ভূত চতুর্দশীর রাতে বায়বীয় ভূতলোকে বসেছে মহাভৌতিক মার্গ। ভূতলোক থেকে সরাসরি ভূতদের নিজস্ব প্রতিনিধি ভূতস্বামী জানাচ্ছেন – ‘ভূতলোকে এখন আমাদের বিশাল সভা চলছে। আমাদের সব মিটিংই ভার্চুয়াল।দোপেয়ে মানুষদের মতোই – জুম মিটিং। অবশ্য আমরাই আগে এটা আবিষ্কার করেছিলাম। ওলকপি, বাঁধাকপি, ফুলকপি খাওয়া গ্যাসের খনি দোপেয়েগুলো কপিরাইট আইন না মেনে সেই একই টেকনোলজি কপি করে জুমে পেস্ট করে দিয়েছে! এখন যেখানে খুশি বসে দাঁত কেলিয়ে বলছে – হ্যাল্লো ক্যায়সা হো? যত্তসব ঢঙ!’
‘যাইহোক, আজকের ভৌতিক সভার উদ্দেশ্য – রক্তের বিকল্প পথের সন্ধান।
মূল্যবৃদ্ধির বাজারে দুর্বল ইনসিকিউর দোপেয়েগুলোর ঘাড় মটকানোর পরও তেমন রক্ত পাওয়া যাচ্ছে না বলে, ভূতদের বাচ্চাকাচ্চাদের জন্য রক্তের জোগান দেয়া যাচ্ছে না।’
একটা ফিডিং বোতল ভরা রক্ত নিয়ে মামদোর নাতি, বোম্মো দৈত্যের ভাগ্নের যমজরা আজ ও সকালে লড়াই করেছে! তার উপর প্রেগন্যান্ট পেত্নীদের অবস্থা আরো করুণ। ভূতরা এদিক ওদিক চেয়ে চিন্তে যাও বা দু’একটা ঘাড় মটকাতে পারছে, হাফ বোতল রক্তের বেশি পাচ্ছে না! লকডাউনের পর ট্রেন ভাড়া বেড়ে যাওয়ায় উড়ে আসতে আসতে, তেষ্টা পেলেই এক চুমুকে হাফ বোতল সাবাড় করে দিচ্ছে! কিছু বলা ও যাচ্ছে না!
কখনো কখনো তো রক্তের বদলে দেশী মদও পাওয়া যাচ্ছে!
সিনিয়র বোম্মো দৈত্যের কাছে ভূতের জন্মনিয়ন্ত্রণ করার জন্য স্মারকলিপিও দেয়া হয়েছে।
সভায় বিভিন্ন ভূতের বিভিন্ন মতামত আসছে।
কারো মতে – মানুষের ক্যারোটিড আর্টারিতে ভার্চুয়াল সেন্ট্রাল ক্যাথেটার করে সব ব্লাড টেনে নেয়া হোক !
কারো মতে – লেফট ফিফথ ইন্টারকস্টাল স্পেসে মিড-ক্লাভিকুলার লাইনে গিয়ে সোজা স্ট্র লাগিয়ে চুমুক দেয়া হোক !
দু’টো প্রস্তাবই বাতিল হলো কারণ – দোপেয়েগুলোকে বিশ্বাস নেই। ব্যাটারা ভূত কে অব্দি গরাদের পেছনে ঢুকিয়ে বন্দী করে রাখতে জানে! তার উপর গন্ধ শুঁকে ভূত খোঁজা মহাবদমাশ ওঝাগুলোও আছে!
কারো মতে – ব্লাড ব্যাংক লুট করা সবচেয়ে সহজ। কেউ কিছু বলবে না।
ওদিকে এমনিতেই দোপেয়েরা নানারকম রকম ভাবে ব্যাংক লুট করতে থাকে!
যদিও আজকাল ব্লাড ব্যাংকে যথেষ্ট পরিমাণে রক্ত থাকে কিনা, সেটাই সন্দেহ। দোপেয়েগুলো ঢ্যামনা হয়ে গেছে। রক্তদান কর্মসূচি ঘোষণা হলেই – পাইলসের দোহাই দিয়ে পালিয়ে যাচ্ছে! উপঢৌকন না দিলে নাকি ব্লাডই দেয় না!
আরেক নেশাখোর ভূত বললো – হাসপাতালে হানা দেয়া হোক। দোপেয়ে গুলোর রক্ত দেয়ার চ্যানেল নিজের শরীরে ঢুকিয়ে ব্লাড নিয়ে হাওয়া হয়ে যেতে হবে!
