৩০শে মার্চ World Bipolar Day– বিশ্ব বাইপোলার দিবস। প্রতিবছর ৩০শে মার্চ দিনটিতে এটি উদযাপিত হয়। ৩০শে মার্চ হল, Vincent Van Gogh-এর জন্মদিন (৩০ শে মার্চ,১৮৫৩)।তিনি ছিলেন একজন ডাচ শিল্পী। মৃত্যুর পর তাঁর বাইপোলার ডিসঅর্ডারের কথা স্পষ্টভাবে আলোচনায় আসে। তার কারণ হল তাঁর আঁকা ছবিগুলো সব সময়েই মানুষের মনের emotion (mood)-কে নিখুঁত ভাবে প্রকাশ করত, ছুঁয়ে যেত মানুষের মনকে। বেশির ভাগ ছবিগুলো দেখলেই বোঝা যায় খুব ইন্টেস ইমোশানাল স্টেট থেকে এগুলো আঁকা। তিনি কাজ করেছেন প্রায় ২১০০ এরও বেশি art work এ। খুব দুঃখজনক ভাবে মাত্র ৩৭ বছর বয়সে তিনি মারা যান। তিনি সুইসাইড করেন।
শুধুমাত্র Vincent Van Gogh নন! প্রচুর সৃষ্টিশীল মানুষই এই রোগ নিয়ে জীবন কাটিয়েছেন! যেমন Ernest Hemingway, Jimi Hendrix, Kurt Cobain….এই লিস্ট বেশি দীর্ঘায়িত করতে চাইছি না!
তবে এদের মধ্যে যার কথা না বললেই নয় তিনি হলেন মাইকেল মধুসূদন দত্ত! বলা হয় এনার মতো অসামান্য প্রতিভাধর কবি খুবই কম জন্মেছেন। যেভাবে একসঙ্গে একসময়ে উনি বিভিন্ন কাব্যগ্রন্থ লিখেছেন তার বিবরণী প্রায় অবিশ্বাস্য। সামনে চারজনকে বসিয়ে নিয়ে যেভাবে অমিতাক্ষর ছন্দ নিয়ে ‘মেঘনাদ বধ কাব্য’-এর লাইন রচনা করে গেছেন অন্যদিকে লিখেছেন বুড়ো ‘শালিকের ঘাড়ে রোঁ’। একটার পংক্তি শেষ করে চলে গেলেন পরের জনের কাছে, বলেছেন – কোথায় যেন ছিলাম?? শুনে নিয়ে বলতে শুরু করলেন কোনো এক কাব্যগ্রন্থের ফেলে রাখা অংশটা, সেটা শেষ করেই ঢুকে গেলেন অন্য একটার বাকি থাকা জায়গাটায়- মুখস্থের মতো বলে গেলেন পরপর নতুন পংক্তিগুলো! এ যেন না দেখলে বিশ্বাস হতে চায় না! এভাবেই পরপর লিখে গেছেন ‘ব্রজাঙ্গানা কাব্য’, ‘বীরাঙ্গনা কাব্য’। সময় পর্বটা ১৮৬০-১৮৬১। এর পরে আর উনি সেভাবে লিখতে পারেননি! শেষ বয়সে এসে কী ভয়ানক অসহায় তিনি! প্রায় কান্নাকাটি করছেন! আমি আর লিখতে পারছি না! আমার আর লেখা আসছে না! অথচ সেই সময়টায় যা লিখে গেছেন তা বাংলা সাহিত্যে ‘অমূল্য রতন’ কালজয়ী সৃষ্টি!
বিশেষত ম্যানিক এপিসোড চলাকালীন অনেক মানুষই নিজের কাজকে অনেক উঁচুতে নিয়ে যেতে পারেন হয়ে ওঠেন- machine of productivity! বড়ো বড়ো কবি লেখক থেকে শুরু করে চিত্রকর, বিভিন্ন বিখ্যাত ব্যাক্তিরা তাঁদের অমর সৃষ্টিগুলো করে গেছেন ম্যানিয়া এপিসোড চলাকালীন! অনেকেই মনে করেন ম্যানিক এপিসোডের সাথে সৃজনশীলতার একটা সম্পর্ক আছে!
