UNICEF এর আয়োজনে SSU-WBDF-এর মেডিক্যাল টীম ১/০৬/২০ তে পৌছায় গঁদখালিতে। টীমে চিকিৎসক হিসেবে ছিলেন ডা সুমিতা দাস, ডা. প্রত্যুষা মুখার্জি, ডা. বিষাণ দত্ত, ডা. বিতান দত্ত, ডা. মৃন্ময় বেরা। আমাদের টিম কলকাতায় ফিরেছে ০৪/০৬/২০ রাত্রি আটটায়।
১/০৬/২০: আজ আমাদের মেডিক্যাল টীম দুপুরে পৌঁছায় বালি দ্বীপে। বালি ১ ও ২ গ্রাম পঞ্চায়েত অঞ্চলে পাঁচটি জায়গায় ক্যাম্প হয়। প্রতেক জায়গায় একজন করে চিকিৎসক, একজন স্টাফ নার্স ও লোকাল আশাকর্মী ছিলেন। পাঁচ জায়গায় মোট ১৪৫ জন রোগী দেখা হয়েছে। এই দ্বীপে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ অনেক কম। স্থানীয়দের মতে পাশাপাশি অঞ্চলগুলির মধ্যে এই জায়গায় ক্ষতি সবচেয়ে কম হয়েছে। বাঁধ সংলগ্ন অল্প কিছু জমিতে জল বাঁধ ছাপিয়ে ঢুকেছে। তাছাড়া তেমন কোন ক্ষতি হয়নি।
২/০৬/২০ঃ আজ আমাদের টিম ৫ ভাগে ভাগ হয়ে যথাক্রমে ছোট মোল্লাখালির কালীদাসপুর ও হেতালবাড়ি, আমতলির মৌখালি ও পুঁইজালি এবং কুমিরমারিতে ক্যাম্প করেছে। গঁদখালি থেকে ৭ঃ৪৫ এ যাত্রা শুরু করে লঞ্চে বিভিন্ন দ্বীপে টিম নামিয়ে শেষ টিম কুমিরমারি পৌঁছায় প্রায় ১ টায়। সবমিলিয়ে মোট ৪০৭ জন রোগী দেখা হয়। আমরা গঁদখালি ফিরি রাত ৯ঃ০৫-এ।
কুমিরমারি দ্বীপে দু জায়গায় বাঁধ ভেঙেছিল। স্থানীয় লোকজন নিজেরাই পরের দিন দু জায়গায় বাঁধ মেরামত করে নিয়েছেন সরকারি আশায় না থেকে। এনারা এভাবেই অভ্যস্ত। সরকারি আশায় বাঁধ মেরামতির কাজ ছাড়লে ভিটেমাটি রায়মঙ্গলের ভোগে যাবে। তাই নিজেদের শরীরই ভরসা। কিছু জমিতে নোনাজল ঢুকেছে। ঘরবাড়ি খুব ক্ষতি হয়নি। তার একটা বড় কারণ, আয়লা থেকে শিক্ষে নিয়ে অনেকে কষ্ট করে হলেও টাকা জমিয়ে ছোট হলেও পাকা বাড়ি করেছেন। যাঁদের পক্ষে সম্ভব নয় তাঁরা অনেকে কাঠের বাড়ি করেছেন। ফলে বাড়ির ক্ষতিও ততটা বেশি নয়। কিন্তু রায়মঙ্গল বরাবর বাঁধের অবস্থা বেশ খারাপ। দ্রুত নতুন ভাবে মেরামত না করা হলে ষাঁড়াষাঁড়ি বানেও বাঁধ ভেঙে খারাপ অবস্থা হতে পারে।
পুঁইজালির অবস্থা অনেকটা খারাপ। এই অঞ্চলে বাঁধ ভেঙেছিল। তবে দু সপ্তাহে অবস্থা অনেকটা স্বাভাবিক হয়েছে। তৎকালিক সমস্যাগুলো মানুষ অনেকটা কাটিয়ে উঠেছে। এরপর দীর্ঘস্থায়ী সমস্যা মোকাবিলার পালা। এক, বাঁধ মেরামতি এর কাজ। দুই, নোনাজল ঢুকে যাওয়া জমিকে পুনরায় চাষযোগ্য জমিতে পরিণত করা। এই দুই সমস্যা কাটানো কঠিন যদি না সরকারের পক্ষ থেকে যথাযত পরিকল্পনা ও পদক্ষেপ নেওয়া হয়।
ছোট মোল্লাখালির কালিদাসপুর অঞ্চলের একটু দূরে ৮ আর ৯ নম্বরের দিকে কিছুটা বাঁধ ভেঙে জল ঢুকেছে। এই অঞ্চলে তাই চামড়ায় সমস্যা, রক্ত আমাশা নিয়ে অনেক রোগী এসেছিলেন। এই অঞ্চলে জল দূষণের সমস্যাও বেশ ভোগান্তির বিষয়।
