১৫ই জানুয়ারী, ২০২১
কাল ১৬ ই জানুয়ারী, শনিবার। সাড়ম্বরে ঠান্ডা ঘর থেকে বেরিয়ে আসতে চলেছে বহুচর্চিত ভ্যাক্সিনের দল। দেশ জুড়ে ড্রাই রান সম্পন্ন হয়ে এখন ভ্যাকসিনেশনের জন্য প্রস্তুত গোটা দেশ। প্রস্তুত বিশেষ ট্রেনিং প্রাপ্ত ভ্যাকসিনেটাররাও। সারা দেশ জুড়ে বিশেষ বিমানে দূর দূরান্তে পৌঁছে গেছে কোভিড ভ্যাকসিনের দল। কোনো রাজ্যে পৌঁছে গেছে ভারত বায়োটেক/আই সি এম আর+এর তৈরী ‘কোভ্যাক্সিন’ কোথাও বা অ্যাস্ট্রাজেনেকা/সেরাম ইনস্টিটিউটের ‘কোভিশিল্ড’।
মোদ্দা কথা সব প্রস্তুতি শেষে মহামারীর বিরুদ্ধে লড়াইয়ের বিশেষ মঞ্চ রেডি। পর্দা ওঠানোর প্রহর গোনা শুরু হয়ে গেছে ইতিমধ্যেই।
ভ্যাকসিনের পক্ষে বিপক্ষে অনেক ধরনের মতামত ঘুরে বেড়াচ্ছে সাধারণ মানুষের মধ্যে। তবে প্রধানত সবাই চিন্তিত হয়ে রয়েছেন তার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নিয়ে। ডাক্তারদের মধ্যেও রয়েছে অনেক রকম বিপরীতমুখী চিন্তা ভাবনা। কতটা কাজ করবে ভ্যাকসিন, কত শতাংশ সম্ভাবনা অ্যান্টিবডি তৈরী হওয়ার (ইমিউনোজেনেসিটি) সে সব নিয়েও কাটাছেঁড়া চলছে রোজ। ফাইজার না মডার্না, কোভিশিল্ড না কোভ্যাক্সিন? কোনটা ভালো সে নিয়েও রয়েছে বিস্তর মত পার্থক্য। চীনের সাইনোভ্যাক আর রাশিয়ার স্পুটনিক-কে নিয়েও আলোচনার শেষ নেই।
মানুষের জীবন নিয়ে যখন প্রশ্ন, আলোচনা তো চলবেই। আর এইসব যখন চলছে সেই মুহূর্তে হৈ হৈ করে সারা বিশ্ব জুড়ে বেড়ে চলেছে করোনার বাড় বাড়ন্ত। পক্ষান্তরে আমাদের দেশের অবস্থা যেন অনেকটাই স্থিতিশীল। অ্যাক্টিভ রোগীর সংখ্যা আর মৃত্যুহার রোজই কিছুটা করে নামছে,আর মুখ থুবড়ে পড়ছে কোভিডের গ্রাফ। অনেক আশার সেই ‘flattening of curve’-এ এসে পৌঁছতে পেরেছি আমরা অবশেষে।
ডাক্তার সহ সমস্ত স্বাস্থ্যকর্মীদের এবং ফ্রন্টলাইন ওয়ার্কারদের আক্ষরিক অর্থেই ‘প্রাণপাত’ পরিশ্রমে সম্ভব হয়েছে এপর্যন্ত পৌঁছানো। কত যে প্রাণ যাবে আর যাচ্ছে আমাদের সকলের!
এবং অবশ্যই এর পেছনে রয়েছে রাজনৈতিক দলগুলো এবং সমগ্র দেশবাসীর আন্তরিক প্রচেষ্টা।
কিন্তু উন্নত বিশ্বে বিশেষত আমেরিকা এবং ইউরোপের দেশগুলিতে মিউটেটেড ভাইরাস বা অন্য যেকোনো কারণেই হোক সেকেন্ড ওয়েভ শুরু হয়ে গেছে মারাত্মক ভাবে। সেখানে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে রোগীর সংখ্যা এবং মৃত্যুর হার। সাবধানতা অবলম্বন না করে চললে যে কোন মুহুর্তে আমাদের দেশেও এসে পৌঁছতে পারে সেই তরঙ্গের অভিঘাত। আর ঠিক এমনই মাহেন্দ্রক্ষণে ভ্যাকসিন roll-out শুরু হচ্ছে আমাদের দেশে।
চিকিৎসাশাস্ত্রে কোন কিছুকেই শেষ কথা বলা যায় না। যে কোনো ওষুধের প্রয়োগ থেকেই সাইড-এফেক্ট হতে পারে। যার সম্ভাবনা গড়ে পাঁচ শতাংশ হলেও, যে রোগীর শরীরে তা ঘটছে তার ক্ষেত্রে সেটা শতকরা একশ ভাগ। কিন্তু সেই যুক্তি মানলে কোন ওষুধই তো কাউকে দেওয়া সম্ভব নয়।তাই না!
