৯ অগাস্ট আর জি কর হাসপাতাল এর ভিতরে পাশবিক অত্যাচারে নিহত চিকিৎসকের মৃত্যু যে অপরিসীম আতঙ্ক আর যন্ত্রণার জন্ম দেয় তার সামাজিক অভিঘাতে শুরু হয় এক অভূতপূর্ব আন্দোলন- অনন্যোপায় মানুষ পথে নামেন, ন্যায় বিচারের দাবিতে সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে মহানগরের গন্ডি ছাড়িয়ে বাংলার বিভিন্ন প্রান্তে, অন্যান্য রাজ্যে, এমন কি দেশের সীমানা ছাড়িয়ে প্রবাসী ভারতীয়দের মধ্যে।
দলীয় রাজনীতির কর্দমাক্ত স্রোত আর আখের গোছানোর লক্ষ্যে ঘন ঘন ভোলবদল দেখে বড় হয়ে ওঠা দুই প্রজন্ম গত কয়েক দশক ধরে ক্রমেই আন্দোলন নামক রাজনৈতিক সক্রিয়তা থেকে দূরে সরে গিয়ে নিরাপত্তা খোঁজার চেষ্টা করেছে, এর পাশাপাশি বেড়েছে সামাজিক অসংবেদনশীলতা। যখন পরিজন প্রতিবেশী মানুষের সুখে দুঃখে বিচলিত হওয়াই বিরল গুণ হিসাবে পরিচিতি পায় তখন মধ্যবিত্ত মানুষের কাছে নিম্নবর্গের মানুষের প্রতি সমমর্মিতা আশা করা এক অসম্ভবের কল্পনা মাত্র। গ্রাম শহরের সেতু বন্ধন করে অর্থনৈতিক শোষণের বিরুদ্ধে সামাজিক ন্যায়ের দাবিতে গড়ে ওঠা সংঘবদ্ধ আন্দোলন রূপকথার গল্প হয়ে গেছে কবেই। সব যুগেই যেমন কিছু স্বার্থবোধহীন মানুষ থাকে, তেমনই কিছু ঘরের খেয়ে বনের মোষ তাড়ানো মানুষ স্বপ্ন নির্মাণের চেষ্টা করে চলেছিলেন, যার প্রমাণ পাওয়া যায় প্রান্তিক মানুষের শিক্ষা, স্বাস্থ্য এবং পরিবেশ রক্ষার প্রয়াসে, অতিমারীর সময়ে রেড ভলান্টিয়ার্সের এর ব্যানারে বা ব্যানারের বাইরে কিছু তরতাজা ছেলে মেয়ের সাহসী লড়াইয়ে।
স্বাধীনতার পরের তিন দশকে পশ্চিমবঙ্গে খাদ্য আন্দোলন, ভিয়েতনাম যুদ্ধে মার্কিনি যুদ্ধনীতির প্রধান রূপকার রবার্ট ম্যাকনামারার কলকাতা আগমন কে কেন্দ্র করে সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী ঐতিহাসিক বিক্ষোভ এবং রাজনৈতিক বন্দীদের মুক্তির দাবিতে আন্দোলন- এই তিনটি আন্দোলনের রাশই প্রশ্নাতীত ভাবে ছিল কমিউনিস্ট পার্টি বা বামপন্থীদের হাতে । ২০২৪ এর এই আন্দোলন প্রথম বৃহৎ গণ আন্দোলন যেখানে কোন ঘোষিত রাজনৈতিক নেতৃত্ব নেই, কোন রাজনৈতিক দলের ছাতার তলায় গড়ে ওঠেনি এই আন্দোলন, তবু ক্ষমতার রাজনীতি আর শাসনযন্ত্রের বিরুদ্ধে কথা বলার সাহস দেখিয়েছে। তাই দলীয় রং না থাকলেও এই আন্দোলন অবশ্যই রাজনৈতিক।
আন্দোলনের চালিকা শক্তি জুনিয়র ডক্টরস ফ্রন্ট। কর্মবিরতির পাশাপাশি অভয়া ক্লিনিক, লালবাজার অভিযান, স্বাস্থ্যভবনে টানা দশ দিনের অবস্থান, অবস্থান তুলে নেবার দিনেই দুর্গত এলাকায় বন্যাত্রাণ নিয়ে পৌঁছে যাওয়া, ধর্মতলায় ,উত্তরবঙ্গ মেডিকেল কলেজে ১৭ দিনের অনশন এবং সরকারের সঙ্গে শিরদাঁড়া সোজা রেখে দাবির লড়াইয়ে অগণিত মানুষের সম্মান ও শ্রদ্ধা অর্জন করেছেন জুনিয়র ডাক্তাররা ।
