১. COVID-19 কী?
COVID-19 ভাইরাসের নাম না। রোগটির নাম। COrona VIrus Disease 2019. ফুসফুসে ভাইরাসটির সংক্রমণ হলে এই রোগ হয়।
২. তাহলে ভাইরাসের নামটা কী?
Severe acute respiratory syndrome corona virus 2(SARS-CoV-2).
৩. এটা কী একেবারে নতুন একটা ভাইরাস?
না, করোনা ভাইরাসের বাকি ভাইবোনেরা বহু হাজার বছর ধরে এই পৃথিবীতেই থাকে। তাদের মধ্যে ছয়টি মানুষের শরীরে রোগ বাঁধায়, বাকিরা পশুপাখিদের শরীরে।
এই ভাইরাসটিকে একেবারে নতুন বলা যাবে না। এর জিনের বেশ কিছুটা বাদুড়ে সংক্রমিত একরকমের করোনা ভাইরাসের সাথে মেলে।
৪. করোনা ভাইরাস ছড়ায় কী ভাবে?
ভাইরাসটি প্রথম ছড়ানো শুরু করে চিনে হ্যুয়ান প্রদেশের একটি মাছ আর মাংসের বাজার থেকে। তারপর থেকেই দেখা যায় যে মানুষ থেকে মানুষের মধ্যেও ছড়াচ্ছে। কী ভাবে এইটা হয় বলি-
ক. সংক্রমিত ব্যক্তি হাঁচলে বা কাশলে তার কফে বা লালায় লেগে থাকা ভাইরাস ছড়িয়ে পরে মোটামুটি ৩ ফুটের দূরত্বে থাকা মানুষের মধ্যে।
খ. সংক্রমিত ব্যক্তির সাথে খাবার শেয়ার করলেও এটা হতে পারে। লালার মাধ্যমে ছড়াতে পারে ভাইরাস।
গ. সংক্রমিত পশুর শরীর থেকেও ছড়ায়।
৫. চিন থেকে একটা পার্সেল এসেছে আমার নামে? নেব নাকি নেব না?
বিন্দাস নিয়ে নিন। করোনা ভাইরাসের বাঁচার জন্য যে পরিবেশ লাগে তা মানুষ বা পশুপাখির শরীর ছাড়া পাওয়া যাবে না। তাই এই ভাইরাস বাতাসের সংস্পর্শে এলে কয়েক কয়েক মিনিটের মধ্যেই মরে যায়। ভাল করে রান্না করা পশুপাখির মাংস আর ফ্রোজেন খাবারেও করোনা ভাইরাস থাকার সম্ভাবনা শূন্য।
৬. কী ভাবে তাহলে এই সংক্রমণের হাত থেকে বাঁচব আমি?
ক. সাবান আর জল দিয়ে ভাল করে হাত ধোবেন। ভাল হাত ধোয়া কাকে বলে তা আমরা কেউই জানি না। তার জন্য এই ইউটিউব ভিডিওটি দেখুন-
https://www.youtube.com/watch?v=d914EnpU4Fo
খ. বাড়ির বাইরে থাকলে মাঝে মাঝে অ্যালকোহল বেসড হ্যান্ড স্যানিটাইজার দিয়ে হাত পরিষ্কার করুন। প্রতি আধঘন্টায় বা একঘন্টায় করার দরকার নেই। কারোর সংস্পর্শে এলে বা কোথাও খেতে গেলে খাওয়ার আগে এবং পরে করুন। মুখে এটা লাগাবেন না। যে কোন অ্যালকোহল বেসড স্যানিটাইজার হলেই হবে। মেডিকেটেড বা ক্লোরহেক্সিডিন থাকা স্যানিটাইজার ব্যবহার করার কোন প্রয়োজন নেই।
ময়লা হাতে কিন্তু স্যানিটাইজার কাজ করে না। তখন হাত ধুতেই হবে।
কী ভাবে ব্যবহার করবেন-
https://www.youtube.com/watch?v=B3eq5fLzAOo
গ. বারবার নিজের মুখে, ঠোঁটে,নাকে, চোখে হাত দেবেন না। অনেকেরই এই মূদ্রাদোষ থাকে।
ঘ. যাদের হাঁচি বা কাশি হচ্ছে তাদের থেকে এক মিটার দূরত্ব রাখার চেষ্টা করুন। জানি কাজের জায়গায় এটা অনেক সময়তেই সম্ভব নয়, অশালীনও বটে। কিন্তু সংক্রমণ আটকাতে করতেই হবে এটা।
