হরিপদবাবু পাগল হয়ে যাচ্ছেন। আজ পর্যন্ত কোনও পাগল বুঝতে পারেনি, সে ক্রমশ পাগল হয়ে যাচ্ছে। হরিপদবাবু সে দিক থেকে একজন ব্যতিক্রমী মানুষ।
গত চারমাস ধরে তিনি মাঝে মাঝেই একটি কুকুরকে দেখছেন। কুকুরটি সবসময় তার ডানদিকে থাকে। ধূসর রঙের কুকুর। দাঁত বের করে চেঁচায়। কিন্তু সে চ্যাঁচানি তিনি শুনতে পান না।
কুকুরের ভয়ে তিনি চেয়ারে পা তুলে বসেন। তাঁকে ছোটবেলায় একবার কুকুরে কামড়ে ক্ষতবিক্ষত করেছিল। তারপর থেকে তাঁর কুকুরে অ্যালার্জি। সবচেয়ে বিরক্তিকর ও ভীতিকর ব্যাপার ঘটে যখন তিনি খেতে বসেন। কুকুরটা তাঁর দিকে হিংস্র ভাবে চেয়ে থাকে, দুই পা বাড়িয়ে খাবার টেবিলে উঠতে চায়। পুরোটাই নির্বাক যুগের চলচ্চিত্রের মত। তিনি স্পষ্ট কুকুরটাকে দেখতে পাচ্ছেন, কিন্তু কোন শব্দ নেই।
কুকুরের আতংকে হরিপদবাবুর খাওয়া দাওয়া মাথায় উঠেছে। তিনি একটি নামকরা স্কুলের অংকের শিক্ষক ছিলেন। বছর দুয়েক আগেই অবসর গ্রহণ করেছেন। ইন্টারনেট, ফেসবুক ইত্যাদিতে বেশ সড়গড়। অতএব তিনি গুগুলের শরণাপন্ন হলেন। এবং বিস্তর পড়াশুনো করে বুঝতে পারলেন তাঁর যে অসুখ সেটি একপ্রকার ভিজুয়াল হ্যালুসিনেশন এবং তাঁর রোগটির গাল ভরা নাম সিজোফ্রেনিয়া বা গোদা বাংলায় পাগলামি।
কিন্তু মুশকিল হল, সিজোফ্রেনিয়ার অন্যান্য লক্ষ্মণগুলি মিলছে না। তিনি দিব্যি সুস্থ চিন্তা ভাবনা করতে পারছেন। ক্যালকুলাসের কঠিন কঠিন অংক মুখে মুখে করে দিতে পারছেন। সেই কবেকার পড়া রবি ঠাকুরের কবিতা গড় গড় করে বলছেন। তাঁর মধ্যে পাগলামির অন্য কোনও লক্ষ্মণ নেই।
নেই তো কি আছে, নিশ্চয়ই কয়েকদিনের মধ্যেই সে সব লক্ষ্মণ প্রকাশ পাবে। তিনি গভীর মনোযোগ দিয়ে রাস্তার পাগলদের পর্যবেক্ষণ করতে থাকলেন। এবং কিছু দিনের মধ্যেই তিনি পাগলদের বিশেষ কিছু গুণের পরিচয় পেয়ে অভিভূত হয়ে গেলেন। তাদের এলাকায় ষষ্ঠী পাগল নামে একজন নামকরা পাগল আছে। সে নোটবই ভরে কবিতা লেখে। হরিপদবাবু তার সাথে আলাপ করে ফেললেন এবং মনোযোগ দিয়ে তার কবিতা শুনলেন। যদিও কিছু বুঝতে পারলেন না,
“রাজা মশাই কোটাল মেরে,
খায় গন্ধ বিড়ি করে।
মন্ত্রী মশাই বলেন হেঁকে
আমি কোথায় যাব?
সাত সমুদ্র পাড়ে কি
খাটাশ ভাজা পাব?”