৩/০৬/২০ঃ আজও আমাদের পাঁচটি জায়গায় ক্যাম্প করা হয়। রাঙাবেলিয়া, কচুখালি, বাঘবাগান ও শম্ভুনগর অঞ্চলে। এরমধ্যে শম্ভুনগর অঞ্চলে দুটি আলাদা জায়গায় ক্যাম্প করা হয়। সব মিলে মোট 243 জন রোগীকে দেখা হয়েছে। সকাল আটটার সময় গঁদখালি থেকে যাত্রা শুরু করে শেষ ক্যাম্পে পৌঁছতে আমাদের 10:45 বেজে যায়। ক্যাম্প শেষ করে আমরা গঁদখালি ফিরে আসি বিকেল চারটে নাগাদ। পাঠানখালি ও শম্ভুনগর অঞ্চলে তেমন ক্ষয়ক্ষতি না হলেও বিপ্রদাসপুর অঞ্চলে বাঁধ ভেঙেছে। খুব বেশি বাড়িঘর ভাঙেনি। কিন্তু বেশ অনেকখানি জমিতে নোনা জল ঢুকে পড়েছে। ফলে ফসলের বেশ ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। সাধারণ মানুষ বেশ চিন্তিত জমির দীর্ঘস্থায়ী ক্ষতি নিয়ে। রাঙাবেলিয়ার একটা অঞ্চলেও বাঁধ ভেঙে জল ঢুকেছে। সেই অঞ্চলের অবস্থাও বেশ সঙ্গীণ। রোগীদের মধ্যে চামড়ার সমস্যা বেশ বেশি। আমফান ও করোনা নিয়ে অনেকে উদ্বেগে ভুগছেন। বহু রোগী লকডাউনের কারণে যাতায়াতের অসুবিধার জন্য হাসপাতালে বা ডাক্তার দেখাতে যেতে পারেননি। ফলে ওষুধ বন্ধ হয়ে গেছে।
কিছু অন্য ধরনের অভিজ্ঞতা হয়েছে এই পর্বের ও আগের ক্যাম্পগুলিতে। সর্দি-কাশি নিয়ে বা গলা ব্যথা নিয়ে অনেক রোগী এলেও অবাক ভাবে জ্বরের রোগী নেই বললেই চলে। জ্বরের ইতিহাস নিতে গেলেই যেন রোগী ও তার পরিবারের লোকজন ‘না না জ্বর নেই’ বলে অনেকটা আতঙ্কে চমকে উঠছে। অথচ আমরা দেখেছি যেকোনো ক্যাম্পেই জ্বরের রোগী অনেকেই থাকেন। সম্ভবত একটা কারণ হতে পারে জ্বর শব্দটার প্রতি এক ভীতির সঞ্চার। জানিনা কেন যেন মনে হচ্ছিল বুঝি জ্বর আছে বললেই চিকিৎসক, গ্রামের মানুষ, স্বাস্থ্যকর্মী সকলের থেকে তার যেন অচ্ছুত হওয়ার ভয়। এটা বেশ ভাববার বিষয়। রোগীর সংখ্যা বেশি থাকায় রুটিন অনুযায়ী সকলে তাপমাত্রা দেখা সম্ভব হচ্ছে না।
লকডাউনের কারণে কিনা জানিনা অন্যান্য সময়ের তুলনায় গৃহ হিংসার শিকার হওয়া মহিলাদের সংখ্যা তুলনামূলক বেশি মনে হল। অঞ্চলগুলিতে অনেক পরিযায়ী শ্রমিক বাড়ি ফিরছেন। ফলে সাধারণ মানুষ যেন আতঙ্কিত। স্থানীয় সাব-সেন্টার গুলিতে ওষুধ সরবরাহের অবস্থাও খুব ভালো এমনটা নয়। কৃমিনাশক ওষুধের সরবরাহ নেই বেশ কয়েকদিন।
এই রিপোর্ট শ্রমজীবী স্বাস্থ্য উদ্যোগের সম্পাদক ডাঃ মৃন্ময় বেরার লেখা।
ডক্টর আপনাদের কাছে আমার একটা অনুরোধ আপনারা সুন্দরবনের অনেক জায়গায় medical camp করছেন দেখে ভালো লেগেছে। তাই যোগেশগঞ্জ বাজারে medical camp করার অনুরোধ জানাছি। তাহলে ঔ অঞ্চলের বিধ্বস্ত মানুষগুলোর বড়ই উপকার হয়। আপনারা যে কুমিরমারী গিয়েছিলেন তার অপর পারে হেমনগর তার পাশে যোগেশগঞ্জ বাজার। গাড়ি করে যেতে পারবেন হাসনাবাদ দিয়ে যেতে হবে। হাসনাবাদ,হিঙ্গলগঞ্জ, লেবুখালী, দুলদুলি হয়ে যোগেজগঞ্জ বাজার। ভোরবেলা বেড়িয়ে রাত্রে কোলকাতা ফিরতে পারবেন। ৭৬৮৬৮৭১৩৯১