লোকজন করোনাকে যথেষ্ট ভয়ের চোখে দেখছেন। জ্বর, সর্দি-কাশির রোগীকে করোনা পরীক্ষা করতে বললেই জবাব দিচ্ছেন, ‘আমার ওসব হয়নি ডাক্তারবাবু। পরশু বৃষ্টিতে ভিজেছিলাম, তারপরেই জ্বর এসেছে। বৃষ্টিতে ভিজলে যে সাধারণ জ্বর-জারি হয়, তাই হয়েছে।’
মুশকিল হলো- বৃষ্টিতে ভিজে জ্বর, ফ্রিজের জল খেয়ে জ্বর, রৌদ্রে ঘেমে নেয়ে জ্বর, প্রায় সব ক্ষেত্রেই পরীক্ষা করলে করোনা ধরা পড়ছে।
আজ একজন রোগী এলেন রীতিমত হাঁপাচ্ছেন। বললাম, ‘আপনার হাঁপানি রোগ ছিল নাকি?’
‘হাঁপানি নয় ডাক্তারবাবু, আমার এজমা আছে।’
কথা বাড়ালাম না। বাঙালি রোগীদের মাথা ঘোরা রোগ থাকে না, ভার্টিগো রোগ থাকে। মাথা ব্যথা বলে কোনও রোগ হয় না, সাইনাস বলে একটি রোগ হয়। এই সাইনাস জিনিসটি বেশ গন্ডগোলের। রোগী দাবি করেন, ছোটবেলা থেকেই তাঁর একটি সাইনাস আছে।
প্রথমদিকে বোঝানোর চেষ্টা করতাম, সাইনাস আমাদের সকলেরই আছ। একটি নয়, একাধিক সাইনাস আছে। এখন আর বোঝানোর চেষ্টা করি ন। যত বয়স বাড়ছে, তত হাল ছেড়ে দিচ্ছি।
ইদানিং লোকের ছুঁচিবাই নিয়েও বিশেষ প্রতিবাদ করি না। স্যানিটাইজার নিয়ে লোকজনের বাড়াবাড়ি দেখার মতো। হাতে করে ছোট্ট একটা স্যানিটাইজারের বোতল নিয়ে ঘুরছেন। যেখানে পারছেন দুফোঁটা স্যানিটাইজার ছড়িয়ে দিচ্ছেন। চেয়ারে বসার আগে কয়েক ফোঁটা স্যানিটাইজার ছড়িয়ে দিলেন। স্যানিটাইজার না তো- যেন গঙ্গার জল। দু- চার ফোঁটা ছড়িয়ে দিলে পুরো চেয়ারটাই পবিত্র হয়ে যাবে।
একমাত্র প্রতিবাদ করি কেউ যদি মাস্ক না পরেন, অথবা মাস্ক চিবুকে ঝুলিয়ে রাখেন। কারণ এটা নিশ্চিত ভাবে বুঝতে পারছি, করোনা ঠেকাতে মাস্কের বড়সড় ভূমিকা আছে। প্রতিদিন গড়ে কুড়ি- পঁচিশ জন করোনা রোগীর সংস্পর্শে আসছি। ডবল মাস্ক পরা ছাড়া আর বিশেষ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা নিই না। রোগী দেখার একটাই শর্ত, রোগী এবং বাড়ির লোককে মাস্ক পরতেই হবে। কাপড়ের মাস্ক হলেও আপত্তি নেই। কিন্তু রুমাল, শাড়ির আঁচল, ওড়না- এসব চলবে না।
তাই নিয়েও মাঝে মধ্যেই ঝামেলা লাগছে। কয়েকজন চির প্রতিবাদী মানুষ বলেছেন, ‘স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন, কিছু একটা দিয়ে মুখ ঢাকলেই হবে।’
আমি হাসিমুখে বলছি, ‘যে যাই বলুক, মাস্ক ছাড়া আমি রোগী দেখব না।’
এই মাস্কের জোরেই আমাদের পরিবার এখনো টিকে আছ। বাড়িতে তিনজন চিকিৎসক, দুইজন নার্সিং স্টাফ। কিন্তু এখনো আমাদের বাড়িতে করোনা ঢুকতে পারেনি। হয়তো কিছুদিনের মধ্যেই ঢুকবে। কিন্তু এতদিন যে ঠেকিয়ে রাখা গেছে, সেটাও কম কি?
তবে অনেক মানুষেরই এই সচেতনতাটুকুও নেই। রাস্তাঘাটে অনেকের মুখেই মাস্ক নেই। থাকলেও গলা থেকে ঝুলছে। অনেককেই দেখছি মাস্ক সরিয়ে বারবার মুখে হাত দিচ্ছেন, নাক খুঁটছেন। এমনি সময় মাস্ক পরছেন, কিন্তু হাঁচি-কাশি দেওয়ার সময় মাস্ক নামিয়ে নিচ্ছেন।
চারদিকে কি বিপুল অপচয়। রাস্তাঘাট, বাড়ি- ঘর স্যানিটাইজেশনের নামে জল, অর্থ ও লোকবলের অপচয় হচ্ছে। মাঝে মধ্যে আকস্মিক লকডাউন করে করোনাকে কতদূর ঠেকানো যাবে, তা নিয়েও যথেষ্ট সন্দেহ আছে। বরঞ্চ স্বাভাবিক জীবনে যত দ্রুত সম্ভব ফেরার চেষ্টা করা উচিত। মানুষদের কিভাবে দেওয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে, সেটা প্রতিদিনই দেখতে পাচ্ছি। এই পরিস্থিতিতে স্বাভাবিক জীবনে ফেরার একমাত্র হাতিয়ার হতে পারে মাস্ক।
একটা থ্রি লেয়ার মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক করা গেলে মহামারী ছড়ানোর গতিকে আমরা অনেক শ্লথ করে দিতে পারব। কিন্তু সেটুকু করার বদলে বাদবাকি যাবতীয় কিছু করার চেষ্টা করা হচ্ছে। লোকজন করোনার ভয়ে স্বাস্থ্যকর্মীকে আবাসন ছাড়া করছেন। আর নিজে মাস্ক গলায় ঝুলিয়ে ভিড়ের মধ্যে চা- সিগারেট খাচ্ছেন।
I don’t know you but your writing is true at present..nice sir