স্টেশনে ভবা পাগলা আবার গোটা হ্যামলেট নাটকটা মুখস্থ বলতে পারে। বাজারের মধু পাগলা দুই হাতে ভর দিয়ে পরপর চারতে ডিগবাজী খেতে পারে। অতএব পাগল হওয়াটাকে তিনি যতোটা সহজ ভাবছিলেন, ততটা সহজ মোটেই নয়।
পাগলদের পর্যবেক্ষণ করতে করতেই হরিপদ বাবুর দ্বিতীয় ভিজুয়াল হ্যালুসিনেশন শুরু হল। তিনি একটি মাঝবয়স্ক সুন্দরী মহিলাকে দেখতে শুরু করলেন। এই মহিলাও সব সময় তাঁর ডানদিকেই থাকছেন।
মহিলাকে প্রথম দেখার সময়টা তাঁর পক্ষে বড়ই লজ্জাজনক। তিনি কমোডে বসে প্রাতঃক্রিয়ার চেষ্টা চালাচ্ছেন। হঠাৎ দেখলেন একজন মধ্যবয়স্ক সুশ্রী মহিলা তাঁর ডানদিকে দাঁড়িয়ে ড্যাব ড্যাব করে চেয়ে আছেন এবং আঙুল তুলে তাঁকে কিছু বলার চেষ্টা করছেন। হরিপদ বাবু এতটাই ঘাবড়ে গেলেন, মাঝ পথেই প্রাতঃক্রিয়া বন্ধ করে শৌচকার্য না করেই তড়িঘড়ি পাজামা পরে নিলেন।
পরের দিনও একই ঘটনা। লোকে সুন্দরী নারী দেখে খুশি হয়, হরিপদবাবুর কোষ্ঠকাঠিন্য হয়ে গেল। সারাদিন পেট ভার ভার। খিদে নেই। হরিপদবাবুর দুর্গতি দেখে ইদানীং সেই মহিলা যখন তখন তাঁর ডানদিকে উদয় হন, এবং মুচকি মুচকি হাসেন।
হরিপদবাবুর বাড়ির পাশেই একজন ব্যক্তি বিভিন্ন মানসিক সমস্যার রোগীদের কাউন্সিলিং করেন। হরিপদবাবু তাঁর কাছে একদিন কাঁচুমাচু মুখ করে গেলেন।
কাউন্সিলার ভদ্রলোক এককালে হরিপদবাবুর ছাত্র ছিলেন। তিনি সব শুনে বললেন, ‘নো প্রবলেম স্যার। কয়েকটা কাউন্সিলিং করলেই ঠিক হয়ে যাবে। আপনি তো কুকুর দেখছেন, একটা ছেলে পড়তে বসলেই হাতি দেখতে পেত।’
‘হাতি?’ হরিপদ বাবু বিস্মিত হতেও ভুলে গেলেন।
‘হ্যাঁ স্যার, তাকে ঠিক করে দিলাম। তবে কাউন্সিলিং শুরুর আগে আপনি একজন সাইক্রিয়াটিস্ট দেখিয়ে নিন। সামান্য ওষুধ খেলে কাউন্সিলিং-এ আরও ভালো ফল পাবেন। আমি একজন ভালো ডাক্তারের ঠিকানা আর ফোন নম্বর দিয়ে দিচ্ছি।’
হরিপদবাবু সাইক্রিয়াটিস্ট ডাক্তারবাবুর ঠিকানা, ফোন নম্বর নিয়ে ফেরত এলেন। যা করার তাড়াতাড়ি করতে হবে। ইদানীং কুকুর আর মহিলা একসঙ্গেই দেখা দিচ্ছে। কুকুরটির সাথে মহিলার বন্ধুত্ব হয়ে গেছে। মহিলা কুকুরটির ঘাড়ে হাত বুলিয়ে দেন। আর কুকুরটি দিব্যি ল্যাজ নাড়িয়ে আদর খায়।
অনেক ভেবেচিন্তে হরিপদবাবু সেদিন সন্ধ্যায় ডাঃ সদাশিব দাশগুপ্তের বাড়ি গেলেন। এককালে ইনি অনেক রোগী দেখতেন। হরিপদবাবুর পরিবারের কারো কিছু হলেই এনার কাছে যাওয়া হত। এখন বয়সের ভারে রোগি দেখা কমিয়ে দিয়েছেন। লোকে তাঁকে বুড়ো ডাক্তার বলে ডাকে।
বুড়ো ডাক্তার হরিপদকে দেখে আন্তরিক খুশি হলেন। আরও খুশি হলেন হরিপদর হাতে মিষ্টির প্যাকেট দেখে। বললেন, ‘দরজাটা বন্ধ করে দাও হরি। বউমা যদি দেখে আমি মিষ্টি খাচ্ছি তুলকালাম করবে।’
হরিপদবাবু বললেন, ‘আপনার মিষ্টি খাওয়া বারণ বুঝি ডাক্তারকাকু? তাহলে থাক।’
সদাশিব ডাক্তার বললেন, ‘আহা জলভরা! ভেতরে নলেন গুড়ের মিক্সচারটা আছে তো?’
