হাসনাবাদ ক্যাম্প
WBDF-SSU উদ্যোগ
রাসবিহারী শৈলূষিক
*ডাক্তার*
কৌশিক, সঞ্জয়, শিল্পী, চান্দ্রেয়ী,সুনন্দন, অর্জুন, চন্দ্রিমা, স্মরঞ্জিত,রবিকর
*স্বেচ্ছাসেবী*
পুণ্যব্রত, কমলেশ্বর,(ওষুধ বিতরণে)
জয়দীপ, সুমিত, সুরজিৎ, মিলিয়া, উজান, সুদীপ্ত, চন্দ্রানী, লিপিকা, প্রজ্ঞা, অর্ঘ্য, চন্দন
আজকাল কলকাতার বা আশপাশের মানুষের কাছে কাজের দিন থেকে একটু ছুটি নিয়ে শরীরকে একটু সতেজ করে নিতে,অথবা একদিনের একটা বিশ্রামের জায়গা হয়ে উঠেছে টাকি। সেভাবেই বেশ ভাবতাম। কিন্তু সব যেন কেমন লন্ডভন্ড হয়ে যাচ্ছে, ভাবনার সব তার যেন ছিঁড়েখুঁড়ে যাচ্ছে সেই পথ জুড়ে। একদিকে করোনার আগ্রাসনে সারাপৃথিবীর মত এই অঞ্চলের অর্থনীতির হাত ধরে জীবনযাত্রার বদল ঘটে গেছে। আর ঠিক সেই সময়ে উমফুন এর ভয়ংকর আক্রমণে সেই জীবন যেন তছনছ হয়ে গেছে। দুই 24পরগনার বিস্তীর্ণ অঞ্চল আজও সেই তান্ডবে যেন দিশেহারা।
একদিকে ঘর ভেসে গেছে, এখনও অনেক জায়গা জলের তলায়, খাবার সংস্থান নেই, বিভিন্ন সংস্থার সাহায্য এখন একটা বিরাট অংশের মানুষের একমাত্র অবলম্বন। ঠিক এই সময় স্বাভাবিক নিয়মেই স্বাস্থ্য ব্যবস্থা যেন ওদের কাছে বাতুলতা। কিন্তু প্রকৃতির নিয়মেই এই রকম প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের পর যার প্রয়োজনীয়তা খাবার, মাথার ছাউনির থেকে একটুও কম গুরুত্তপূর্ণ নয়। ঠিক সেই সময়েই wbdf-ssu এক মহান কাজের ব্রতী হয়েছে। যা প্রায় এখন বিরল। এই সময়ে অনেকেই এগিয়ে এসেছেন খাদ্য,ছাউনির জন্যে বন্ধুর হাত বাড়িয়ে। কিন্তু wbdf-ssu, আর সহযোগী হয়ে রাসবিহারী শৈলুসিক সেই সবটুকু দিয়ে নেমে পড়েছে বিভিন্ন অঞ্চলে সেই মানুষের চিকিৎসা নিয়ে।
সেই টাকিকে বাঁ দিকে ফেলে হাসনাবাদ স্টেশন ছাড়িয়ে ইছামতি সেতু পেরিয়ে কিছুটা গেলেই এই চেহারা আরও ভয়াবহ হয়ে চোখের সামনে ভেসে উঠলো। সেই পথটুকু পেরিয়ে ঘুনি আদর্শ বিদ্যমন্দিরে ছিল এবারের গন্তব্য। পথে একটু দেরি হয়ে গেল। কখনও ঘন মেঘ, বৃষ্টি আবার রোদ উঠছে, প্রকৃতির এই খেলা দেখে হয়তো অন্য সময় গান গেয়ে উঠতাম আমরা, কিন্তু এই যন্ত্রণার ছবি যেন একটা জীবন্ত চলচিত্র হয়ে উঠছিল।
অনেক আগে থেকে প্রায় 200 মানুষ সেখানে সামাজিক দূরত্ব মেনে, ঠায় অপেক্ষায়।কয়েকজনের মুখের ভাষাই যেন বলে দিচ্ছিল কতটা অসহায়। স্বেচ্ছাসেবকদের সুশৃঙ্খল ব্যবস্থাপনা, আর 8জন ডাক্তারবাবুর সামনে মানুষগুলো যেন একটা জীবন দেখতে পাচ্ছিল। অনেকদিন পর সব কিছু বলতে চাইছে। ডাক্তার বাবুরা মন দিয়ে শুনছেন, ওষুধ লিখে দিচ্ছেন। তার পাশেই যথারীতি ওষুধের কাউন্টার থেকে তা বিনামূল্যেই দেওয়া হচ্ছে। এই সময় যে সমস্যাগুলো হয় তার অনেকগুলোই সব রুগীদের মাঝেই দেখা যায়, যেমন চর্ম রোগ, জ্বর ,সর্দি কাশির সমস্যা, চোখ, ent এই সবের সাথে একটা অবশ্যম্ভাবী রোগ অপুষ্টিজনিত রোগ। যার কারণ ও নিরাময় এভাবে হয়তো বলা যায়না। কিন্তু সব কিছু মিলিয়ে মানুষ ভিড় করেছে। আর এরই সাথে এমন সময়গুলোতে জল বাহিত অসুখের সমস্যা মারাত্মক চেহারা নিতে পারে, আর তাই জলকে কিভাবে পরিশ্রুত জরা যায় তার প্রশিক্ষণের সাথেই আপাতত পরিশ্রুত করার জন্যে সলিউশন এর শিশি তুলে দেন প্রতিটি পরিবারের হাতে।
সারাপথ জুড়ে মানুষের কষ্টের মাঝেও প্রচুর ত্রাণ বিলির ছবিও দেখলাম। কিন্তু এই সময়ের অন্যতম সমস্যা, আর তার পাশে থেকে মানুষের এই সাহায্যের এই রকম উদ্যোগ নিয়ে বিভিন্ন অঞ্চলে ছুটে বেড়ানোর খবর বোধহয় তেমন চোখে পড়েনা। এখানেই আজ তাই মাথা উঁচু করে wbdf-ssu এর সাথে আমরা একসাথে এসে যেন নিজেদের আবিষ্কার করছি। আর মানুষ হিসাবে পরিচিতির একটা সুযোগ পেয়ে গর্বিত অংশীদার হয়ে উঠছি।
রিপোর্ট লিখেছেন টিমের সদস্য চন্দন মুখার্জী।