সাথে সাথেই প্রস্তাব বাতিল হলো – কারণ , ভূতদের না আছে স্বাস্থ্য সাথী কার্ড, না আছে আয়ুষ্মান কার্ড! হাড়ের ভেতর স্যালাইনের মত রক্ত দেয়াও সহজ না।
নানা রকম নাকিসুরে ভূতরা এক এক করে প্রস্তাব রেখে যাচ্ছে।
এইমাত্র ব্যবসায়ী ভূত বললো – পরিযায়ী দোপেয়েগুলোকে আমি আমার গুদামে ভরে দিই! তারপর যতদিন খুশি বাঁচিয়ে রেখে নিয়মিত রক্ত চুষে নেয়া যাবে! কিন্তু মরে গেলে দোপেয়েগুলো নাকি ভূত হয়ে যেতে পারে, এই সন্দেহে সেই প্ল্যান ধ্বনি ভোটে বাতিল হলো।
এই তো … এইমাত্র আরেকটি প্রস্তাব এসেছে – দোপেয়েগুলোর রক্তের অ্যাডাল্টারেশন করা হোক! পরিমাণ বেড়ে যাবে। টমাটো কেচাপ এক্ষেত্রে আদর্শ অ্যাডাল্টারেন্ট!
অনেকেরই এই উপায় মনে ধরেছে।
ওহ না – পোতিবাদ হচ্ছে। থালা বাটি শঙ্খ ঘন্টা নিয়ে পোতিবাদ। এ পথও বাতিল।
আবার অন্য পথের সন্ধান মিলেছে। শিক্ষিত এক ভূতের থেকে প্রস্তাব এসেছে – দোপেয়েগুলোর বডি থেকে স্টেম সেল কালেক্ট করতে হবে। যেমন করে দোপেয়েরা আইভিএফ টেকনোলজি ব্যবহার করে টেস্টটিউব বেবি তৈরি করছে, সেই একই পদ্ধতিতে স্টেম সেল কালচার করে ব্লাড তৈরি করা হবে!
যদিও সঙ্গে সঙ্গে পোতিবাদ এসেছে।এক ফিজিক্স বিশেষজ্ঞ ভূত, এক রাজনৈতিক দলের ভূত পোতিবাদে ফেটে পড়েছে। দোপেয়েদের সঙ্গে হাত মিলিয়ে ভূতদের ক্লোন করার অবৈধ পরিকল্পনা রয়েছে এর পেছনে – বলে তদন্ত কমিটি গঠন করার জন্য তোড়জোড় করছে।
শিক্ষিত ভূতের অবস্থা খারাপ। সুইসাইড করতে সে বটগাছের মগডালে উঠে পড়েছে। দেখা যাক কি হয়! ওই ব্যাটা নাম নাম!
যাঃ! লাফ দিয়ে পড়ে গেল! মরেও গেল!
ভূত মরে? মরে তো দোপেয়ে গুলো!
এবার কি হবে? ও ব্যাটা কি নকল ভূত ছিল নাকি?
যাইহোক, কোন প্ল্যানই কাজ করছে না!
সব ভূতরাই চুপচাপ। এমনিতেই রক্ত না খেয়ে খেয়ে শরীরের তেজ কমে এসেছে।
কেউ কেউ মিনমিন করে তেল, অথবা পেট্রোল খাওয়ার মতো বিকল্প খাদ্যাভাসেরও পথ বাতলেছে। কিন্তু এই অনিয়ন্ত্রিত মূল্যবৃদ্ধির বাজারে রক্তের চেয়ে দুটোই বেশি দামী।
হঠাৎ এইমাত্র এক ভূতের প্রস্তাব এসেছে – একমাত্র গ্যাসই হতে পারে বিকল্প খাদ্য। এমনিতেই বায়ুমণ্ডলে গ্যাসের অভাব নেই। সেখানে না পেলে ও দোপেয়েগুলোর সবকিছুতে যে পরিমাণ গ্যাস রয়েছে, সহজেই খিদে মিটে যাবে! কিন্তু দোপেয়েদের খাদ্যনালীর বিশাল গ্যাস ভাণ্ডারের গ্যাস শোধনের উপায় ভূতদের জানা নেই। অতএব, এই প্রস্তাবও বাতিল হলো!
ভূত লোকে এখন নীরবতা। কোন উপায় না পেলে ভূত লোক ছেড়ে ফের দোপেয়ে হয়ে যেতে হতে পারে – এই ভয় গেড়ে বসেছে সবার হাড়ে।
ঠকঠক করে কাঁপুনি হচ্ছে অনেকের। ঠিক এই এখুনি সভা শেষ করতে হবে। অমাবস্যা পেরিয়ে গেলে পরিবেশবান্ধব বাজির ধোঁয়ায় আর কোন দোপেয়েকে ধরা যাবে না।
সবাই ভার্চুয়ালি হাহুতাশ করছে।
দেখা যাক, ধার্মিক ভূত উঠে দাঁড়িয়েছেন এইমাত্র। কোন পথ বাতলাতে পারে কিনা – সেটার অপেক্ষায় সবাই।
ধার্মিক ভূত – হাড়ে হাড় ঠুকে বলছেন – হে ভূত লোকের অধিবাসীবৃন্দ ,
রক্তের জোগান আছে। তোমরা বৃথাই হাহুতাশ করছো। এই দেখো, বলো, আমার হাতে কি এগুলো?
সব ভূতেরা একসাথে চেঁচিয়ে উঠেছে – কয়েকটি ধর্মগ্রন্থ!