‘তা আছে, কিন্তু আপনার যদি মিষ্টি খাওয়া বারণ থাকে…’ হরিপদবাবু ইতস্তত করছিলেন।
সদাশিব ডাক্তার হাসলেন। বললেন, ‘আমি ডাক্তার। আমি অন্তত সদাশিবকে মিষ্টি খেতে বারণ করিনি। কোনোদিন করবও না। তুমিও দুটো জলভরা নাও। খেতে খেতে তোমার সমস্যা খুলে বল।’
হরিপদবাবু সব খুলে বললেন। এমনকি কুকুরের সাথে মহিলার যে ইদানীং সখ্যতা গড়ে উঠেছে সেটাও বাদ দিলেন না।
সদাশিব ডাক্তার এতটাই গভীর মনোযোগে শুনছিলেন যে শেষ দিকে তিনি হাতের জলভরায় কামড় দিতে ভুলে যাচ্ছিলেন। হরিপদবাবু তাঁর কাহিনী শেষ করা মাত্রই বলে উঠলেন, ‘এবার চটপট উনিশের ঘরের নামতাটা বলে ফেল দেখি।’
হরিপদবাবু একটু থতমত খেয়ে উনিশের ঘরের নামতা শুরু করলেন এবং এক দমে নির্ভুল ভাবে বলেও ফেললেন।
সদাশিব ডাক্তার বললেন, ‘আচ্ছা হরি, তুমি ইদানীং গাঁজা- টাজা খাচ্ছ নাতো, অথবা হিরোইন?’
‘আজ্ঞে কাকাবাবু, সারা জীবনে আমি মাত্র দুটো বিড়ি খেয়েছি। তাও যখন ক্লাস ইলেভেনে পড়ি।’
‘তুমি কি কুকুর আর ওই মহিলাকে শুধু ডান দিকেই দেখ?’
‘হ্যাঁ কাকাবাবু।’
‘কখনও কুকুর বা মহিলাকে কোনও শব্দ করতে শোনোনি?’
‘না স্যার, কুকুরটাকে মাঝে মাঝেই ডাকতে দেখি, কিন্তু সেই ডাক শোনা যায় না। মহিলা আমার দিকে আঙুল তুলে অনেক কিছু বলেন। কিন্তু আমি কিছু শুনতে পাই না।’
‘শুধু ভিজুয়াল হ্যালুসিনেশন!’ বুড়ো ডাক্তারের ভুরু কুঁচকে উঠল। ‘আচ্ছা হরি, এর মধ্যে তোমার কখনও কোন বড় সড় অসুখ হয়েছে। যেমন ধর স্ট্রোক।’
হরিপদবাবু বললেন, ‘ছয় মাস আগে আমি প্রায় যমের মুখ থেকে ফেরত এসেছি। কয়েকদিন দাঁতের ব্যথায় কষ্ট পাচ্ছিলাম। এক রাতে কেঁপে জ্বর আসে। জ্বরে প্রায় বেহুঁশ হয়ে যাই। সে রাত্রেই একটা নার্সিং হোমে ভর্তি হই। নার্সিং হোমে ডাক্তারবাবুরা বলেন আমার ইনফেকটিভ এন্ডোকার্ডাইটিস হয়েছে। দাঁত থেকে ইনফেকশন ছড়িয়েছে হৃদপিণ্ডের এওর্টিক ভাল্ভে। আমার এওর্টিক ভাল্ভে নাকি আগের থেকেই একটু গঠনগত সমস্যা ছিল। দু’দিন পরে আরেক বিপত্তি। হঠাৎ আমার ডান দিকটা অসাড় হয়ে যায়। যদিও চব্বিশ ঘণ্টার মধ্যেই তা ঠিক হয়ে যায়। ডাক্তারবাবুরা মাথার সিটি স্ক্যান করে জানান, হার্ট থেকে একটি এম্বোলাস আমার মস্তিষ্কে চলে গিয়ে সেখানে রক্তচলাচল বন্ধ হয়ে সাময়িক স্ট্রোকের মত হয়েছিল। এই যে সিটি স্ক্যান ও অন্যান্য রিপোর্ট।’
