একদিন কী করোনার একদিন।
বেশ রঙিন দেখে একটা কিনে নিলাম আর সব করোনা ভাইরাসদের বুড়ো আঙুল দেখিয়ে মুখের উপর আঁটিয়ে দিলাম মাস্ক। নে দেখি আয় এবার।
মুখে আছে মাস্ক, বুকে আছে বল।
উত্তেজনায় সেল্ফি তুলতেই ভুলে গেছিলাম। ফটাস করে মোবাইলটা বের করে মাস্কবদনের একটা ছবি তুলে নিলাম। দিলাম ডিপি করে, দিলাম বউকে পাঠিয়ে। একটা মাস্কেই কনফিডেন্স যেন বেড়ে গেল । বুক ফুলিয়ে হাঁটছি। আমায় মানিয়েছে ভাল মাস্কে, এটা মানতেই হবে।
কিন্তু, এ কী! নাকটা তো চুলকাচ্ছে। প্রথমে ইগনোর করলাম। না, বেশ চুলকাচ্ছে। চুলকানি কাহাতক সহ্য করা যায়? হাতটা ঢুকিয়ে টুক করে নাকটা নিলাম চুলকে। বেশ সহজ ব্যাপার। খুশী মনে আবার হাঁটা লাগালাম।
অফিসে পৌঁছে দেখি আমি একা নই ! অনেকেই মাস্ক পরে রয়েছে। এই সুযোগে একটা গ্রুপ সেল্ফি না তুললেই নয়। তুলে নিলাম মোবাইলে । স্ট্যাটাস দিলাম, ‘করোনা সচেতন আমরা’।
যাই হোক অফিসে যখন ঢুকে গেছি, আর চিন্তা নেই। এবার মাস্কটা হালকা করে নামিয়ে নাকের নিচে রাখলাম ।পুরো ঘেমে ঘ হয়ে গেছে নাকটা।
এদিকে মুখটাও যে ঘামছে। গলদঘর্ম হয়ে আস্তে করে আমার সাধের মাস্কটা খুলে নিলাম। মাস্কটা চালান করলাম বুক পকেটে। একদম হৃদয়ের কাছেই। আবার বেরোনোর সময় পরে নেবো।
উপরের এই যে গল্পটা পড়লেন, বিশ্বাস করুন এটা আদতে গল্প নয়। বহু মানুষ এটাই করছেন ।করোনা যেন শুধু মাস্কেই আটকে গিয়ে ফেরত চলে যাবে ,নয়তো মাস্কের জালে আটকে পড়ে হাঁসফাঁস করে মরবে! আজ্ঞে না, এর কোনওটাই হওয়ার নয়।
WHO বা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা স্পষ্টতই বলছে, সকলেরই মাস্ক পরবার দরকার নেই এবং মাস্ক ব্যবহার করলে তা করতে হবে বিধি মেনেই।
তাহলে মাস্ক পরবেন কারা?
যাঁরা,
১) জ্বর, কাশিতে ভুগছেন। তাঁদের সংক্রমণ যেন অন্যদের মধ্যে ছড়িয়ে না পড়ে তাই তাঁদের মাস্ক পরা উচিৎ ।
২) যাঁরা এই ধরণের রোগীর সেবায় প্রত্যক্ষভাবে যুক্ত এবং এই রোগীদের কাছে যাঁদের না গিয়ে উপায় নেই তাঁরা।
৩) ডাক্তার, নার্স, হেলথ কেয়ার স্টাফ যাঁরা সরাসরি এই রোগীদের পরিচর্যা করছেন তাঁরা।
আর, বাকিরা?
যাঁরা শুধু মাস্ক পরে করোনা আটকাতে চাইছেন বা ভাবছেন একটা মাস্ক এঁটে নিলাম মুখে আর করোনা ধারেকাছে ঘেঁসতে পারবে না; তাঁদের বলি উলটে বিপদ বাড়বে যদি আপনি উপরের ওই ভদ্রলোকের মতো ব্যবহার বিধি না মেনে,
১) হাত না ধুয়েই বারবার মাস্কে হাত দেন।
২) মাস্ক পরে নাক, মুখ চুলকান।
৩) মোবাইল ঘাঁটেন এবং ওই হাত না ধুয়েই মাস্কে হাত দেন।
৪) হাত না ধুয়েই মাস্ক খোলেন এবং পরেন।
৫) একই মাস্ক বারবার ব্যবহার করেন।
৬) মাস্ক খুলে নির্দিষ্ট স্থানে না ফেলে, যেখানে সেখানে ফেলে দেন।
ও হ্যাঁ, এই হাত ধোয়াটা সাবান জল বা অ্যালকোহল বেসড স্যানিটাইজারে করাটা আবশ্যক।
মরমে ঢুকিয়ে নিন, মাস্কের থেকেও শতগুণে যেটা বেশি দরকার তা হলো,
১) বারবার, প্রতিটা কাজের পরে সাবান জলে বা অ্যালকোহল বেসড স্যানিটাইজারে হাত ভাল করে ধুয়ে নেওয়া। দায়সারা করে হাত ধোয়া নয়।
২) জ্বর, কাশি হলে না লুকিয়ে ডাক্তারের কাছে যাওয়া বা স্বাস্থ্যকেন্দ্রে যাওয়া এবং তাদের কথা মেনে চলা। এই রোগে আক্রান্ত হওয়া কোনও দোষ নয়, কিন্তু অবিবেচক হয়ে এই রোগ ছড়াতে সাহায্য করা অবশ্যই অপরাধ ।
৩) অকারণে, বাতিকগ্রস্ত হয়ে নাক, মুখ, চোখে হাত না দেওয়া।
৪) জনসমাগম পারতপক্ষে ও প্রয়োজন ছাড়া এড়িয়ে চলা। যতটা সম্ভব ঘরেই থাকুন।
৫) নিজের হাঁচি, কাশি ,কফ , থুথু দয়া করে নিজ দায়িত্বে রাখা। রুমাল বা টিস্যুতে অথবা কনুই ভাঁজ করে হাঁচুন বা কাশুন। খোলা ভাবে ,নাক মুখ না ঢেকে কাশি, হাঁচি একদম বারণ।
এইটুকু। সচেতন হয়ে কেবল এইটুকু করলেই, করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ ও প্রকোপ রুখে দেওয়া সম্ভব।
নচেৎ যতই মাস্কের বজ্র আঁটুনি পরে ঘুরে বেড়ান, ফস্কা গেরো হবেই।