অনেক চেষ্টা করেছিলাম, নেগেটিভ থাকতে, মা কালীর দিব্যি বলছি, কিন্তু পজিটিভ হয়ে গেলাম। আর একবার যখন পজিটিভ হয়ে গেছি তখন আমি একা কেন পজিটিভ থাকবো, এটা এখন সবার মধ্যে ছড়াবো। আমি খাঁটি বাঙালি, নিজের নাক কেটে অপরের যাত্রা ভঙ্গ করা আমার জন্মগত অধিকার। পড়ে নিন কী করে আপনি পজিটিভ হবেন আর অন্যকে পজিটিভ করবেন। আর সরকারের কাছে বেশি কিট নেই, আপনাকে ধরতেও পারবে না।
অনেকেই আছেন, যারা এমনিতেও দিনের পর দিন হয়তো ঘরের বাইরে বেরোন না। কিন্তু কোভিড-১৯ বা করোনার জন্য লকডাউন হওয়ার পর তারাও মানসিকভাবে কিছুটা দুর্বল হয়ে পড়ছেন। আর যারা রোজকার কাজে বেরতেন তাদের অবস্থা তো আরও কাহিল। সময়েই যেন কাটতে চাইছে না। তার ওপর আছে বিভিন্ন বিভ্রান্তিকর খবর। ‘লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে করোনা আক্রান্ত্রের সংখ্যা’ – পাঁচ মিনিট অন্তর এই খবর শুনলে করোনার আগে করোনারি আর্টারি বন্ধ হয়ে আপনি পটল তুলবেন। তখন ফ্রিজে জমানো খাবারের কী হবে ! এই সব কারণে কিছু আবেগ ও আচরণগত সমস্যা হচ্ছে বা হতে পারে। যেমন –
• ভবিষ্যতের কথা ভেবে উদ্বেগ ও দুশ্চিন্তা।
• হাঁচি, কাশি বা গলা ব্যথা হলেই অসুখের দুর্ভাবনা মাথায় চেপে বসা।
• আগামী দিনে কী হবে সে আশংকায় প্রয়োজনের অতিরিক্ত জিনিস মজুতের চিন্তা।
• সোশ্যাল মিডিয়া ও নানারকম খবরের প্রতি বেশি মন দেওয়া।
• আরও বেশি করে মুখ বা নাকে হাত দেওয়া।
ভয় নেই আপনার দলে আমরাও আছি। তাই নো নেগেটিভ চিন্তা, শুধু পজিটিভ ভাববো।
এইভাবে বাজারে গেলে আর চায়ের দোকানে গুলতানি মারলে দুদিন বাদে অন্য রকম ভাবতে হবে।
যাঁদের সংক্রমণ হয়েছে তাদের সমস্যা হল-
• অসুখের ভয় ও আইসোলেশন এড়ানোর জন্য রোগ লুকিয়ে রাখা।
• অসুখ হওয়ার জন্য নিজেকে দোষী ভাবা।
• নিজের অসুখ অন্যদের মধ্যে ছড়ানোর জন্য পাপবোধ। সবার যদিও হয়না।
• ভবিষ্যতে কী জটিলতা দেখা দিতে পারে তা নিয়ে উদ্বেগ ও প্যানিক।
• পরিবারের অন্যদের জন্য অহেতুক দুশ্চিন্তা।
আর আপনি যদি না ঘর কা না ঘাট কা হন, তাহলে
সন্দেহভাজন রোগীদের সমস্যা-
• আলাদা থাকার জন্য একঘেয়েমি ও একাকীত্ব
• পরিবারের সদস্যদের স্বাস্থ্য নিয়ে অহেতুক চিন্তা
• অসুখ বহন করা বা রোগে আক্রান্ত হওয়ার জন্য নিজেকে অপরাধী ভাবা।
• নিজের বা পরিবারের কাজ করতে না পারার জন্য অপরাধবোধ।
এই যে আমি এত বাতেলা মারছি, আমারও ভয় আছে। আমাদের তো আবার রেনকোট পরে হা ডু ডু খেলতে হবে।
আমাদের ভয়ের কারণ
- বেশি পরিমাণ রোগী ও যন্ত্রপাতির অপ্রতুলতা নিয়ে কীভাবে কাজ করবেন তা নিয়ে উদ্বেগ।
- নিজের ভূমিকা ও কর্মদক্ষতা নিয়ে উদ্বেগ।
- দীর্ঘ সময় একনাগাড়ে কাজ করা ও জটিল রোগীদের দেখাশোনা করার জন্য নিজের যত্ন না করতে পারা থেকে হতাশা।
- নিজেকে দোষারোপ করা।
- যে কোনও সময়ে কিছু খারাপ ঘটতে পারে সে আশঙ্কা করা।
তাই আমিও পজিটিভ হয়ে গেলাম।
এজন্য যা যা করণীয়
• সবরকম জল্পনা ও গুজব এড়িয়ে যাওয়া।
• ভালো করে বারবার সাবান দিয়ে হাত ধোয়া ও সামাজিক ভাবে অন্যদের সঙ্গে মেলামেশা না করা।
• নিজেকে সক্রিয় রাখা।
• ব্যালান্সড ডায়েট এর দিকে নজর দেওয়া। কম খেলে কেউ মরে না, খরচ ও কমে।
• শিশু ও পড়শীদের কাছে নিজেকে একজন রোল মডেল হিসাবে তুলে ধরা। সেলিব্রিটি দের মতো নয়। যাদের সিনেমা আর খেলা নিয়ে মাতামাতি করলেন তাদের কি আর এখন দেখতে পাচ্ছেন?
• গুজবে কান না দেওয়া ও তা অন্যদের সঙ্গে শেয়ার না করা।
• কাজ ও বিশ্রামের সামঞ্জস্য রেখে চলা।
• সহানুভূতির সঙ্গে অন্যর সঙ্গে কোনও বিষয় নিয়ে আলোচনা করা।
• পরিবারে বয়স্ক ব্যক্তিদের বেশি যত্ন নেওয়া।
• নিজের হবি ও রোজকার রুটিনকে নতুন রূপ দেওয়া।
• বন্ধু-বান্ধব, আত্মীয়দের সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ রাখা।
কী, পড়তে পড়তে পজিটিভ হয়ে গেলেন তো! এবার খাঁটি বাঙালির মতো অন্যকেও পজিটিভ করে দিন। জিত আমাদের।