‘রিপোর্ট পরে দেখছি,আগে তোমাকে ভালো করে দেখি।’
সদাশিব ডাক্তার একটি পুরনো পারদের মেশিন বার করে প্রেশার মাপলেন। হাতুড়ি দিয়ে চার হাত-পা ঠুকে ঠুকে দেখলেন। তারপর পকেটের পেন বার করে বললেন, ‘হরি, মাথা নাড়াবে না। সোজা আমার নাকের দিকে তাকিয়ে থাক। আমি কলমটা এদিক ওদিক করব। যখন পেনটা আর দেখতে পাবে না, হাত তুলবে।’
হরিপদবাবু বললেন, ‘আমার সব পরীক্ষা কিন্তু করা হয়েছে। এমন কি পরবর্তী কালে এমআরআই পর্যন্ত করা হয়েছে।’
সদাশিব ডাক্তার হাসলেন। বললেন, ‘আমি পুরনো দিনের লোক। আমি রোগীর চিকিৎসা করা শিখেছি, রিপোর্টের নয়। তবে যা দিনকাল পড়েছে, ডাক্তারি চালিয়ে গেলে ভাইরাল জ্বরেও কোর্ট কাছারির ভয়ে একগাদা রিপোর্ট করাতে হত। তাই ডাক্তারিটাই ছেড়ে দিলাম।’
খানিকক্ষণ চুপ করে থেকে তিনি বললেন, মানুষের শরীর যেমন কোনও নিয়ম কানুন মেনে বিগড়ায় না, তেমন অতো নিয়ম কানুন মেনে চিকিৎসাও করা যায় না। ডাক্তারিকে অনেকটা গোয়েন্দাগিরিও বলতে পার। শরীরের ভেতরে কিছু একটা গণ্ডগোল চলছে, সেটা ধরতে হলে সিক্সথ সেন্স চাই। যার সিক্সথ সেন্স যতো বেশি প্রবল, তিনি তত বড় ডাক্তার। কিন্তু ইদানীং এভিডেন্স বেসড মেডিসিন আর কনজিউমার প্রটেকশন অ্যাক্টের যাঁতাকলে কোনও চিকিৎসকই সিক্সথ সেন্স বা নিজের জ্ঞানের উপর নির্ভর করতে পারছে না। সবচেয়ে করুণ অবস্থা তরুণ চিকিৎসকদের। যাইহোক, এখন যা বলছি শোনো। এই পরীক্ষাকে বলে ভিজুয়াল ফিল্ড টেস্ট। তুমি মাথা নাড়িও না। সোজা তাকাও। একদম আমার নাকের দিকে তাকিয়ে থাক। যেই কলমটা দেখতে পারবে না, হাত তুলবে।’
মিনিট পাঁচেকের মধ্যে পরীক্ষা সমাপ্ত। চিন্তিত মুখে সদাশিব ডাক্তার বললেন, ‘তোমার চোখে ছানি বা অন্য সমস্যা নেই। কিন্তু তুমি তো দেখছি তোমার ডানপাশের নীচের দিকে কিছুই দেখছো না। একে ডাক্তারি ভাষায় বলে রাইট ইনফিরিয়র কোয়াড্রান্টোপিয়া। অথচ তুমি দাবী করছ, ওখানেই তুমি কুকুর আর মহিলা দেখতে পাও। আমার মনে হচ্ছে তুমি আদৌ কোন মানসিক সমস্যায় ভুগছো না। কাল একবার আসতে পারবে?’