ঙ. কেউ হাঁচলে বা কাশলে মুখের আর নাকের সামনে হাত দিয়ে করতে বলুন। আপনার নিজের ক্ষেত্রেও তাই করুন। চেষ্টা করুন টিস্যু পেপারে হাঁচতে বা কাশতে। তারপরেই টিস্যুটাকে ফেলে দিন। তারপর নিজের হাত ধুয়ে নিন বা স্যানিটাইজার লাগান। এই অভ্যাসটা তৈরি করতে পারলে ভাইরাসের সংক্রমণ অনেকটাই আটকে দেওয়া যাবে।
চ. কাঁচা মাংসে হাত না দেওয়ার চেষ্টা করুন। এটা মুরগী আর পাঁঠা দুটোর ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য। যারা ভাবছেন মুরগীর দাম কমেছে এবারে গুছিয়ে খাব তাদের বলি রান্নার আগে মাংসটাকে ধোয়ার সময় তো আপনাকে হাত দিতেই হবে। সেক্ষেত্রে মাংস ধোবেন গরম জলে বা খুব ঠান্ডা জলে। ধোয়ার পরে নিজের হাত ধুয়ে নিন সাবানে। কড়ায় মাংস দেওয়ার পরে আর ভয় নেই, ভাল করে রান্না করে নেবেন, দেখবেন হাড়ের কাছের অংশ যেন কাঁচা না থাকে, মুরগীর মাংস রান্নার সময় অনেক ক্ষেত্রে এটা হয়। বাড়ীর মা, মাসি,রান্নার দিদিরা যাঁরা এই পোস্ট পড়তে পারবেন না তাঁদেরকে বিশেষ করে সতর্ক করুন।
ছ. কাঁচা দুধ খাবেন না। ডিমও ভাল করে সেদ্ধ করে খাবেন। পোচড এগ এড়িয়ে চলুন।
৭. আচ্ছা মাস্ক পরার কথা তো বললেন না? পরব বলে কিনলাম যে।
কিনেছেন বেশ করেছেন, এবারে মাস্কটিকে ডাস্টবিনে ফেলে দিন।
মাস্ক পরবেন না! প্লিজ মাস্ক পরবেন না!!
কারণ গুলো হল-
প্রথমত, মাস্ক পরে আপনি করোনা ভাইরাসকে আপনার শরীরে আটকাতে পারবেন না। তা সে যতই আধুনিক ভাল মাস্ক হোক না কেন। যে মাস্ক আটকায় তা আপনি পাবেন না বাজারে, ল্যাবরেটরিতে ব্যবহৃত হয় তা।
মাস্ক কেমন ভাবে পরতে হয় তাও জানেন না আপনি। হ্যাঁ এটা সত্যি। জানেন না।
মাস্ক পরার অভ্যেস নেই আপনার। তাই বারবার নিজের নাকে মুখে হাত দেবেন । এতে হিতে বিপরীত হবে।
৮. তাহলে মাস্ক কাদের পরা উচিত?
যাঁরা করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত ,অথবা নিজেদেরকে আক্রান্ত বলে মনে করছেন তাঁরা পরবেন মাস্ক। যাতে অন্য কারোর শরীরে এই রোগ না ছড়ায়।
আবার বলছি, মাস্ক কোন ভাবেই আপনাকে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়া থেকে বাঁচাবে না, উলটে আপনার ক্ষতি করবে।
৯. আমার খুব জ্বর কয়েকদিন ধরে, মাথাও ধরেছে, আমার কি করোনা ভাইরাসই হয়েছে?
না, খুব সম্ভবত হয়নি। করোনা ভাইরাসের রোগের প্রাথমিক লক্ষণগুলি আর পাঁচটা সাধারণ ভাইরাসের মতোই। তা হল-ঁঁ
জ্বর,
কাশি,
মাথা আর গায়ে হাতে পায়ে ব্যথা,
ক্লান্তি,
গলা ব্যথা,
নাক দিয়ে জল পড়া,
পাতলা পায়খানা।
এই লক্ষণগুলো রোজের ননগ্ল্যামারাস ভাইরাসগুলোও করে। এতে ভয়ের কিছু নেই। ডাক্তারের কাছেও দৌড়বার দরকার নেই। এগুলো হলে-
জল খান অনেক।
রেস্ট নিন।
জ্বরের জন্য প্যারাসিটামল খান।
১০. কখন তাহলে ডাক্তারকে দেখানোই দরকার?
যদি এগুলোও শুরু হয়-
শ্বাস কষ্ট।
পাঁচ দিনের বেশি থাকা প্রবল কাশি।
বুকে ব্যথা।
কফের সাথে রক্ত।
পেটে ব্যথা।
১১. আচ্ছা আমার যদি করোনা ভাইরাস হয় তাহলে কী আমি মারা যাব?
