অটিজম!!! এই নামটা এখন হয়তো খানিক পরিচিত, তবে কিছুদিন আগে পর্যন্ত আমাদের পরিচিত শব্দের তালিকা এই শব্দটি ছিল না। ধীরে ধীরে পরিচিত হচ্ছে কারণ অটিজমের ঘটনা বিশ্বজুড়ে ক্রমবর্ধমান। বর্তমানে সারা বিশ্বে প্রতি হাজার জন শিশুর মধ্যে গড়ে প্রায় কুড়ি জনের অটিজমের লক্ষণ দেখা যায়।
অটিজম কি?
অটিজম একটি নিউরো-ডেভেলপমেন্টাল জটিলতা যেখানে একজন শিশুর তার বাইরের জগতের সাথে যোগাযোগের ধরনটা একটু ভিন্ন হয় বা সহজ করে বললে বাইরের জগতের সাথে তার আদান-প্রদানের আগ্রহ কম হয় কিন্তু তার নিজের জগৎ সম্পর্কে সে অত্যন্ত সচেতন ও যত্নশীল হয়। সেটাই তার ভালোলাগার, ভালোথাকার উৎস হয়। সে নিজের জগতে একটা অদ্ভুত সুন্দর দুনিয়া গুনে ফেলে এবং তাতেই ঘর বানাতে থাকে – সেখানেই আমাদের মতো মানুষদের আপত্তি থাকে। আমরা এই জগতটাকে অস্বীকার করে তাদেরকে মানসিক রোগীর তকমা লাগিয়ে দিই।
কিন্তু বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অটিজম সেই অর্থে কোন শারীরিক অসুস্থতা না, জ্বর সর্দি কাশির মত এটা রোগ না, এটি একটি মানসিক অবস্থা মাত্র, যেখানে শিশুটি বাইরের সমাজে নিজেকে মানিয়ে নিতে না পারার ক্ষোভ থেকে ছটফটে হয়ে ওঠে অথবা বাকি সমাজের থেকে নিজেকে গুটিয়ে নেয়।আর সেখানেই শিশুটির পরিবারের কাছে একটি চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়ায় শিশুটিকে কিছু শেখানো।
এই চ্যালেঞ্জকেই রীতিমতো বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়ে চলেছেন সুমন ভট্টাচার্য ও রণেন ভট্টাচার্য। আজ ২রা এপ্রিল বিশ্ব অটিজম দিবসে আমরা জানবো সুমন ভট্টাচার্য ও রণেন ভট্টাচার্যের সন্তান বিনায়ক রুকুর কথা। রুকু ১৭ বছরের একজন অটিজম বিশিষ্ট বালক যে তার শিল্প ভাবনার মাধম্যে তাক লাগিয়ে দিয়েছে সকলকে।
বাকি অটিস্টিক বাচ্চাদের মতোই রুকুরও এক নিজস্ব জগৎ আছে, সে জগতে তার নিজের একটা আয়না আছে, যে আয়না দিয়ে সে গোটা জগতকে তার চেনা জগতের ছবি দেখায় যা দেখে আমি আপনি মুগ্ধ হতে বাধ্য। তার প্রতিদিনের জীবনে ঘটে চলা ঘটনা যা তাকে নাড়া দেয়, যা তাকে কিছু ভাবতে শেখায় সেগুলোকেই সে ছবির মাধ্যমে তার মতো করে ফুটিয়ে তোলে, প্রতিটি ছবি যেন এক একটি বাস্তব গল্প।
