চকচকে বাসন হলেই তা স্বাস্থ্যকর হয় না/ আপনার রান্না করার বাসনও বন্ধ্যাত্বের জন্য দায়ী হতে পারে
প্রবাদ বাক্যে বলা হয়, চকচক করলেই সোনা হয় না। তেমনি যতই হাল আমলের দেখতে সুন্দর বাসনে রান্না করা হোক না কেন, তা সব সময় স্বাস্থ্যকর হয়না। স্বাস্থ্যকর খাবার বানানোর জন্য যেসব পাত্র আমরা ব্যবহার করি তারও যে গুরুত্বপূর্ণ অবদান আছে সে সম্পর্কে আমাদের বেশিরভাগেরই জানা নেই। এবার তাই বাসনের গুণাগুণ দেখার পালা।
নন স্টিক বাসন– কম তেলে রান্না করার জন্য এখন ঘরে ঘরেই এই বাসন ব্যবহার করা হয়। ধোয়াও সুবিধাজনক। এই বাসনের ওপরে যে আস্তরণ থাকে তা তৈরি হয় টেফলন নামের মেটিরিয়াল ও তার সঙ্গে আরো নানা রকম জিনিসের বিক্রিয়ায়। সাম্প্রতিক কালের গবেষণায় জানা গেছে, এই বাসনের মেটিরিয়াল যদি বিজ্ঞানসম্মত উপায়ে তৈরি না হয় আর এতে রান্না করা খাবার দীর্ঘদিন ধরে খাওয়া হয় তাহলে ডিসলেক্সিয়া ও বন্ধ্যাত্বের মতো সমস্যা দেখা দিতে পারে। কারণ বেশি তাপে রান্না করার সময় ওই আস্তরণ খাবারে মিশে খাবারকে বিষাক্ত করে তুলতে পারে। একই কারণে আস্তরণ ওঠা বাসনে রান্না করা একেবারেই উচিত নয়।
অ্যালুমিনিয়ামের বাসন-এই বাসন তৈরি হয় অক্সিডাইজে। তাই সামান্য হলেও তা খাবারের সঙ্গে মেশার আশংকা থাকে। বিশেষত, টক জাতীয় খাবার যেমন চাটনি বা লেবু অথবা ভিনিগার অনেক সময় এই বাসনে থাকলে নিজেরাও দেখতে পাবেন বাসনের ভেতরের রঙ কেমন বদলে যায়। এক সমীক্ষায় জানা গেছে, এভাবে অ্যালুমিনিয়ামের বাসন থেকে মিশে যাওয়া পদার্থ শরীরে গেলে আলঝাইমার ও পারকিনসন্স এর মতো অসুখ দেখা দিতে পারে।
সবজি কাটার বোর্ড– অনেকেই প্লাস্টিকের বোর্ড ব্যবহার করেন। এই বোর্ড যত নামী কোম্পানিরই হোক না কেন, সবজি কাটার ফলে এই বোর্ড হয়ে উঠতে পারে নানান অসুখ ছড়ানোর আস্তানা। এতে ই-কোলাই থেকে শুরু করে সালমোনেলা ব্যাকটেরিয়া জন্মাতে পারে। আর তা খাবারের মাধ্যমে শরীরে গিয়ে অসুখ ডেকে আনতে পারে। আর যদি ওই একই বোর্ডে চিকেন বা মাটন টুকরো করা হয় তাহলে সমস্যা আরো বাড়তে পারে। তখন রান্না করার পরেও সে সব জীবাণু নষ্ট হয় না। বরং সবজি বা মাংস কাটার জন্য প্লাস্টিকের বোর্ডের পরিবর্তে কাঠ বা পাথরের বোর্ড ব্যবহার করা যেতে পারে।
স্টিলের বাসন– স্টিলের বাসন দেখতেও ঝকঝকে আর এর থেকে কোনো কিছু খাবারে মেশার সম্ভাবনাও তুলনায় কম। সেই কারণেই স্টিলের বাসনে তৈরি খাবার অ্যালুমিনিয়াম বা ননস্টিক বাসনে তৈরি খাবারের চেয়ে বেশী নিরাপদ। তবে অনেক সময়ই কমদামি পাতলা স্টিলের বাসনে নিকেল ব্যবহার করা হয় । ওই নিকেল ক্ষতিকর হয়ে উঠতে পারে। তাই স্টিল খুব জোরে ঘষে পরিষ্কার করতে গিয়ে স্ক্র্যাচ না ফেলাই ভালো।
প্লাস্টিকের বাসন– গরম খাবার প্লাস্টিকের পাত্রে রাখলে সেই প্লাস্টিক খাবারের সঙ্গে বিক্রিয়া করে। আর ওই খাবার খাওয়ার ফলে হার্টের অসুখ থেকে শুরু করে বন্ধ্যাত্ব এমনকি ক্যান্সার পর্যন্ত হতে পারে বলে বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন। জলের বোতল যে প্লাস্টিক দিয়ে তৈরি হয় তাতে দীঘদিন জল খেলে মোটা হওয়ার আশংকা দেখা দেয়। তুলনায় মেলামাইন খানিকটা নিরাপদ। তবে কখনোই এই ধরনের বাসন মাইক্রোওভেনে দেওয়া উচিত নয়।
সেরামিকের বাসন– রান্না করার জন্য সবচেয়ে নিরাপদ। যতই তাপমাত্রায় রান্না করা হোক না কেন, এর থেকে শরীরে কোনো বিরূপ প্রতিক্রিয়া হয় না। মাইক্রোওভেনেও দেওয়া যায় নিশ্চিন্তে।
লোহার বাসন– এই বাসন দেখতে তেমন সুন্দর নয়, আর এতে রান্না করা খাবারও কালো হয়। তবে এই বাসনে রান্না খাবার স্বাস্থ্যকর। বিশেষত, যাদের অ্যানিমিয়া থাকে তারা এই বাসনে রান্না করা খাবার খেলে উপকার পাবেন। তবে কারো রক্তের অসুখ যেমন থ্যালাসেমিয়া বা পলিসাইথেমিয়া থাকলে এই বাসনে রান্না করা খাবার একেবারেই খাওয়া চলবে না। এতে সাংঘাতিক ক্ষতির আশংকা থাকে।
মাটির বাসন– আগে এতেই ঘরে ঘরে রান্না করা হোত। তবে তাপমাত্রার এদিকওদিক হলে ফেটে যাওয়ার কথা ভুলে গেলে চলবে না। যদিও এতে রান্না করা খাবার তুলনায় নিরাপদ।