কিন্তু তার মানে এই নয় যে বাইপোলার মানেই খুব ক্রিয়েটিভ কিছু! ওপরে যা বললাম তা গোটা পৃথিবীতে এই রোগের সাপেক্ষে খুব অল্প পারসেন্টেজ লোকের ক্ষেত্রেই হয়! বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই বাইপোলার ডেসট্রাক্টিভ হয়ে উঠতে পারে, নিদারুণ ভয়ঙ্কর!
বাইপোলার ডিসঅর্ডারকে বলা হয় বাইপোলার অ্যাফেক্টিভ ডিসঅর্ডার (BPAD- Bipolar Affective Disorder)। সেইরকম ভাবে কোনো সুনির্দিষ্ট সংজ্ঞা না থাকলেও বলা যেতে পারে এটি এমন একটি ব্রেইন ডিসঅর্ডার যাতে আসলে মানুষের মুড, কাজ করার ক্ষমতা এবং অভ্যন্তরীণ শক্তি সাংঘাতিক রকম ভাবে বেশ কিছুদিন ধরে স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক বেশিতে কিম্বা অনেক কমে বেশ কিছু দিন ধরে বেঁধে রাখে আর এক একটা এপিসোড হয়ে যাওয়ার পর বেশ কিছু দিন অন্তর অন্তর এই ওঠানামা চলতেই থাকে।
অর্থাৎ এর মূলত তিনটে দশা থাকে- বাইপোলার ম্যানিয়া এপিসোড, বাইপোলার ডিপ্রেশান এপিসোড এবং দুটো মুড এপিসোডের মাঝে স্বাভাবিক থাকা!
Asian Network for Bipolar Disorder, The International Bipolar Foundation ও The International Society for Bipolar Disorder এই তিনটি সংস্থা মিলে ২০১৪ সাল থেকে ৩০ শে মার্চ এই দিনটি উদযাপন করা শুরু করে। বাইপোলার দিবস পালন করা হয় মূলত নিম্নলিখিত বিষয়গুলিকে মাথায় রেখে-
এক) বাইপোলারকে নিয়ে সচেতনতা বৃদ্ধি,
দুই) সামাজিক ভাবে এই রোগের স্টিগমা দূরীকরণ
তিন) রোগে আক্রান্ত ব্যাক্তি এবং তার পরিবারের সাহায্য চাওয়ার প্রবণতাকে বাড়িয়ে নিয়ে আসা
চার) খোলামেলা আলোচনা
পাঁচ) বিশ্বব্যাপী একটা শিক্ষামূলক নেটওয়ার্ক গড়ে তোলা!
NMHS (National Mental Health Survey) এর ২০১৫-২০১৬ সার্ভেতে দেখা যায় ভারতে বাইপোলার ডিসঅর্ডারের প্রিভ্যালেন্স ০.৩%। কিন্তু সাংঘাতিক রকমের ভয়ের ব্যাপার হল এর ট্রিটমেন্ট গ্যাপ প্রায় ৭০%। অর্থাৎ ৭০% বাইপোলার ডিসঅর্ডারের রোগীরা চিকিৎসা থেকে দূরে। তার মানে দাঁড়ায় ১৪০ কোটির দেশে ০.৩% হল ৪০-৪৫ লাখ- যারা কিনা বাইপোলার রোগের স্বীকার! এর মধ্যে ৭০% মানে ৩০-৩৫ লাখ লোক কোনো রকম চিকিৎসা পায় না! এটা শুধুমাত্র ৩৫ লাখ মানুষ নয়!৩৫ লাখ পরিবার আসলে এই রোগের দ্বারা আক্রান্ত! তিনি শুধুমাত্র একা কষ্ট করছেন এইরকম নয় ব্যাপারটা! একই সঙ্গে তাঁর পরিবারের লোকেরাও যন্ত্রণার স্বীকার!
