মেসেঞ্জারে আমায় এক বন্ধু আজ প্রশ্ন করলেন, ‘ব্লিচিংপাউডার জলের সাথে গুলে ঘর মুছলে মেঝে স্যানিটাইজড থাকবে। এটার সত্যাসত্য কতটা? ব্লিচিং পাউডার কি করোনার জীবাণু মারতে পারে?’
খুব ভাল প্রশ্ন।
উত্তর দেবার আগে যেটুকু জানা দরকার–
ব্লিচিং পাউডারে ক্লোরিন থাকে, যার ডিসইনফেক্টেন্ট (disinfectant) হিসেবে যথেষ্ট ব্যবহার রয়েছে। ক্লোরিন জলের উপস্থিতিতে প্রথমে তৈরি করে হাইপোক্লোরাস অ্যাসিড যেটি ভেঙে তৈরি হয় highly reactive অক্সিজেন পরমাণু (O)। এটি জীবাণু-কোষে অক্সিডেন্ট হিসেবে বিক্রিয়া করে সেলুলার মেটেরিয়াল অক্সিডাইজড করে, ফলতঃ জীবাণু ধ্বংস হয়।
এখন প্রশ্ন, কোন ধরণের জীবাণু?
মূলত, ব্যাকটেরিয়া এবং ছত্রাক এ ধরনের ডিসইনফেকটেন্টে সহজেই বিনষ্ট হয়। কিন্তু, ব্যাকটেরিয়ার স্পোর (একটা heat-রেজিস্ট্যান্ট ফর্ম, যা প্রতিকূল পরিবেশেও বেঁচে থাকতে পারে সাংঘাতিক রকম)-কে এভাবে নষ্ট করা যায় না।
এবার আসল প্রশ্ন : করোনা ভাইরাস থেকে বাঁচার জন্য ঘর-দোর, মেঝে ইত্যাদি যে কোনো সারফেস মোছার জন্য কি ব্যবহার করবো? ব্লিচিং-জল ব্যবহার করতে পারি কি?
বস্তুত, করোনা ভাইরাস (SARS-CoV-2) একটি RNA ভাইরাস, যার বাইরে একটি লিপিড এনভেলপ আছে। তাই, সাবান-জল কিংবা অ্যালকোহল ব্যবহার করাটাই প্রাথমিক ভাবে সবচেয়ে ভাল। কারণ, সাবান এই ফ্যাটের খোলাটাকে গলিয়ে নষ্ট করে দেয়, যার ফলে ভাইরাস সারফেসের সাথে নিজেকে আর আটকে রাখতে পারে না।
Surgical spirit বা hand sanitisers-এ থাকে অ্যালকোহল। আধ-মিনিটেই ভাইরাসের দেহের মূল উপকরণ প্রোটিন নষ্ট করে ভাইরাসকে ধ্বংস করতে পারে। এতটাই কার্যকরী! তবে মনে রাখতে হবে ৭০% এর উপরে গাঢ়ত্ব হওয়া প্রয়োজন। ১০০% আবার ব্যবহার করবেন না যেন!
তাই, বাইরে থেকে এসেই আগে নিজের হাত ধুয়ে নিন সাবান-জলে কিংবা ৭০% অ্যালকোহলে। আর টেবল-চেয়ার বা আসবাবের জন্য একটা কাপড় সাবান-জল কিংবা সার্জিকাল স্পিরিটে ভিজিয়ে নিয়ে মুছে ফেলুন।
এ দুটিই কিন্তু প্রাইমারি ডিফেন্স!
এবার ব্লিচিং-জল…….
ব্লিচিং এ কিছু কিছু ভাইরাস নষ্ট হয়। ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাসের RNA ও Protein নষ্ট হবার রিপোর্ট আছে।
এমনিতে নেকেড (যাদের দেহের বাইরে কোনও লিপিড-আবরণ নেই) ভাইরাসের তুলনায় এনভেলেপড (যাদের লিপিড আবরণী রয়েছে, যেমন এই SAR-CoV-2) ভাইরাসের নষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। কারণ, এদের বাইরের ঐ খোলাটা একবার নষ্ট করে দিতে পারলেই কেল্লাফতে! ভেঙে চুরমার হয়ে যাবে বাকিটা। নেকেড ভাইরাসগুলো কিন্তু আরও সাংঘাতিক! কয়েক মাস ধরে সারফেসে দিব্যি বেঁচে-বর্তে থাকতে পারে!
এ যেন, “ন্যাংটার নাই ডিটারজেন্টের ভয়!”
