আমরা আদার ব্যাপারি জাহাজের খোঁজ রাখিনা। তাই জলে ডুবে শিশুমৃত্যুর মতো ঘটনা আমাদের চোখ এড়িয়ে যায়। শহুরে জীবনে চাঞ্চল্য ছড়ায়, যখন সুইমিংপুলে ডুবে প্রশিক্ষণরত কোন সাঁতারুর মৃত্যুর খবর পাওয়া যায়। কারণ কলকাতা শহরে একমাত্র সাঁতার ক্লাবগুলো ছাড়া জলের জীবন আর তেমন ভাবে বেঁচে নেই।
কিন্তু কলকাতা থেকে মাত্র কয়েক কিলোমিটার দূরের সুন্দরবনে প্রতিবছর প্রায় দেড়শ’ শিশুর মৃত্যু ঘটে জলে ডুবে। এই পরিসংখ্যান সম্পূর্ণ সুন্দরবন এলাকার নয়।
সুন্দরবনের উনিশটি ব্লকের উত্তর- দক্ষিণ দুই ২৪ পরগনা জেলার পরিসংখ্যান এটি। সম্পূর্ণ সুন্দরবনের চিত্র হয়তো এর থেকেও আরো অনেক ভয়ানক। একটি বেসরকারি সংস্থা উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা স্বাস্থ্য দপ্তর ও পঞ্চায়েতের সাহায্যে গত বছরের জুলাই মাস থেকে জলে ডুবে শিশুমৃত্যুর উপরে একটি সার্ভে করে।
তাদের দেওয়া পরিসংখ্যানে দেখা গেছে জলে ডুবে মৃত্যুর ৮০% ঘটনা ঘটেছে সকাল বেলায় যে সময় ঘরের মহিলারা ব্যস্ত থাকেন। কারণ ৯৬ শতাংশ জলে ডুবে মৃত্যুর ঘটনায় দেখা গেছে মা ঘরের কাজে ব্যস্ত ছিলেন। এই সার্ভেতেই উঠে এসেছে আরো মর্মান্তিক সত্য। মৃত শিশুদের ৯০% ক্ষেত্রেই বাড়ির ভিতরে থাকা ছোট ডোবা বা জলাশয়ে ডুবেই শিশু মৃত্যুর ঘটনাটি ঘটেছে। তবে সবচেয়ে ভয়ের কথা হলো ওই অঞ্চলে গত তিন বছরে ১০ বছরের কম বয়সী যত শিশু মারা গিয়েছে তার মধ্যে ৬৭ শতাংশেরই মৃত্যু হয়েছে জলে ডুবে।
সারা পৃথিবীতে প্রতি ৮৬ সেকেন্ডে একটি জলে ডুবে মৃত্যুর ঘটনা ঘটে। সুন্দরবন এলাকার মত নদী-নালা-খাল-বিল সমৃদ্ধ অঞ্চলের পরিস্থিতি আরো খারাপ। গ্রামবাংলায় জলে ডুবে মারা যাওয়ার মতো ঘটনা প্রায়শই ঘটে। এই সব এলাকায় এখনো শিশুমৃত্যুর একটি অন্যতম কারণ জলে ডুবে মৃত্যু।
সাম্প্রতিককালে একটি বেসরকারি সংস্থা সুন্দরবন এলাকায় শিশুমৃত্যুর ওপরে সার্ভে করাতেই সামনে আসে উঠে আসে এই চাঞ্চল্যকর তথ্য। এই সার্ভের সঞ্চালক সুজয় রায় জানিয়েছেন , মূলত জলে ডুবে মৃত্যুর হাত থেকে কিভাবে শিশুদের রক্ষা করা যায় তা জানতেই ভারতের মধ্যে প্রথম বার এই ধরনের সার্ভে করা হয়েছে। সরকারি ক্ষেত্রে বিভিন্ন স্বাস্থ্য প্রকল্প শিশুদের মারণ রোগ প্রতিরোধ করলেও গ্রাম বাংলায় জলে ডুবে মারা যাওয়ার মতো ঘটনা প্রায়শই ঘটে। কিভাবে তা প্রতিরোধ করা যায় সেটা খুঁজে বের করাই এই সার্ভের মূল লক্ষ্য।