সাধারণ লোক যতই গ্যাসের সমস্যার কথা বলুক না কেন ডাক্তারি শাস্ত্রে গ্যাস বলে কিছু নেই। যা আছে তাহল অ্যাসিডিটি। এই সমস্যা বাঙালির আট থেকে আশির। আর সন্তানসম্ভবা অবস্থায়ও এর হাত থেকে রেহাই মেলে না। কীভাবে এই সমস্যাকে জব্দ করবেন, জেনে নিন।
গর্ভাবস্থায় মেয়েদের বেশ কিছু শারীরিক সমস্যা হয়। যেমন অ্যানিমিয়া বা রক্তাল্পতা, বমি বমি ভাব বা বমি হওয়া। তবে সবচেয়ে অস্বস্তিকর হয়ে দাঁড়ায় অ্যাসিডিটির সমস্যা। কখনও বমি ভাব হয় তো কখনও ঢেঁকুর ওঠা, কখনও গলা জ্বালা করা, কাশি বা বুকে ব্যথা। আসলে এই সময় মেয়েদের হরমোনগত ও শারীরিক পরিবর্তনের জন্যই এ ধরনের সমস্যা হয়।
প্রেগনেন্সির সময় মেয়েদের শরীরে প্রোজেস্টেরন হরমোন বেড়ে যায়। প্রোজেস্টেরন বেশি হওয়ার জন্য পাকস্থলী ও খাদ্যনালীর সংকোচন হওয়ার ক্ষমতা কিছুটা কমে যায়, খাদ্যনালীর নীচের অংশের প্রেশার কমে যাওয়ায় হজমের সমস্যা দেখা যায়। এই সব সমস্যার জন্য অনেকে ঠিকমতো খেতে ও ঘুমাতে পারে না।
এর সঙ্গে খাবারের অনিয়ম হলে বা তেলমশলা যুক্ত খাবার বেশি খেলে এই সমস্যা আরও বেড়ে যায়। কারও যদি একাধিক শিশু গর্ভে থাকে তাহলে সমস্যা আরও বেড়ে যায়। এছাড়াও অতিরিক্ত কফি, চা বা ধূমপান করা ও খাবার খাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে শুয়ে পড়ার জন্যও এ সব সমস্যা হতে পারে।
সন্তানসম্ভবা অবস্থায় অনেকেই তেমন হাঁটাচলা করেন না, শুয়েবসে সময় কাটান। কায়িক শ্রম বা শরীর চর্চা থেকেও বিরত থাকেন বলে গাট মুভমেন্ট বা ক্ষুদ্রান্ত্রের কাজ স্বাভাবিক থাকে না। এজন্য হজমের সমস্যা হয়, অ্যাসিড হয়, পেট পরিষ্কার হয় না।
এছাড়াও বেশ কিছু কারণে অ্যাসিডিটির সমস্যা হতে পারে। যেমন, রাতে ঘুম ঠিকমতো না হওয়া, মানসিক অবসাদ কিংবা কথায় কথায় ব্যথার ওষুধ খাওয়ার কু অভ্যাসের জন্যও অ্যাসিডিটির সমস্যা হতে পারে।
এই সমস্যা থেকে রেহাই পেতে ওষুধ নয়, কিছু নিয়ম মেনে চললেই উপকার পাওয়া যাবে। যেমন
- খাবার ভাল করে চিবিয়ে খাওয়া দরকার। কারণ চিবিয়ে খেলে খাবারের সঙ্গে লালারস ভালো করে মিশে যায়। ফলে হজম হতে সুবিধা হয়।
- খুব তাড়াতাড়ি নয়, ধীরে ধীরে খান। কারণ তাড়াহুড়ো করে খেলে খাবারের সঙ্গে কিছু হাওয়া আমাদের পেটে ঢোকে। ফলে পেট ভরে যাওয়ার অনুভূতি হয়।
- বেশি করে জল খান। জল খেতে অসুবিধা হলে তরল খাবার যেমন ফলের রস, স্যুপ বা ডাবের জল খেতে পারেন। তবে সফট ড্রিংক্স খাওয়া চলবে না। এতে সমস্যা আরও বেড়ে যেতে পারে।
- বারে বারে অল্প করে খাবার খান। বেশি খাবার একবারে হজম করতে পাকস্থলীর অসুবিধা হয়। তাই হজমের গন্ডগোল হলে অল্প পরিমাণ খাবার খাওয়াই ভাল।
- একেবারে শুয়েবসে না থেকে ঘরের মধ্যে হাঁটাচলা করুন। বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিয়ে একটু আধটু হালকা ব্যায়ামও করতে পারেন। এতেও হজমের সমস্যা থেকে দূরে থাকতে পারবেন।