‘হ্যাঁ কাকাবাবু, পারব।’
‘তাহলে সব রিপোর্ট রেখে যাও। একটু পড়াশুনো করে দেখি। বয়স হয়েছে, সব মনে থাকে না।’
পরের সন্ধ্যেয় হরিপদবাবু দুরু দুরু বুকে সদাশিব ডাক্তারের বাড়িতে হাজির হলেন। বুড়ো ডাক্তার কি পারবেন তাঁর এই আজব অসুখের রহস্য ভেদ করতে। আজকে যেন কুকুর আর মহিলা দুজনেই বড় ঘন ঘন দেখা দিচ্ছেন। মাঝবয়সী সুন্দরী মহিলা একবার তাঁর দিকে চেয়ে এমন হাসি দিলেন, যে তাঁর গা পিত্তি জ্বলে গেল।
সদাশিব ডাক্তারের ঘরে খাটময় বই ছড়ানো। তিনি উপুড় হয়ে পড়ছেন। হরিপদবাবুকে দেখে মুখ তুললেন। বললেন, ‘তোমার কল্যাণে গোটা দিন ধরে অনেক কিছু ঝালিয়ে নিলাম।’
হরিপদ বাবু কাঁচুমাচু মুখে বললেন, ‘আজ্ঞে কাকাবাবু, আমার অসুখটা…’
সদাশিব ডাক্তারের মুখে হাসি ফুটে উঠল। তিনি বললেন, ‘তোমার অসুখের বিবরণ খুঁজে পেয়েছি। তোমার অসুখের নাম চার্লস বোনেট সিন্ড্রোম।’
‘সেটা আবার কি রোগ? সিজোফ্রেনিয়া বা কোনও বিশেষ ধরণের পাগলামি?’ হরিপদবাবু ভয়ে ভয়ে জিজ্ঞাসা করলেন।
‘একদমই নয়। তাঁর আগে তুমি বলো তুমি কি ফ্যান্টম লিম্বের নাম শুনেছ? কারো কোনও দুর্ঘটনার পর হাত বা পা বাদ গেলেও সে পরবর্তী কালে সেই অদৃশ্য হাত বা পায়ে ব্যথা, জ্বালা বা চুলকানি অনুভব করে।’
‘হ্যাঁ, শুনেছি।’
‘আম্পুটেশনের পরে এই ফ্যান্টম লিম্বের সমস্যায় অর্ধেকেরও বেশি রোগি ভোগেন। হাত, পা কেটে বাদ দেওয়ার পর সেখান থেকে স্পাইনাল কর্ড বা মস্তিষ্কে কোনও সিগন্যাল আসে না। মস্তিষ্ক সিগন্যাল হারিয়ে ফেলে বোঝে ঐ অঙ্গে কিছু একটা গণ্ডগোল হয়েছে। এবং সে তখন বাকি শরীরকে সতর্ক করার জন্য ওই কাটা অঙ্গে ব্যথার অনুভূতি সৃষ্টি করে। তোমার ক্ষেত্রেও তাই হয়েছে।’
‘কিন্তু আমার তো কোনও অঙ্গ কাটা পড়েনি।’
‘তা পড়েনি। তবে তোমার ক্ষেত্রে কাটা পড়েছে ভিজুয়াল পাথওয়ের একটি অংশ। সিটি স্ক্যানে ভালো করে দেখেছি অ্যায়োর্টিক ভাল্ভের থেকে একটি এম্বোলাস বাঁ দিকের মস্তিষ্কের অক্সিপিটাল লোবের একটি অংশে রক্তচলাচল বন্ধ করে দিয়েছিল। ওখান দিয়েই ভিজুয়াল পাথওয়ের সেই নার্ভগুলি যায়, যেগুলি আমাদের ডান দিকে দেখতে সাহায্য করে। ফলে তুমি ডানদিকের নীচে কিছুই দেখতে পাচ্ছ না। সেখান থেকে কোনও উদ্দীপনাই আমাদের মস্তিষ্কের নির্ধারিত স্থানে পৌঁছচ্ছে না। মস্তিষ্ক কিন্তু শূন্যস্থান একদম পছন্দ করে না। তাই সে তাঁর নিজের ইচ্ছে মতো ইমেজ তৈরি করে শূন্যস্থান পূরণ করেছে। কখনও কুকুরের, কখনও নারীর। এটা স্ট্রোক রোগীদের ক্ষেত্রে অথবা ক্যাটারাক্ট বা ছানি, ডায়াবেটিক রেটিনোপ্যাথি, গ্লকোমা ইত্যাদি চোখের রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের মধ্যে সাধারণত দেখা যায়। তোমার কেসটা সত্যিই ব্যতিক্রমী। বিদেশের জার্নাল গুলো পেলে লুফে নেবে।’
‘আচ্ছা স্যার, এই রোগটার এমন খটোমটো নাম হল কেন?’