এই মুহূর্তে আন্দোলন এক বিশেষ সন্ধিক্ষণে এসে পৌঁছেছে। কর্মবিরতি এবং অনশন প্রত্যাহার করে নিয়মিত কাজের জগতে ফিরেছেন জুনিয়র ডাক্তাররা। কিন্তু আন্দোলন বন্ধ হয়নি। জয়েন্ট প্লাটফর্ম অফ ডক্টরস এবং অসংখ্য নাগরিক সংগঠন দ্রোহের আগুন কে এগিয়ে নিয়ে চলেছেন, ঘোষিত হয়েছে জয়নগর থেকে জয়গাঁও যাত্রা এবং জাঠার পরিকল্পনা। পিতৃতন্ত্র ও প্রশাসনের দুর্বৃত্তায়নের শিকার, ধর্ষকামী ভ্রষ্টাচারী রাষ্ট্রের দ্বারা নিপীড়িত নারী পুরুষ এক সঙ্গে পথদখল করছেন।
২৮ শে অক্টোবর আনন্দবাজারে প্রকাশিত প্রবন্ধে অধ্যাপক রণবীর সমাদ্দার বলেছেন এই আন্দোলনের সমর্থক বেসরকারি চিকিৎসক গোষ্ঠী এবং উচ্চমার্গাভিলাষী মধ্যবিত্ত নাগরিক সমাজ যারা গ্রামের মহিলাদের বা শ্রমিক মহিলাদের উপর নিরন্তর অত্যাচার নিয়ে ভাবিত নয়।
পৃথিবীর প্রায় সব বৃহৎ আন্দোলনের নেতারাই এসেছেন মধ্যবিত্ত সমাজ থেকে। লেভেলার, ডিগার, ফরাসি বিপ্লব, বলশেভিক বিপ্লব, চিন বিপ্লব,তেভাগা, তেলেঙ্গানা – সব আন্দোলনে নেতাদের একটা বড় অংশ মধ্যবিত্ত, যারা নিজেদের শ্রেণীপরিচয় অগ্রাহ্য করে বৃহত্তর সমাজের পাশে এসে দাঁড়িয়ে ছিলেন।
চিকিৎসক সমাজ এবং নাগরিক সংগঠন গুলি শ্রেণীসচেতনতা কে অতিক্রম করে এগিয়ে এসে গ্রামের সঙ্গে সংযোগ স্থাপন করতে পারলে আন্দোলন জয় যুক্ত হবে । জুনিয়র ডাক্তার দের দশ দফা দাবি পূরণ হলে অভয়ার বিচার হবে, নারী এবং প্রান্তিক যৌনতার মানুষের কাছে ন্যায়ের বার্তা পৌঁছাবে। সেন্ট্র্যাল রেফারাল, ডিজিটাল বেড ভ্যাকেন্সি চালু হলে সাধারণ মানুষ কে হাসপাতালের বেড এর জন্যে দালাল চক্রের হাতে অসহায় হয়ে ঘুরতে হবে না। চিকিৎসক নার্স এবং অন্যান্য স্বাস্থ্যকর্মীর সংখ্যা বৃদ্ধি ও পরিকাঠামোর উন্নতি হলে উপকৃত হবে সাধারণ রোগী, চিকিৎসক রোগীর সংঘাত কমবে, তাতে নিরাপত্তা সুরক্ষিত হবে রোগী চিকিৎসক উভয়ের। এখন প্রশ্ন হচ্ছে এই আন্দোলন যদি সফল হয় তাহলে কাদের অসুবিধা হবে। যাদের বিরুদ্ধে এই আন্দোলন তাদের- রাষ্ট্র এবং কায়েমী স্বার্থের। অনেক রাজনীতি-ব্যবসায়ী, বুদ্ধিজীবী এবং সাংবাদিক এই কায়েমী স্বার্থের বাইরে নন।
