লড়াইটা দীর্ঘ। এই দীর্ঘ লড়াই লড়তে হলে নিজেকে মানসিক এবং শারীরিক ভাবে চাঙ্গা রাখা দরকার। ল্যান্ডমাইনের মতো পদে পদে অবসাদ পোঁতা আছে, পা দিলেই দুমম ! সাবধান ! খুব সামলে পা ফেলতে হবে, যাতে ল্যান্ডমাইনে পা না পড়ে !
নিজের মনটা ভালো রাখুন। ভালো রাখার জন্য যা খুশি করুন। কে কি বললো বা ভাবলো মাথায় রাখবেন না। বাড়িতে বসে ফেসিয়াল করুন, সাজুন-গুজুন, রান্না করুন, সেসব ছবি পোস্ট করুন, নাচ গান বাজনা আবৃত্তি যা খুশি করুন। যদি মনে হয় অমুক চ্যালেঞ্জ তমুক চ্যালেঞ্জে নাম লেখাতে মজা পাচ্ছেন তো লেখান নাম ! নো প্রবলেম ! ভাবছেন কে কি ভাববে ? ভাবছেন লোকে বলবে এই দুঃসময়ে মুখ ভেটকে না থেকে আদেখলাপনা করছেন ? ভাবুক ! নিজের মন ভালো রাখার দায়িত্ব এখন নিজেকেই নিতে হবে, অত ভাবাভাবির ধার ধারলে চলবে না। অন্য কারও অবসাদ নিজের মধ্যে সংক্রমিত হতে দেবেন না, এবং একইভাবে নিজের অবসাদটাও অন্য কারো মধ্যে চারানোর চেষ্টা করবেন না।
কঠিন একটা সময়ের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছি আমরা। সময়টা কবে কাটবে, কাটার পর কতদিনে ছন্দে ফিরতে পারবো কিছুই জানি না। শুধু জানি এই সময়টা কোনভাবে পার করতেই হবে, যেমন অন্ধকার একটা সুড়ঙ্গ পার করি। সুড়ঙ্গের শেষে আলো থাকে, ঠিক তেমনই এই অন্ধকারের শেষেও আলো আছে। যতদিন না সুড়ঙ্গটা শেষ হচ্ছে ততদিন থামলে চলবে না ! অতএব নিজেকে সেই লেভেলে নিয়ে যেতে হবে যেখানে আপনি মেন্টালি অ্যান্ড ফিজিক্যালি ফিট থাকতে পারেন। বাড়ির কাজের বাইরে যেটুকু সময় পাবেন নিজের পছন্দের কাজগুলো করুন। বই পড়া, গান শোনা, লেখালেখি, ফেসবুক, হোয়াটস্ অ্যাপ, যা ভালো লাগে করুন। শুধু মাথায় রাখবেন যেন কোনও গুজব আপনার দ্বারা না ছড়াতে পারে।
প্রতিদিন হালকা করে হলেও কিছুটা শরীরচর্চা করুন। হাঁটাচলা হচ্ছে না, সুতরাং ওজন বাড়তে পারে। ঘুমের সমস্যা হতে পারে কারণ শরীর ক্লান্ত হচ্ছে না। হজমের গোলমাল হতে পারে, পেটের সমস্যা হতে পারে যেহেতু হাঁটাচলার অভাবে intestinal motility ব্যাহত হচ্ছে। সুযোগ থাকলে দুবেলা হাঁটুন, তবে অবশ্যই রাস্তায় অথবা বাড়ির বাইরে নয় ! বয়স অনুযায়ী ফ্রিহ্যান্ড এবং যোগাসন করতে পারেন, খুব ভালো কাজ দেবে।
ফ্রিজের ঠান্ডা জল, কোল্ড ড্রিঙ্কস ইত্যাদি এড়িয়ে চলুন। আবহাওয়া এমনিতেই ওঠানামা করছে, এই অবস্থায় ঠান্ডা জল খেয়ে দুম করে সর্দিকাশি অথবা টনসিলে ব্যথা বা ফ্যারিঞ্জাইটিস টাইপের কিছু হলে সাড়ে সব্বনাশ ! শেষে হয়তো দেখা গেল নিজের দোষে চোদ্দ দিন ধরে কোনও কোয়ারান্টাইন সেন্টারে গ্যারেজ হয়ে গেলেন। কি দরকার রিস্ক নেওয়ার ?