অন্য সমস্ত মানসিক রোগ ডায়াগনোসিসের ক্ষেত্রে যে চ্যালেঞ্জগুলোর সম্মুখীন আমাদের হতে হয় বাইপোলারের ক্ষেত্রেও তার ব্যতিক্রম নেই-
-কোনো ল্যাবরেটরির পরীক্ষা নয়! কোনো রক্ত পরীক্ষা, থুতু পরীক্ষা, ইউরিন পরীক্ষা দিয়ে কিছু বোঝা যাবে না। কোনো মাথার ছবি তুলেও নয় (MRI, CT Sacn)। -ডায়াগনোসিস দাঁড়িয়ে আছে শুধুমাত্র হিস্ট্রি নেওয়া, মেন্টাল স্ট্যাটাস পরীক্ষা ও ক্লিনিক্যাল অবসারভেশানের ওপর।
বাইপোলার হল এক ধরনের মুড ডিসঅর্ডার (mood disorder)। মানসিক রোগ নির্ণয়ের সর্বাধুনিক যে গাইডলাইন DSM-5 তা অনুযায়ী মোটামুটি বাইপোলার ডিসঅর্ডার তিন ধরনের হয় –
১) BPAD I- সাধারণত বাইপোলার বলতে বাইপোলার বলতে BPAD I-কেই বোঝানো হয়! খুব সহজ ভাবে বলতে হয় এতে টোটাল রোগের সময়সীমার কোনো না কোনো সময়ে একটা ম্যানিক এপিসোড ও ডিপ্রেসিভ এপিসোড থাকবেই, তবে হাইপো-ম্যাাাানিকনিন এপিসোডও (একে ম্যানিক এপিসোডের ক্ষুদ্র রূপ বলা যেতে পারে, সময়সীমা এবং ভয়াবহতা বিচার করে) থাকতে পারে।
২) BPAD II- যার মিনিমাম একটা ডিপ্রেসিভ এপিসোড ও মিনিমাম একটা হাইপো-ম্যানিক এপিসোড থাকবে।
৩) Cyclothymia- কোন রকম মুড এপিসোড ছাড়াই যদি দুবছর ধরে মুড, এনার্জি ও কাজ করার ক্ষমতা নজরকাড়া ভাবে খুব ফ্লাকচুয়েট করে, কিন্তু কোন ম্যানিক বা হাইপো ম্যানিক এপিসোড বা ডিপ্রেসিভ এপিসোড হচ্ছে না!
প্রথমে ম্যানিক এপিসোডের সাইন আর সিম্পটোম নিয়ে কথা বলা যাক। ডিপ্রেশান নিয়ে অন্য একদিন বলা যাবে!
DSM-5 অনুযায়ী ম্যানিক এপিসোডে যেগুলো থাকে-
১) সুনির্দিষ্ট ও স্বতন্ত্র্য ভাবে আলাদা করা যায় এরম একটা সময় পর্ব জুড়ে যদি মিনিমাম সাত দিন ধরে মন মেজাজ স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক ভালো (Euphoria, Exalted) অথবা খুব Irritated মুড এবংধারাবাহিক ভাবে শরীরের কাজ করার এনার্জি ও উদ্দেশ্য-মূলক কাজের পরিমাণ বেড়ে থাকে।
২) যদি নিজের ক্ষমতার চেয়ে বেশি ভেবে ফেলা বা Grandiose আইডিয়া চলে আসে!
৩) ঘুমনোর দরকার নেই ভাবতে থাকা (রাতে সাধারণত ৩ ঘণ্টা করে ঘুমানো। এখানে বলে রাখা ভালো- ‘ঘুম ঠিক করে হচ্ছে না’ আর ‘ আমার ঘুমের দরকার নেই’ এই দুটো কিন্তু গুণগতভাবে আলাদা প্রথমটা ডিপ্রেশানের লক্ষ্মণ আর পরের টা ম্যানিক সিম্পটোম )
৪) আগের চেয়ে বেশি কথা বলে ফেলা, পরিচিত কিম্বা অপরিচিত লোকজন দেখলেও সবসময় একটা কথা বলতে চাওয়ার চাপ অনুভব করা!