সাধারণ রোগীর পরিষেবা, নারীর সুরক্ষা নিশ্চিত করতে জুনিয়র ডাক্তারদের দাবি পুরণের জন্যে হাসপাতাল এর ভিতরের পরিবেশ কে আমূল বদলাতে হবে তাতে কোন সন্দেহ নেই। ছাত্র নির্বাচন বন্ধ করে রেখে পেটোয়া কিছু লোক দিয়ে সন্ত্রাস চালানো, লাইভ স্ট্রিমিং এ একটি কলেজ এর অধ্যক্ষ কে প্রকাশ্যে শাসানো, সমাজ ও রাজনীতির এই অধোগমন আটকানোর একমাত্র প্রতিষেধক গণতান্ত্রিক নির্বাচন। স্বাভাবিক কারণেই শাসক দলের সঙ্গে মনোনীত আর নির্বাচিত প্রতিনিধির সংখ্যা নির্ধারণ নিয়ে সংঘাত বাঁধবে আন্দোলনকারীদের কারণ এর সঙ্গেই গভীর ভাবে যুক্ত আছে সাধারণ গরিব মানুষের স্বার্থ এবং নারী সুরক্ষা।
জুনিয়র ডাক্তারদের দাবিপত্রে কোথাও এক পয়সা বেতন বাড়ানোর দাবি নেই । সরকারি স্বাস্থ্য ব্যবস্থা কে ভেঙে দিয়ে বেসরকারি পুঁজি কামানোর জন্যে এমন দুর্নিবার আমরণ প্রচেষ্টায় কেন তাঁরা মেতে উঠবেন ? ২০১১তে পালাবদলের পর, নীল সাদা ভবন আর বিরাট তোরণদ্বার যুক্ত সরকারি হাসপাতালে সরকারি পরিষেবা যখন উত্তরোত্তর বৃদ্ধি ঘটেছে (বিরোধী দলের চিকিৎসক কে গলা উঁচু করে কথা বলার অভিযোগে সাসপেন্ড করা, মানুষের ডায়ালিসিস মেশিনে কুকুরের ডায়ালিসিস করা বা ডাক্তারি পরীক্ষায় দেদার টাকা দিয়ে প্রশ্ন ফাঁস বা পাস করিয়ে দেবার ছোটোখাটো অভিযোগ গুলো বাদ দিয়ে), তখন কি বেসরকারি হাসপাতাল গুলোর ব্যবসা করতে খুব অসুবিধা হয়েছে ? এমন কি কোন পরিসংখ্যান পাওয়া গেছে যে বিগত ১৩ বছরে প্রাইভেট পরিষেবা গুলোতে রোগীর হার ক্রমশ কমেছে? সাধারণ বুদ্ধি বলে সংখ্যাটা উর্দ্ধমুখী। তাহলে প্রাইভেট হাসপাতাল এর ডাক্তাররা এমন দ্রোহমূলক কার্যকলাপে কেন যুক্ত করলেন নিজেদের? কারণ তাঁরা নিরাপত্তাবোধহীনতায় ভুগছেন। মধ্যবিত্ত সমাজ তার শ্রেণীগত সীমাবদ্ধতার কারণে নিম্নবর্গের মহিলাদের ধর্ষণের ঘটনায় জেগে উঠতে পারেনি। কিন্তু হাসপাতালে কর্মরত চিকিৎসকের খুন ও ধর্ষণ মধ্যবিত্তের শিরদাঁড়ায় এক শীতল স্রোত বইয়ে দিয়েছে। এই হাড়হিম করা সন্ত্রাসই ‘সুবিধাবাদী’ মধ্যবিত্ত এবং ‘পুঁজিলোভী’ বেসরকারি চিকিৎসকদের ঘুম কেড়ে নিয়ে শিরদাঁড়া সোজা করে দিয়েছে। একথা ভুলে গেলে চলবেনা যে একটা জাগরণ আরো অনেক জাগরণের জন্ম দেয়। জুনিয়র ডাক্তার রা কুলতলি গিয়েছিলেন নির্যাতিতার পরিবারের সঙ্গে দেখা করতে। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছেলেমেয়েরাও গিয়েছিলেন। যখন ‘জনবাদী’ সরকারের প্রধান নাগরিক বিনোদনের জন্যে ডান্ডিয়া নৃত্য পরিবেশন করছিলেন তখন জয়নগর যাত্রাগাছি ফারাক্কা বর্ধমান থেকে অসংখ্য মানুষ এসেছিলেন দ্রোহের কার্নিভালে যোগ দিতে। শহরে ধ্বনিত হচ্ছে ‘প্রতিবাদের এক ই স্বর / জয়নগর টু আর জি কর’ ।