নিজেকে সুস্থ রাখুন। যাঁরা প্রেশার, সুগার অথবা কিডনির সমস্যার জন্য নিয়মিত ওষুধ খান তাঁরা একদম ওষুধ স্কিপ করবেন না ! যাঁরা কোনও কারণে নিয়মিত স্টেরয়েড ধরনের ওষুধ ব্যবহার করেন তাঁরা ডাক্তারের পরামর্শ নিন আদৌ ওটা খাবেন নাকি আপাতত বন্ধ রাখবেন। বাচ্চা এবং বয়স্কদের জন্য বিশেষভাবে সতর্ক থাকা দরকার। কিছুতেই এক্সপোজ করা যাবে না !
বাইরে বেরোলে অবশ্যই মাস্ক পরে যাবেন এবং খেয়াল রাখবেন যেন নাক-সুদ্ধ ঢাকা থাকে। সবসময় লক্ষ্য রাখবেন যেন আপনার এক মিটারের মধ্যে কেউ না থাকে !
হাত ধোওয়ার বিষয়ে একদম ঢিল দেবেন না ! যখনই বাইরে থেকে ঘরে ঢুকবেন আগে হ্যান্ড ওয়াশ করবেন। খাওয়ার আগে, কাউকে খেতে দেওয়ার আগে, মেঝেতে হাত রাখলে, বাইরের কোনো জিনিসে (যেমন বাজারের থলি অথবা কাঁচা বাজার ঘাঁটার পর) হাত দেওয়ার পর অবশ্যই ভালো করে সাবান দিয়ে হাত ধোবেন।
অনেকে আবার শুনছি বিছানায় শুয়ে থাকতে থাকতে তড়াং করে লাফ মেরে উঠে একবার হ্যান্ডওয়াশ করে নিচ্ছেন ! কোনও প্রয়োজন নেই ! ফিলোজফিটা আগে বুঝুন। আমরা ভাইরাস সংক্রমণের চেনটা ভাঙ্গার জন্য হাত ধুচ্ছি। সুতরাং হাতটা তখনই ধোবো যখন অন্য কোন সোর্স থেকে আমার হাতে ভাইরাস আসার সম্ভাবনা থাকছে অথবা আমার হাত থেকে অন্য কোনো ডেস্টিনেশনে ভাইরাস যাওয়ার সম্ভাবনা থাকছে। তো আমি যখন খাচ্ছি না, খাওয়াচ্ছি না, কিছু ঘাঁটছি না, কোথাও হাত দিচ্ছি না অথবা কারো হাত থেকে বাইরের কিছু নিচ্ছি না তখন আমার হাত ধোওয়ার দরকারটা কি ? ভাইরাস তো আর উড়ে এসে আমার হাতে বসবে না ! অতএব এই ফিলোজফিটা না বুঝে যদি বিনা প্রয়োজনে দু-মিনিট পরপর হাত ধুতে থাকেন তাহলে হাতের চামড়া ওঠা ছাড়া কোনও লাভই হবে না।
তাহলে কি কি বললাম ?
১) মন ভালো রাখুন। ডিপ্রেশনের কবলে কিছুতেই পড়া চলবে না ! নিজের মন ভালো রাখতে গিয়ে অন্য কে কি বললো অথবা নিন্দামন্দ করলো তা নিয়ে একদম মাথা ঘামাবেন না।
২) প্রতিদিন ব্যায়াম করুন। অভ্যাস না থাকলে ভারি ব্যায়াম করতে হবে না, কিন্তু একটু ফ্রিহ্যান্ড, একটু যোগাসন, সারাদিনে এবেলা-ওবেলা মিলিয়ে ঘন্টাখানেক হাঁটা —- এগুলো করুন।
৩) শিশু এবং বয়স্কদের জন্য এক্সট্রা প্রিকশান নিন। একদম যেন exposed না হয় সেটা সুনিশ্চিত করুন। প্রয়োজনে কঠোর হোন।
৪) প্রেশার, সুগার, কিডনির সমস্যা অথবা অন্য যে কোনো ক্রনিক সমস্যা থাকলে নিয়মিত ওষুধ খেতে ভুলবেন না।
৫) হাত ধোওয়া, cough etiquette, respiratory hygiene ঠিকমতো বজায় রাখুন।
৬) সামাজিক দূরত্ব কঠোরভাবে বজায় রাখুন।
৭) লম্বা লড়াইয়ের জন্য শারীরিক এবং মানসিক ভাবে প্রস্তুত থাকুন। বেশি চিন্তা করবেন না। আমরা এখনও পর্যন্ত খুব একটা খারাপ অবস্থায় নেই।
ভরসা রাখুন।