খুপরিতে বসে রোগী দেখছিলাম। করোনা মহামারীর ভয়ে সুগার, প্রেশারের ধারাবাহিক রোগীরা আসা প্রায় বন্ধ করেছেন। অধিকাংশই জ্বর, সর্দি কাশির রোগী। তাছাড়া দু-চারজন এমারজেন্সি রোগী।
রোগীরা শুধু জ্বর, সর্দিকাশিতেই ভুগছেন না। তার চেয়ে বেশি ভুগছেন আতংকে। সকলেই প্রায় বলছেন, ‘ডাক্তার বাবু, করোনার জন্য রক্ত পরীক্ষা করলে হয় না!’
আমি ঢাল তলোয়ার ছাড়া নিধিরাম সর্দার তাঁদের ওষুধ দিচ্ছি কম, সাহস দেওয়ার চেষ্টা করছি বেশি।
সবচেয়ে খারাপ অবস্থা দিন আনা দিন খাওয়া মানুষেদের। অনেকেরই রুটি- রোজগার বন্ধ।
স্থানীয় শপিং মলের সামনে ফুচকা বিক্রি করে এক যুবক। তিনি বলছিলেন, ‘ডাক্তার বাবু, মল বন্ধ থাকায় গত সাতদিন বেচা- কেনা একদম তলানিতে। শেষ তিনদিন ধরে বিচ্ছিরি কাশি হওয়ার পর দোকানও খুলতে পারছি না। মা আর বোনকে নিয়ে কি করে সংসার চালাবো জানিনা’।
আরেকজন বললেন, ‘ডাক্তার বাবু, টোটো চালাই। দিন আনি দিন খাই। প্যাসেঞ্জার প্রায় নেই। এদিকে লোকজন চাল-ডাল কিনে বাড়িতে মজুত করতে শুরু করেছে। আজ চালের দাম দু টাকা বেড়ে গেছে। একবেলা ভাত খাচ্ছি। জানি না কতদিন খেতে পারব’।
কথায় আছে ‘আপনি বাঁচলে বাপের নাম’। অনেকেই লক ডাউনের ভয়ে খাদ্য দ্রব্য বাড়িতে মজুত করতে শুরু করেছেন। ফেসবুকেও দেখলাম অনেকেই পোস্ট করেছেন বেশি পরিমাণে জিনিসপত্র মজুত করে রাখার জন্য। কিন্তু তাই করতে গিয়ে নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসের দাম এক শ্রেণীর মানুষের নাগালের বাইরে না চলে যায়।
আমার সমস্যা সেই তুলনায় সামান্য। সারাদিন রোগী দেখে ঘরে ফিরে দুই মেয়ের সাথে খেতাম। দু-জনের মাঝখানে শুয়ে গল্প শোনাতাম।
সারাদিন জ্বরের রোগী দেখে বাড়ি ফেরার পর আমি আপাতত কোয়ারান্টাইনে। একলা ঘরে একলা খাটে থাকছি। মেয়েদের সাথে পাঁচ ফুট দূর থেকে কথা বলছি।
কিন্তু এই একলা ঘর আমার দেশ না। আমি বিশ্বাস করি একদিন মহামারী পরাজিত হবে। আমি আবার দুই মেয়ের মাঝখানে শুয়ে রূপকথার গল্প শোনাতে শোনাতে ঘুমিয়ে পড়ব। মেয়েরা আধো ঘুম ভাঙিয়ে বলবে, ‘বাবা, ঘুমাচ্ছো কেন! তারপর কি হল বলো’।
আমি বিশ্বাস করি সেই দিন আমরা সকলেই দেখতে পারব। আমরা সবাই। এই মহামারী আমাদের আরো ভালো মানুষ করে তুলবে।
বাহ্ বেশ।