ধার্মিক ভূত বলছেন – ভুল! এগুলোতে কোন ধর্ম নেই! শুধু উপরের পাতায় নাম লেখা আছে। না এগুলো বিজ্ঞানের বইয়ের মত কোন প্রমাণিত সত্য,
না এতে কোন অলৌকিক ক্ষমতা আছে! বরং এগুলোতেই লেখা আছে – আমরা কি করে দোপেয়ে থেকে ভূত হয়েছি!
সবাই হতাশ মুখে তাকিয়ে আছে। – তাহলে এই জন্মবৃত্তান্ত দিয়ে রক্তের জোগান হবে কি করে??? সবার একটাই প্রশ্ন।
নাক ঝেড়ে ধার্মিক ভূত গলা খাকারি দিলেন। লাইভ ভাষণ শুনুন সবাই: “ভূতসকল। এই যে আমার হাতে বই দেখছো, এগুলো কিন্তু কোন গ্রন্থ নয়।
অবাক হচ্ছো? আসলে এই মহাবিশ্বে সবই আপেক্ষিক। তুমি যা যা ইন্দ্রিয় দ্বারা উপলব্ধি করছো কিংবা করতে পারছো না, সবই পরিবর্তনশীল।
যেমন মানুষ কনভার্ট হয়ে ভূত হয়েছি আমরা, তেমনি ভূত থেকেও মানুষে কনভার্ট হওয়া সম্ভব! আসল কথা হলো – এনার্জি।
এই বই হলো mc*2= E সুত্রের পান্ডুলিপি। হ্যাঁ, এটি আইনস্টাইনের আপেক্ষিক তত্ত্বের সূত্রই। শুধু ঘুরিয়ে লেখা আছে, এই যা।
এখানে m হলো mass মানে আম আদমি! c হলো সেই ধ্রুবক, যাকে বলে নির্বুদ্ধিতা ভয় কুসংস্কার অসহিষ্ণুতা অন্ধ বিশ্বাস হিংসা ঘেন্না লোভ মোহ মদ মাৎসর্য ইত্যাদি ইত্যাদির মিক্সচার! আর E হলো এনার্জি! Mass তথা আম আদমিকে এই ধ্রুবকের স্কোয়ার দিয়ে গুণ করে দিতে থাকলেই পেয়ে যাবে কনস্ট্যান্ট সোর্স অফ এনার্জি! সেই এনার্জি ই হবে রক্তের জোগানদার!!
কি করে?
ভূত সকল, তোমরা ভাবছো আমি চতুর্দশীতে গাঁজা খেয়েছি? মোটেই না। মহান বিজ্ঞানী আইনস্টাইন মিথ্যা ছিলেন না। এনার্জিই কনভার্ট হয়ে যাবে রক্তে!
যদি বিশ্বাস না হয় – এই দেখো। এর থেকে দু’টো বইকে আমি দু’টো জায়গায় ফেললাম। সেই সামান্য ঘটনা জাগিয়ে তুলবে আম আদমিকে। তারপরই নানা রকম মিডিয়াম ব্যবহার করে আমি, ধ্রুবক দিয়ে mass কে মাল্টিপ্লিকেশন করতে থাকবো।
বলতে পারো কতকটা পারমাণবিক বোমার মেকানিজম এটা। আর তাতেই জেনারেট হবে এনার্জি। সেই এনার্জি নিমেষেই খুন করতে থাকবে দোপেয়েদের। এমনকি নিরীহ হলেও! সেই এনার্জিই বইয়ে দেবে রক্তগঙ্গা!এবং এর রিপিটেশন করতে থাকলেই, ভূতের জন্য কোনদিনই রক্তের অভাব হবার কোন চান্স নেই।
কারণ, এই ভৌতিক থিওরি অফ রিলেটিভিটি যুগে যুগে প্রমাণিত।
আসল কথা – সবাই মনে রেখো, দোপেয়ে থেকে যদি ভূত হওয়া যায়, ভূত থেকেও দোপেয়ে হওয়া যায়!”
***
এতোক্ষণে ধার্মিক ভূতের বক্তব্য শোনা হলো।
পৃথিবী থেকে ভেসে আসছে কোলাহল।
ধার্মিক ভূতের কথা শোনার পরই সব ভূতের শরীরে মাংস আর চামড়া লাগতে শুরু করেছে!
এবার সব ভূত মিলে আনন্দে “ব্লাঁডিঁ ইঁউঁরেঁকাঁ” সঙ্গীত গেয়ে আপনভোলা মহান বিজ্ঞানী, থিওরি অফ রিলেটিভিটির জনক আইনস্টাইনের জন্মদিন পালন করবে। তারপর … হেঁ হেঁ হেঁ হেঁ হেঁ হেঁ হেঁ হেঁ হেঁ হেঁ হেঁ হেঁ হেঁ
ভৌতিক অমাবস্যার অশুভ কামনা রইলো।
ভূতস্বামীর সঙ্গে
ক্যামেরাম্যান রঙ্গবতী পেত্নী,
মামদোবাজি টিভি,
ভূতলোক।
বিঃদ্রঃ দোপেয়েগুলোর পড়া ও শোনার সুবিধার্থে প্রায় সব চন্দ্রবিন্দুগুলোই ডিলিট করা হয়েছে !