‘১৭৬০ সাল নাগাদ সুইজারল্যান্ডের একজন প্রকৃতি বিজ্ঞানী ভদ্রলোক চার্লস বোনেট প্রথম তাঁর ছানিতে প্রায়-অন্ধ ঠাকুরদার নানা অদ্ভুত জিনিস দেখার বিবরণ দেন। তাঁর ঠাকুরদা পুরুষ, মহিলা, পাখি, এমনকি বাড়ি ঘর পর্যন্ত দেখতে পেতেন। যদিও তিনি অনেক পর্যবেক্ষণ করেও ঠাকুরদার মধ্যে কোন মানসিক রোগের লক্ষ্মণ দেখতে পাননি। তাঁর নাম অনুসারেই এই রোগের নাম হয় চার্লস বোনেট সিন্ড্রোম।’
‘কিন্তু এই রোগ সারবে কি করে, স্যার?’
বুড়ো ডাক্তার হঠাৎ গম্ভীর হয়ে গেলেন। বললেন, ‘এ রোগের চিকিৎসা কিছু নেই। তবে ভয়েরও কিছু নেই। তোমার কোন প্রাণঘাতী অসুখও হয়নি। তুমি পাগলও হয়ে যাবে না। অতএব তুমি নিশ্চিন্তে থাক। পারলে ঐ মহিলার সাথে বন্ধুত্ব পাতিয়ে নাও। বুড়ো বয়সটা দিব্যি কাটবে।’
খুব ভালো লাগলো. স্যার আমি আপনার সব লেখাই পড়ি… আপনার লেখা পড়তে আমার খুব ভালো লাগে…. আমি নিজেও একজন Junior Doctor..বাড়াবাড়ি মনে হলেও , আপনাকে না দেখেও আপনার লেখা পড়ে আপনার প্রতি বেশ শ্রদ্ধা আসে…ভালো থাকবেন আর এরকম লেখনী উপহার দিতে থাকবেন….
ধন্যবাদ
Very beautiful
ধন্যবাদ
অসাধারণ
বাক্যহারা হয়ে যাই আপনার লেখার ক্ষমতা দেখে।আপনার রোগী হওয়ার সৌভাগ্য হবেনা তবে গুণমুগ্ধ পঠিকা বটেই। লেখনী চলুক। শুভেচ্ছা অফুরান
অনবদ্য ।
Besh valo.
ধন্যবাদ
পাঠক বা পাঠিকার ডা, লেখকের রোগী হবার সৌভাগ্যের দরকার নাই। তার লেখা ভালো লাগলেই হবে।
আপনার লেখা অসাধারণ বললে প্রায় কিছুই বলা হয় না । আমি আপনার সব লেখা পাই না, যেমন চার পেলাম কিন্তু আগের গুলো পাই নি ।
আর এমন বুড়ো ডাক্তারবাবু যদি পেতাম !
ধন্যবাদ
my other posts এ ক্লিক করলেই পাবেন।
পরবর্তী লেখার অপেক্ষায় থাকলাম।
Khub bhalo laglo
খুব সুন্দর লেখা।
মারাত্মক লেখা হয়েছে। যে কোন থ্রিলারকে হার মানা। গল্প হলেও গল্প নয়।
বুড়ো ডাক্তার জিন্দাবাদ । ভারী মজা পেলাম । আমিও ঘরে বসে সুন্দরী মহিলা দেখতে চাই । সাহায্য করুন ।
বাহ্! দারুণ ব্যাপার তো! জেনে বেশ মজা এলো
Durdanto Dr.Bhowmik.Analysis ta darun
বাহ,ভালো লাগ।
দারুণ আগ্রহজনক! সত্যিই গোয়েন্দাগিরি!
অসাধারণ