শুভজিত শিট আমার ভাই। কলেজে আমার চেয়ে ৩২বছরের ছোট। একই ছাত্র সংগঠন এম সি ডি এস এ করার সূত্রে পরিচয়। খুব ঘনিষ্ঠতা কি ছিল? যদিও শুভজিত বলত আমার কাছ থেকে ও নাকি অনেক কিছু শিখেছে। প্র্যাকটিস করার সময় মাঝে মাঝে বিভিন্ন রোগীর ম্যানেজমেন্ট নিয়ে প্রশ্ন করতো, এটুকুই কেবল!
মাস ছয়েক আগে আমার পোস্টাল ঠিকানা চেয়ে পাঠালো উপহার পাঠাবে! গুরুদক্ষিণা! বারণ করায় ঝুলোঝুলি! শেষ অবধি একটা স্টেথোস্কোপ, একটা ওয়ালেট আর একটা ছুরি লাভ হল। সেই স্টেথোস্কোপেই রোগী দেখি চেঙ্গাইলে। লাল রঙা, আমার প্রিয় রঙ লাল।
শুভজিতের মানসিক সমস্যা ছিল। বিভিন্ন সময় বিভিন্ন।মনোরোগবিদের সাহায্য নিয়েছে, কখনও ওষুধ খেয়েছে, কখনও খায়নি। যখন ওষুধ খেয়েছে ভালো থেকেছে, ভালো আছি ভেবে ওষুধ খাওয়া বন্ধ করায় খারাপ থেকেছে আবার…
এসব নিয়েই এম বি বি এস, সর্ব ভারতীয় নিট পিজি ক্র্যাক করা, এম ডি ফিজিওলজিতে। এম ই এস-এ শিক্ষকতার জন্য আবেদন করেও ভাগ্যে শিকে ছেঁড়েনি। সিনিয়র রেসিডেন্সি করতে গিয়েছিল দিল্লির সেই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যেখানে তার এম ডি করা।
পড়াশুনার মাঝে মাঝে কাজ করেছে সুন্দরবন শ্রমজীবী হাসপাতালে, বন্ধ চা বাগানে মেডিক্যাল ক্যাম্প করতে উত্তরবঙ্গ গেছে রাহুল দেব বর্মনের সঙ্গে।
দিল্লি থেকে উদ্বেগের সঙ্গে ফোন করেছিল– দাদা, তিন বছর পর সিনিয়র রেসিডেন্সি শেষে আবারতো একই অবস্থা! একটা চাকরি যোগাড় করে দেবে তখন?
আশ্বাস দিয়েছিলাম- বেসরকারি কিছু মেডিক্যাল কলেজের ম্যানেজমেন্টে বন্ধুরা আছে, কিছু না কিছু ব্যবস্থাতো অবশ্যই হবে।
চাকরি যোগাড় করার দরকার হবে না আর। আত্মঘাতী হয়েছে আমার অনুজ।
আমাদের কাছে থেকে গেল স্বাস্থ্যের বৃত্তে পত্রিকায়, ডক্টরস ডায়ালগে ওর লেখা। আমার মোবাইলে ওর ফোন নম্বর। আর লাল স্টেথোস্কোপ…
পড়লাম। কোন মন্তব্য করার নেই।
বুঝি না ডাক্তার হয়েও কেন চিকিৎসা বন্ধ করল। সত্যিওই দূর্ভাগ্যজনক।
ভয়ংকর। কিন্তু কিভাবে?
মর্মান্তিক
খুব খুব দুঃখের! ওকে বুঝে উঠতে পারার আগেই চলে গেল।