৫) মাথার মধ্যে একটার পর একটা চিন্তা তাড়াতাড়ি আসতে শুরু করে, যেন একটা শেষ না হতেই আর একটা ঘাড়ের কাছে এসে হাজির! খুব দ্রুত লয়ে চিন্তার ভিড় চলতেই থাকে মাথার মধ্যে! একে বলে Flight of ideas।
৬) খুব সহজেই নিজের কাজ থেকে Distract হয়ে যাওয়া। বাইরের কম গুরুত্বপূর্ণ অদরকারি স্টিমুলাস খুব তাড়াতাড়ি attention ভেঙ্গে দেয়!
৭) সামাজিক ভাবে কাজের জায়গায় স্কুলে অথবা যৌন সম্পর্কে উদ্দদশ্য মূলক কাজ অনেকটা বেড়ে যাওয়া কিম্বা লক্ষ্যহীন ভাবে উত্তেজিত হয়ে কাজ করে চলা!
৮) প্রচুর পরিমাণে বিভিন্ন হঠকারী কাজ কর্মে নিজেকে জড়িয়ে ফেলা যার ফলে পরবর্তী কালে একটা ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার প্রবল সম্ভাবনা থাকে! নিজের ক্ষমতা সম্পর্কে ওয়াকিবহল না থেকে
অনেক কাজে নিজেকে বাড়তি জড়িয়ে ফেলা!
এবং বেশ কিছুদিন ধরে চলা এই মুড স্টেটের অস্বাভাবিক গোলমালের কারণে তার সামাজিক, পারাবারিক, আর্থিক এবং কাজের জায়গা ক্ষতিগ্রস্ত হতে শুরু করে! অনেকের ক্ষেত্রেই এর পাশাপাশি সাইকোটিক সিম্পটোমও (Delusion, Hallucination এক কথায় Reality distortion) দেখা যেতে পারে!
অবশ্যই মনে রাখতে হবে উপরের বর্ণিত সমস্যাগুলো কারো মধ্যে ধরে ধরে খুঁজে পেলেই তাকে ম্যানিক এপিসোড বলে দাগিয়ে দেবেন না!
প্রথমেই তাকে একজন পেশাদার মনোবিদের কাছে নিয়ে যান তার ক্লিনিকাল অবসারভেশানের জন্যে!
ম্যানিয়া এপিসোড চলাকালীন মন মেজাজ স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক বেশি ফুরফুরে থাকে, মনে ফুর্তি বেশি দেখা যায়! ‘Feeling on top of the world’ মনে হওয়া। নিজেকে আলাদা ভাবে স্পেশাল ক্ষমতাবান মনে করা! ‘I am Special in God’s eyes’ বা ‘I am God’s messenger’ কিম্বা ‘I wiil live forever’ এই রকম সুপারমম্যান মোডে চলে যায়! এই সময় অনেক বেশি টাকা-পয়সা খরচ করে ফেলা বিভিন্ন ধরনের চ্যারিটি প্রোগ্রামে নিজের আর্থিক অবস্থার চেয়েও বেশি টাকা দিয়ে দেওয়া! ম্যানিক রোগীদের মধ্যে সবসময় একটা intrusive নেচার খুঁজে পাওয়া যায়! যেমন অযথা অপরিচত লোকজনের সাথে তর্ক শুরু করে দেওয়া!
বাইপোলার ডিসঅর্ডারের রোগীরা অনেক ধরনের কো-মরবিডিটিতে ভোগেন।Substance Use Disorder-এ ভোগেন ৪০-৪৫ %। Anxiety Disorder থাকে ৫০-৬০%। ADHD রয়েছে প্রায় ২০-৩০%। OCD থাকে ১০-১৫% রোগীর।Personality Disorder ২৫-৩০% রোগীর। এছাড়াও প্রায় বাইপোলারে ভোগা ১০-২০% লোকেরা Suicide করেন!