করোনার ক্ষেত্রেও তাই মোছামুছির কাজে ব্লিচিং-জল ব্যবহার করা যেতে পারে। বিশেষত, মেঝে বা খুব বড় সারফেসে মোছার কাজে অ্যালকোহলের তুলনায় এটি অনেক সাশ্রয়ী হবে।
শুধু কতগুলো বিষয় কিন্তু মনে রাখতে হবে।
১৷ উত্তাপ এবং সূর্যালোকে ব্লিচ নষ্ট হয়ে যায়। তাই সাবধানে সংরক্ষণ করতে হবে।
২। শিশুদের হাতের নাগাল থেকে অবশ্যই সরিয়ে রাখুন।
৩। সতর্কতার সাথে এটি ব্যবহার করা প্রয়োজন। কারণ, চোখ এবং স্কিনের জন্য এটি ক্ষতিকর। বেশি সময় ধরে এটির গ্যাস ইনহেল করাটাও শ্বাসনালীর জন্য ক্ষতিকর। ব্লিচিং -ওয়াটার ভুলেও হাত-ধোয়ার কাজে ব্যবহার করবেন না।
৩। অ্যালকোহল বা সাবানের তুলনায় বেশি সময় লাগে কাজ করতে। কন্টাক্ট টাইম ১০-৬০ মিনিট অব্ধি হতে পারে।
৪। এটি তীব্র বিক্রিয়ক হওয়ার কারণে অন্য কোনো রাসায়নিকের উপস্তিতিতে সহজেই কর্মক্ষমতা হারাতে পারে। বিশেষত জৈব বস্তুর সংস্পর্শে এলে। এমন কী গরম জলের সংস্পর্শে এলেও। তাই অবশ্যই ঠান্ডা জল ব্যবহার করুন।
৫। নির্দেশিত মাত্রায় ব্লিচিং-জল প্রস্তুত করতে হবে। বেশি পরিমাণে এটির ব্যবহার ক্যান্সারের কারণ হতে পারে, তেমনি পরিমাপ কম হলে কাজ না হওয়ার সম্ভাবনাও রয়েছে। তাই এর উপযুক্ত গাঢ়ত্ব জানা বিশেষ প্রয়োজন।
বাড়িতে যেসব ব্লিচ ব্যবহার করা হয়, তাতে সাধারণত ৫% সোডিয়াম হাইপোক্লোরাইট থাকে। এটির ১ ভাগ নিয়ে তাতে ৯৯ ভাগ ঠান্ডা জল মেশান (1:100 dilution)। ৫% এর বদলে ২.৫% থাকলে উপরোক্ত পদ্ধতিনুসারে ১ ভাগের বদলে ২ ভাগ ব্লিচ (৯৮ ভাগ জলে) ব্যবহার করুন।
৬। খুব ভালো হয়, যদি আগে কোনো ডিটারজেন্ট দিয়ে মুছে শুকিয়ে নেওয়া যায়। তারপরে ডিসইনফেক্টেন্ট হিসেবে ব্লিচ ব্যবহার করুন।
এতে দুটো মস্ত সুবিধে। যথা-
ক) Surface এ আগে থেকে কোনো নোংরা কিংবা জৈববস্তু ( যেমন, লালা, কফ, বমি, রক্ত ইত্যাদি যে কোনো ধরনের শরীর নির্গত রস বা বডি ফ্লুইড) লেগে থাকলে সেটি পরিষ্কার হয়ে গেল। নয়তো ঐগুলি ব্লিচের কার্যকারিতা নষ্ট করে দেয়।
খ) একটি অস্ত্রের বদলে দুটি অস্ত্রের প্রয়োগ করা গেল।
তবে, ডিটারজেন্ট আর ব্লিচ একসাথে মিশিয়ে ব্যবহার করবেন না।
মনে রাখবেন, আমাদের প্রতিটি হাঁচি-কাশির মাধ্যমে ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র ড্রপলেটস মারফত লক্ষ-লক্ষ জীবাণু বাতাসে ছড়িয়ে পড়ে এবং এরোসল হিসেবে (জীবাণু সমেত জলের ছোট্ট কণা) মেঘের ন্যায় ভেসে অনেক দূর অবধি পৌঁছে যেতে পারে। ৬ ফুট থেকে শুরু করে প্রায় ২৪-২৬ ফুট দূর অবধি !! সুতরাং, বাহক কিংবা রোগীর থেকে ২৫ ফুট দূরেও আপনি নিরাপদ নাই হতে পারেন।
আর এতদিনে আমরা জেনে গেছি যে, করোনা ভাইরাস বাতাসে ৩ ঘন্টা অবধি বেঁচে থাকতে পারে।
এখানে বলে রাখা আবশ্যক, করোনা ভাইরাসের বায়ুবাহিত এমন কোনও প্রমাণ এখনো পাওয়া যায় নি। অর্থাৎ, বায়ুর মাধ্যমে এর বিচরণ নয়। এ শুধু ড্রপলেটসের মাধ্যমে বাতাসে ছড়িয়ে পড়ে এবং ড্রপলেটস তাকে যতদূর অব্ধি নিয়ে যেতে পারে, বাতাসে এর দৌড়ও ঠিক ততদূর।
এরোসল ড্রপলেটস গুলো ভারের জন্য মাধ্যাকর্ষণের নিয়ম মেনে অতঃপর কোনো সারফেসে থিতিয়ে পড়ে। তবে, এর মধ্যকার ভাইরাস কিন্তু তক্ষুনি তক্ষুনি মরে যায় না। সারফেসের ধরনের উপর নির্ভর করে এই জাতীয় ভাইরাস ১ থেকে ৯ দিন অবধিও বেঁচে থাকতে পারে। সুতরাং, সারফেস ক্লিনিংটা কিন্তু বড্ডই দরকারি।
ব্যস আর দেরী কিসের? লেগে পড়ুন।
ও হ্যাঁ! পুরুষদের কাছে অনুরোধ, শুধু দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে না দেখে আপনারাও একটু হাত লাগান না।
আমরা মেয়েরা তাহলে এই কাজগুলো আরও দ্রুততার এবং দক্ষতার সাথে করে ফেলতে পারি।
পুনশ্চঃ উপরে ছবি এঁকে বোঝাবার চেষ্টা করলাম এনভেলপ ও নেকেড ভাইরাসের মূল তফাতগুলো।
কালো/সাদা ফিনাইল দিয়ে surface cleaning করলে কি dis infect হয়??
Not many scientific studies are available which can tell about the effective disinfecting agents to use against SARS-CoV-2 as it was discovered so recently. Therefore scientists are assuming that what works against other coronaviruses can work against this novel virus. Products containing soap, bleach, alcohol or hydrogen peroxide are the best at killing off the viruses. But, some phenol (active constituent of pheny) based disinfectants brand are also in the recent list of EPA (United States Environmental Protection Agency)