আত্মহত্যা আর আত্মহত্যার চেষ্টা করা- একই বিষয়ের দু পিঠ। কারণ দুই ক্ষেত্রেই মানসিক অবস্থা চরম পর্যায়ে পৌছলে কেউ এমন সিদ্ধান্ত নেয়। কিন্তু সমস্যা হল অন্যদের কাছে এই দুই পরিস্থিতি মেনে নেওয়ার ক্ষেত্রে আকাশপাতাল তফাৎ। প্রথম ক্ষেত্রে তাঁদের যে মানসিকতা দেখা যায়, দ্বিতীয় ক্ষেত্রে একদম তাঁর বিপরীত।
এক অভিনেতার মৃত্যুর পর সোশ্যাল মিডিয়ায় একরকম ঝড় বয়ে গেছিল। কে বা আগে ফোন (নম্বর) করিবেক দান… যে নিজের বাড়ি কোথায় পরিষ্কার করে বলতে চায় না, সেও ফোন নম্বর শেয়ার করছে কারও মন খারাপ হলে যেন তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করে। পাশে থাকার আশ্বাস দেয় অনেকেই। কিন্তু সত্যি করে মন খারাপ হলে কাউকে কি মন খুলে বলা যায়? পৃথিবীতে যত আত্মহত্যার ঘটনা ঘটেছে তাঁদের কাছের কেউ ছিল না ভাবাটা বোধ হয় একেবারেই অযৌক্তিক। মন খুলে কারও সঙ্গে কথা বলতে যে মনের জোর দরকার তা হারিয়ে গেলেই কেউ এমন ভয়ানক রাস্তা বেছে নিতে পারে।
আসলে মন খারাপ জিনিষটা নিজেকে কেমন একটা গর্তের মধ্যে ঢুকিয়ে দেয়। কাউকে প্রাণপণে পাশে থাকার জন্য ডাকছি, কিন্তু মুখ দিয়ে কোন আওয়াজ বেরোচ্ছে না। ডুবন্ত মানুষ খড়কুটো ধরে বাঁচার চেষ্টা করে, কিন্তু যে মন খারাপে ডুবছে,তার যেন তলিয়ে যাওয়াতেই আনন্দ…এটাই হয়তো ‘অসুখ’! আবার কখনো মনে হয়-যাকে পাশে চাইছি,সে সত্যিই আমাকে বুঝবে তো!না’কি কিছু না বুঝতে চেয়ে বা না বুঝেই বলে দেবে-‘ও কিছু না’। তাই চাইলেও কাউকে ডাকা হয়ে ওঠে না।
এক প্রতিবেশী অবসাদের তলানিতে পৌঁছে মারাত্মক অসুস্থ হয়ে পড়েন। তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করার সময় দেখেছি কেউ আন্তরিক ছিল না তাঁর প্রতি। বরং নানা কটূক্তি করেছে আড়ালে আবডালে। অনেকে তাঁর সঙ্গে হাসপাতালে যায়নি কাজের ছুতোয়। কিছু ভাল মন্দ হয়ে গেলে যদি থানা পুলিশ হয়! অনেক সময়েই দেখা গেছে পাড়াতে কেউ আত্মহত্যার চেষ্টা করেছে শুনলেই তাকে নিয়ে খিল্লি করা হয়- পরের বার শক্ত দড়ি কিনিস, ব্লেডে কি ধার ছিল না, কেরোসিন নয়, গায়ে জল ঢেলে ভয় দেখাচ্ছিল। সেই শ্রেণীর লোকেরাই আবার কেউ আত্মহত্যা করলে সহানুভূতির বন্যা বইয়ে দেয়। কাজেই কারও পাশে থাকার জন্য ফোন নম্বর দেওয়ার দরকার নেই। পাশে থাকার জন্য বিজ্ঞাপন দেওয়ার দরকার হয় না, দরকার আন্তরিকতার।