অসংখ্য কারণে মানুষের কাঁধে ব্যথা হতে পারে। বিভিন্ন বয়সে কারণগুলো আলাদা আলাদা। কাঁধে আসলে তিনটি গ্রন্থি (জয়েন্ট) আছে। তিনটি আলাদা জয়েন্ট থাকা এবং মূল গ্লেনো হিউমেরাল জয়েন্টে গভীর কোনো সকেট না থাকার কারণে কাঁধের গতিশীলতা বেশী আর স্থিতিশীলতা কম। এতে সুবিধা হল স্বাভাবিক অবস্থায় কাঁধ এবং হাত নানা দিকে অবারিত ভাবে ঘোরানো যায়। কিন্তু আবার সামান্য চোট লাগলেই কাঁধের হাড়ের জয়েন্ট খুলে যাওয়া বা ডিসলোকেশন এর সম্ভাবনা থাকে।
কাঁধের গ্রন্থির স্থিতিস্থাপকতা বজায় রাখতে কাঁধের চারদিকে থাকা মাংসপেশীগুলো বিশেষতঃ ‘রোটেটর কাফ’ নামক চারটে মাংসপেশীর একটা গ্রুপ-এর ভূমিকা অপরিসীম। সমস্যা হল, এদের মধ্যে এক-দুটো মাংসপেশী দুটো হাড়ের মধ্যে দিয়ে যায়। হাড়ে ঘষা খেয়ে বা হাড় দুটোর মাঝখানে চাপ খেয়ে এই রোটেটর কাফ মাংসপেশী ছিঁড়ে বা ক্ষয়ে যেতে পারে।
ব্যথার কথায় আসি! অসংখ্য কারণে কাঁধে ব্যথা হতে পারে। বয়স, পেশা ও কাজকর্মের ধরন অনুযায়ী ব্যথার কারণ আলাদা হতে পারে।
ফ্রোজেন শোল্ডার: মাঝবয়সে, বিশেষতঃ পঞ্চাশ বছরের আশেপাশে এই রোগ হয়। এক্ষেত্রে হাড়ে ঘষা লেগে বা অন্য কারনে মাংসপেশী ক্ষযে যায়। মাংসপেশীর মাঝে রস জমে। প্রচণ্ড ব্যথা হয় এবং কাঁধ শক্ত হয়ে যায়।হাত মাথার উপরে তোলা বা পেছনে নিয়ে যাওয়া যায় না। চুল আঁচড়াতে বা চুল বাঁধতে সমস্যা হয়। কিন্তু এক্ষেত্রে ভিতরে কিছু সমস্যা হয় না। খাবার ওষুধ, ব্যয়াম, ফিজিওথেরাপি তে বেশীরভাগ রোগী সম্পুর্ণ সুস্থ হয়ে ওঠে। কোনো কোনো রোগীকে কাঁধের আশেপাশে মাংসপেশী বা টেন্ডনের মধ্যে স্টেরয়েড ইঞ্জেকশন করতে হয়।
রোটেটর কাফ ইমপিঞ্জমেন্ট (চেপ্টে যাওয়া) : দুটো হাড়ের মাঝে মাংসপেশী আটকে চেপটে গেলে কাঁধে প্রচন্ড ব্যথা হয়। হাত মাথার উপরে তুলতে চেষ্টা করলেই ব্যথা বাড়তে থাকে।
সাব আক্রমিয়াল বার্সাইটিস: মাংসপেশী ও কাঁধের হাড়ের মাঝে থাকে নরম থলির মত ‘বার্সা’। এর কাজ হল মাংসপেশী ও টেন্ডন বা কন্ডোরা-কে হাড়ের ঘষা থেকে বাঁচানো। অনেক সময় এই ‘বার্সা’ তে প্রদাহ হয়ে প্রবল ব্যথা হয়।
‘বাইসিপিটাল টেন্ডিনাইটিস’: বাইসেপস টেন্ডনের একটা অংশ কাঁধের জয়েন্টের ভিতর দিয়ে যায়। বার বার ঘষা খাওয়া, প্রদাহ ইত্যাদি কারণে এর থেকে ব্যথা হতে পারে।
বাত বা আর্থ্রাইটিস: কাঁধের জয়েন্টে পুরোদস্তুর বাত কমই দেখা যায়। তার কারণ এই জয়েন্ট-এ শরীরের ওজন পড়ে না। তবে কাঁধে পুরনো চোট বা ভাঙা থাকলে মাঝবয়েসে বা বৃদ্ধ বয়েসে বাত হতে পারে।
কাঁধের এই সব ক্ষেত্রে কাঁধের ঠিক কোন অংশে কী সমস্যা- সেটা জানাটা জরুরি। সেজন্য এক্স রে, আল্ট্রাসোনোগ্রাফি, এম আর আই, রক্তপরীক্ষা ইত্যাদি করা প্রয়োজন। বরফ বা গরম শেঁক এবং অল্প ব্যথার ওষুধে কাজ না হলে দেরি না করে অস্থি বিশেষজ্ঞর পরামর্শ নেওয়া উচিত। তিনি খাওয়ার ওষুধ, ইঞ্জেকশন, ফিজিওথেরাপি, ব্যয়াম, জয়েন্টের কাছে স্টেরয়েড ইঞ্জেকশন, রোগীর নিজের রক্তের প্লেটলেট থেকে তৈরি ‘ পিআরপি’ ব্যবহার করে চিকিৎসা করেন। এসবে কাজ না হলে অপারেশন দরকার হয়। অপারেশন করা হয় অর্থ্রোস্কোপি করে।
রোটেটর কাফ ছিঁড়ে যাওয়া: বিরল কিছু ক্ষেত্রে, বিশেষতঃ ক্রিকেটের ফাস্ট বোলার, বেসবল, টেনিস খেলোয়াড়, সাঁতারু, ছুতোর মিস্ত্রি, রং মিস্ত্রি – এদের হাত কাঁধের উপরে বার বার নিয়ে ঘোরাতে হয় বলে এদের রোটেটর কাফ ছিঁড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা বেশি।
যুবক- যুবতী এবং মধ্য বয়স্ক রোগীর ক্ষেত্রে অপারেশন প্রয়োজন হয়।
কাঁধের হাড় ভেঙ্গে যাওয়া: পড়ে গিয়ে বা দুর্ঘটনায় বড় চোট লেগে বা কখনো দুর্বল হাড়ের উপর সামান্য চাপ লেগে হাড় ভেঙে যায়। এতেও কাঁধে প্রবল ব্যথা হয়।বাহু নাড়ানো যায় না। চিকিৎসা হল- বাহুটাকে স্লিং-এ বিশ্রামে রেখে দেওয়া, বরফ লাগানো, ওষুধপত্র দেওয়া। তারপর প্রয়োজনে অপারেশন বা প্লাস্টার করা।