প্রথম আলাপ
মার্চের মাঝামাঝি। দিল্লি যাচ্ছি এক আন্তর্জাতিক চিকিৎসক সম্মেলনে যোগ দিতে। পেশায় আমি উত্তরের এক শহরের সরকারি হাসপাতালের চিকিৎসক। সম্মেলনে যোগ দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ভ্রমণের পিপাসায় প্রথম গন্তব্য শিমলা। ১৬ ই মার্চ পৌঁছে গেলাম। সম্মেলন চলবে ২০-২২ শে মার্চ।
১৭ই মার্চ সকালে শিমলার ম্যলে মিঠে রোদ পোহাচ্ছি, হঠাৎ ফোন দিল্লি থেকে কর্মকর্তাদের। বিশ্বব্যাপী কোভিড ১৯ মহামারীর কারণে সম্মেলন বাতিল। নাম নথিভূক্তির টাকা ফেরত দেওয়া হবে। ওনাদের আ্যকাউন্ট নম্বর বাৎলে দিয়ে উৎসাহ নিয়ে ভাবতে বসলাম হিমাচলের আর কোথায় এই বাড়তি তিন দিনে ঘুরে নেওয়া যায়। তারই সুলুক সন্ধান করতে স্ক্যান্ডাল পয়েন্টের কাছে হিমাচল পর্যটনের দপ্তরে ঢুকতেই এক গাল মাছি। জানতে পারলাম শিমলা, মানালী ও সোলান বাদে হিমাচল প্রদেশের বাকি অংশে আর পর্যটকদের নতুন করে প্রবেশ করতে দেওয়া হচ্ছে না। উপরে আটকে থাকা পর্যটকদের ফিরিয়ে আনা হচ্ছে। এবং কুড়ি মার্চ থেকে হিমাচল প্রদেশ থেকে আন্তঃ রাজ্য বাস চলাচল অনির্দিষ্ট সময়ের জন্য বন্ধ করে দেওয়া হবে। অগত্যা ১৭, ১৮ মার্চ শিমলা, কুফরী আর চেইল ঘুরে ১৯ মার্চ নেমে এলাম চন্ডীগড়। কুড়ি তারিখ সকালে রক গার্ডেন ঘুরতে গিয়ে শুনি বিশ্বব্যাপী কোভিড মহামারীর কারণে সমস্ত পর্যটন স্থল অনির্দিষ্ট সময়ের জন্য বন্ধ। এমনকি আগ্রার তাজমহল, দিল্লির লাল কেল্লা ও পর্যটকদের জন্য বন্ধ।
উপায়ান্তর না দেখে দিল্লি ফিরে আসা মনস্থ করলাম। কাশ্মিরী গেট পৌঁছে রাজধানী শহরের চেহারা দেখে তো চক্ষু স্থির। রাস্তা ঘাট ফাঁকা। গণপরিবহন যাত্রীহীন। কোনক্রমে মেহোরৌলি পৌঁছে একটি হোটেলে থাকার জায়গা পেলাম, তবে রেস্তোরাঁ সব বন্ধ। সে রাতে ফল কিনে এনে নৈশভোজ সারলাম। এরপর ইন্টারনেট ঘেঁটে একটু পড়তে বসলাম এই কোভিড ১৯ সম্পর্কে।
জানলাম কিভাবে চীনের উহান শহর থেকে ইটালি হয়ে ইটালীয় পর্যটকদের শরীরে বাহিত হয়ে দিল্লি, জয়পুরে পৌঁছে গেছে আনকোরা এই ভাইরাস। ইটালি, ফ্রান্স, ইরানের মৃত্যু মিছিলের খবরও পেলাম। দেরিতে শুনলাম প্রধানমন্ত্রীর ভাষণ এবং ২২মার্চ জনতা কারফিউ-এর ঘোষণা। এই শুনে তো হাতে হ্যারিকেন। ২২ শে মার্চ এই তো আমার ফেরার বিমান। ২১ শে মার্চ সকালে প্রাতরাশ না খেয়েই ছুটলাম দিল্লি বিমানবন্দরে বিমান সংস্থার গুমটি তে। ভাগ্যক্রমে সেইদিন বিকালের বিমানে ফেরবার বন্দোবস্ত হলো। ২২ শে মার্চ শহর জুড়ে থালা, কাঁসর, ঘন্টা বাজানো শুনতে শুনতে হাসপাতালে কাজে যোগ দিলাম।