প্রজ্ঞাবানরা বলবেন এই সব ক্ষণিক আবেগ সময়ের প্রলেপে স্তিমিত হয়ে যাবে। হতেই পারে। কিন্তু যদি না হয়? যে লক্ষ লক্ষ মানুষ রাস্তায় নেমেছেন গোটা রাজ্য জুড়ে তাদের একটা ভগ্নাংশ ও যদি অনমনীয় শিরদাঁড়া নিয়ে লড়াই চালিয়ে যান, গ্রামে গ্রামে সংযোগ গড়ে তোলার কাজ করতে থাকেন, তাহলে? স্বাধীনতার পরবর্তী তিন দশকের সফল গণআন্দোলন গুলির মতই দখল ঘেরাও অবরোধের রাজনৈতিক কৌশল দেখা যায় ২০২৪ এর যে আন্দোলনে তাকে খুব অপরিণত বা শিকড়বিহীন বলা অপরিণামদর্শী হতে পারে।
মেধা আর বুদ্ধির দীপ্তি কে কাজে লাগিয়ে প্রতিবাদের পন্থা এবং কৌশল রচনা তো আজকের নয়, গণনাট্য সংঘের অসামান্য সাংস্কৃতিক উত্তরাধিকার আজও কায়েমী স্বার্থের বিরুদ্ধে দ্রোহের আগুন ছড়িয়ে দিতে সাহায্য করে। বহুদিন পর ‘অরাজনৈতিক’ গণসমাবেশে ‘ও আলোর পথযাত্রী’, ‘আমার প্রতিবাদের ভাষা’ -এই সব গান শোনা যাচ্ছে। হয়তো আরো বেশ কিছু দিন পরে এই নাগরিক মঞ্চে শোনা যাবে ‘জান কবুল আর মান কবুল আর দেবো না আর দেবো না…’। কেন্দ্র রাজ্য বোঝাপড়া কে চ্যালেঞ্জ করে কোনোদিন গ্রাম শহর এক সঙ্গে গাইবে ‘আয় রে পরান ভাই আয় রে রহিম ভাই কালো নদী কে হবি পার’…
সে দিনের অপেক্ষায় আছে কিছু আবেগ-সম্বল স্বপ্নদর্শী মধ্যবিত্ত মানুষ।
এই প্রবন্ধ আনন্দবাজার পত্রিকায় ২৮ অক্টোবর ২০২৪ এ প্রকাশিত উত্তর-সম্পাদকীয় প্রবন্ধের পরিপ্রেক্ষিতে রচিত।
লেখিকা গুরুদাস কলেজের ইতিহাসের অধ্যাপিকা।
খুব ভাল লেখা। যারা সাধারণ মানুষের মনে সন্দেহ ঢুকিয়ে তাদের আন্দোলনবিমুখ করে দিতে চাইছে তাদের যোগ্য জবাব।
খুব তথ্যসমৃদ্ধ লেখা। খুব সুন্দর করে প্রকাশ করেছো। সত্যিই একটা হতাশা যেন ক্রমশ আঁকড়ে ধরতে চাইছে। দেরি হলেও, সুবিচার আসবে এই ভরসায় বুক বেঁধেছি।
Darun hoyechhe lekhata✊✊…proud of you❤️❤️❤️❤️
প্রথমত অধ্যাপিকা গোপা মুখার্জিকে এই লেখাটির জন্য ধন্যবাদ এবং অভিনন্দন। অত্যন্ত সময়োপযোগী যুক্তি নির্ভর গুরুত্বপূর্ণ একটি লেখা। ৯ই আগস্টের ঘটনাকে আত্মহত্যা বলে চালিয়ে দেওয়ার প্রয়াস এবং তাতে ব্যর্থ হয়ে এটিকে একটি একান্ত দ্বীপের মতো বিচ্ছিন্ন ঘটনা বলে প্রতিষ্ঠিত করবার রাজনৈতিক প্রচেষ্টার বিরুদ্ধে নির্ভীক কলম ধরার দায়িত্ব পালন করেছে এই লেখা।
অভয়া কান্ডকে কেন্দ্র করে যে আন্দোলন গড়ে উঠেছে, যার চাপে সরকার যখন কিছুটা হলেও ব্যাকফুটে, তখন সরকার ঘনিষ্ঠ লোকজনকে নামানো হচ্ছে এই আন্দোলনকে মধ্যবিত্ত romanticism হিসেবে দাগিয়ে দিয়ে শ্রেণীর ঊর্ধ্বে উঠে যে সামাজিক ঐক্যের সম্ভাবনা রয়েছে তাকে প্রতিহত করতে। এটাও শাসক শ্রেণীর divide and rule এর একটি সূক্ষ্ম কৌশল।
