আমি পোর্শিয়া সাহা, পেশায় একজন চিকিৎসক। আমি ৩৪ বছর বয়সে সন্তানসম্ভবা হই। বয়স একটু বেশি হওয়ায় আমার কিছু সমস্যা হচ্ছিল, যাকে বলে হাই রিস্ক প্রেগন্যান্সি। তাই প্রথম থেকেই একটু সাবধানে ছিলাম। প্রথম তিন মাস থেকেই নানারকম পরীক্ষানিরীক্ষা চলছিল। তবে ভ্রূণের অস্বাভাবিকতা নিয়ে কোনও পরীক্ষা হয়নি। সব পরীক্ষার রিপোর্টই স্বাভাবিক ছিল। কিন্তু anomaly scan–এ ধরা পড়ে আমার Placenta Previa অর্থাৎ প্ল্যাসেন্টা বা গর্ভফুল জরায়ুর নীচের দিকে রয়েছে যার জন্য প্রেগন্যান্সির দ্বিতীয় অংশে রক্তপাত হতে পারে । শুধু তাই নয়, প্রসবের আগে বা প্রসবের সময় জীবনের ঝুঁকিও থাকে। আর আমার যে পরিস্থিতি ধরা পড়ে তা খুবই বিপজ্জনক ছিল। একজন ডাক্তার হওয়ার জন্য এই বিষয় সম্পর্কে আমার কিছু ধারণা ছিল। তাই আমি এ বিষয়ে খুব সচেতন ছিলাম।
আমার প্রেগন্যান্সির ২৯ সপ্তাহ চলার সময় আচমকাই একদিন রাতে আমার ব্লিডিং শুরু হয়। আমি খুব দুশ্চিন্তায় পড়ে যাই। আমি যে স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞের অধীনে চিকিৎসাধীন ছিলাম তাঁকে ফোন করি ও ৩০ মিনিটের মধ্যে নার্সিং হোমে ভরতি হই। সেখানে চিকিৎসাও শুরু হয়। আমি পুরো বিশ্রামে ছিলাম। সে সময় কখনও আমার ব্লিডিং হচ্ছিল আর বন্ধ হচ্ছিল। নিয়ম করে আমার রক্তের হিমোগ্লোবিন মাপা হোত। আমার যদি প্রয়োজন হয় তাই এক ইউনিট রক্ত মজুত রাখা ছিল। পরের দিন ইউএসজি করা হয়। জানতে পারি, তখন আমার প্রেগন্যান্সির ২৯ সপ্তাহ ৪ দিন চলছে আর আমার বাচ্চার অবস্থাও ভালো আছে। বাচ্চা ভালো আছে শুনে আমি একটু নিশ্চিন্ত হই।
সেখানে ভরতি থাকাকালীন ৯ দিন পর ফের ব্লিডিং শুরু হয়। এবার আমার চিকিৎসকও ঘাবড়ে যান। তড়িঘড়ি আমাকে কলকাতার এক নামী হাসপাতালে ভরতি করা হয়। সেখানে মাঝে মধ্যে ব্লিডিং হলেও হিমোগ্লোবিনের পরিমাণ ঠিকই ছিল। ফলে খানিকটা স্বস্তি বোধ করি। আমার সন্তানকে সুস্থভাবে পৃথিবীতে আনার জন্য আমি প্রেগন্যান্সির পুরো সময় অপেক্ষা করতে চাইনি। আমার চিকিৎসকও দুজনের সুস্থতার দিকে নজর রাখছিলেন। প্রেগন্যান্সির ৩২ মাস পেরনোর পর এক রাতে আবার আমার প্রচণ্ড ব্লিডিং শুরু হয় যা ওষুধেও কমছিল না। এবারে আমার ভয় আরও বেড়ে যায়। আমার চিকিৎসক সব সময় আমাকে টেনশন না করতে বললেও আমার মন মানছিল না। শেষ পর্যন্ত আমার সিজার করা হয়। সিজারের সময় ও পরে আমাকে ৪ ইউনিট রক্ত দিতে হয়। তখন রক্তে হিমোগ্লোবিনের পরিমাণ ছিল ৮.৬ গ্রাম%। সন্তানও প্রিম্যাচিওর হওয়ায় ওজন কম ছিল। তাকে পর্যবেক্ষণ ও চিকিৎসার জন্য এনআইসিইউ তে রাখা হয়। আমার সন্তান সুস্থ থাকায় আমি সিজারের পর খুব তাড়াতাড়ি সুস্থ হতে থাকি। তিনদিন পর আমার বাচ্চাকে এনআইসিইউ থেকে সরিয়ে স্পেশাল কেয়ার বেবি ইউনিট-এ রাখা হয়। সেখানে আরো ১৩ দিন ছিল। শিশুর ওজন কম থাকায় তাকে চামচে করে খাওয়ানো হচ্ছিল। সব রক্তের রিপোর্ট স্বাভাবিক হওয়ার পর এবং যখন আমি বাচ্চাকে দেখাশোনার বিষয়ে নিশ্চিত হয়ে যাই তখন আমাকে নার্সিংহোম থেকে বাড়িতে ছেড়ে দেওয়া হয়। বাড়ি ফেরার পর আমার প্রিম্যাচিওর বাচ্চাকে সামলাতে বেশ বেগ পেতে হয়। ঈশ্বরের আশীর্বাদে আর চিকিৎসকের পরামর্শ মতো চলায় আমি সব সমস্যা কাটিয়ে উঠতে পারি।
বাচ্চার ওজন বাড়তে থাকে এবং স্বাভাবিক বিকাশ ঘটতে থাকে। তবে আমার জীবনের এই কঠিন সময়ে আমি চিকিৎসক ছাড়াও পাশে পেয়েছি আমার পরিবার, বন্ধুবান্ধব সবাইকে। আমি এই অভিজ্ঞতা অন্যদের সঙ্গে শেয়ার করলাম কারণ তা অন্যদেরও সাহায্য করবে কঠিন সময়ের সামনে দাঁড়িয়ে তা জয় করতে।
দিদি, আমরা খুব খুশী।
খুব ভালো থাকো আর পুচকেটা অতি দ্রুত দুরন্ত হোক ।
Khub sundor likhechis….ei lekhata aneker kaje debe
খুব ধৈর্যের পরিচয় দিয়েছিস তুই। তবে এখন শুধু মাতৃত্ব কে উপভোগ কর।
খুব উপকারী লেখা, অনেকে ভরসা পাবে. God bless you both