সবাই দেখতে পাচ্ছে, তাই আমিও ভোরবেলা ঘুম থেকে উঠে উত্তুরে আকাশে ক্যামেরা তাক করে বসেছিলাম। যদি বরাতে জোটে! কিন্তু না, সারাজীবনে যার কপালে পাঁচ টাকার লটারিও জোটেনি কখনো, তার জুটবে আস্ত কাঞ্চনজঙ্ঘা! বলিহারি আশা!
গিন্নীর হুঙ্কারে বাস্তব জগতে ফিরে এলাম। আজ সোমবার, চেম্বারে লড়াইয়ের দিন। দুই স্তর মুখোশ পরে জল, চা, বিস্কুট ইত্যাদি পুঁটুলিতে বেঁধে নিয়ে ড্রাইভার অবতারে চেম্বারে পৌঁছলাম। শুধু কি গিন্নীদেরই দশহাত থাকে না কি! আমরাও করোনার প্রকোপে একাধিক অবতারে অবতীর্ণ হচ্ছি আজকাল।
জনা পাঁচেক কোমরে ব্যথা, ঘাড়ে ব্যথা, সায়াটিকা ইত্যাদি মানসিক ভাবে সুস্থ রোগীর পরে এক যুবতীর আবির্ভাব।
‘ডাক্তারবাবু, আমি আপনার চেম্বারে আগে এসেছি।’
‘পুরোনো প্রেসক্রিপশন বের করুন।’
‘না না, আমি আপনাকে দেখাইনি। বান্ধবীর সাথে এসেছিলাম। কি সুন্দর চেম্বার আপনাদের!’
ভাবলাম, যাঃ বাবা! ডাক্তারের চেম্বারটা বেড়ানোর জায়গা না কি! অবশ্য বলা যায় না। হতেও পারে। করোনার প্রকোপে লোকে ঘরে বসে বোর হতে হতে এখন যেভাবে দিগ্বিদিকে বেড়াতে বেরিয়ে পড়েছে তাতে ডাক্তারের চেম্বারেও বেড়াতে আসতে পারে। বিশ্বাস নেই!
ভদ্রমহিলার পায়ে চোট লেগেছে। পা ফুলে গিয়ে লেংচে হাঁটছেন। এক্সরে তে তেমন মারাত্মক নয় এমন একটা ফ্র্যাকচার। কিন্তু তাঁর আসল চিন্তা অন্য। এম্ব্রয়ডারী করা ম্যাচিং মাস্কটি মিনিটে দশবার করে নাক থেকে নেমে যাচ্ছে। আর তিনি সেটা টেনে টেনে নাকের ওপর তুলছেন।
‘মাস্কটা ঠিক করে পরুন।’
আমি তাকে টেবিলে রাখা একটা সার্জিক্যাল মাস্ক দিতে উদ্যত হই।
‘ধুত্তোর! এই সব মাস্ক-টাস্ক পরে কথা বলা যায় নাকি’ বলেই তিনি নিজের কাপড়ের মাস্কখানি খুলতে উদ্যত হন।
‘সর্বনাশ, করেন কি, করেন কি! ‘
বলে আমি চেম্বারের ফার্নিচারের পেছনে লুকোই- যেন ডাকু আমার দিকে পিস্তল তাক করেছে।
যা হোক, আমার অবস্থা দেখে তিনি নিরস্ত হতেই ডাক্তার অবতার থেকে প্লাস্টার টেকনিশিয়ান অবতারে অবতীর্ণ হয়ে ক্যাটকেটে গোলাপী রঙের একটি ভাস্কর্য গড়ে দিই তাঁর পায়ে।
‘কি সুন্দর রঙের প্লাষ্টার! আচ্ছা ডাক্তারবাবু, কালীপুজোর সময় প্লাষ্টারটা খুলে রাখা যাবে?
‘মানে? তা কি করে হবে? প্লাষ্টার তো ছ’সপ্তা রাখতে হবে।’
‘সে রাখবো। কিন্তু মাঝে দু-তিনদিন যদি খুলে দেন! ধনতেরাসের দিন। একদিন নুঙ্গী যাবো, বাজি কিনতে। আর দেওয়ালির দিন।’
‘একদম নয়। প্লাষ্টার তো খোলা যাবেই না- আর বাজি একদম পোড়াবেন না এ বছর। শুনছেন না, বাজির দূষণে শ্বাসকষ্ট বেড়ে যাবে।’
রোগিণী খুব হতাশ হলেন।
তবে আপনাদেরও বলছি, আতসবাজি পোড়াবেন না এবছর। বায়ুদূষণ সৃষ্টি করে করোনা রোগীদের শ্বাসকষ্ট বাড়াবেন না, প্লীজ।
আর তাছাড়া, বলা তো যায় না, বায়ুদূষণ তেমনভাবে কমে গেলে আমার ক্যামেরাতেও উত্তর আকাশে কাঞ্চনজঙ্ঘা ধরা পড়ে যেতে পারে!