ভ্যাকসিনও ঠিক সেইরকম একটি ওষুধ, যার পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়া থাকবে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত বেশিরভাগ মানুষের ক্ষেত্রেই তা পাত্তা দেওয়ার মত স্তরে এসে পৌঁছবে না। মনে রাখতে হবে কোভ্যাক্সিনের থার্ড ফেজ ট্রায়ালেও এখনো পর্যন্ত সাংঘাতিক সাইড এফেক্টের কোন খবর নেই।
আর কোভিশিল্ড শেষ করে ফেলেছে থার্ড ফেজ ট্রায়াল,বাজে খবর ছাড়াই। আর এগুলি ছাড়াও ভ্যাকসিনের সাপ্লাই লাইনে সব মিলিয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে প্রায় গোটা পঞ্চাশ ভ্যাকসিন। সব কটাই পরীক্ষানিরীক্ষা এবং উৎপাদনের বিভিন্ন স্তরে অবস্থান করছে। বাজারে এসে পড়া শুধু সময়ের অপেক্ষা।
তবে ভ্যাকসিন দেওয়ার পরে অ্যান্টিবডি রেসপন্সের অনেক রকম খবর আসছে। কারো ক্ষেত্রে সেটা সত্তর হলে, অন্য কারো ক্ষেত্রে তা নব্বই শতাংশের মতো। তবে আমার মনে হয় এইগুলি খুবই প্রাথমিক ধারণা, অনেক মানুষের উপর প্রয়োগ না হলে এখনই পরিষ্কারভাবে বলা যাবে না শেষ কথা।
যাই হোক না কেন, উন্নত দেশগুলিতে চলা মহামারীর এই সেকেন্ড ওয়েভ যে আমাদের দেশেও এসে পৌঁছতে পারে, সেটা আমাদের সব সময় মাথায় রাখতে হবে। প্রথম ওয়েভের যে ‘এক্স ফ্যাক্টর’ আমাদের দেশ তথা গরীব এবং অনুন্নত দেশগুলোতে মৃত্যুর হার অনেক কম রেখেছে, পরবর্তী ওয়েভে যে সেটা কাজ করবেই সে কথা হলফ করে বলা যায় না এখনই । তাই এই ভ্যাকসিনের সঠিক প্রয়োগ আমাদের দেশের হার্ড ইমিউনিটিকে আরো অনেকটাই বাড়িয়ে দিতে পারবে বলে মনে করা হচ্ছে। ভাইরাসের বিরুদ্ধে নিরন্তর চালিয়ে যাওয়া লড়াইটাও সহজ হয়ে উঠবে তখন।
তাই আমার বিশ্বাস, কাল থেকে শুরু হতে চলা এই মাস ভ্যাকসিনেশন প্রোগ্রামে অংশগ্রহণ করতে হবে সকলকেই। যার নম্বর যখন আসবে,তখনই। হেলথকেয়ার ওয়ার্কার, ফ্রন্টলাইন ওয়ার্কার থেকে সাধারণ মানুষ,সবাইকে। সকলের অ্যান্টিবডি দিয়ে জোরালো হবে দেশের ডিফেন্স। একসাথে আমরা সবাই রুখে দিতে পারব সেকেন্ড ওয়েভকে। ভেঙে পড়া অর্থনীতির অভিমুখকে ঘুরিয়ে দিতে পারবো সঠিক দিকে।
আমাদের সবার রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি ভিন্ন হতে পারে এবং গণতন্ত্রে সেটাই স্বাভাবিক। তবে অন্তত এই ক্ষেত্রে আমি দেশের প্রধানমন্ত্রী এবং রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীদের সাধুবাদ না জানিয়ে পারছি না। ভ্যাকসিন প্রয়োগের সিদ্ধান্ত নেওয়া এবং সঠিক ভাবে তা দেশের চতুর্দিকে পৌঁছে দিতে পারার জন্য।
১৩০ কোটি মানুষের তৃতীয় বিশ্বের একটি দেশ মহামারীর বিরুদ্ধে শেষ লড়াইয়ের ময়দানে নামতে চলেছে, আগামীকাল সকাল থেকে। এটাই কি আমাদের অন্তিম লড়াই হতে চলেছে কোভিড ভাইরাসের বিরুদ্ধে? দ্য এন্ড গেম? সময়,একমাত্র সময়ই উত্তর দিতে পারবে সে প্রশ্নের।
জয় হিন্দ।
Superb writting.just perfect for the present scenario. Will definitely increase the level of confidence and hope who all are confused.All the best.