লক ডাউনের কয়েকটা দিন আমরা কাটিয়ে উঠতে পারলেও এখনও পড়ে আছে বেশ কয়েকটা দিন। কি করবে ভেবে না পেয়ে ছোটদের কম্পিউটার, ট্যাব বা স্মার্ট ফোন নিয়ে বসে থাকার প্রবণতা গেছে বেড়ে। কখনও বড়রাও একটু নিশ্চিন্তে কাজগুলো সেরে ফেলার জন্যে হাতে ধরিয়ে দিচ্ছেন। দীর্ঘদিন ধরে স্কুলগুলো বন্ধ থাকার জন্যে বাধ্য হয়েই স্কুলগুলো শুরু করে দিয়েছে ভিডিও ক্লাস। বাবা মা-এর স্মার্টফোন বা ল্যাপটপের সামনে বসে চলছে ভিডিও টিউটোরিয়াল। এমন এক পরিস্থিতিতে কি করা উচিৎ বা উচিৎ নয় জেনে নেওয়া যাক।
কতটা সময় দেখা নিরাপদ?
ওয়ার্ড হেলথ অর্গানাইজেশন (WHO) বলছে এক বছরের কম বয়সী শিশুদের এইগুলি না দেখাই ভাল।
আমেরিকান অ্যাকাডেমি অফ অপথ্যালমোলজি (AAO) বলছে ১৪-২৪ মাস বয়সী শিশুদের কেবল ভিডিও কল করে একটু কথা বলা ছাড়া অন্য কিছু না করাই শ্রেয়।
আর দুই থেকে পাঁচ বছর বয়সী বাচ্চাদের সারাদিনে একঘন্টার বেশি স্ক্রীন টাইম না হওয়াই বাঞ্ছনীয়। সেটাও যেন হয় উন্নত মনের ভিডিও। সেটাও একটানা না হয়ে ভেঙে ভেঙে হলে ভাল হয়।
লক ডাউন এর কারণে বড়দের অনেককেই ওয়ার্ক ফ্রম হোম করতে হচ্ছে ল্যাপটপে। বাইরের জগতের খবরাখবর নেওয়া আর করোনা আপডেট নিতে গিয়ে বাড়ির বড়দেরও বেড়ে গিয়েছে টিভি দেখার টাইম। সেক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞরা বলছেন ২০-২০-২০ মেনে চলতে। প্রত্যেক ২০ মিনিট ছাড়া আমরা যেন ২০ সেকেন্ডের জন্যে টিভি থেকে ২০ ফুট দূরে কোন জিনিসের দিকে তাকাই।
কি কি অসুবিধে হতে পারে চোখ ও শরীরে?
- দীর্ঘক্ষণ ধরে স্ক্রীনের দিকে তাকিয়ে থাকার ফলে ছোটদের চোখে মায়োপিয়া হতে পারে, যার ফলে দূরের জিনিস স্বচ্ছ দেখতে নাও পেতে পারে।
- স্ক্রীনের দিকে দীর্ঘক্ষণ তাকিয়ে থাকার সময় চোখের পলক পড়া স্বাভাবিকের থেকে অনেকটাই কমে যায়। তার ফলে চোখ শুষ্কতার সমস্যায় ভুগতে পারে, সাথে চুলকানি, আবছা দেখা, মাথাধরাও হতে পারে।
- ইলেকট্রনিক ডিভাইসগুলি থেকে নির্গত ব্লু লাইট শরীরের মেলাটোনিন হরমোনের নিঃসরণ কমিয়ে দিয়ে ঘুমের অসুবিধে করতে পারে।
- এগুলি ঘাড় গুঁজে দেখার ফলে ঘাড়ের মাংসপেশিতে চাপ পড়ে ,তার কারণে ঘাড় ব্যথা বা মাথার যন্ত্রণার মত সমস্যা হতে পারে।
- এই জিনিসগুলি নিয়ে দীর্ঘক্ষণ বাড়িতে বসে থাকার কারণে শারীরিক পরিশ্রম যায় কমে। ওজন বৃদ্ধি পেতে পারে। সাথে সাথে বিভিন্ন আচরণগত সমস্যা দেখা দিতে পারে। কানাডাতে স্কুলে যাবার আগের বয়সের বাচ্চাদের উপর একটা রিসার্চে দেখা গেছে যে শিশুরা দিনে দুঘন্টা বেশি এই সব ডিভাইসে চোখ রাখে, তাদের মধ্যে ADHD নামের এক আচরণগত সমস্যা, যেখানে শিশুরা মাত্রাতিরিক্ত চঞ্চল হয়ে পড়ে, এমন রোগ প্রায় আটগুণ বেড়ে গেছে।
প্রতিবিধান
১) ছোটরা যারা ই-বুক পড়ছে তারা যেন ই-বুকের পাশাপাশি আসল বইও মাঝে মাঝে পড়ে।
২) যারা ভিডিও ক্লাস করছে তারা এক একটা ক্লাস শেষ হলে জানালার কাছে গিয়ে একটু বাইরের দিকে তাকাতে পারে। এতে দূরদৃষ্টির সমস্যা কমে।
৩) পুরো জিনিসটা করা বা দেখা চেয়ার টেবিলে বসে করাই ভালো। তাতে শিরদাঁড়া ও ঘাড়ে চাপ কম পড়বে।
৪) ইলেকট্রনিক ডিভাইসটি চোখ থেকে দেড় থেকে দুই ফুট এর ব্যবধানে থাকাই বাঞ্ছনীয়।
৫) ডিভাইসটির উজ্জ্বলতা এমন ভাবে বেঁধে দিতে হবে যাতে সেটা দেখতে কষ্ট না হয়। মাঝামাঝি উজ্জ্বলতা চোখের জন্য ভাল।
৬) অন্ধকার বা মৃদু আলোতে এগুলো না পড়াই ভাল। এতে চোখে বেশি ক্ষতি হয়।
৭) স্বাভাবিক নিয়মেই এগুলো দেখার সময় চোখের পাতা কম পড়ে। অভিভাবকরা বারে বারে চোখের পাতা ফেলার কথা যেন মনে করিয়ে দেন।এতে চোখ শুষ্ক হওয়া থেকে রক্ষা পায়।
৮) অ্যাপ গুলোর টাইম লিমিট সেট করে দিন।যাতে একটা টাইমের পর এগুলো এমনি থেকেই বন্ধ হয়ে যায়।
৯) একটু বড় বাচ্চারা কি সাইট দেখছে তার উপর নজর রাখুন।
১০) ঘুমোতে যাওয়ার ২ঘণ্টা আগে সমস্ত ডিভাইসের ব্যবহার বন্ধ রাখুন। কারণ এইগুলি থেকে নির্গত নীল আলো ঘুম আসতে অসুবিধে সৃষ্টি করতে পারে।