৫ই জুন, ২০২০
হিঙ্গলগঞ্জের মাধবকাটী গ্রাম এলাকায় দুদিনের স্বাস্থ্য ও ত্রাণ শিবির শেষ হল আজ। শিবিরে ছিলাম চিকিৎসক শুভজিৎ ভট্টাচার্য্য, নিবেদিতা দত্ত, হিমাদ্রি বেরা, অনিন্দ্য মন্ডল (ইন্টার্ন), দেবাশিস বর্মন (ইন্টার্ন),অসিত দাস, সঞ্জয় চৌধুরী, বিশ্বজিৎ দাস এবং সিন্টু দা। ত্রাণ শিবিরের সহায়তা করেছিলেন রামকৃষ্ণ মিশন শিল্পমন্দিরের সদস্যরা।
প্রায়ই রায়মঙ্গলের বাঁধ ভেঙে ক্ষতিগ্রস্ত হয় রায়মঙ্গলের তীরে অবস্থিত মাধবকাটী। বেশ কিছুটা জায়গায় কংক্রিটের বাঁধ দেওয়ার কাজ হলেও অনেক জায়গায় বাঁধের অবস্থা ভালো না। আম্ফানের সময় সেরকমই এক দুর্বল জায়গা ভেঙে এবারও জল ঢুকেছে মাধবকাটীতে। আম্ফানের সময় এলাকার বহুমুখী ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছিলেন এলাকাবাসীরা। ঝড় থেমে জল নামার পর এখন আবার তাঁরা ফিরে গেছেন নিজের নিজের বাসস্থানে। কিছু পরিবার এখনো ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রেই আশ্রয় নিয়ে আছেন। এই ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রেই প্রথমদিন স্বাস্থ্য ও ত্রাণ শিবির করলাম আমরা আর রাত কাটালাম এখানেই। আম্ফানের পরে এখনো এখানে বিদ্যুৎ সংযোগ আসেনি, আর সে নিয়ে এলাকাবাসীরা বিশেষ চিন্তিতও নয়। কারণ এমনিতেই এখানে বিদ্যুৎ সরবরাহ খুব অনিয়মিত, দিনের অনেকটা সময় বিদ্যুৎহীন অবস্থাতেই কাটান মানুষ। তবে নদীর ধারের সুন্দর প্রাকৃতিক হাওয়া পান এখানকার মানুষ,যেটা এসির ঠান্ডার থেকে অনেক বেশি প্রাণ জুড়োয়। কলকাতা থেকে মাধবকাটী পৌঁছাতে দুপুর গড়িয়ে গেল। ত্রাণ সামগ্রী দেওয়ার কাজ শেষ করে স্বাস্থ্য শিবির শুরু করলাম বিকেল পেরিয়ে সন্ধ্যা নামার মুখে। বিদ্যুৎ না থাকায় সোলারের আলোয় চলে স্বাস্থ্য পরীক্ষা। মূলতঃ চুলকানি ও চর্মরোগ, আঘাতজনিত ব্যথা, দীর্ঘস্থায়ী হাঁটু বা গাঁটে ব্যথা, উচ্চরক্তচাপ, মানসিক অসুখজনিত শারীরিক উপসর্গ নিয়ে এসেছিলেন বেশিরভাগ মানুষ।
ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের কাছেই একটা নলকূপ আছে যেটার মুখ মাটি থেকে বেশ খানিকটা ওপরে করার কারণে নলকূপে বন্যার জল ঢুকতে পারেনি। এই নলকূপ থাকার জন্য জলবাহিত রোগের প্রাদুর্ভাব বিশেষ দেখা যায়নি। তবে মাঠের জমা জলে কাজ করার জন্য অনেকের চুলকানি ও অন্যান্য চামড়ার সমস্যা দেখা গেল। এদিনের স্বাস্থ্য শিবিরে ১৫০ জনের বেশি গ্রামবাসী এসেছিলেন।
আজ সকালে ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্র থেকে বেরিয়ে নিবেদিতাদি,অনিন্দ্য আর দেবাশিস রওনা দেয় সাতারার উদ্দেশ্যে। আমরা বাকিরা স্থানীয় এক ক্লাবে স্বাস্থ্য শিবির করি। এই শিবিরে উপস্থিত ছিলেন ৯১ জন গ্রামবাসী।
দারিদ্র্য, রুগ্ন স্বাস্থ্য ব্যবস্থা আর প্রতিনিয়ত জীবনযুদ্ধের অসম লড়াইয়ে পিছিয়ে থাকা মানুষগুলোর স্বাস্থ্যের সমস্যা সমাধান করা এই স্বাস্থ্য শিবিরের পক্ষে সম্ভব নয়। তবু এই প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের কঠিন মূহুর্তে অন্তত কিছু সময়ের জন্য এই মানুষগুলোকে শারীরিক ও মানসিক ভাবে কিছুটা স্বস্তি দেওয়ার চেষ্টা করি আমরা। সামাজিক জীব হিসাবে বিপদের দিনে একে অন্যের পাশে থাকার চেষ্টা করি। বিপদের দিনে অন্যের পাশে দাঁড়ানোর অনুভূতি নিয়েই হিঙ্গলগঞ্জ ছাড়ছি আমরা।
এই রিপোর্ট লিখেছেন চিকিৎসক দলের সদস্য হিমাদ্রিশেখর বেরা।