করোনা ভাইরাসে আপনার মারা যাওয়ার যা সম্ভাবনা তার থেকে বেশি সম্ভাবনা ক্যান্সারে বা রাস্তার অ্যাক্সিডেন্টে মারা যাওয়ার। প্রতিবছর কমন ফ্লুতে এর চেয়ে অনেক বেশি সংখ্যক মানুষ মারা যায়। আপনারও বছরে দুতিনবার ভাইরাল ফিভার হয়ই, তারমধ্যে ফ্লু-ও থাকে। মারা যান কি?
১২. তাহলে যে শুনছি এত মানুষ মারা যাচ্ছে?
প্রতি ১০০ জন করোনা ভাইরাস আক্রান্তদের মধ্যে মারা যাচ্ছেন ২ জন। এই সংখ্যাটিও একেবারে সঠিক নয় কারণ ভাইরাসটি সদ্য ধরা পড়েছে এবং বিশ্ব জুড়ে এখনও এতটাও ছড়িয়ে পড়েনি। বছরের শেষে দেখবেন করোনা ভাইরাসে মারা যাওয়ার সম্ভাবনা আরো কমে যাবে।
১৩. তাহলে যাঁঁরা মারা যাচ্ছেন তারা কারা?
আপনার বয়স কি ৬০ এর বেশি?
আপনার কি এই রোগ গুলো আছে?
ডায়াবেটিস
অ্যাজমা
ক্যান্সার
এই সবকটার উত্তর যদি না হয় তাহলে আপনি করোনাতে আক্রান্ত হলেও আপনার কোন ভয় নেই। আর পাঁচটা ভাইরাল ফিভারের মতোই দেখুন একে।
এর একটারও উত্তর যদি হ্যাঁ হয় তাহলে সাবধানে থাকুন। আপনার আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বেশি এবং আক্রান্ত হলে ফুস্ফুসের ইনফেকশনের সম্ভাবনাও বেশি। তাই আপনারা আগে ডাক্তারের কাছে যান, ১০ নম্বর প্রশ্নের উত্তরে বলা লক্ষণগুলো দেখলেই।
১৪. হোমিওপ্যাথি কোন ওষুধ খেলে কী করোনা হওয়া থেকে আটকানো যাবে?
না যাবে না।
১৫. ভিটামিন সি খেলে শুনছি করোনার হাত থেকে বাঁচোয়া, এটা কী সত্যি?
না সত্যি না, ভিটামিন সি আমাদের শরিরের ইমিউনিটি বাড়ায়, ঘা শুকোতে সাহায্য করে। কিন্তু আমরা সাধারণত সারাদিনে যেমন খাবার খাই তাতে যথেষ্ট ভিটামিন সি থাকেই। যদি মনে হয় নেই তাহলে বড় জোর আধখানা লেবু বা একটু আমলকী খান। এর বেশি খেতে গেলে কিছুই হবে না। শরীর ইউরিন দিয়ে বার করে দেবে।
ভিটামিন সি করোনার হাত থেকে আলাদা করে বাঁচাবে না আপনাকে।
১৬. আমার যদি করোনা সংক্রমণ হয়েই যায় তাহলে কী এর কোন ওষুধ আছে? বা আটকানোর জন্য ভ্যাকসিন?
না, এখনও পর্যন্ত কোন ওষুধ নেই। তবে আগে যেমন্ন বললাম, আপনি যদি সুস্থ শরীরে এই ভাইরাস নেন তাহলে নিজে থেকেই কয়েকদিনের মধ্যেই ভাল হয়ে উঠবেন। আর অসুস্থ শরীর থাকলে ডাক্তারের কাছে যান। ডাক্তারবাবু প্রয়োজন মতো ব্যবস্থা নেবেন। তাহলেই আপনার মারা যাওয়ার সম্ভাবনা বেশ কমে যাবে।
করোনা আটকানোর জন্য কোন ভ্যাকসিন নেই এখনও অবধি।
১৭. আমার দীঘা, পুরী, শান্তিনিকেতন,দার্জিলিং,দিল্লী, সাউথ ইন্ডিয়া ঘুরতে যাওয়ার কথা ছিল মার্চ/এপ্রিলে, কী করি?
