খুব ছোট্ট বেলায় একবার মিথ্যে কথা বলেছিলাম আর যথারীতি ধরা পড়েছিলাম। আমার মা, যার খুব কড়া দিদিমণি বলে বদনাম আছে, আশ্চর্য্যজনক ভাবে, আমায় একটুও বকেন নি। বুঝিয়েছিলেন যে আমি আসলে ভয় পেয়ে মিথ্যে বলে ছিলাম। অন্যায় কাজ করেছিলাম, আমার উচিত ছিল সেটা স্বীকার করা, সেটা না করে, সেটা ঢাকতে গিয়ে মিথ্যে বলেছিলাম। ভেবেছিলাম, সত্যি বললে অনেকে বকুনি, মারধোর জুটবে। সেদিনের পর থেকে জ্ঞানত আর মিথ্যে বলি না। কারণ ভয় পাওয়া বিষয়টা বাদ দিয়ে দিয়েছি।
এত কথা বলার একটাই কারণ। আগামী দিনে ওয়েস্ট বেঙ্গল মেডিক্যাল কাউন্সিলের নির্বাচন। গত নির্বাচনে ওই কাউন্সিলের দখল নিতে অনেক কদর্য্য ব্যাপারস্যাপার হয়েছে। ডাক্তারদের ভয় দেখিয়ে ফাঁকা ব্যালট জমা নেওয়া হয়েছিল। এবারের নির্বাচনেও তেমন চেষ্টা চলছে বলে খবর পেয়েছি। একদল ডাক্তার যেন তেন প্রকারেন ওই কাউন্সিল এর দখল নিতে মরিয়া।
প্রশ্ন আসতে পারে সুধী পাঠকের মনে যে কেন এই মরিয়া ভাব। এর কারণ হল ওই কাউন্সিলের ক্ষমতা। একজন ডাক্তারের কাছে মৃত্যু দণ্ডের সমান শাস্তি হল তার ডাক্তারি করার অধিকার কেড়ে নেওয়া। ওই শাস্তি দিতে পারে ওই কাউন্সিল, এতটাই তার ক্ষমতা। এবার এই ক্ষমতা একবার হাতে পেয়ে তার অপব্যবহার করে কোনও বিদ্রোহী প্রতিবাদী ডাক্তারকে ভয় দেখিয়ে তাকে বাগে আনা অতি সহজ।
ভয় একটি অতি শক্তিশালী অস্ত্র। সরকারি ডাক্তারদের বদলির ভয় আছে, বেসরকারীদের প্র্যাকটিসে গুন্ডা লেলিয়ে দেওয়ার।সেই অস্ত্রকে ভোঁতা করে দিতে গেলে শুধু একটু সাহস লাগে। তাই মনে প্রাণে চাইবো যে কাউন্সিল এমন কিছু ডাক্তারদের হাতে যাক যারা ওই অস্ত্রের অপব্যবহার করবেন না।
এমন প্রার্থীদের জয়যুক্ত করার প্রথম ধাপ হল নিজের ব্যালট নিজে সংগ্রহ করে নিজের ভোট নিজে দেওয়া। কাজটা সহজ হবে না। নানান ভাবে ভয় দেখানো চলবে। যারা এভাবে কাউন্সিল দখল করতে চায় তাদের হাতে ক্ষমতা গেলে তারা তো আরো বেশি করেই ভয় দেখাবে। তাই ভয় পাওয়ার পালা এবার শেষ হোক। কোনো অন্যায় করিনি, মিথ্যে বলিনি, ভয় পেতে যাবো কেন। নিজের ভোট নিজেই দেবো।