অভয় আন্দোলন কোন সময়ই শ্রেণী আন্দোলন হওয়ার দাবি করেনি বা শ্রেণী আন্দোলন হয়ে উঠতে উদ্যোগ নেয়নি এবং যে ইস্যুতে এই আন্দোলনের জন্ম তাতে শ্রেণী আন্দোলন হয়ে ওঠার বিশেষ প্রয়োজনও নেই। তাই প্রথম দিন থেকেই এই আন্দোলনের চরিত্র ছিল সামাজিক আর রাজনীতি ছিল অন্যায়ের বিরুদ্ধে ন্যায় প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম।
ঘটনাটি ঘটে কলকাতায় তাই আন্দোলনের এপিসেন্টার কলকাতাতেই হবে এটা আশ্চর্যজনক নয়। কিন্তু দেখা গেল ভৌগলিক সব সীমানা ভেঙ্গে দিয়ে এই আন্দোলন ছড়িয়ে পড়েছে। Reclaim the night ছড়িয়ে পড়েছিল পশ্চিমবঙ্গের সব জেলায়। গ্রামের অনামী স্কুলের ছাত্র-ছাত্রীরা যখন মিছিলের উদ্যোগ নেয় এবং প্রশাসনিক জোর খাটিয়ে বা ভয় দেখিয়ে তা বন্ধ করতে হয়, তখন বোঝা যায় এই আন্দোলনের ব্যাপ্তি, এই আন্দোলনের পরিসর।
গ্রাম দিয়ে শহর ঘেরা তত্ত্ব প্রতিষ্ঠিত না হলেই তা মধ্যবিত্তের চিন্তা বিলাসিতা হয়ে ওঠে না। ক্ষতি কি যদি শহর পৌঁছে যায় গ্রামের কাছে। এই আন্দোলন অবশ্যই ভৌগোলিক দূরত্ব কমিয়েছে কিছুটা হলেও কাছাকাছি নিয়ে এসেছে গ্রামকে। তাই অশীতিপর বর্ধমানের বৃদ্ধাকে ঠায় দেখা যায় অনড় ভাবে অনশনে।
এই আন্দোলনকে একটা শ্রেণী আইডেন্টিটির মুখোষ পড়াতে চাইছে তাই শাসক। বাস্তবে শ্রেণী শুধু আইডেন্টিটি এমনকি পরিচিত লিঙ্গ আইডেন্টিটির ধারাকে অতিক্রম করে এক সুতোয় বাঁধতে সক্ষম হয়েছে এই আন্দোলন। এমনিতে আন্দোলন বিমুখ মহিলা অংশ পথে নেমেছেন, স্লোগানে গলা মিলিয়েছেন, প্রাণকেন্দ্র হয়ে উঠেছেন এই আন্দোলনেরই হাত ধরে।
স্বাস্থ্য ভবনের সামনে জুনিয়র ডাক্তারদের পাশে এসে দাঁড়াতে দেখা গেছে চা বিক্রেতা থেকে শুরু করে বিভিন্ন অসংগঠিত ক্ষেত্রে যুক্ত, দিন আনি দিন খাই মানুষদের। শ্রেণী আইডেন্টিটির ফারাক ঘুচিয়ে সামাজিক দায়বদ্ধতার মাথাচাড়া দেওয়ার এ দৃশ্যপটের কথা আমার অন্তত প্রায় ৫০ বছরের জীবদ্দশায় মনে পড়ছে না।
অবশ্যই প্রান্তিক গ্রামে পৌঁছে যাওয়ার দায়িত্ব এই আন্দোলন অস্বীকার করে না বরঞ্চ প্রয়োজন হিসাবে উপলব্ধি করে।
এই আন্দোলন অমাবস্যার রাতে পূর্ণিমার চাঁদ হয়ে না উঠলেও বিদ্যুতের মত এক আলোর স্ফুলিঙ্গ বহন করে। তাই এই আন্দোলন কে কুর্নিশ। আগামীর হাত ধরে এই আন্দোলন পৌঁছে যাক মনে মননে চেতনায়। ভেঙে ফেলুক মুখ বুজে বা মুখ ফিরিয়ে থাকার cultural hegemony.
আর তার লক্ষ্যেই আমরা চাই অধ্যাপিকা গোপা মুখার্জীদের মত সক্রিয় কলম।
ধন্যবাদ ম্যাডাম আপনাকে।।