একটা ম্যানিয়া এপিসোড ৪-৫ মাস থাকতে পারে এবং একটা ডিপ্রেশানের এপিসোড ৬-১৩ মাস অবধি থাকতে পারে! BPAD I এর ক্ষেত্রে গড়পড়তা ভাবে ১৮ বছরের বয়সের আশেপাশেই প্রথম ম্যানিক কিম্বা ডিপ্রেশিভ এপিসোড দেখা যায়!
আগেই বললাম বাইপোলারের ক্ষেত্রে প্রায় ৭০% রুগী চিকিসার বাইরে এবং এই বিনা চিকিৎসার বাইপোলারের পরিণতি খুব ভয়ংকর! প্রচণ্ড ড্রাগে আসক্ত হয়ে পড়ে-বিশেষ করে অ্যালকোহল বা মদ!
তাদের সেক্সুয়াল আচরণ অনেক সময়েই স্বাভাবিক থাকে না! কোনো রকম সুরক্ষা ছাড়াই যৌন সংগমে মিলিত হয়ে যাওয়া বিভিন্ন হাই-রিস্ক জায়গায়!
তাঁদের মধ্যে STD (Sexually Transmitted Diseases) হওয়ার প্রবণতা বাড়ে! প্রচন্ড উগ্র হিংসাত্মক কার্যকলাপে জড়িয়ে পড়া খুবই স্বাভাবিক এবং সমস্যাজনক।
ডিপ্রেশানের সময় নিজেকে আরও গুটিয়ে নিয়ে সামাজিকভাবে বিছিন্ন করে নেওয়া, সমস্ত কাজ বন্ধ করে দেওয়া! সুইসাইডের চিন্তা ভাবনা, সুইসাডাল আটেম্পট করা। তাঁদের নিজের বাচ্চাদের উপর এক ভয়ানক অভিজ্ঞতা হয়! গোটা পরিবার প্রচুর আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হয়! তাঁদের ফ্যামিলি ভাঙতে শুরু করে, ধীরে ধীরে গৃহহীন হয়ে রাস্তায় এসে দাঁড়ানোর মতো করুণ ঘটনাও ঘটে!
একটা ম্যানিক বা ডিপ্রেশানের এপিসোডের পর আর একটা এপিসোড ফিরে আসার প্রবণতা এই রোগের ক্ষেত্রে খুব বেশি! প্রায় ৯০% এর ওপরে রোগী যাঁদের একবার ম্যানিক এপিসোড হয়েছে তাঁদের আর একবার মুড এপিসোড হবার সম্ভাবনা থাকে।
দেখা গেছে এক বছরের মধ্যে ম্যানিয়া বা ডিপ্রেশান ফিরে আসে ৩৫-৪০% লোকের।
দুবছরের মধ্যে ৫৫-৬০% লোকের
পাঁচবছরের মধ্যে ৭০% লোকের।
তার মানে রিল্যাপ্স ও রিকারেন্স এই রোগের ক্ষেত্রে খুব স্বাভাবিক! কমবেশি বেশির ভাগ রোগীকেই ওষুধ খেয়ে থাকতে হয় অনেকদিন!ম্যানিক এপিসোড কিম্বা ডিপ্রেসিভ এপিসোডের পাশাপাশি সুস্থ বা নরমাল মুডে থাকা অবস্থাতেও মেডিসিন খেয়ে যেতে হবে যাতে ভবিষ্যতে আর কোনো এপিসোড না আসে!
চিকিৎসা করে কি কি সুবিধা হবে-
১) যে এপিসোড গুলো হয় তার ভয়াবহতা এবং সময়সীমা অনেক কমানো
২) পরবর্তী কালে যেন আর কোনো এপিসোড না হয় তার সম্ভাবনা কমিয়ে আনা!