আসলে তার জীবনের সাথে জড়িত থাকা ক্ষুদ্রাতি-ক্ষুদ্র বস্তুও তার কাছে ভীষণ জীবন্ত, তা সে সাইকেল হোক বা বাইনোকুলার, গ্যালাক্সি হোক বা ঝিঝিঁপোকা, তার জগতের প্রতিটি জিনিসই ভীষণরকম প্রাণবন্ত, তাই রুকু পারে তার সৃষ্টিগুলোকে সেইভাবে প্রাণ দিতে। রুকুর মায়ের কথায়, রুকুর লেখা বা আঁকা তার কথার থেকে অনেক শক্তিশালী। হবে নাই না কেন? তাতে যে ক্রমাগত শক্তি জুগিয়ে গেছেন রুকুর বাবা মা। রুকুর মা জানালেন, তার কলম ধরাও রুকুর জন্যই। আর সেই যুগলবন্দীতে ঘটেছে চমৎকার – মায়ের লেখা ও সন্তানের সৃষ্টি দিয়ে এবছর কলকাতা বইমেলায় প্রকাশ পেয়েছে রুকুর বই – “রুকুর গ্যালাক্সি”, রুকুর হাতে আঁকা ছবি ও লেখার সাথে তার মায়ের বর্ণনা।
বইটির প্রচ্ছদ অলঙ্করনও রুকুরই করা। ৫০ পৃষ্ঠার বইটি আসলে একটা মস্ত বড় গ্যালাক্সি যেখানে পাঠক হারিয়ে যেতে বাধ্য। যেখানে আপনি কখনও খুঁজে পাবেন এক বৃষ্টিভেজা রঙিন দিন, আবার কখনও আপনি টুক করে চলে যাবেন টেমসের ধারে। ভোরের কুয়াশা যে আইসক্রিমের মত হতে পারে এবং তা যে পাউডার – জল রং দিয়ে ফুটিয়ে তোলা যায় তা আদতে অনেক বড় শিল্পী মনের পরিচয়। রুকুর গ্যালাক্সিতে আপনি সেই মনের সাথে নিজের সংযোগ ঘটাতে পারবেন।
বইটির প্রথম ছবিটি শুরু হচ্ছে কাগজ কেটে বানানো এক অদ্ভুত সুন্দর কোলাজ দিয়ে যেখানে রুকু লিখছে “… এটা ‘কোলাজ বেড়ানো’ কাগজ কেটে আঠা দিয়ে সাঁটানো। আমার বেড়াতে ভালো লাগে। আমার একা জায়গা ভালো লাগে”। তাই তার গ্যালাক্সিতে তার অবাধ বিচরণ যেখানে আনন্দগুলোও লম্বা লম্বা পা ফেলে চলতে পারে। কখনো সেখানে তারারা ব্ল্যাক টি খায়, কখনো চাঁদ উঠলেই রাত হয়। তার জগতের দিন-রাতের হিসেবে আমাদের সাথে নাই বা মিললো কিন্তু অনুভূতিতে, ভালোবাসাতে সে যে সকল কে হার মানায়। তার প্রিয়জনের ব্যথায় তার হৃদযন্ত্রও স্পন্দিত হয়। রুকু ছবি আঁকে তার দাদুর ইসিজি হওয়ার ঘটনা দেখে।
বইটি প্রকাশনার দায়িত্ব নিয়েছেন গুরুচন্ডা৯ প্রকাশনী। গুরুচন্ডা৯ রুকুর বড়ো প্রিয়, ধন্যবাদ তাদেরকে এত সুন্দর করে বইটিকে উপস্থাপিত করার জন্য। ধন্যবাদ রুকুর মাতা পিতাকে এই বইটি আমাদের পড়ার সুযোগ করে দেওয়ার জন্য, রুকুর মতো একজন শিল্পীর সাথে আমাদের আলাপ করানোর জন্য। আমরা যারা সারাজীবন অন্য মানুষকে নিয়ে ঠাট্টা করে, অন্যকে মানসিক আঘাত দিয়ে চলতে ভালোবাসি, সেইসব দূষিত মনের জন্য বিশ্ব অটিজম দিবসে রুকুর গ্যালাক্সি একটি উপহার হয়ে থাক।
বইটির নাম: রুকুর গ্যালাক্সি
লেখক: বিনায়ক রুকু
প্রকাশনা: গুরুচন্ডা৯
ধন্যবাদ।
How can I get this book want to buy.
Like!! Really appreciate you sharing this blog post.Really thank you! Keep writing.
Thanks so much for the blog post.
I really like and appreciate your blog post.