একটা রোমান্টিক সন্ধ্যা। গত ১৬ই আগস্টের তাজা ঘটনা। আমি পশ্চিম মেদিনীপুরের দাসপুর গ্রামীণ হাসপাতালে অন ডিউটি আছি। বাইরে ঝরঝরিয়ে বৃষ্টি ঝরছে। বৃষ্টি মাথায় স্থানীয় নার্সিং হোমের গ্রামীণ চিকিৎসকের বৌমা-প্রিয়াঙ্কা, হাসপাতালের গেট থেকে পায়ে হেঁটে ইমার্জেন্সিতে হাজির। সঙ্গে ডাক্তার শ্বশুর ও কাজের মেয়ে।
সন্ধ্যা ৮টায় বাড়ি থেকে নার্সিং হোমে আসার পথে একটা নক্সাওয়ালা সাপ প্রিয়াঙ্কার পায়ে কেটেছে। কাজের মেয়ে বলল, ওটা চন্দ্রবোড়া ছিল।
পায়ে কোন বাঁধন ছিল না। কামড়ের দাগও দেখতে পেলাম না, তবে একটা লাল স্পট চোখ এড়ায়নি। কোন ফোলা বা active bleeding ছিল না। প্রিয়াঙ্কা বলল, সামান্য একটু জ্বলন ছাড়া তার কোন অসুবিধে হচ্ছে না। রুগীর pulse rate ৮৯, আর ব্লাড প্রেসার ১১০/৬৫ mm of Hg। আমরা টিটেনাসের টিকা দিলাম। সিস্টার চ্যানেল করে আই ভি ফ্লুইড হিসেবে একটা নরমাল স্যালাইন ঝুলিয়ে দিলেন। 8.2pm 20WBCT টেস্ট করতে বসলাম। গ্রামীণ চিকিৎসকও ওই টেস্ট করিয়ে এসেছেন এবং রেসাল্ট নেগেটিভ ছিল জানালেন। 8.42pm আমাদের রেসাল্ট ও নেগেটিভ এল। প্রিয়াঙ্কার কোন অসুবিধা হচ্ছে না। সে গল্প করছে। ওনারা রুগী ছুটি করে বাড়ি নিয়ে যেতে চাইলেন।
আমরা পর্যবেক্ষণে রেখে দিতে বলায় ওনারা পরামর্শ করার জন্যে একটু বাইরে গেলেন। আমি সিস্টারকে পার্টির মোবাইল নম্বর টুকে রাখতে বললাম। আমি কিন্তু প্রিয়াঙ্কার উপর তীক্ষ্ণ দৃষ্টি রেখে যাচ্ছিলাম। হঠাৎ ও একটু নড়াচড়া শুরু করল। বলল, কোমরে ব্যথা হচ্ছে, বাম পাও কেমন যেন অবশ অবশ লাগছে। আমি সিস্টারকে .25ml adrenaline inj রেডি করতে বললাম ।রুগী ঘামতে শুরু করল। Adrenaline SC পুশ করে AVS রেডি করতে বললাম। কাজের মেয়ে বলল, রুগীর কথা জড়িয়ে যাচ্ছে, সে জ্ঞান হারাচ্ছে। আমি 10 vial AVS চলমান স্যালাইন দিয়ে দিতে বললাম। BP 90/45,পালস 110। রুগিনী নেতিয়ে পড়ল। ওকে ব্যাক রেস্টে শোয়ালাম। অক্সিজেন রেডি করতে নির্দেশ দিলাম। একবার বমি করল, ওকে কাত করে দেয়া হল। I V fluid বাড়িয়ে দিলাম। Inj Atropine 0.6 ml IV ও Inj Prostigmin 1.5 IM দিতে
বললাম। সমস্ত প্রক্রিয়া দ্রুত রাত ৮টা ৪৯-এ শেষ হল।
রুগীর বাড়ির লোককে ইতিমধ্যেই ফোন করা হয়েছিল। ওনারা তখনও আসেননি। আমরা চিন্তিত। রুগী শুনতে পাচ্ছে কিনা না জেনেও তাকে ভরসা দিতে থাকলাম। সবাইকে অবাক করে ৯টা নাগাদ ও নড়াচড়া শুরু করল। ৯টা ৫ নাগাদ ধরা গলায় কথা বলা শুরু করল। চোখের পাতা কিন্তু ভালো করে খুলতে পারছিল না। বমি চিবোচ্ছিল, অসংলগ্ন কিছু বলছিল ৯টা ১৫ মিনিটে সবকিছু মন্ত্রের মত স্বাভাবিক হয়ে গেল। আমি একটা ঘোরের মধ্যে ছিলাম।
পার্টি পৌঁছে গেছে। কাজের মেয়ে অনেকগুলো ইনজেকশন পুশ করার কথা কানে তুলে দিয়েছে। সুস্থ রুগীকে এতো ওষুধ প্রয়োগ করার জন্য পেসেট পার্টি অসন্তোষ জানাতে থাকল। বড় হাসপাতালে চিকিৎসা করবেন বলে সই করে মুচলেখা দিয়ে প্রিয়াঙ্কাকে নিয়ে গেল। সবকিছু ভাল করেও কেমন যেন ধোঁকা খেলাম। শুনতে পেলাম, কানের কাছে ফিসফিস করে সাপটা যেন হেসেহেসে আমাকে প্রশ্ন করছে —‘অনুমান কর আমি কে? বোড়া? কালাচ! না কোবরা?’☺️??