আর একজন ডাক্তারবাবুর লেখা একটি বই পড়লাম। বইটির নাম ‘দুইয়ে দুইয়ে চার নয়’। লেখক ডাক্তার প্রদীপ্ত ঘোষ। বইটি ২০ টি ছোট গল্পের সঙ্কলন।
বর্তমানে যে সমস্ত ডাক্তার লেখক লিখছেন তাঁদের অধিকাংশের লেখাগুলো হয় মূলত একটা রোগ সম্পর্কে মানুষকে সচেতন করা। এই সচেতন করাটা সবসময় কেবলমাত্র রোগের নীরস বর্ণনা দিয়ে নয়, একটা গল্পের মাধ্যমে হয়। এই গল্পটা সাধারণতঃ ডাক্তারবাবুর প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা দিয়েই হয়। আর ঘটনাগুলোর নাটকীয়তা থাকলেও অর্থাৎ চরিত্রগুলো তার জীবনের এক বিশেষ পরিস্থিতির মাধ্যমে এলেও কোথায় যেন ডাক্তারবাবুই কেন্দ্রীয় চরিত্র হয়ে যান।
এইখানেই প্রদীপ্তবাবুর লেখাগুলো আলাদা। তিনি নিজে আছেন এরকম গল্প নেই। গল্পগুলো রোগাক্রান্ত মানুষের গল্পই, কিন্তু অন্য আঙ্গিকে তৈরি। ছোট জায়গাতেই চরিত্রগুলো নানা দ্বন্দ্বের মধ্য দিয়ে আসছেন। ডাক্তার একজন এসেছেন, সেটাও যেন গল্পের একটি চরিত্রের প্রয়োজনে। প্রায় সব গল্পের ভিত্তি কোনো একটি রোগ। তাই রোগ সম্পর্কে সংক্ষেপে কিন্তু প্রয়োজনীয় তথ্য জানিয়েছেন।
কতগুলো গল্প আলাদা উল্লেখ রাখে। যেমন ‘খগেনের ওষুধ’। ওষুধের দোকানদারের ভরসায় ওষুধ খেয়ে চিকিৎসা করার পরিণাম মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে সেটা বোঝান গেছে। ‘নীল মানুষ’ বা ‘পাথরেও ফোটে ফুল’ হচ্ছে ভিন্ন ধর্মী গল্প। এখানে কিছু খুব বিরল রোগকে ঐতিহাসিক প্রেক্ষিত থেকে বলা হয়েছে।
একজন নিঃসন্তান মহিলার সন্তান ধারণের তীব্র ইচ্ছাজনিত কারণে হয়ে ওঠা মানসিক রোগ এবং তা নিরাময় নিয়ে লেখা ‘এরকমও হয়’লেখার মুন্সিয়ানাতে মন ছুঁয়ে যায়।
‘খাই খাই’ লেখাটার মধ্যে হাস্যরস আছে। কিন্তু এক মাঝবয়সী রোগীর নাছোড়বান্দা মনোভাব নিয়ে প্রত্যেক খাবার জিনিস খাওয়ার আগে ডাক্তারকে ফোন করে বিরক্ত করা, অধিকাংশ ডাক্তারের বাস্তব অভিজ্ঞতা।
আর একটি গল্পের উল্লেখ করব ‘নিয়তি’। ডাক্তার রোগী সম্পর্ক কিরকম হয়, তা পরতে পরতে বিকশিত হয়েছে। সাধারণ রোগী থেকে একধরনের শ্রদ্ধামিশ্রিত বন্ধুত্বের সম্পর্ক। তারপর এক বিশেষ পরিস্থিতিতে পাঠক যখন একটা পরিণতির প্রস্তুতি নিচ্ছেন তখনি গল্পের মূল বাঁক নেওয়া।
সবশেষে বলব ‘নিজের চোখে দেখা’ লেখাটি। এখন এই এন আর সি, সি এ এ র অশান্ত সময়। তার আগে থেকেই রাজনৈতিক দলগুলো এবং পুরোহিত- মোল্লাতন্ত্র যুগল বন্দীতে হিন্দু মুসলিম সম্প্রদায়ের পারস্পরিক যে অবিশ্বাসের অসহিষ্ণুতার বাতাবরণ তৈরি হয়ে আছে সেই প্রেক্ষিতে এই ঘটনাটি অন্য বার্তা দেয়।
সামগ্রিক ভাবে বলা যায় সুখপাঠ্য বইটি পড়লে পাঠককুল হতাশ হবেন না।