এখনও অবধি ভারতে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা খুবই কম। তবে এই সংখ্যা বাড়বে, কিন্তু তার জন্য ঘুরতে যাওয়া বন্ধ করাটার কোন প্রয়োজন নেই। ৬ নম্বর উত্তরে বলা প্রিকশনগুলো নিলেই হবে।
এয়ারপোর্টগুলোতে একটু বেশি সাবধানী থাকবেন। তবে দেশের মধ্যে ফ্লাইটে যাতায়াত করাতে এখনও কোন চাপ নেই।
১৮. আমার দেশের বাইরে অন্য আরেকটা দেশে যাওয়ার কথা, কী করি?
এই লিঙ্কটাকে ফলো করুন। WHO নিয়মিত আপডেট দিতে থাকছে-
https://www.who.int/…/…/novel-coronavirus-2019/travel-advice
১৯. আমার মনে হচ্ছে আমি করোনাতে আক্রান্ত, কী করি? কয়েকটা টেস্ট করিয়ে নি পাড়ার ল্যাব থেকে?
না, আপনার ডাক্তারের কাছে যান আগে। তিনিই যা ব্যবস্থা নেওয়ার নেবেন।
২০. আমি নিজেই একজন ডাক্তার/নার্স/ অসুস্থ মানুষের দেখভাল করি, আমি কী করব?
আপনাদের এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা স্বাভাবিক ভাবেই বেশি। ৬ নম্বর পয়েন্ট অক্ষরে অক্ষরে মেনে চলুন।
একটি রুগী দেখে অন্য রুগী দেখার আগে প্রতিবার স্যানিটাইজারে হাত পরিষ্কার করবেন।
প্রতি ৫ টি রুগী দেখার পরে সাবান দিয়ে হাত ধোবেন।
অযথা নিজের মুখে ঠোঁটে পেন ঠেকাবেন না, ডাক্তারেরা এটা প্রায়শই করে থাকেন।
২১. আমি তো বাঙালি, মাছ খেতে ভালবাসি, কী করি?
পুকুরের বা ফার্মের মাছ বিন্দাস যত খুশি খান। সিফুডটা আপাতত এড়িয়ে চলুন। চিংড়িতে চাপ নেই, কারণ ওটা ফার্মে হয়।
২২. বাড়িতে বাচ্চা আছে, কী করি, স্কুলে পাঠাব?
প্রিকশন ৬ নম্বর পয়েন্টের মতো একই। অদ্ভুত ভাবে এখনও পর্যন্ত বাচ্চাদের করোনায় আক্তান্ত হওয়ার খবর ভীষণই কম। স্কুলে পাঠান নিশ্চিন্তে, যদি না স্কুল থেকে কোন বিজ্ঞপ্তি আসে।
২৩. আচ্ছা এত রকমের রোগ তো আছে পৃথিবীতে, করোনা নিয়ে এত ভয় কেন তাহলে?
এর কারণ মিডিয়া, আরেকটা কারণ সাধারণ মানুষের সম্যক জ্ঞানের অভাব। তাদের বেশিরভাগই অথেন্টিক কোন সোর্স যেমন WBO, CDC বা BMJ এর গাইউলাইন বা আপডেট পড়তে রাজী নয়। কারণ কেঠো ইংরাজী। তাই যতটা পারলাম সহজ করে লেখার চেষ্টা করলাম।
করোনা আসলে পাড়ার তরুন স্পোর্টিং ক্লাব, মিডিয়ার লাফালাফিতে এটা বার্সিলোনায় পরিণত হয়েছে। আমি আপনি সচেতন থাকলেই এটা আবার পাড়ার মাঠে নেমে আসবে। আর কয়েক মাসের মধ্যেই আমরা একে লবডঙ্কা দেখাতে পারব।
ধন্যবাদ ডাক্তারবাবু ! নিশ্চিন্তে থাকার মতো তথ্য গুলো দেবার জন্য ।
সহজ ভাবে বড় সুন্দর বুঝিয়ে দিলেন ডাক্তারবাবু । মনের চাপ অনেকটাই কমল । ধন্যবাদ আপনাকে ।
চমৎকার
সময় উপযোগী, নির্মেদ লেখা। ভালো লাগলো।
অত্যন্ত সময়পযোগী লেখা। ধন্যবাদ।
অনেকটা নিশ্চিত হওয়া গেলো ।
আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ ডক্টর ।
Anek kichu janlam lekha ta pore. Anek dhonnobad apnake.
Help full.
amr jor matha bytha o patla pyakhana ki kovo
Like!! Thank you for publishing this awesome article.
Thanks so much for the blog post.
I like the valuable information you provide in your articles.
Hi there, after reading this amazing paragraph i am as well delighted to share my knowledge here with friends.
These are actually great ideas in concerning blogging.