কি কি মাধ্যমে আমরা চিকিৎসা দিতে পারি–
১) মেডিসিন (মূলত মুড স্টেবিলাইসার- Lithium, Valproate এবং সেকেন্ড জেনারেশান অ্যান্টি-সাইকোটিক। আর অ্যান্টি-ডিপ্রেশেন্ট ডিপ্রেশিভ এপিসোড চলাকালীন) এখানে বলে রাখছি- Lithium হল বাইপোলারের Drug of Choice, Lithium নিয়ে একটা ভ্রান্ত ধারণা আছে যে এটি টক্সিক বা পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়া বেশি! একদমই তা নয়! সঠিক ভাবে নিয়ম মেনে এবং নিয়মিত রক্তে Lithium এর পরিমাণ (Serum Lithium Concentration) পর্যবেক্ষণ করে চিকিৎসা করলে তা সবচেয়ে কার্যকরী! যেহেতু Lithium পৃথিবীর প্রায় সব জায়গাতেই পাওয়া যায় বা দাম অনেক কম, তাই কোনো ফার্মা কোম্পানিই একে সেভাবে প্রোমোট করে না। মনে রাখতে হবে Lithum is the King in case of Bipolar Treatment!
২) রোগ এবং রোগের ফিরে আসার লক্ষ্মণ নিয়ে বাড়ির লোককে বুঝিয়ে বলা(psychoeducation) যেমন- যদি হঠাৎ করে ঘুম কমে গিয়ে এনার্জি ফিরে আসা, নিজেকে আলাদা ভাবে স্পেশাল ভাবতে থাকা এগুলো হল ম্যানিক এপিসোড ফিরে আসার লক্ষ্মণ। কিম্বা যদি এনার্জি কমে যাওয়া, লম্বা সময় ধরে বেডে শুয়ে থাকা, হঠাৎ করেই চোখে জল চলে এসে কাঁদতে শুরু করা! সুইসাইডের চিন্তা ভাবনা করা এসব ডিপ্রেসিভ এপিসোড ফিরে আসার লক্ষ্মণ। এইসব লক্ষ্য করলেই রোগীকে মনোবিদের কাছে নিয়ে যান ওষুধ শুরু করবার জন্যে বা ডোজ অ্যাডজাস্ট করার জন্যে!
৩) টক- থেরাপি বা কাউন্সেলিং ও সাইকোথেরাপি প্রধানত FFT (Family Focused Therapy) এবং IPSRT (Interpersonal Social Rhythm Therapy)
সবশেষে এইটাই বলার ওষুধ খেয়ে বাইপোলার রোগীরা ভালো থাকেন! কিন্তু ওষুধ যদি অনিয়মিত হয় তাহলেই সর্বনাশ! যেহেতু এই রোগে এপিসোড ফিরে ফিরে আসাটাই ধর্ম এবং যত বেশি এপিসোড হবে ততবেশি মস্তিস্কে চাপ পড়বে- Cognitive Decline হবে, যা কিনা পরবর্তীকালে Dementia-র দিকেও রোগীকে নিয়ে যেতে পারে। সাধারণত ৫টা এপিসোডের বেশি হলে, ধীরে ধীরে স্বাভাবিক জীবন যাপনে ঠিক ভাবে কাজ করার প্রবণতা কমতে থাকে। ওষুধের কার্যক্ষমতা হ্রাস পেতে থাকে!
তাই রিলাপ্সকে আটকানোই, এই রোগের চিকিৎসার মূল জিনিস! ওষুধ অনিয়মত যেন না হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে! যদি কেউ অনেক দিন একদম সুস্থ থাকেন ওষুধ খেয়ে তাহলে ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করেই ওষুধ বন্ধ করবেন বা ডোজ কমিয়ে অ্যাডজাস্ট করবেন!
বিভিন্ন নেশা জাতীয় দ্রব্য থেকে দূরে থাকা, রেগুলার এবং স্বাস্থ্যকর ঘুম, প্রতিদিনকার জীবনকে রুটিন লাইফে গুছিয়ে নেওয়া! স্টেবল ফ্যামিলি সাপোর্ট এই সবকিছু নিয়ে একজন মানুষ বাইপোলার ডিসঅর্ডারকে সফল ভাবে জয় করতে পারেন!